পাহাড়ের গায়ে তখন গড়িয়ে পড়ছে রোদ, আমরা বান্দরবান শহরে গিয়ে পৌঁছলাম । ১৬ জনের মাইক্রোবাস প্রায় দু’ঘণ্টা দৌড়ে বেলা তিনটের সময় আমাদের কে নামিয়ে দিল । এখান থেকে দুটো গ্রুপে ভাগ হয়ে নিয়ে ঠিক করলাম আজ রাত্রেই রুমা বাজার রওনা দেব । সবার সিদ্ধান্ত এক হল যখন তখন প্রায় পাঁচটা বাজে এবং ঠিক হল আজ রাতটা আমরা শহরেই থাকব । পাহাড়ি রাস্তায় রাত্রে গাড়ী চলাচল খুব একটা সুবিধের হবেনা ।
কথা ছিল খুব সকালে আমরা রুমা বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দেব এবং সেটা দিনের প্রথম বাসেই । কিন্তু সবার ঘুম ভেঙ্গে তৈরি হয়ে হোটেল থেকে বের হতেই সোয়া ন’টা । আমরা সাড়ে দশটার বাসে রুমা বাজারের পথে চলতে শুরু করলাম । প্রসঙ্গতঃ আমি উচ্চতায় খুব ভয় পাই কিন্তু কোন এক অজানা কারণে উচ্চতার কোন ভয় আমাকে ছুঁতেও পারেনি । মিটারের পর মিটার উঁচুতে পাহাড়ি রাস্তায় তখন নিমগ্ন কুয়াশা আর রোদের লুকোচুরি আমাকে সম্মোহিতের মত ধরে রেখেছিল । বাস থেকে নেমে জানলাম আরও আধা ঘণ্টা চাঁদের গাড়িতে কাটালে রুমা বাজার পৌঁছতে পারব । একটার পর একটা আদিবাসী পাড়া ছাড়িয়ে যখন রুমা বাজারে পৌঁছলাম তখন আমার মনে হল এটা বুঝি একটা স্বপ্নের দেশ, ছবির মতন সব কিছু । ছোট ছোট ঘরবাড়ি, বাজার, আধপাকা রাস্তাঘাট, ছোট্ট নদীর মত নদী, সরল চাহনির মানুষগুলো সব ছবির মতই । এই ছবির দেশে দুপুরের খাবার শেষ করে এবার বগা লেকের পথে চাঁদের গাড়ী, সঙ্গে আমাদের গাইড । কিন্তু আমরা সরাসরি বগা লেকে না গিয়ে কমলার চরে নেমে একটা করে বাঁশ কিনে ট্র্যাকিং এর জন্য তৈরি হলাম । ঢাকায় বাস করা আমাদের মত সভ্য এই বাচ্চা কাচ্চারা কটা পা ই বা আমরা হাঁটি ! তাই অমন ৪৫ ডিগ্রী বাঁকানো রাস্তায় দু মিনিট হাঁটতেই সবার ঘাম বের হয়ে গেল । প্রায় ৪০ মিনিট হাঁটার পরে আমরা বগা লেকে পৌঁছে গেলাম, কটেজে আগেভাগেই বুকিং দেয়া ছিল আমাদের । সারাদিনের ক্লান্তিটুকু বগা লেকের পানিতে ধুয়ে ফেলে খেতে বসলাম । চাদর গায়ে জড়িয়ে এই লেক পাড়াটা ঘুরে আসলাম ঘুমানোর আগে । ছোটবেলায় বাংলা সিনেমায় দেখা জংলী বাহিনীর নায়ক নায়িকা কে ধরে নাচানোর দৃশ্যগুলো মাথার ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছিল আর হাসি পাচ্ছিল । ১২/১৫ ঘর নিয়ে একটা ছোট্ট পাড়া, চারপাশে বিশাল পাহাড়, ক্রিস্টাল ক্লিয়ার লেকের পানি, কাঠের ঘরবাড়ি, মাঝে আমাদের জন্য ফায়ারপ্লেসের মত করে আগুন জ্বালানো হয়েছে । নিজের ভেতর বাহিরে উৎসব উৎসব আমেজ বয়ে যাচ্ছিল । উৎসব হোক আর নাই হোক ১২ মাস রাস্তার হর্ন আর চারটে দেয়াল যাদের বাঁচিয়ে রাখে তার কাছে যদি এটা উৎসব মনে না হয় তবে এর কোন সার্থকতা নেই । ইচ্ছে করেই একটা হাত দিয়ে আরেক হাতে চিমটি কেটে দেখলাম, স্বপ্নের মত হলেও এটা কিন্তু স্বপ্ন নয় ! পরের দিনের গন্তব্য কেওক্রাডং ।
চলবে ..........
দূর পাহাড়ের আমন্ত্রণে !!! বান্দরবান, কেওক্রাডং, জাদিপাই ঝর্ণা ।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১১টি মন্তব্য ৩টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ভিসা বন্ধ করায় ভারতকে ধন্যবাদ।
ভারত ইদানীং ভিসা দিচ্ছেনা; তারা ভিসা না দিয়ে আমাদেরকে শিক্ষা দিতে চায়! তাদের করদ রাজ্য হাতছাড় হওয়া খুবই নাখোশ, এতোই নাখোশ যে মোদী মিডিয়া দিনরাত বয়ান দিচ্ছে এই দেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন
ভারতের চিকিৎসা বয়কট এবং
ভারতের এক হাসপাতাল ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশের কোন রুগিকে তারা চিকিৎসা দিবে না। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো যে হাসপাতাল থেকে এই ঘোষণা দেয়া হয়েছে সেই হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার জন্য বাংলাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। চামচা পুঁজিবাদ থেকে চোরতন্ত্রে পরিণত হয়েছিল দেশ
চামচা পুঁজিবাদ থেকে দেশ চোরতন্ত্রে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, আমলা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা মিলে চোরতন্ত্র করেছে।
সোমবার... ...বাকিটুকু পড়ুন
শেখ হাসিনাকে ভারত ফেরত পাঠাবে তবে............
শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে বিচারের জন্য ভারতের কাছে ফেরত চাইতে হলে অবশ্যই বাংলাদেশকে প্রতিহিংসামূলক বিচারপদ্ধতি বাদ দিতে হবে। বিচারে শেখ হাসিনা যাতে ন্যায় বিচার পান বাংলাদেশকে আগে তা নিশ্চয়তা... ...বাকিটুকু পড়ুন
ভারত সোনার ডিম পাড়া হাঁস হারিয়েছে
শেখ হাসিনা ভারতে বসে ষড়যন্ত্র-অপপ্রচার করছেন। ভারত চাচ্ছে বাংলাদেশে একটি অশান্তি হোক। কারণ ভারত একটি মসনদ হারিয়েছে। সোনার ডিম পাড়া হাঁস হারিয়েছে।
আওয়ামী লীগ প্রতিদিন একটি সোনার ডিম পেড়ে নরেন্দ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন