রামপাল।
আমজনতার উদ্বেগ, অভয়ারণ্যের ভয়, ইকো সিস্টেমের, প্রাণী বৈচিত্রের হন্তারক, ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ আমাদের গর্ব, উপকূলের রক্ষাকবজ পৃথিবীর একমাত্র ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন বিনষ্টকারী প্রকল্প।
সরকার তার প্রয়োজনে সাতকে পাচ দিয়ে বোঝাচ্ছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে তাবেদার, অন্ধ অনুসারী আর স্তাবকের জ্বি হুজুরী উপস্থাপনা!!
গতকাল লেখাটা পড়েই গা জ্বলছিল ! কিন্তু আজ আবার এর দারুন পয়েন্ট টু পয়েন্ট তথ্য ভিত্তিক জবাব দেখে মনটা জুড়িয়ে গেল।
সত্য প্রতিষ্ঠিত হবেই। মিথ্যা চিরদিন টিকে থাকে না আবারও প্রমাণ হল।
জনাব কল্লোল মোস্তফার রামপাল: বিভ্রান্তিকর ‘কিছু অভিযোগ, কিছু উত্তর’ যেন পরতে পরতে লাইন বাই লাইন তাদের মিথ্যার ফানুসকে গুড়িয়ে দিয়েছে-
ধন্যবাদ কল্লোল মোস্তফা।
যারা কষ্ট করে লিংকে গুতাতে রাজি নন তাদের জন্য কপি-পেষ্ট
মূলত প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক ইলাহী চৌধুরী এবং অংশত পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেনের সঙ্গে আলাপচারিতার ভিত্তিতে ‘পানি পরিশোধন’ ও ‘পরিবেশ প্রকৌশলী’ ড. আঞ্জুমান ইসলাম বিডিনিউজ ২৪ ডটকমে “রামপাল: কিছু অভিযোগ কিছু উত্তর” নামে একটি লেখা প্রকাশ করেছেন। সুন্দরবনের পাশে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরোধীতাকারীদের ‘অভিযোগের’ জবাবে ‘কিছু প্রশ্নের সদুত্তর’ তিনি হাজির করার চেষ্টা করেছেন।
দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, লেখাটিতে প্রশ্নগুলো যেমন সঠিকভাবে উপস্থাপিত হয়নি, উত্তরগুলোও তেমনি বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যভিত্তিক নয়। ফলে লেখাটি আরও বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। ড. আঞ্জুমানের লেখার প্রেক্ষিতে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ফলে সুন্দরবনের সম্ভাব্য বিপর্যয়ের বিষয়টি আরও পরিষ্কার করার জন্য এখানে কিছু কথা বলা জরুরি মনে করছি।
১. লোকদেখানো ইআইএ প্রসঙ্গে:
ইআইএ সম্পর্কে প্রথম অভিযোগ হল স্থান চূড়ান্তকরণ, জমি অধিগ্রহণ ও চুক্তি সম্পন্ন করার পর ইআইএ সম্পন্ন করা হয়েছে। জবাবে, আঞ্জুমান ইসলাম অনেক কথাই লিখলেন কিন্তু সেখানে ইআইএ সম্পন্ন করার আগেই জমি অধিগ্রহণ করার কোনো যৌক্তিকতা পাওয়া গেল না!
আমরা বেশি কথা লিখব না, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যে যে সকল ধাপ অনুসরণ করতে হয়, তা খোদ সরকারি ইআইএ রিপোর্টে কীভাবে আছে তা তুলে ধরব। ইআইএ রিপোর্টের ৯৭ পৃষ্ঠায় ধাপগুলো লেখা হয়েছে এভাবে–
5.8 Project activities
Pre construction phase
a) Selection of candidate sites
b) Environmental and feasibility study
c) Selection of site
d) Land acquisition & site establishment
অর্থাৎ সিকোয়েন্সটি হওয়া উচিত এ রকম:
RAMPAL-PROJECT
সম্ভাব্য একাধিক স্থান শনাক্তকরণ-> পরিবেশগত সমীক্ষা-> কোনো একটি স্থান চূড়ান্তকরণ-> জমি অধিগ্রহণ।
বাস্তবে এই প্রক্রিয়া মেনে চলা হয়নি। আগে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, তারপর পরিবেশ সমীক্ষা করা হয়েছে। জমি অধিগ্রহণ শুরু করা হয়েছে ২০১০ সালে। আর মতামতের জন্য ইআইএ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে। শুধু তাই নয়, এরপর সেই ইআই-এর অসংখ্য অসঙ্গতি ১২ এপ্রিল, ২০১৩ বিদ্যুৎ ভবনে অনুষ্ঠিত কথিত গণশুনানিতে তুলে ধরা হলেও এবং সেই ইআইএ রিপোর্টকে জাতীয় কমিটিসহ উপস্থিত প্রায় সকল সংগঠন ও বিশেষজ্ঞের পক্ষ থেকে প্রত্যাখ্যান করা হলেও, তাড়াহুড়া করে ২০ এপ্রিল এনটিপিসি’র সঙ্গে আরও তিনটি চুক্তি সম্পন্ন করা হয়।
এ সকল কারণেই কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, ইআইএটি লোকদেখানো, দায়সারা, যে কোনো মূল্যে প্রকল্প জায়েজ করার উদ্দেশ্যে প্রণীত।
২. সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে কত দূরে হওয়া উচিত কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র:
আঞ্জুমান ইসলাম তার লেখায় ১০ কিমি দূরত্বের কথা বলে প্রমাণ হিসেবে যে লিংকটি দিয়েছেন, সেখানে ঢুকলে যে কেউই দেখতে পারবেন, এই গাইডলাইনটি তাপবিদ্যুৎ স্থাপন সংক্রান্ত নয়, এটি হল: Guidelines for diversion of forest land for non-forest purpose, অর্থাৎ বনভূমির কত দূরের ভূমি বনায়ন ব্যতীত অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা যাবে সে সম্পর্কিত গাইডলাইন।
প্রকৃতপক্ষে, ভারতে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সংরক্ষিত বনাঞ্চল, শহর-বন্দর থেকে কত দূরত্বে স্থাপন করতে হবে সে বিষয়ে আলাদা করে একটি ইআইএ গাইডলাইন আছে যেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে:
“Locations of thermal power stations are avoided within 25 km of the outer periphery of the following:
– metropolitan cities;
– National park and wildlife sanctuaries;
– Ecologically sensitive areas like tropical forest, biosphere reserve, important lake and coastal areas rich in coral formation;”
সূত্র:
Click This Link Power Plants_010910_NK.pdf
তাহলে, ভারতের পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইআইএ সংক্রান্ত গাইডলাইনে যখন স্পষ্ট করে নগর, জাতীয় উদ্যান, বন্যপ্রাণি অভয়ারণ্য, সংরক্ষিত বনাঞ্চল, পরিবেশগত স্পর্শকাতর এলাকা ইত্যাদির ২৫ কিমি সীমার মধ্যে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ এড়িয়ে চলার কথা বলা হয়েছে, সেখানে আঞ্জুমান ইসলাম কী কারণে বনভূমির অ-বনজ ব্যাবহারের গাইডলাইনটি বেছে নিলেন?
জানতে ইচ্ছা করছে, জনাব তৌফিক ইলাহী চৌধুরী কি তাকে এটার সন্ধান দিয়েছেন? সন্ধান দিলেই-বা উনি কেন যাচাই না করে লিখে বসলেন? নাকি জেনে-বুঝেই পাঠককে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে এই কৌশল?
৩. সুন্দরবনকে ‘আবাসিক ও গ্রাম্য’ এলাকা দেখানো প্রসঙ্গে:
এ বিষয়ে আঞ্জুমান ইসলাম লিখেছেন: “বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তরের সর্বশেষ অর্থাৎ ২০০৫ সালের বিধি-বিধান/ নির্দেশনা অনুযায়ী ইআইএ রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। এতে শহর/আবাসিক/গ্রাম্য এলাকাভিত্তিক কোনো Classification নেই।“
আমরা জানি না, আঞ্জুমান ইসলাম ইআইএ’র যে লিংকটি দিয়েছেন, সে লিংকের ইআইএ’টি তিনি পড়েছেন কি না! নাকি জনাব তৌফিক ইলাহীর কথার বশবর্তী হয়ে যাচাই-বাছাই না করেই তিনি এসব কথা লিখছেন! তার দেওয়া লিংক থেকে ইআইএটি ডাউনলোড করে ২৭৮ পৃষ্ঠায় চোখ রাখলেই দেখা যাবে:
“The concentration of SO2 in the ambient air near Sundarbans region is found 8 to 10 μg/m3 (field monitoring data, see Table 6.5). Hence, it is found that the resultant concentration (24 hr average after emission contribution and only during November to February) from the power plant) of SO2 in the ambient air may be maximum 53.4 μg/m3 (see Table 8.3c) which is much below the MOEF’s standard (ECR 1997), 80 μg/m3 for residential and rural area.
Therefore, the concentration of emitted SO2 is very insignificant to have any impact on Air quality of Sundarbans.”
( সূত্র: রামপাল ইআইএ, পৃষ্ঠা ২৭৮)
অর্থাৎ কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নির্গত SO2 এর কারণে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত সময়ে সুন্দরবনের বাতাসে SO2 এর ঘনত্ব প্রতি ঘনমিটারে ৮ মাইক্রোগ্রাম থেকে বেড়ে ৫৩.৪ মাইক্রোগ্রাম হবে যা পরিবেশ আইন ১৯৯৭ (ECR 1997) অনুযায়ী আবাসিক ও গ্রাম্য (residential and rural) এলাকার জন্য নির্ধারিত মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ৮০ মাইক্রোগ্রাম এর থেকে অনেক কম।
দেখা যাচ্ছে এখানে পরিবেশ আইন ১৯৯৭ এর কথা বলা হয়েছে এবং সুন্দরবন এলাকার জন্য আবাসিক ও গ্রাম্য এলাকার মানদণ্ড ব্যবহার করা হয়েছে!
কিন্তু প্রশ্ন হল, সুন্দরবন কি আবাসিক বা গ্রাম এলাকা, নাকি পরিবেশগতভাবে স্পর্শকাতর একটি এলাকা? তাহলে সুন্দরবনের মতো পরিবেশগত স্পর্শকাতর একটি এলাকার মানদণ্ড হিসেবে আবাসিক ও গ্রাম এলাকার জন্য নির্ধারিত মানদণ্ড বেছে নেওয়া হল কেন?
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৭ ঘাঁটলে যে কেউই কারণটা বুঝতে পারবেন। এই আইন অনুসারে পরিবেশগত স্পর্শকাতর এলাকার বাতাসে SO2 ও NO2 এর ঘনত্ব প্রতি ঘনমিটারে ৩০ মাইক্রোগ্রাম (30 μg/m3) এর চেয়ে বেশি থাকা যাবে না।
যেহেতু পরিবেশগত স্পর্শকাতর এলাকার জন্য নির্ধারিত মানদণ্ডের (30 μg/m3) সঙ্গে তুলনা করলে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প কোনোভাবেই জায়েজ করা যাবে না, সেজন্য পরিকল্পিতভাবেই রিপোর্টজুড়ে সুন্দরবনের বাতাসে বিষাক্ত গ্যাসের ঘনত্বের মানদণ্ড হিসেবে আবাসিক ও গ্রাম এলাকার জন্য নির্ধারিত মানদণ্ড ব্যবহার করা হয়েছে!
৪. ছাই দিয়ে ১৪১৪ একর জমি ভরাট প্রসঙ্গে:
সীসা, পারদ, আর্সেনিক ইত্যাদি বিষাক্ত ভারি ধাতুসম্পন্ন ছাই দিয়ে ১৪১৪ একর জমি ভরাট করার তথ্যটিকে তিনি সোজা অসত্য বলে দিয়েছেন! আচ্ছা, তিনি কি তার দেওয়া লিংক-এর ইআইএটি আসলেই পড়েছেন নাকি সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি ইআইএ’র অস্তিত্ব আছে?
ইআইএর ১০৬ পৃষ্ঠায় তো দেখছি স্পষ্ট লেখা আছে:
“At first phase, only 420 acres of land will be developed for the main plant and township by dredged material and the rest area (1,414 acres) will be developed gradually with generated ash.”
অর্থাৎ প্রথম পর্যায়ে কেবল ৪২০ একর জমি মূল প্ল্যান্ট এবং টাউনশিপ-এর জন্য ড্রেজিং করা মাটি দিয়ে ভরাট করা হবে। আর বাকি এলাকা (১৪১৪ একর) উৎপাদিত ছাই দিয়ে পর্যায়ক্রমে ভরাট করা হবে।
এই নগ্ন, নির্লজ্জ মিথ্যাচারের জবাব কী হতে পারে?
৫. শব্দদূষণ প্রসঙ্গে:
তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে শব্দদূষণের আশংকা উড়িয়ে দিয়ে আঞ্জুমান ইসলাম বলেছেন:
“সদরঘাটে নির্মাণকাজ চললে সেই শব্দ ১৪ কিলোমিটার দূরে মিরপুরে পৌঁছানোর ব্যাপারটি কি যৌক্তিক? সেখানে সুন্দরবনের স্পর্শকাতর জায়গাগুলো ৭২ কিলোমিটার দূরে।“
মুশকিল হল, গোটা সুন্দরবনটাই যেখানে পরিবেশগত স্পর্শকাতর এলাকা এবং কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সুন্দরবন থেকে ১৪ কিমি দূরে অবস্থিত– সেখানে আলাদা করে ‘সুন্দরবনের স্পর্শকাতর জায়গাগুলো ৭২ কিলোমিটার দূরে’ বলে উনি কি প্রমাণ করতে চাইলেন বোঝা গেল না!
যদি সুন্দরবনের স্পর্শকাতর জায়গা বলে ইউনেস্কো ঘোষিত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট বোঝাতে চান, তাহলেও বিপদ কমে না। কারণ কয়লাভর্তি বড় বড় জাহাজ চলাচল এবং কয়লা উঠানো-নামানোর কোল টার্মিনালটি একেবারে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের পাশেই পড়েছে। ফলে সরাসরি শব্দদূষণসহ অন্যান্য দূষণের শিকার হবে।
কাজেই সদরঘাটের নির্মাণকাজের শব্দ ১৪ কিমি দূরের মিরপুরে না পৌঁছালেও সেই নির্মাণকাজের মালামাল যদি মিরপুরের মধ্যে দিয়ে পরিবহণ ও লোড-আনলোড করা হয় তাহলে মিরপর শব্দদূষণের শিকার হবে বৈকি!
সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে কয়লা পরিবহণের রুট
সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে কয়লা পরিবহণের রুট
৬. সুন্দরবনের মধ্যে দিয়ে কয়লা পরিবহনের বিপদ প্রসঙ্গে:
আঞ্জুমান ইসলাম বর্তমানে শত শত জাহাজ পশুর নদীর মধ্যে দিয়ে চলাচলের কথা উল্ল্যেখ করে বলেছেন: “বাড়তি দুটি জাহাজ চলাচলে কোন ক্ষতি হবার সম্ভাবনা নেই।” তিনি আরও বলেছেন: “কয়লাবাহী জাহাজে উত্তাল সমুদ্রের মধ্য দিয়ে খোলা কনটেইনারে করে কয়লা আনা হবে যা থেকে ঝপাৎ ঝপাৎ করে কয়লা পানিতে পড়ে যাবে– এটি শুধু অমূলক দুশ্চিন্তাই নয়, কল্পনাপ্রসূতও বটে।’’
মুশকিল হল, ঝপাৎ ঝপাৎ করে কয়লা পানিতে পড়ে দূষণ হওয়া কিংবা কয়লা খোলা অবস্থায় পরিবহণ করার অভিযোগ কারা করেছে আমাদের জানা নেই, যেমন জানা নেই বর্তমানে যে সুন্দরবনের মধ্যে দিয়ে জাহাজ চলাচল করছে তাতে কোনো ক্ষতি হচ্ছে না এ রকম কথা কারা বলছে!
আমাদের বক্তব্য হল, কয়লা যতই ঢেকে পরিবহণ করা হোক কিংবা জাহাজের গতি নিয়ন্ত্রণ করা হোক, তাতে জাহাজের কয়লাস্তূপ থেকে চুইয়ে পড়া কয়লা-ধোয়া বিষাক্ত পানি (বিলজ ওয়াটার), অ্যাংকরেজ পয়েন্টে কয়লা লোড-আনলোড করার সময় সৃষ্ট দূষণ, কয়লার গুড়া, জাহাজ-নিঃসৃত তেল-আবর্জনা, জাহাজ চলাচলের শব্দ, ঢেউ, বনের ভেতরে জাহাজের সার্চলাইটের তীব্র আলো, জাহাজের ইঞ্জিন থেকে নির্গত বিষাক্ত সালফার ও নাইট্রোজেন গ্যাস ইত্যাদির ক্ষতিকর প্রভাব দূর হয়ে যায় না।
আর বর্তমানে যে জাহাজ চলাচল করছে সেগুলো অপেক্ষাকৃত ছোট জাহাজ, কয়েকশো টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন। সেগুলোর প্রভাবে ইতোমধ্যেই সুন্দরবনের ক্ষতি হতে শুরু করেছে, সে বিষয়ে পত্রপত্রিকায় রিপোর্টও বেরিয়েছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীও এ পথে জাহাজ চলাচল বন্ধ করার কথা বলেছেন।
যেমন ১৫ মার্চ, ২০১৩ প্রথম আলো “সংকটে সুন্দরবন, সেই নৌপথ বন্ধ হয়নি” শীর্ষক রিপোর্টে লিখেছে: “সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে চালু হওয়া নৌপথের কারণে পূর্ব সুন্দরবন প্রাণিশূন্য হতে শুরু করেছে। প্রতিদিন প্রায় ১৫০টি বিশাল আকৃতির নৌযান বনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। এসব নৌযানের ঢেউ, ফেলে যাওয়া বর্জ্য তেল ও শব্দদূষণের কারণে বনের দুই পাড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বৃক্ষ, লতা, গুল্ম মরতে শুরু করেছে। সব মিলিয়ে বনের জীববৈচিত্র্য বিপন্ন হয়ে পড়েছে।”
সাধারণ নৌযান চলাচলের ফলেই যদি এই অবস্থা হয় তাহলে দুষণকারী কয়লাভর্তি বড় বড় জাহাজ চলাচল করলে কিংবা সেই কয়লাভর্তি জাহাজডুবি হলে (কয়েকদিন আগেই দক্ষিণ আফ্রিকার উপকূলে এ রকম একটি ঘটনায় স্মার্ট নামের কয়লাভর্তি জাহাজডুবি হয়ে ভয়াবহ পরিবেশ দূষণ হচ্ছে) সুন্দরবনের কী অবস্থা হবে সেটা কিন্তু আসলেই চিন্তার বিষয়।
৭.পানি উত্তোলন ও নদীদূষণ:
পানি উত্তোলন ও নদীদূষণ সম্পর্কে তিনি ইআইএ’তে বলা কথারই পুনরাবৃত্তি করেছেন, আশ্বস্ত করেছেন যে উত্তোলিত পানির পরিমাণ পশুর নদীর মোট পানিপ্রবাহের তুলনায় এতই কম যে, কোনো ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। পশুর নদী থেকে ঘণ্টায় ৯১৫০ ঘন মিটার হারে পানি প্রত্যাহারের ফলে পানির লবণাক্ততা, নদীর পলিপ্রবাহ, প্লাবন, জোয়ার-ভাটা, মাছসহ নদীর উদ্ভিদ ও প্রাণিজগৎ ইত্যাদির উপর কেমন প্রভাব পড়বে তার কোনো বিশ্লেষণ করা হয়নি এই যুক্তিতে যে, এই পানি পশুর নদীর শুকনো মৌসুমের মোট পানিপ্রবাহের ১ শতাংশেরও কম।
দুর্ভাবনার বিষয় হল, প্রত্যাহার করা পানির পরিমাণ ১ শতাংশেরও কম দেখানোর জন্য পানিপ্রবাহের যে তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে তা সাম্প্রতিক সময়ের নয়, ৮ বছর আগে, ২০০৫ সালে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক সংগৃহীত। (রামপাল ইআইএ পৃষ্ঠা ২৮৫)
অথচ এই ইআইএ রিপোর্টেই স্বীকার করা হয়েছে, নদীর উজানে শিল্প, কৃষি, গৃহস্থালিসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে নদী থেকে দিনে দিনে পানি প্রত্যাহারের পরিমাণ বাড়ছে যার ফলে শুকনো মৌসুমে দিন দিন পানির প্রবাহ কমে যাচ্ছে যা পশুর নদীর জন্যও একটি চিন্তার বিষয়।(রামপাল ইআইএ পৃষ্ঠা ২৫০)।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণের সময় লাগবে সাড়ে ৪ বছর এবং অপারেশনে থাকবে অন্তত ২৫ বছর। তাহলে এই দীর্ঘ সময় জুড়ে পশুর নদীর পানিপ্রবাহ ইআইএ রিপোর্ট অনুসারেই ২০০৫ সালের অনুরূপ থাকার কথা নয়।
ফলে ওই সময়ে পশুর নদী থেকে ঘণ্টায় ৪ হাজার মিটার পানি প্রত্যাহার করলে তা পশুর নদীর পানিপ্রবাহের উপর কী কী প্রভাব ফেলবে তার গভীর পর্যালোচনা ছাড়া স্রেফ নদীর হাইড্রোলজিক্যাল বৈশিষ্টের কোনো পরিবর্তন নাও হতে পারে (may not be changed) জাতীয় কথাবার্তা বলে পার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
আর যতই পানি পরিশোধনের কথা বলা হোক, কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পানি নির্গমন হলে তাতে বিভিন্ন মাত্রায় দূষণকারী উপাদান থাকবেই। যে কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বেলায় ‘শূণ্য নির্গমণ’ বা ‘জিরো ডিসচার্জ’ নীতি অবলম্বন করা হয়। যে এনটিপিসি রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে যাচ্ছে, সেই এনটিপিসি যখন ভারতে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করে তখন ‘জিরো ডিসচার্জ’ নীতি অনুসরণ করে।
যেমন: ভারতের ছত্তিশগড়ের রায়গড়ের কাছে ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইআইএ রিপোর্টে বলা হয়েছে:
Zero Discharge concepts will be followed
(সূত্র: রায়গড় ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইআইএ, এক্সিকিউটিভ সামারি, পৃষ্ঠা ই-১২)
অথচ রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ই্আইএ রিপোর্টে বলা হয়েছে:
To meet the water demand for plant operation, domestic water, environmental management 9,150 m3/hr (equivalent to 2.54 m3/s) surface water will be withdrawn from the Passur river and after treatment water shall be discharged back to the Passur river at the rate of 5,150m3/hr
অর্থাৎ “প্ল্যান্ট পরিচালনা, ঘরোয়া ব্যবহার, পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কাজে পশুর নদী থেকে ঘণ্টায় ৯১৫০ ঘনমিটার পানি সংগ্রহ করা হবে এবং পরিশোধন করার পর পানি পশুর নদীতে ঘন্টায় ৫১৫০ ঘনমিটার হারে নির্গমন করা হবে।“
কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পানি নির্গমন করা হলে নির্গত পানির তাপমাত্রা, পানি নির্গমণের গতি, পানিতে দ্রবীভূত নানান উপাদান বিভিন্ন মাত্রায় পানি দূষণ ঘটাবে যা গোটা সুন্দরবন এলাকার পরিবেশের জন্য বিপদজনক হয়ে উঠবে।
৮. বড় পুকুরিয়ার পরিবেশ দূষণ:
বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদাহরণ দিয়ে আঞ্জুমান ইসলাম বলেছেন: “বড়পুকুরিয়া সাব-ক্রিটিক্যাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রায় ৭-৮ বছর চালু আছে। কিন্তু কোনো প্রকার এসিড বৃষ্টি আজ পর্যন্ত হয়নি বা হওয়ার প্রশ্নই উঠেনি। বর্তমানে রামপালের প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সুপার-ক্রিটিক্যাল ও সর্বাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর হওয়ায় এসিড বৃষ্টির সমূহ সম্ভাবনা একবারেই নেই। বরং দারিদ্র্যপীড়িত এ এলাকায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হলে অত্র এলাকার আমূল উন্নতি সাধিত হবে, এখানকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান আশাতীতভাবে বৃদ্ধি পাবে। এসব দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সম্পদের উপরে নির্ভরশীলতা হ্রাস পাবে। ফলে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও সম্পদ রক্ষা পাবে।“
এই বক্তব্যের মধ্যে অনেকগুলো ভুল ধারণা আছে।
প্রথমত, ধরে নেওয়া হয়েছে যে বড়পুকুরিয়ার কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাধ্যমে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীও রামপাল উদ্বোধনের বেলায় একই কথা বলেছেন। আমরা জানি না কোন সমীক্ষার ভিত্তিতে তারা এই কথা বলছেন।
বাস্তবে কেউ বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আশপাশে গেলেই দেখতে পাবেন পরিবেশ বিপর্যয়ের ভয়াবহ উদাহরণ। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চারপাশের কৃষিজমি কয়লা দূষণে রীতিমত কালো রঙ ধারণ করেছে, মাটির নিচের পানির স্তর নেমে গেছে, ছাইয়ের পুকুরে গাদা করে রাখা বিদুৎ কেন্দ্রের ছাই পরিবেশ দূষণ ঘটাচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, সুপার-ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি সম্পর্কিত ভুল ধারণা। বাস্তবে সুপার-ক্রিটিক্যাল টেকনোলজিতে সাব-ক্রিটিক্যাল টেকনোলজির তুলনায় মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশ দূষণ কম হয় যা মোট দূষণকে সামান্যই হ্রাস করবে।
তাছাড়া বছরে ৫২ হাজার টন সালফার ডাই অক্সাইড, ৩১ হাজার টন নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড, সাড়ে ৯ লক্ষ টন ফ্লাই অ্যাশ ও বটম অ্যাশের প্রাক্কলন করা হয়েছে তা এই সুপার-ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি বিবেচনায় নিয়েই। অর্থাৎ সুপার-ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ব্যবহার করার পরেও এই পরিমাণ দূষণ হবে।
তৃতীয়ত, বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গে প্রস্তাবিত রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তুলনা করাই সঠিক নয়। কারণ বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্র ছোট আকারের এবং বড়পুকুরিয়ার পাশে সুন্দরবনের মতো স্পর্শকাতর বনাঞ্চল নেই।
বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা মাত্র ২৫০ মেগাওয়াট যার মধ্যে আবার কার্যত ১২৫ মেগাওয়াটের একটি ইউনিটই কেবল চালু থাকে। অথচ রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষমতা ১৩২০ মেগাওয়াট যা বড়পুকুরিয়ার কার্যকর (১২৫ মেগাওয়াট) বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার ১০ গুণেরও বেশি। ফলে বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ফলে যে ক্ষতি হয়েছে এবং হচ্ছে, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ফলে তার দশগুণেরও বেশি ক্ষতি হবে।
চতুর্থত, ধরে নেওয়া হয়েছে যে, দরিদ্র জনগণই সুন্দরবনের জন্য মূল বিপদ! এই ধরনের বক্তব্য আমরা সরকারি প্রেসনোটেও দেখেছি। বাস্তবে দরিদ্র জনগণ অর্থাৎ মৌওয়াল, বাওয়ালি, জেলেসহ সুন্দরবন অঞ্চলের দরিদ্র জনগণ সুন্দরবনের বাস্তুসংস্থান বা ইকোসিস্টেমের অংশ হিসেবে যুগ যুগ ধরে সুন্দরবনের সঙ্গে সহাবস্থান করছে।
সুন্দরবনের আসল বিপদ হল বিভিন্ন লুটেরা কর্তৃক সুন্দরবনের গাছ লুট, বাঘ-হরিণ শিকার, বন্যপ্রাণি পাচারসহ রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো কথিত উন্নয়ন প্রকল্প যেসবের হাত থেকে প্রিয় বনবিবিকে রক্ষা করতে সুন্দরবনের দরিদ্র মানুষ প্রতিনিয়ত লড়াই করছে।
৯. ছাইয়ের ব্যবহার:
কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি বড় সমস্যা হল উৎপাদিত বিষাক্ত ছাইয়ের হাত থেকে পরিবেশ রক্ষা ও তার সুষ্ঠু ব্যবহার করা। ইআইএ রিপোর্টের মতো আঞ্জুমান ইসলামও ছাই বাতাসে ছড়াবে না এবং সিমেন্ট কারখানায়, রাস্তানির্মাণ ইত্যাদি কাজে ছাইয়ের সুষ্ঠু ব্যবহার হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন। অথচ ‘কিছু উড়ন্ত ছাই’ বাতাসে মিশবে স্বীকার করা হয়েছে খোদ ইআইএ রিপোর্টে:
“Despite efficient ash management system, some fugitive ash might be produced and dispersed to the surrounding area” (পৃষ্ঠা ২৭১)
“Very little portion of this ash might escape from the system as waste.” (পৃষ্ঠা ২৮৫)
আর ছাইয়ের সুষ্ঠু ব্যবহার সম্পর্কে আশ্বস্ত হওয়ার আগে, তৌফিক ইলাহীর সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি আঞ্জুমান ইসলাম বড়পুকুরিয়া থেকে উৎপাদিত ছাইয়ের ব্যাবহার সম্পর্কে একটু খোঁজ-খবর করে নিলে ভালো হত! বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত দৈনিক ৩০০ মেট্রিক টন বর্জ্য ছাই কোনো সিমেন্ট কারখানায় ব্যবহারের বদলে ছাই-এর পুকুর বা অ্যাশ পন্ডে গাদা করে রেখে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটানো হচ্ছে।
২০০৬ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত চার বছরে ২ লক্ষ ৬০ হাজার ৬১৩ টন ছাই পুকুরে জমা করে পুকুরের প্রায় পুরোটাই ভরে ফেলা হয়েছে। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্যও ১০০ একরের ছাইয়ের পুকুরের পরিকল্পনা করা হযেছে। অ্যাশ পন্ড বা ছাইয়ের পুকুরে গাদা করে ছাই বাতাসে উড়ে, ছাই-মিশ্রিত পানি চুইয়ে মাটির নিচে ও আশপাশের জলাভূমিতে বিষাক্ত ভারি ধাতুর মারাত্মক দূষণ ঘটাবে।
১০. সুন্দরবনের দিকে তিন মাসের বায়ুপ্রবাহ:
এছাড়া আঞ্জুমান ইসলাম বছরে মাত্র তিনমাস বায়ুপ্রবাহের দিক কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সুন্দরবনের দিকে প্রবাহের কথা বলে আশ্বস্ত করতে চেয়েছেন: “শীতকালে (৩ মাস) বাতাস উত্তর দিক হতে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অর্থাৎ সুন্দরবনের পূর্বদিকে সামান্য অংশে প্রবাহিত হয় বলে সুন্দরবনের ক্ষতির আশংকা নেই বললেই চলে।“
প্রথমত, তিন মাস নয়, নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি– এই চার মাস ধরে বাতাস উত্তর দিক থেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব দিকে প্রবাহিত হবে (শুধু দক্ষিণ-পূর্ব দিক নয়)।
“During November to February, maximum prevailing wind flows from north and north-west to south and Southeast direction and for rest of the period it flows from south.”
(সূত্র: ইআইএ পৃষ্ঠা ১৩০)
আর এই টানা চার মাস ধরে শুষ্ক মৌসুমে সালফার ও নাইট্রোজেনসহ বিষাক্ত গ্যাস একটানা সুন্দরবন অঞ্চলে অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে বেশি থাকবে বলে সুন্দরবনের পরিবেশ বিপর্যয়ের জন্য এই চার মাসই যথেষ্ট।
দ্বিতীয়ত, বাকি ৮ মাস ধরে বিষাক্ত বাতাস দক্ষিণ থেকে উত্তরে অর্থাৎ কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে খুলনা-বাগেরহাট শহরের দিকে প্রবাহিত হবে যা খুলনা-বাগেরহাটের জনবসতির জন্য বিপর্যকর হবে। কারণ খুলনা-বাগেরহাট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২৫ কিমি বিপদসীমার মধ্যে পড়েছে।
তৃতীয়ত, কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দূষণ শুধু বায়ুবাহিত নয়, যে বাতাস চার মাস ধরে সুন্দরবনের দিকে প্রবাহিত হবে বলে কেবল চার মাসই পরিবেশ দূষণ ঘটবে। কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পানিদূষণ, শব্দদূষণ, ছাইয়ের দূষণ, কয়লা পরিবহণের কারণে দূষণ সারা বছর ধরেই ঘটবে যার সঙ্গে বাতাসের দিকের কোনো সম্পর্ক নেই।
আসলে, যে প্রকল্পের ফলে সুন্দরবন ধ্বংস হবে বলে সারা দেশের বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ, প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন থেকে তীব্র প্রতিবাদ হচ্ছে, সেই প্রকল্পের সপক্ষের দুজন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে, তাদের বক্তব্যের সত্যতা যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই না করেই বিভ্রান্তির এই ‘কিছু অভিযোগ, কিছু উত্তর’ লেখাটির মাধ্যমে ড.আঞ্জুমান ইসলাম তার ‘পানি পরিশোধন ও পরিবেশ প্রকৌশলী’ পরিচয়ের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি বলেই মনে হয়।