somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অডার অভ দ্য সোলার টেম্পল: একটি আত্মঘাতী কাল্ট

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সকাল ৯:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। আমাদের এক উন্নত আধ্যাত্মিক স্তরে প্রবেশ করতে হবে। সুতরাং তুমি আত্মহত্যা কর। তারপর সিরিয়াস নক্ষত্রকে আবর্তন করা একটি গ্রহে তোমার নতুন জীবন শুরু হবে ... সেই নব্বুয়েরই দশকের মাঝামাঝি বিকৃত মস্তিস্কের এক ধর্মগুরুর এরকম উদ্ভট কথায় কিছু মানুষ বিশ্বাস করেছিল বৈ কী; তারপর ১৯৯৪ সালে তাদের বিকৃত মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল কানাডার অগ্নিদগ্ধ বাড়িতে ... তারপর সুইজারল্যান্ডের গ্রামে, ফ্রান্সের এক অরণ্যে। এই হল খুন এবং আত্মহত্যাপ্রবণ গুপ্ত গোষ্ঠী ‘অডার অভ দ্য সোলার টেম্পল’ -এর মর্মান্তিক পরিনতি। ‘পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে’- এই শ্লোগান নিয়ে কুড়ি শতকে বিশ্বজুড়ে বেশ ক’টি আত্মহত্যাপ্রবণ সিক্রেট কাল্ট-এর উদ্ভব হয়েছিল, এদেরই অন্যতম হল ‘অডার অভ দ্য সোলার টেম্পল’। যারা মৃত্যুকে মনে করত আর্ন্তনাক্ষত্রিক ভ্রমন। তাদের কল্পনাপ্রবণ ধর্মনেতা অত্যন্ত সুচতুরভাবেই মধ্যযুগীয় ধর্মবিশ্বাস এবং ‘নিউ এজ’ ধর্মের সমন্বয় ঘটিয়েছিলেন- যার মূলকথা হল-পৃথিবীর ধ্বংস আসন্ন। ১৯৯৪ সালে সুইজারল্যান্ড এবং কানাডার কুইবেকে; ১৯৯৫ সালে ফ্রান্সে এবং ১৯৯৭ সারে কুইবেকে খুন-আত্মহত্যার পর কুখ্যাত ‘অডার অভ দ্য সোলার টেম্পল’ কাল্টটি আর্ন্তজাতিক মহলে ঝড় তোলে।



জোসেফ ডি মামব্রো। ইনিই ‘অডার অভ দ্য সোলার টেম্পল’ -এর ধর্মগুরু । ইনি ১৯২৪ সালের ১৯ অগস্ট ফ্রান্সে জন্ম গ্রহন করেন। জন্মসূত্রে ছিলেন ফ্রাঙ্কো-কানাডিয়, পেশায় রত্নব্যবসায়ী। বাইবেলের ভুল ব্যাখ্যা করে ৩ মাসের শিশু হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন মামব্রো!


কেবল প্রাচ্যেই নয়, ইউরোপেও নানা ধর্মীয় সম্প্রদায় ও কাল্টের ছড়াছড়ি। তেমনি তরুণ বয়েসে জোসেফ ডি মামব্রো Rosicrucian নামে একটি আর্ন্তজাতিক আধ্যাত্মিক সংঘের সদস্য ছিলেন। সম্প্রদায়টি বিশ্বের প্রাচীন রহস্যসমূহ পর্যালোচনা করে মরমী জ্ঞানলাভ করত। সে যাই হোক। ষাটের দশকের শেষে মামব্রো ওই সংঘ থেকে সরে আসেন। এরপর ‘পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে’ এই বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে নিজেই ১৯৭৬ সালে Centre for the Preparation of the New Age নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন । সংগঠনে অনেকেই যোগ দেয়। উল্লেখ্য, দশম শতকের শেষেও ‘পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার’ বিশ্বাস খ্রিষ্টীয় জগতে ছড়িয়ে পড়েছিল। এখন একুশ শতকে আবার বলা হচ্ছে এ বছর অর্থাৎ ২০১২ সালে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে!



লাক জৌরেট। ‘অডার অভ দ্য সোলার টেম্পল’- এর আরেকজন প্রবর্তক। লাক জৌরেট জাতে ছিলেন বেলজিয়ান এবং পেশায় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক।


১৯৭৮ সালে মামব্রো জেনেভায় ‘গোল্ডেন ওয়ে ফাউন্ডেশন’ নামে আরও একটি আধ্যাত্মিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর মামব্রোর সঙ্গে বেলজিয়ান চিকিৎসক লাক জৌরেট এর পরিচয় হয়। লাক জৌরেট গোল্ডেন ওয়ে ফাউন্ডেশন- এর আলোচনা সভায় আসতেন। মামব্রো ... saw in him (লাক জৌরেট) the charismatic man who could present the group's philosophy to the public. এর পর পরই মামব্রো এবং লাক জৌরেট ‘অডার অভ দ্য সোলার টেম্পল’ নামে একটি সংঘ প্রতিষ্ঠা করে ।



জোসেফ ডি মামব্রো। তরুণ বয়েসে।

‘অডার অভ দ্য সোলার টেম্পল’ -এর প্রধান কেন্দ্র সুইজারল্যান্ডে হলেও কানাডায় কাল্টটির মতবাদ প্রচার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কাল্টটি এ উদ্দেশ্যে মামব্রো এবং তার স্ত্রীকে কানাডায় যাওয়ার জন্য অর্থ সাহায্য করে । মামব্রো সংগঠন পরিচালিত করতেন। লাক জৌরেট ‘অডার অভ দ্য সোলার টেম্পল’ এর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড এবং কানাডায় প্রচার করতেন। কানাডার কুইবেকের মরিন হাইটস এবং Sainte-Anne-de-la-Pérade তে ‘অডার অভ দ্য সোলার টেম্পল’ এর লজ বা সাধনকুটির গড়ে ওঠে। (পরবর্তীকালে এই লজগুলিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল) ... ‘অডার অভ দ্য সোলার টেম্পল’ এর সদস্যরা বিশ্বাস করত, মানে মামব্রো এবং লাক জৌরেট এদের বুঝিয়েছিলেন যে- বিশ্বব্রহ্মান্ডের রূপান্তর আসন্ন। শরীর ও আত্মাকে সেই মহাজাগতিক পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। নব্বুয়ের দশকের মাঝামাঝি বিশ্বজুড়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দেবে । কাজেই উচ্চতর আধাত্মিক স্তরে উপনীত হওয়া জরুরি!



‘অডার অভ দ্য সোলার টেম্পল’ এর পদক।


লাক জৌরেট নিজেকে খ্রিস্ট মনে করতেন। অবশ্য অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে তিনি কানাডায় পুলিশের নজরে পড়েন। কাল্টের ধনী এবং আকর্ষণীয় সদস্যদের প্রতি আগ্রহী ছিলেন লাক জৌরেট । অনেক সম্পদশালী ইউরোপীয়ান কাল্টে যোগ দিয়েছিল। এদের একজন ৫৮ বছর বয়েসি আর্ন্তজাতিক ভাবে পরিচিত সুইস সঙ্গীতপরিচালক মিচেল টাবাখনিক । ... ওদিকে মামব্রো কাল্টের সদস্যদের কাছে দাবি করেন যে তার কন্যা এম্মানুয়েলা ‘কসমিক চাইল্ড’ বা ‘মহাজাগতিক শিশু’! এম্মানুয়েলার জন্ম অলৌকিক, অর্থাৎ যিশুর মতোই এম্মানুয়েলারও ‘ভার্জিন বার্থ’ হয়েছে। এবং She (অর্থাৎ এম্মানুয়েলা) would lead them (অর্থাৎ ‘অডার অভ দ্য সোলার টেম্পল’ কাল্টের সদস্যদের) after death to a planet which was said to orbit around the star Sirius, but in order to do so they would have to die in a fire, as was prophesied for the end of the world. মামব্রো কাল্টের সদস্যদের আরও বলেন যে- মৃত্যু হল এক অলীক মায়াঘোর; আর সত্যিকারের জীবন পৃথিবীতে নয় - অপেক্ষা করছে অন্য এক গ্রহে ।




Sainte-Anne-de-la-Pérade, কুইবেক, কানাডা। এখানেই ‘অডার অভ দ্য সোলার টেম্পল’ এর সাধনকুঠির গড়ে উঠেছিল ...


১৯৮৭ সালের অক্টোবর মাসে এক বক্তৃতায় লাক জৌরেট ‘অডার অভ দ্য সোলার টেম্পল’ -এর মতবাদ তুলে ধরেন। (১) কর্তৃত্ব ও শক্তির ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী বিশুদ্ধ নির্দেশনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা; (২) ক্ষণিক জাগতিক বিষয়ের ওপর আধ্যাত্মিকতার প্রধান্য আরোপ; (৩) মানুষকে তার আত্মগৌরবের সচেতনতা ফিরিয়ে দেওয়া। (৪) মানবজাতিকে তার মহাজাগতিক রূপান্তরে সাহায্য করা; (৫) পৃথিবীতে যে তিনটি স্তর রয়েছে, দেহ, আত্মা এবং অন্তর তাতে অংশ নেওয়া; (৬) খ্রিস্টধর্ম এবং ইসলাম ধর্মকে একীভূত করা; (৭) মহাজাগতিক গৌরবে খ্রিষ্ট প্রত্যার্বন করবেন। তার জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করা । এছাড়া আসন্ন মহাজাগতিক প্রলয়ে টিকে যাওয়া বিপন্ন পরিবেশ সম্বন্ধে সচেতনতা এবং বিশ্বজগতে কাল্টের সদস্যদের বিশেষ দায়িত্ববোধ সম্বন্ধেও লাক জৌরেট বিশ্ববাসীকে সচেতন করে তোলেন।



দ্বাদশ শতকের নাইট টেম্পলার। জোসেফ ডি মামব্রো এবং লাক জৌরেট মনে করতেন তারা দুজনে মৃত নাইট টেম্পলারদের আত্মা।

‘অডার অভ দ্য সোলার টেম্পল’ -এর অন্য নাম “International Chivalric Organization of the Solar Tradition,” এই Chivalric শব্দটি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষন করে । Chivalric শব্দটি তো মধ্যযুগীয় নাইটদের সম্বন্ধে প্রযোজ্য। কাজেই এর খানিকটা ব্যাখ্যা প্রয়োজন। জোসেফ ডি মামব্রো বিশ্বাস করতেন আজও নাইট টেম্পলার বেঁচে রয়েছেন। এবং তিনি নাইট টেম্পলার সংঘের একজন সদস্য। তো, কারা এই নাইট টেম্পলার? ...ক্রসেড চলছিল। নয় জন ফরাসি নাইট ক্রসেড চলাকালীন সময় অর্থাৎ ১১১৮ খ্রিস্টাব্দে খ্রিস্টান তীর্থযাত্রীদের রক্ষা করার জন্য জেরুজালেম পৌঁছেছিল। এদেরই নাইট টেম্পলার বলা হয়। তারা একটি সিক্রেট কাল্ট গঠন করেছিল। পরবর্তী ২০০ বছরে নাইট টেম্পলাররা ইউরোপে অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তাদের শক্তিমত্তায় শাসকবর্গ বিশেষ করে পোপ ক্রোধান্বিত হয়ে ওঠেন। ১৩০৭ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের রাজা ফিলিপ দ্য ফাইর, নাইট টেম্পলারদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ। ১৩১৪ সালে শেষ নাইট টেম্পলার গ্র্যান্ড মাষ্টার জ্যাকোয়েস দ্য মোলেই কে আগুনে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়। জোসেফ ডি মামব্রো এবং লাক জৌরেট বিশ্বাস করতেন নাইট টেম্পলারদের আগুনে পুড়িয়ে মারা হলেও তাদের আত্মা মরেনি ... That lived on in the elite members of the Solar Temple! নাইট টেম্পলাররা আগুনে ধ্বংস হয়েছিল। পৃথিবীও আগুনে ধ্বংস হবে। তার আগে ‘অডার অভ দ্য সোলার টেম্পল’ এর সদস্যদেরও আগুনে ধ্বংস হতে হবে।



পোপের নির্দেশে নাইট টেম্পলারদের ওপর নির্যাতন চলছে ...


জোসেফ ডি মামব্রো এবং লাক জৌরেট ভাবতে শুরু করলেন যে মধ্যযুগের মতোই বিভিন্ন দেশের সরকার ‘অডার অভ দ্য সোলার টেম্পল’ এর ওপর নির্যাতন করছে এমন একটা সময়ে যখন নাকি মহাজাগতিক প্রলয় আসন্ন ! এই মহাবিপর্যয়ে ‘অডার অভ দ্য সোলার টেম্পল’ কাল্টকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। They decided that some members should leave the earth prematurely and "transit" to a better world. ‘অডার অভ দ্য সোলার টেম্পল’ কাল্টে আগুন এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।They believe that the world will end in fire. In order for them to transit to another world, they must die in a fire.



Sarah Moran এর The Secret World of Cults বইটি প্রচ্ছদ। কেন কাল্ট নিয়ে মানুষের এত আগ্রহ-সেটি সহজেই বোঝা যায়।

The Secret World of Cults বইতে Sarah Moran লিখেছেন: নাইট টেম্পলারদের পুড়িয়ে মারা হয়েছিল বলে লাক জৌরেট- এর আগুন নিয়ে এক ধরণের অবসেসন ছিল। কাজেই ‘অডার অভ দ্য সোলার টেম্পল’ -এর সদস্যদের কাছে fire was the signal for the world's demise. Fire, while destructive, also had the power to transform, as in the alchemical rituals that were endowed with the mystical power to turn base substance into more refined and valuable forms.



ও চির প্রণম্য অগ্নি!

আগুনেই শেষ হয়ে যাবে সব! কাজেই-As part of Jouret's plan to end in fire, he had rigged gasoline bombs at the various suicide sites to go off at the simple ringing of a phone. Whoever was near the bombs, whether dead, dying or just captive, would be incinerated. He was a long way from the original ideals of the knightly order.




মানচিত্রে কানাডার কুইবেক এর মরিন হাইটস।


আগুনে আসক্তি বাদেও লাক জৌরেট দিনদিন উৎকেন্দ্রিক হয়ে উঠছিল। কাল্টটির নারী সদস্যদে সঙ্গে তিনি যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হতেন। মনে থাকার কথা নাইট টেম্পলাররা পরবর্তী ২০০ বছরে ইউরোপে শক্তিশালী হয়ে ওঠেছিল। তারাও মদ্যপান সহ নানা স্ক্যান্ডালে জড়িয়ে পড়েছিল, যে কারণে পোপ তাদের ওপর ক্ষেপে উঠেছিলেন । অবশ্য কাল্টটির নারী সদস্যদে সঙ্গে যৌন সর্ম্পক স্থাপনের জন্য লাক জৌরেট-এর কৈফিয়ৎ ছিল। কি সেই কৈফিয়ৎ? তা হল ... এতে নাকি ‘আধ্যাত্বিক শক্তি’ বৃদ্ধি পায়। জোসেফ ডি মামব্রোও এ বিষয়ে পিছিয়ে ছিলেন না। তিনিও কাল্টটির নারী সদস্যদে সঙ্গে যৌনসঙ্গমে লিপ্ত হতেন। এ ছাড়া মামব্রো ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে আত্মা দেখানোর নাম করে নানা রকম ভেলকিবাজী করতেন। এসব করা ছাড়াও জোসেফ ডি মামব্রো এবং লাক জৌরেট অনেক বৈবাহিক সম্পর্ক এবং প্রেমের সম্পর্ক ভেঙেছেন। কেন? জুটি মহাজাগতিক ভাবে ভারসাম্যপূর্ণ নয় বলে ...



কানাডার কুইবেক এর মরিন হাইটস।

নব্বুয়ের দশকের মাঝামাঝি ‘অডার অভ দ্য সোলার টেম্পল’ কাল্টে অর্ন্তবিরোধ শুরু হয়। জোসেফ ডি মামব্রোর ছেলে তার বাবার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ আনে। ঠিক ওই সময়ই লাক জৌরেট এবং জোসেফ ডি মামব্রোর মধ্যে সংঘাত শুরু হয় ... সম্ভবত অর্থনৈতিক কারণে। কাল্টটি, পরে জানা গিয়েছিল যে- ‘মানি লন্ডারিং’ করত।



‘অডার অভ দ্য সোলার টেম্পল’ কাল্টের সদস্য টনি এবং নিকি ডুটোইট। কোলে এদের ৩ মাসের শিশু খ্রিস্টোফার-ইম্মানুয়েল। এই শিশুটিকে কাঠের চোখা লাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়েছিল।

১৯৯৪ সালের অক্টোবর মাসে কানাডার কুইবেক- এর মরিন হাইটস-এর একটি লজে কাঠের চোখা লাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তিন মাসের একটি শিশুকে হত্যা করা হয়। হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন জোসেফ ডি মামব্রো স্বয়ং। কেন? শিশুটি নাকি বাইবেল বর্ণিত Anti-Christ! জোসেফ ডি মামব্রো বিশ্বাস করতেন যে কাল্টে খ্রিস্টবিরোধী জন্ম নিয়েছে, সেই Anti-Christ এর লক্ষ জোসেফ ডি মামব্রোর আধ্যাত্মিক মিশন ব্যর্থ করে দেওয়া!



একটি সুইস গ্রাম; শান্তিপূর্ণ আর ছবির মতো সুন্দর ... কে বলবে এ স্বর্গ নয়? অথচ ওই অপরূপ সৌন্দর্যের দিকে না তাকিয়ে ওই নির্জন স্বর্গভূমিতে একদল বিভ্রান্ত উন্মাদ হত্যালীলায় মেতেছিল।

এরপর দুটি সুইস গ্রামে এবং মরিন হাইটস-এ কাল্ট সদস্যদের খুন-আত্মহত্যা শুরু হয়। ১৫ জন বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়; ৩০ জন গুলিতে; এবং অন্য ৮ জন ছুরিকাঘাতে। এদের অনেকেই সম্ভবত মৃত্যুভয় এড়ানোর জন্য নেশাসক্ত ছিল । পরে বাড়িগুলিতে টাইমার ডিভাইস ব্যবহার করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।



পশ্চিম সুইজারল্যান্ডের একটি মাটির তলায় প্রার্থনাগৃহে আরও ৪৮ জন আত্মহত্যা করে । সেই প্রার্থনাগৃহে ছিল সার সার আয়না এবং নাইট টেম্পলারদের প্রতীক।


পাগুলো একসঙ্গে, মাথা বাইরের দিকে বৃত্তাকারে পড়ে থাকা মৃতদেহগুলির পরনে ছিল কাল্টের ধর্র্মীয় পোশাক; মাথায় প্লাস্টিকের ব্যাগ, মাথায় গুলির চিহ্ন। প্লাস্টিকের ব্যাগ হল পরিবেশ বিপর্যয়ের প্রতীক। যা কাল্টের সদস্যরা সিরিয়াস গ্রহে চলে গেলে পৃথিবীর মানবজাতি মুখোমুখি হবে। ... সব মিলিয়ে ৭৪ জন মারা যায়।



Catherine Lowman Wessinger এর How the Millennium Comes Violently বইটির প্রচ্ছদ। মনে থাকার কথা ‘পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে’ এই বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে জোসেফ ডি মামব্রো ১৯৭৬ সালে Centre for the Preparation of the New Age নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন । সংগঠনে অনেকেই যোগ দেয়। উল্লেখ্য, দশম শতকের শেষেও ‘পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়ার’ বিশ্বাস খ্রিষ্টীয় জগতে ছড়িয়ে পড়েছিল। এখন একুশ শতকে আবার বলা হচ্ছে এ বছর অর্থাৎ ২০১২ সালে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে!

একজন আত্মহত্যাকারী কাল্ট সদস্য চিরকুটে লিখেছে: “It is with unfathomable love, pure joy and no regret that we leave this world. Men, do not cry for our fate, but cry for your own,” জোসেফ ডি মামব্রোও একটি চিরকুট রেখে যান। তাতে লাক জৌরেট এর বিরুদ্ধে তার নানা অভিযোগ ছিল।




মিচেল টাবাখনিক,৫৮, আর্ন্তজাতিক ভাবে পরিচিত সুইস সঙ্গীতপরিচালক। ‘অডার অভ দ্য সোলার টেম্পল’ এর সদস্য হিসেবে একে গ্রেফতার করা হয়। এবং ২০০১ সালে এর বিচার শুরু হয়।


‘অডার অভ দ্য সোলার টেম্পল’ কাল্টটি আজও তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে । বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা কুইবেকে ৩০ জন এবং অন্যত্র ৫০০ জন। কাজেই ভবিষ্যতে আরও খুন এবং আত্মহত্যা সংগঠিত হতে পারে। অথচ ধর্মীয় স্বাধীনতার কারণে এ ক্ষেত্রে ইউরোপীয় কিংবা কানাডিয় পুলিশের করার কিছু নেই । আইন রক্ষাকারী সংস্থা ধর্মীয় গোষ্ঠীর কাজকর্মে বাধা দিতে পারে না, তারা কেবল কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে ...

ছবি: ইন্টারনেট।

তথ্যসূত্র:

Click This Link
Click This Link
Click This Link
http://www.religioustolerance.org/dc_solar.htm
Click This Link

ভিডিও লিঙ্ক

Click This Link
Click This Link

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১২:৪২
৪৫৬ বার পঠিত
২৭টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারের মতো প্রতিষ্ঠানের উচিত তাদের অবস্থান পুনর্মূল্যায়ন করা এবং বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া।

লিখেছেন জ্যাকেল , ২৩ শে নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৫

বাংলাদেশে গণমাধ্যমের ভূমিকা বরাবরই সংবেদনশীল এবং গুরুত্বপূর্ণ। একটি গণতান্ত্রিক সমাজে গণমাধ্যমের কাজ হলো সত্য প্রকাশ, জনমতের প্রতিনিধিত্ব এবং গণতন্ত্রকে সুরক্ষা দেওয়া। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন মহলে অভিযোগ উঠেছে যে, বাংলাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার সাজিদ কমেন্ট অফ রাখায় এখানে লিখছি (সাময়িক)

লিখেছেন মিরোরডডল , ২৩ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:০৫


সাজিদের বিদায় পোষ্ট দেখলাম, কমেন্ট সেকশন বন্ধ রাখায় ভাবলাম এখানেই লিখে যাই।

জানিনা কি বলবো, হয়তো এটাই দেখা বাকি ছিলো।
চলে যাবার কারণ জানিনা কিন্তু অনুমান করতে পারছি।
Man! you shouldn't leave.

ব্লগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখ হাসিনা রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার হতে যাচ্ছেন?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৫৭


আজকাল মানুষ চেনা বড্ড কঠিন হয়ে পড়ছে। কে কোন উদ্দেশ্য নিয়ে কার পক্ষে দাঁড়াচ্ছে তা বুঝা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। রাজনীতিতে এই কথা আরো বেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কখনো বিদায় বলতে নাই

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ২৩ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



ব্লগে কিছুদিন ধরে অনিয়মিত হওয়ায় কখন কি ঘটে জানি না।
কিছুক্ষণ আগে মিররডলের একটা পোস্টে জানতে পারলাম , ব্লগার আমি সাজিদ ঘোষণা দিয়ে ব্লগ ছেড়েছেন । তার সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তীব্র নিন্দা জানাই

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৩ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৭



চাঁদগাজী একজন গ্রেট ব্লগার। তার তুলনা হয় না।
সামু তার সাথে বারবার অন্যায় করেছে। একটা দিন তাকে শান্তিতে ব্লগিং করতে দেওয়া হয়নি। সামুর ইতিহাসে তাকে সবচেয়ে বেশি বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×