গ্লাস ভরে পিয়ারী শুরু করেন আবার।
"...সেই সময় আমার প্রেমিকের অভাব হয়নি। জার্মান যুব সমাজে আমার বেশ কদর ছিলো। সুমন চট্টোপধ্যায় বার্লিনে ছিলেন কিছুদিন। আমি তখন মডেলিং এর োপর খানিকটা বিরক্ত হয়ে শুরু করেছি সাংবাদিকতা। যোগ দিয়েছি, জার্মান বেতার ডয়েচ ভেলের বাংলা বিভাগে। সুমনের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব থেকে প্রেমের সম্পর্ক গড়ায়। লিভ টুগেদার করতে থাকি দুজন। সুমন যখন বার্লিন ছাড়ে, তখন একটু ভেঙে পড়ি আমি। আমার এতোদিন পরে মনে পড়ে কাদরীর কথা।"
"এখনকার মতো যোগাযোগের এতো সহজ উপায় না থাকলেো প্রবাসী বাঙালি মহলে কাদরীর খবর পাোয়া খুব কঠিন ছিলো না। কবিতার কারণে, তুমুল আড্ডাবাজীর কারণে বরাবরই কাদরী অতি জনপ্রিয়।...তো খবর পাই কাদরী হুট করে বিয়ে করেছে, এক মার্কিন মেয়েকে। খুব অসুখি জীবন কাটাচ্ছে। সাদা চামড়াটার কবিতা--টবিতার োপর কোনো শ্রদ্ধা নেই। বাসায় কাদরীর পরিচিত কেউ বেড়াতে এলে নাকি মুখের োপর নাক সিঁটকে বলে, 'তুমি কি বিখ্যাত কবির সঙ্গে দেখা করতে এসেছো?'...শুনে আমি অস্থির হই; কিন্তু আমার কিছুই করার থাকে না।"
"আরো পরে খবর পাই অসন্মান থেকে বাঁচতে কাদরী শেষে ঐ শয়তনটার সঙ্গে রিলেশন ব্রেক করে, োকে ডিভোর্স দেয়।... তারপর কাদরী এখন এই শেষ বয়সে এক পুঁচকে বাঙালি মেয়েকে নাকি বিয়ে করেছে। সময় মতো আমাদের বাচ্চা হলে, কাদরীর হয়তে ঐ বয়সী একটা মেয়ে থাকতো।"
"...তো মেয়েটা নাকি কাদরীর কবিতার খুব ফ্যান। আর এখন তো কাদরী প্রায়ই অসুস্থ থাকে। নানান অসুখে একেবারে শয্যাশায়ী। মেয়েটাই নাকি োকে খুব সেবা করে।"
"আর আমি? আমি একের পর এক প্রেম চালিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ি। ডুবে থাকি রেডিো নিয়ে। মাত্র তো অবসর নিলাম কাজ থেকে। ভাবছি, সাংবাদিকতা সংশ্লিষ্ট কোনো একটা কাজে আবার ঢুকে পড়বো।"
এতোক্ষণে মুখ খুলি আমি। জানতে চাই, "আপনার কাদরীকে দেখতে ইচ্ছে করে না? কেমন আছেন, আপনার প্রথম প্রেম?"
পিয়ারীর মুখ থেকে কথা সরে না। ভ্রমর কালো চোখ ছলছল করে োঠে। উনি সিগারেটে টান দিতে ভুলে যান। সিগারেট পুড়ে পুড়ে আঙুলের ফাঁকে ছোট হয়ে আসে। কার্পেটে ঝরে পড়ে ছাই। রাত্রি দীর্ঘ হয়। আমি বাসার দিকে পা বাড়াই।...
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০০৭ রাত ১১:৩৯