somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মৃত্যুদন্ড: কি; কেন; কিভাবে; খরচাপাতি; কাদের স্বার্থে (প্রথম পর্ব)

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উৎসর্গ: শাহবাগের তারুণ্যকে। যারা জাগিয়ে তুলেছে পুরো দেশকে

অনেক দেশেই আজকাল অপরাধ খুব গুরুতর না হলে 'ক্যাপিটাল পানিশম্যান্ট' বা মৃত্যুদন্ড দেয়ার প্রচলন নেই। যেমন, ক্যানাডা, আর্জেন্টিনা, নেপাল, স্পেইন, এল সালভেদর ইত্যাদি। আবার কিছু দেশে মৃত্যুদন্ড দেয়াই হয় না অপরাধ যাই হোক না কেন। যেমন হাইতি, নামিবিয়া, বুলগেরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, ক্রোয়েশিয়া, ইতালী, মেক্সিকো, টার্কী ইত্যাদি।

মৃত্যুদন্ড দেয়া হয় না প্রধানত দুটো কারনে।
১) অমানবিক মনে করা হয়।
২) মৃত্যুদন্ডের বিচার প্রক্রিয়া অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ। এটাই প্রধান কারন।

১ নাম্বার কারনতো সহজেই বুঝে গিয়েছেন। আসুন ২ নম্বর কারনটার আলোচনায় যাই।

মনে রাখবেন আইনি লড়াই যখন সরকারের সাথে হয় তখন সরকারের খরচের টাকাটা আপনার আমার পকেট থেকে আসে। রাজাকার বিরোধী লড়াইয়ে বাংলাদেশ সরকারের বিশাল অংকের টাকা খরচ করতে হচ্ছে আইনজীবি এবং এসংক্রান্ত অন্যান্য কাজে। অর্থের যোগানদাতা হিসেবে আমরা অবশ্যই চাইব টাকাটা যেন হালাল ভাবে খরচ হয়। ফলাফল যাতে আমাদের পক্ষে আসে। কেউ কোন খেলা যেন না খেলতে পারে।

আরেকটু খুলে বলি।

ধরুন, আমি ডাব্বা একজনকে হত্যা করলাম। সরকার আমার বিরুদ্ধে কোর্টে গেল। আমার বিচার চাইল। প্রসিকিউটর বললো যে 'মাননীয় ধর্মাবতার। রগ, আংগুল, চোখ উপড়ে, গলা কেটে নৃশংসভাবে হত্যার দায়ে ডাব্বা নামের এই ছাগুটাকে ৩০ বছরের কারাদন্ড দেয়া হোক।' সে সাক্ষী প্রমান পেশ করল। জুরী বোর্ডে কে কে থাকবে ঠিক করা হোল। সাক্ষ্য প্রমানে জুরী বোর্ড সিদ্ধান্তে আসলো যে না, এটা তো পুরোপুরি ছাগু না সিকি ছাগু। তাই রায়ও হয়ে গেল ১২ বছরের সশ্রম কারাদন্ড। সব মিলিয়ে লাগল সময় ১৪ মাস। কথার কথা।

আবার ধরুন সেই খুনের কারনেই সরকারী প্রসিকিউটর আমার মৃত্যদন্ড দাবী করল। 'ধর্মাবতার, ডাব্বা নামের এই ইন্ডিয়ান দালালটাকে মৃত্যুদন্ড না দিলে দেশে রামরাজ্য প্রতিস্ঠিত হবে। আপনার আমার কারো পুটু ই আর পুটুতে থাকবে না।'

এই যে সরকার এখন আমার মৃত্যুদন্ড দাবী করলো, এই 'মৃত্যুদন্ড' দাবী করার কারনে এই কেইসটা 'ক্যাপিটাল ট্রায়াল' হিসেবে আগাবে বা মুভ করবে যেটা আগেরটার চাইতে অনেক জটিল, সময় সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল হবে। এটা কমপ্লেক্স ট্রায়াল হিসেবে গণ্য হবে। অর্ডিনারী না। সাক্ষী-প্রমান, পৃ-ট্রায়াল মোশন, হাই প্রোফাইল এক্সপার্ট, সুচারু তদন্ত, অতি সুরক্ষিত কারাগারের ব্যবস্থা, জটিল এবং দীর্ঘমেয়াদী জুরী সিলেকশন প্রক্রিয়া, ফাইল চালাচালি, কূটতর্ক, আলোচনা, ভালোচনা, সমালোচনা এবং তারিখ এর পর তারিখ ইত্যাদি সমস্ত কিছু মিলিয়ে রায় হতে লাগল সাড়ে চার বছর। ধরে নিলাম।

কোথায় ১৪ মাস আর কোথায় সাড়ে চার বছর!

তো হিসেবে দেখা গেছে, এই সাড়ে চার বছরে মামলার পেছনে যে খরচ হল তা দিয়ে আমাকে সারাজীবন জেলে একটা রুম দিয়ে রেখে দেয়া যেত এবং তারপরও খরচ বাঁচত সরকারের। একটা উদাহরন দেই, ক্যালিফোর্নিয়ার। (বাংলাদেশের তথ্য মুক্তবাজারে পাওয়া যায় না)

ক্যালিফোর্নিয়াতে একটা সাধারন মার্ডার ট্রায়ালে খরচ হয় $১৬০০০-২০০০০। আর একটা ক্যাপিটাল ট্রায়াল এ খরচ $১১৬০০০-১২০০০০ হাজার। কমবেশী আছে। আর যদি সরকার হেরে যায় তাহলেতো আম ছালা দুটোই গেল। $১২০ হাজার তো গেলই এখন আবার তাকে সারাজীবন জেলে রাখার খরচ যোগাও, আরো $১০০ হাজার!! প্রায় সময়েই এই খরচ মিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকে। একটা Capital Punishment এর তদন্তে খরচ হতে পারে হাফ মিলিয়ন ডলার। যেখানে non Capital Punishment এর তদন্ত $৩২,০০০ এর মধ্যে করে ফেলা সম্ভব।

অনেক বড় একটা খরচ আর হ্যাসল্‌।

কিছু কিছু দেশে আবার যাবজ্জীবন কারাদন্ড অনেক বেশী খরচের। যেমন বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, মিশর, প্যালেস্টাইন, ইরান, চীন, ইন্ডিয়া ইত্যাদি। অবশ্য এটাও ডিপেন্ড করে ভিকটিমের বয়স, মামলার জটিলতা সহ আরো নানান রাজনৈতিক ও সামাজিক ফ্যাক্টর এর উপর।

এত কথার ভীড়ে ভুলে যাননি আশা করি যে সরকারের টাকা মানে আপনার আমার ট্যাক্স দেয়া টাকা।এই টাকার হিসেব জনগনকে দেয়া লাগে। তাই সরকার চেস্টা করে নানা ভাবে খরচ কমাতে যাতে অন্য কোন বেশী দরকারী কাজে টাকাটা ব্যয় করা যায়। সেজন্যে উন্নতবিশ্বের সরকারগুলো করে কি নানা ধরনের ডাইভারশন প্রোগ্রামস হাতে নেয়। বিশেষ করে এ্যামেরিকা।

এজন্যে অনেক দেশের সরকার সহজে ক্যাপিটাল ট্রায়ালে জড়িত হতে চায় না যদি না এতে (ক) সরকারের বা সরকার প্রধানের কোন খাস আগ্রহ থাকে, অথবা (খ) দেশের স্বার্থ চরম ভাবে জড়িত থাকে এবং জনগন সচেতন ভাবে তাকিয়ে আছে সেদিকে [এবং সরকার সেটা জানে]।

বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে, শাহবাগের গনজাগরন টা যদি কোনও ভাবে War Crimes Tribunal গঠিত হবার আগে হোত এবং/অথবা গঠিত হতে কোন ভূমিকা রাখত তাহলে সরকার এবং সরকারী প্রসিকিউশন আরো দক্ষ এবং সুচারুভাবে তাঁদের কাজ সম্পাদন করত। কারন তাঁরা জানত যে এর পেছনে শুধু সরকারের রাজনৈতিক/সামাজিক ইচ্ছাই না বরং সাধারন মানুষ যারা সরাসরি রাজনীতি করে না তাঁরা জড়িত। তাহলে আজকে বিচার নিয়ে এত কথা উঠত না। এত হাইকোর্ট জজকোর্টও আমাদের দেখা লাগত না। রাজীবেরও খুন হতে হোত না। আস্তিক-নাস্তিক নিয়ে বিভাজন সৃস্টির প্রয়াস হালে পানি পেত না। রাজাকারের পক্ষে যায় এমন কিছু কেউ লিখতে পারত না বা বলার সুযোগ থাকত না টক-ঝাল-মিস্টি টিভি শো গুলোতে।

সাধারন মানুষের চাপ সহ্য করার ক্ষমতা খুব কম প্রতিস্ঠানের আছে।



পরবর্তীএবং শেষ পর্ব: মৃত্যুদন্ডের ঐতিহাসিক প্রেক্ষিত এবং পদ্ধতি
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৮
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঈশ্বরের ভুল ছায়া – পর্ব ৩ | ভূমিকা-ব্রীজ

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:০৮



"তুমি যদি বাতাসকে ভালোবাসো, তাকে বশ করো না—তার সুর বোঝো। কারণ বাতাস একবার থেমে গেলে, তার কণ্ঠ আর কখনো শোনা যায় না।"

“ঈশ্বরের ভুল ছায়া” সিরিজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষার ভবিষ্যৎ ভারতে নিহিত ইসরায়েল ও ভারতের ইসরায়েলি প্রতিরক্ষার ভবিষ্যৎ ভারতে নিহিত

লিখেছেন ঊণকৌটী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:১৩


উভয় বাজারে নেতৃস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলির যৌথ প্রকল্পের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটছে। এটি ইসরায়েলকে পশ্চিমাদের উপর নির্ভরতা কমাতে সহায়তা করছে, যা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের যুদ্ধে সমস্যাযুক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবার কমন শত্রু আওয়ামী লীগ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:৫৮


শেখ হাসিনা সবসময় তেলবাজ সাংবাদিকদের দ্বারা বেষ্টিত থাকতেন। তেলবাজ নেতাকর্মীরাও বোধহয় তার পছন্দ ছিল। দেশে কী হচ্ছে, না হচ্ছে, সে সম্পর্কে তার ধারণাই ছিল না। সামান্য কোটাবিরোধী আন্দোলন উনার পক্ষে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক কনফ্লিক্ট জোনে পরিণত করলো ড. ইউনুসের অবৈধ দখলদাররা ‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ২:২১



শেষ পর্যন্ত ড.ইউন তার আন্তর্জাতিক সক্ষমতা প্রদর্শন করে দেখালেন! উনি বাংলাদেশের মানুষের জন্য কখনোই কোন কাজ করেননি ।আমাদের কোনো দুর্যোগে কখনো পাশে দাঁড়িয়েছেন তার কোনো দৃষ্টান্ত নেই । যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত একটি মানবিক দেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৩৮



যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন আমরা ভারতবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব।
ভারতের মানুষের সঙ্গে আমাদের কোনো শত্রুতা নেই। আমরা বাংলাদেশি তোমরা ভারতীয়। আমরা মিলেমিশে থাকতে চাই। ভারতের বাংলাদেশের সাথে সাংস্কৃতিক,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×