somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইনকা সভ্যতা, পাথর নগর, স্প্যানিশ বর্বরতা ও মাচু পিকচুর সেই সূর্যদেবতার থান ...

২৬ শে জুলাই, ২০০৯ দুপুর ১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পাহাড়ের কোলে ইনকাদের পাথরনগর ...আধুনিকালের শিল্পীর চোখে আঁকা ....


Conquistadores শব্দটা স্প্যানিশ: শব্দটির অর্থ, বিজেতা। সেই স্প্যানিশ বিজেতারা ষোড়শ শতকে সমগ্র দক্ষিন আমেরিকায় তান্ডব চালিয়েছিল কেবলমাত্র অগ্রসর প্রাযুক্তিক রণকৌশলের কৃপায়। দক্ষিন আমেরিকাজুড়ে তারা সংগঠিত করে অবাধ লুন্ঠন- সে লুন্ঠনকৃত মালামালের পরিমান এতই অধিক পরিমানে ছিল যে- ইউরোপের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই নাকি গিয়েছিল বদলে! সে অপরিমেয় ধনসম্পদ ছিল ইনকাদের। যে ইনকারা মানবসভ্যতায় দান করেছে আলুর মতন এক পুষ্টিকর আহার্য । যে ইনকারা আন্দেজ পর্বতমালার দুর্গম গিরিশীর্ষে নির্মান করেছিল বিস্ময়কর সব পাথরনগর-কুজকো, কাজামারকা, মাচু পিকচু প্রর্ভতি ...যে ইনকারা ছিল আদ্যপান্ত রোম্যানটিক-যারা বিশ্বাস করত রুপা হল চাঁদের কান্না আর স্বর্ণ হল সূর্যের ঘাম ...

তো কোথায় ছিল ইনকাদের রাজ্য?
পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগর। এরপর আন্দেজ পর্বতমালার পুবমুখি বিস্তার। পেরু নামে একটি দেশ। এই পেরুর পুবেই কুজকো নগর। এসবই আন্দেজ পর্বতমালার মধ্যে। যে আন্দেজ পর্বতমালাটির বিস্তার উত্তর-দক্ষিণে ২,৫০০ মাইল!
সেই কুজকো নগর ঘিরেই সূত্রপাত হয়েছিল কুজকো রাজ্যের (কিংডম অভ কুজকো) যা পরে হয়ে ওঠে দক্ষিণ আমেরিকার অন্যতম পরাক্রমশালী ইনকা সাম্রাজ্য। ইনকা সাম্রাজ্য ছড়িয়ে ছিল পেরু, বলিভিয়া, উত্তর আর্জেন্টিনা, চিলি ও ইকিউডোরে।



পেরুর মানচিত্র।

এত বিশাল সাম্রাজ্য সড়ক পথে যোগাযোগ রক্ষা করত ইনকারা। এই উদ্দেশ্যে ইনকারা নির্মান করেছিল বিস্ময়কর সড়ক; যাকে বলে, ‘ইনকা ট্রেইল’। কৃৎকৌশলের দিক থেকে যা ছিল সময়ের তুলনায় অনেক অগ্রসর। মনোরম উপত্যকা ও দুর্গম গিরির ভিতর দিয়ে চলে গেছে ইনকা ট্রেইল। আজও ধ্বংসাবশেষ দেখে চেনা যায়। মূল ২টি পথ ছিল- উত্তর-দক্ষিণে .. কোনও কোনও পথ ১৬০০০ ফুট ওপেের। ৪০, ০০০ কিলোমিটার। সামরিক ও বেসামরিক উভয়শ্রেনির লোকই চলাচল করত। আর চলত লামা ক্যারাভান। সাধারণ লোকের সে পথে চলতে হলে ইনকা সম্রাটের অনুমতি লাগত। পথের মাঝে ছিল সেতু। সেতুতে টোলব্যবস্থা ছিল।



ইনকা ট্রেইল



ইনকা ট্রেইল

ইনকাসাম্রাজ্য দীর্ঘস্থায়ী ছিল না। সাম্রাজ্যের সময়কাল ১২০০ থেকে ১৫৩৩। ১৫৩৩ সালেই তো স্প্যানিশ লুটেরারা এল ... ইনকা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতার নাম মানকো কাপাক। তিনি ও তার বংশধরের সময়েই ইনকা জাতি রচেছিল দক্ষিণ আমেরিকার বিস্ময়কর সভ্যতা। ইনকারা ওদের রাজ্যকে বলত তাহুয়ানতিনসুইউ। মানে চতুস্কোন ভূমি।




কুজকো । এখানেই সূত্রপাত হয়েছিল ইনকা সভ্যতার। কুজকো তে ছিল অতি সুসংগঠিত এক কেন্দ্রীয় সরকার। ইনকা সম্রাটও কুজকোতেই থাকতেন । তিনিই শ্রেষ্ট ইনকা। সব্বোর্চ শাসক। সম্রাটের অধীনে ছিল অভিজাতগন; এরা ছিলেন বিচক্ষণ, ইনকা সভ্যতার প্রাণ। সেকালে কুজকো ছিল এক অতুলনীয় ইনকা পাথরনগর। যে নগরে বাস করত ধনীরা । ধনীরা সমাধিতে ধনরতœ নিয়ে যেত। এই হয়েছিল কাল। সে কথায় আসছি পরে ...



কুজকোর পাথরের প্রাচীর; উন্নতির শীর্ষে ইনকা সাম্রাজ্যের জনসংখ্যা ছিল ৬০ লক্ষ।

ইনকা শাসকরা ছিলেন অভিজাত রাজকীয় বংশের। সম্রাটকে বলা হত ইনকা। পরে অবশ্য সভ্যতার নামই হয়ে যায় ইনকা। সম্রাটের অন্য নাম সাপা ইনকা। সাম্রাজ্য পরিচালনতা করত রাজকীয় পরামর্শসভা। পুরোহিত প্রাদেশিক শাসনকর্তা ও সেনাপতির সমন্বয়েই গড়ে উঠত রাজকীয় পরামর্শসভা। এরা সর্ম্পকে আত্মীয়। সম্রাটগন বিয়ে করতেন আপন বোনকে। পুত্রগনের মধ্যে উত্তরাধিকারী নির্বাচিত করতেন। সাধারণত বড় ছেলেই সম্রাট হত। ইনকা অভিজাতদেরও কাউন্সিল ছিল। তারা সাম্রাজ্য পরিচালনায় সাহায্য করত। সমস্যা হলে সম্রাট প্রধান পুরোহিত এর যিনি সাধারনত সম্রাটের আত্বীয় ছিলেন। এই চাচা কি ...অন্যকেউ ...যুদ্ধ পরিকল্পনায় সেনাপতিরা। সেনাপতিও বন্ধু কি আত্মীয়ই হত সম্রাটের ।



ইনকা যোদ্ধা।

ইনকা যোদ্ধারা অন্য নগর আক্রমন করে জয় করলেও স্থানীয় শাসনকর্তাকে হত্যা করত না যদি সে শাসনকর্তা ইনকা আইন মেনে চলত, বিদ্রোহ না করত, কর দিত আর শষ্য ভান্ডার মজুদ রাখত। ইনকাদের কর ব্যবহা ছিল কঠোর। মেয়েদের নির্দিস্ট পরিমানে কাপড় বুনতে হত। পুরুষেরা কাজ করত সৈন্যবিভাগে কি খনিতে। জনগনও কর দিতে হত। হাতে পয়সা না থাকলে রাষ্ট্রীয় কাজ করে শোধ করে দিত। কিংবা সুতা পোষাক তৈরি করে বিক্রি করে কর দিত। জনগনকে শষ্যের একাংশ রাখতে হত সংরক্ষণের জন্য। খাদ্যশষ্য মজুদের কলাকৌশল রপ্ত করেছিল বলেই ইনকা সভ্যতা নাকি অত উন্নত স্তরে পৌঁছেছিল-ঐতিহাসিকদের এই মত। সাম্রাজ্যজুড়ে ছিল স্টোরহাউজ। ৩ থেকে ৭ সাত বছরের খাদ্যশষ্য মজুত থাকত সেখানে। মাংসও শুকিয়ে নোনা করে রাখত।
চাষবাস হত উপত্যকায় আর পাহাড়ের ঢালে। ইনকাদের প্রধান খাদ্যই ছিল আলু ও ভূট্টা। আগেই বলেছি আমি মানবসভ্যতায় আলু ইনকাদের অবদান। আলু আর ভুট্টা ছাড়া খেত ওল। নীল শ্যওলাও নাকি খেত । কাঁচা। চাষ করত মরিচ । মাংসের মধ্যে খেত গিনিপিগ ও লামার মাংস। ।



লামা। আন্দেজ পর্বতমালা আর পেরু মানেই এই জন্তুটি ।


সামুদ্রিক। মাছও খেত। সাম্রাজ্যের পশ্চিমে প্রশান্ত সাগর। আর বিখ্যাত হ্রদ টিটিকাকা। ভূট্টা পিষে এক ধরনের পানীয় তৈরি করে খেত ইনকারা। পানীয়ের নাম: চিচা।




কেমন দেখতে ছিল ইনকারা? এরকম? এই সময়ের পেরুভিয়ান শিশু মুখে আদিবাসী আদিবাসী ছাপ রয়েছে ....



নাকি এরকম? এরা পেরুর নাগরিক;

ইনকারা পোশাক তৈরি করত লামার উল দিয়ে। সুতির কাপড়ও পড়ত। অভিজাতরা ধাতুর ঝুলিয়ে রাখত। মেয়েরা একধরনের শাল পরত-নাম মানতাস। নারীপুরুষ উভয়ই পরত স্যান্ডেল।
সাধারন ইনকাদের বাড়িগুলো হত ছোট। সবাই একসঙ্গে থাকত। যৌথপরিবার আর কি। বাড়ি তৈরি করত পাথর ও মাটির ইট দিয়ে ... আর মেশাত ঘাসকাদা। ধনীরা অবশ্য বড়সরো পাথরের সুন্দর প্রাসাদে বাস করত। তাই তো হয়! এরাই ছিল উপত্যকার জমির মালিক।
বিয়েটাও ইনকাদের ভারি অদ্ভূত। ২০ বছরের আগেই ছেলেদের মেয়ে চয়েস করতে হত। নইলে তার জন্যই মেয়ে দেখত গার্জেনরা। কোনও কোনও মেয়েকে ছোট থাকতেই বাগদত্তা হতে হত।বিয়ের দিন বর কনের হাত ধরে চন্দন বিনিময় করত। এরপর ভোজ। নতুন দম্পতিকে অন্যরাই ঘরদোর তুলে দেয় । যতক্ষন না তারা নিজের পায়ে না দাড়াচ্ছে ।
বহুদেবতায় বিশ্বাসী ছিল ইনকারা। ভিরাকোকা ছিলেন প্রধান দেবতা। তিনিই ছিলেন ইনকাদের স্রষ্টা। আরেকজন দেবতার নাম ছিল ইনতি। ইনি ছিলেন সূর্যদেব। ইনকাদের বলা হয়: "সূর্যের সন্তান।" ইনকা শব্দটি এসেছে এই ইন্তি শব্দ থেকেই। ইনকারা সূর্যপূজক বলেই উচুঁ পাহাড়ের ওপর তৈরি করত পাথরের মঞ্চ। ইনতিহুয়াটানা। ইন্তি শব্দটা লক্ষ করুন।


সূর্যমন্দির ইনতিহুয়াটানা

ইনকারা ছিল ধর্মপ্রাণ। তারা ভাবত যেকোনও মুহূর্তেই অমঙ্গল হতে পারে। কাজেই পুরোহিতদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ন ছিল ইনকা সমাজে। ইনকা সমাজে নারীপুরোহিতও ছিল। মেয়েরা ঋতুমতী হলে নারীপুরোহিতরা চুল আচড়ানো উৎসব করত। মেয়েটি তখন নতুন নাম নিত। সবচে সুন্দরী মেয়েটিকে পাঠানো হত কুজকোতে। মেয়েটি রাজকন্যা বা সম্রাটের স্ত্রী হবে!



ইনকা শিল্প


পাত্র




ইনকা সভ্যতার আলোচনায় স্প্যানিশ Conquistadores ফ্রানসিসকো পিজারোর নাম অনিবার্য। লোকটার জন্ম ১৪৭৬ খ্রিস্টাব্দে স্পেনের ত্র“জিললোতে। গরিব ঘরেই জন্ম। লিখতে পড়তেও শিখেনি। না শিখুক! তাই বলে এত খারাপ মানুষ হয়। বিশ্বের খারাপ মানুষের তালিকা করলে প্রথম দশে থাকবে! যাক। ১৫০২ খ্রিস্টাব্দে ওয়েস্ট ইন্ডিজের উদ্দেশে স্পেন ত্যাগ করে। হিসপানিওয়ালা (বর্তমানকালে হাইতি ও ডোমেনিকান রিপাবলিক) দ্বীপে বাস করে। এরপর ১৫০৯ সালে কলোম্বিয়া অভিযানে অংশ নেয় আলোনসো দ্য ওদেজার অধীনে। এরপর নানা ঘটনার পর লোকটা পৌঁছে পানামা। এখানেই সে প্রথম দক্ষিণের স্বর্ণসমৃদ্ধ ভূখন্ডের কথা জানতে পারে। ১৫২০ তে দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে পরপর দুটো অভিযান চালায়। এ সময় সে ইনকাদের দেখতে পায় । যাদের অনেকে পরনে সোনার অলঙ্কার। সে লোভার্ত বোধ করে। পিজারো ভয়ঙ্কর এক ষড়যন্ত্র করে। জাহাজ ভর্তি করে সোনাদানা, লামা ও স্থানীয় ইনকা বন্দি করে নিয়ে স্পেনে ফিরে আসে পিজারো। স্পেনের রাজা তখন পঞ্চম চার্লস। পিজারো স্পেনের রাজা পঞ্চম চার্লস কে সব খুলে বলে এবং পেরু জয় করে পেরুর শাসক হওয়ার অনুমতি চায়। অনুমতি মিলল। রাজা পঞ্চম চার্লস বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে অনুদানও দিলেন।




ফ্রানসিসকো পিজারো

পিজারো সৈন্যসামন্ত যোগার করে ১৫৩২ পেরু ফিরে আসে। ১৭৭ জন সৈন্য ও ৬২টি ঘোড়া নিয়ে পুবের কাজামারকা শহরে যাত্রা করেন। কেননা, ইনকা সম্রাট তখন আটাহুয়ালপা। তিনি ছিলেন কাজামারকা শহরে। ইনকা সম্রাট আটাহুয়ালপা জানলেও স্বাধীনভাবে ঘোরা অনুমতি দেন। সম্ভবত তিনি পিজারো ঈশ্বর ভেবেছিল। সূর্যের সন্তান।
যা হোক। ১৫৩২ সালের ১৫ নভেম্বর পিজারো শহরে পৌঁছে। সে খোলা চত্তরে আটাহুয়ালপা ও ইনকা অভিজাতদের ভোজে নিমন্ত্রন করে। পরের দিন অর্থাৎ ১৬ তারিখ। প্রায় নিরস্ত্র আটাহুয়ালপা ও ইনকা অভিজাতদের এলেন। স্পেনিয়রা পিজারোর নির্দেশে বর্শা, তরোয়াল, ক্রশবো ও অ্যারাবেক্স নিয়ে বিস্মিত অতিথিদের ঘিরে ফেলে। তারপর. আধ ঘন্টার ভিতর সবাইকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলে!
আমি তখন লিখেছিলাম যে, Conquistadores শব্দটা স্প্যানিশ: শব্দটির অর্থ, বিজেতা। সেই স্প্যানিশ বিজেতারা ষোড়শ শতকে সমগ্র দক্ষিন আমেরিকায় তান্ডব চালিয়েছিল কেবলমাত্র অগ্রসর প্রাযুক্তিক রণকৌশলের কৃপায়। আধুনিক ঐতিহাসিকগন তথ্যটি অস্বীকার করেন। তাদের মতে আধুনিক অস্ত্র নয় মাত্র ২০০ জনেরও কম সৈন্য দ্বারা ৬০ লক্ষ ইনকা অধ্যুষিত ইনকা সাম্রাজ্যের পরাজয়ের কারণ পিজারো নেতৃত্ব। দৃঢ়তা ও সৌভাগ্য! কেননা, স্পেনিয় বিজেতাদের হাতে ছিল মাত্র ২০টি ক্রশবো। বর্শা ও তরোয়াল। মাত্র তিনজনের হাতে ছিল আরকিউবাস। (বন্দুকই বলা যায়)
অপরপক্ষে ইনকাদের প্রধান অস্ত্র ছিল তীরধনুক।



আরকিউবাস



ক্রশবো

যাক। পিজারো সম্রাট আটাহুয়ালপাকে জীবিত রাখে। উদ্দেশ্য? মুক্তিপন আদায়।
সম্রাট আটাহুয়ালপা জীবনের বিনিময়ে এক বড় ঘর ভর্তি স্বর্ণ আর দুটো ছোট ছোট ঘর ভর্তি রুপা দিতে রাজি হলেন। সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্থান থেকে অভিজাতরা এসে সেসব ঘর সোনাদানায় পূর্ন করল।সে সম্পদের পরিমান নাকি আজকের দিনে ১০০ মিলিয়ন। আমি তখন লিখেছিলাম: দক্ষিন আমেরিকাজুড়ে তারা সংগঠিত করে অবাধ লুন্ঠন- সে লুন্ঠনকৃত মালামালের পরিমান এতই অধিক পরিমানে ছিল যে- ইউরোপের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই নাকি গিয়েছিল বদলে! সে অপরিমেয় ধনসম্পদ ছিল ইনকাদের ... ২৯ আগস্ট ১৫৩৩। সম্পদ পেয়ে পিজারো সম্রাট আটাহুয়ালপা কে খুন করে! পিজারো এরপর পেরুর আরও দক্ষিণে অগ্রসর হয়ে ইনকা সাম্রাজ্যের রাজধানী কুজকো করতলগত করে। কেউই বাধা দেয়নি।
পিজারো কুজকো লুন্ঠন শেষে ইনকাদের দাসে পরিনত করে।
১৫৩৫ খ্রিস্টাব্দে লিমা নামে নতুন শহর প্রতিষ্ঠা করে পিজারো। সেখান থেকেই পেরু শাসন করে। লিমা শহরের প্রতিষ্ঠা করে। এর পর স্পেনিয়দের মধ্য শুরু হয় তীব্র বিরোধ ও অর্ন্তদ্বন্দ । এরই পরিনামে ১৫৪১ খ্রিস্টাব্দে পিজারো ৬৬ বছর বয়েসে লিমায় নিজ প্রাসাদে খুন হয়।



তারপর?
তারপর ইনকা সভ্যতার স্মারক-সেই পাথর নগরগুলি দীর্ঘকাল লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যায়। সভ্যতাটি অরণ্যের গভীরে হারিয়ে যায়। লিমার মতন শহর ঘিরে পেরুর জনগনের জীবনধারা অব্যাহত থাকে। ইনকা সভ্যতার তো অবসান ঘটেছে!
১৯১১ সাল। হিরাম বিংহ্যাম নামে একজন মার্কিন ঐতিহাসিক পেরুর এখানেওখানে ঘুরছিলেন। ঘুরতে ঘরতে তিনি চলে এলেন কুজকোর ৮০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে উরুবামবা উপত্যকায়। । ঘিরে বিশাল বিশাল পাহাড়। গভীর অরণ্য। পেরুর উরুবামবা নদী উৎসও নাকি ওই পাহাড়েই।


মাচু পিকচু



বিংহ্যাম পাহাড়ে উঠে এলেন। জায়গাটা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮,০০০ ফুট ওপরে। স্থানীয় লোকজনের কাছে শুনলেন জায়গাটির নাম: মাচু পিকচু, যার অর্থ, ‘পুরনো শীর্ষ’।



মাচু পিকচু


এখানেই বিস্ময়কর এক পাথুরে নগর আবিস্কার করলেন বিংহ্যাম; যা ধ্র“পদি ইনকা শৈলিতে রচিত। ঝকঝকে শুস্ক পাথরের প্রাচীর, সিঁড়ি দেওয়াল। একপাশে ইন্তিহুয়াতানা বা সূর্যমন্দির। বংহ্যাম টের পেলেন এই সেই ‘ইনকাদের হারারো নগর’। ইনকা সাম্রাজ্যের প্রতীক।



মাচু পিকচুর অবস্থান

বিংহ্যাম এর আবিস্কারের পর মাচু পিকচু নিয়ে ইউরোপআমেরিকায় ব্যাপক তোলপাড় তৈরি হল। এর পরপরই শুরু হল ইনকাদের নিয়ে ব্যাপক গবেষনা । জানা যায়, ১৪৩০ খ্রিস্টাব্দের দিকে মাচু পিকচু-র নির্মান শুরু হয়। ১০০বছর পর নির্মান কাজ থেমে যায়-যখন স্প্যানিশরা এল ইনকা সাম্রাজ্যে ।
মাচু পিকচু কী ভাবে যেন স্প্যানিশ ধ্বংসযজ্ঞ এড়িয়ে যায়!
সেখানে, আজও আছে ইনকাদের সূর্যদেবতার থান।






সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০০৯ রাত ৯:২৯
৪৫৬ বার পঠিত
৬২টি মন্তব্য ৬০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চাঁদ গাজীর ব্যান তুলে নিন/ ব্লগ কর্তৃপক্ষ ‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২৩ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩




আমি যদি গাজী’ ভাইয়ের যায়গায় হতাম জিবনেও সামু’তে লেখার জন্য ফিরে আসতাম না।
হয় বিকল্প কোন প্লাটফর্ম করে নিতাম নিজের জন্য। অথবা বাঁশের কেল্লার মত কোথাও লিখতাম।
নিচে ব্লগার মিররডডল-এর করা পুরো... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টারের মতো প্রতিষ্ঠানের উচিত তাদের অবস্থান পুনর্মূল্যায়ন করা এবং বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া।

লিখেছেন জ্যাকেল , ২৩ শে নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৫

বাংলাদেশে গণমাধ্যমের ভূমিকা বরাবরই সংবেদনশীল এবং গুরুত্বপূর্ণ। একটি গণতান্ত্রিক সমাজে গণমাধ্যমের কাজ হলো সত্য প্রকাশ, জনমতের প্রতিনিধিত্ব এবং গণতন্ত্রকে সুরক্ষা দেওয়া। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন মহলে অভিযোগ উঠেছে যে, বাংলাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার সাজিদ কমেন্ট অফ রাখায় এখানে লিখছি (সাময়িক)

লিখেছেন মিরোরডডল , ২৩ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:০৫


সাজিদের বিদায় পোষ্ট দেখলাম, কমেন্ট সেকশন বন্ধ রাখায় ভাবলাম এখানেই লিখে যাই।

জানিনা কি বলবো, হয়তো এটাই দেখা বাকি ছিলো।
চলে যাবার কারণ জানিনা কিন্তু অনুমান করতে পারছি।
Man! you shouldn't leave.

ব্লগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখ হাসিনা রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার হতে যাচ্ছেন?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৫৭


আজকাল মানুষ চেনা বড্ড কঠিন হয়ে পড়ছে। কে কোন উদ্দেশ্য নিয়ে কার পক্ষে দাঁড়াচ্ছে তা বুঝা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। রাজনীতিতে এই কথা আরো বেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কখনো বিদায় বলতে নাই

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ২৩ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



ব্লগে কিছুদিন ধরে অনিয়মিত হওয়ায় কখন কি ঘটে জানি না।
কিছুক্ষণ আগে মিররডলের একটা পোস্টে জানতে পারলাম , ব্লগার আমি সাজিদ ঘোষণা দিয়ে ব্লগ ছেড়েছেন । তার সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×