চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শুক্রবার এ এফ রহমান হল ও আলাওল হল থেকে ব্যাপক লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। হল দুটির কক্ষে ভাঙচুরের পাশাপাশি তারা অন্তত ২০ থেকে ২৫টি ল্যাপটপ লুট করেছেন। শুধু দামি জিনিসপত্র লুটেই তারা ক্ষান্ত ছিলেন না। শিক্ষার্থীদের ব্যবহৃত টুথপেস্ট, জুতা ও টয়লেট টিস্যু থেকে শুরু করে যা-ই পেয়েছেন লুটে নিয়েছেন।
সংঘর্ষের সময় আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা কক্ষ খোলা রেখেই হল ছেড়ে বের হয়ে যাওয়ার সুযোগে তারা এই লুটপাটে মেতে ওঠেন। শুক্রবার বিকেলের ওই সংঘর্ষের সময় উভয় হলের কমপক্ষে দুই শতাধিক রুম ভাঙচুর করেছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরাশিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে এ ঘটনার অভিযোগ করেও এখনও প্রতিকার পাওয়া যায়নি। এমনকি খোয়া যাওয়া ল্যাপটপ ও আসবাবপত্র ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে সামান্যতম আশ্বাসও মেলেনি।
সংঘর্ষের পর শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের এ এফ রহমান হলের খোঁজ নিয়ে ১২টি কক্ষে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হলটির বিভিন্ন কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৩৩১ নম্বর কক্ষ থেকে একটি ল্যাপটপ, টয়লেট টিস্যু ও টুথপেস্ট লুট হয়েছে। ৩২১ নম্বর কক্ষ থেকে লুট হয়েছে একটি ল্যাপটপ। ৪২২ নম্বর কক্ষ থেকে খোয়া গেছে একটি ল্যাপটপ, একটি টেবিল ফ্যান, ছয় হাজার টাকা, দুটি শার্ট, তিনটি বই ও দুটি ডায়েরি।
একইভাবে লুট হয়েছে ২১৮ নম্বর কক্ষেও। সেখান থেকে একটি মোবাইল সেট ও দুই হাজার টাকা খোয়া গেছে। ২৩৯ নম্বর কক্ষ থেকে লুট হয়েছে একটি মোবাইল সেট ও চার হাজার টাকা। ৩১৫ নম্বর থেকে একটি ল্যাপটপ, নোট বুক ও দুটি মোবাইল সেট লুট হয়। ৩১৮ নম্বর থেকে একটি মোবাইল সেট, তিন হাজার টাকা ও একটি সেভিং মেশিন। ৩১৭ নম্বর কক্ষ থেকে খোয়া গেছে একটি ল্যাপটপ, তিন হাজার টাকা, একটি হাত ঘড়ি, মানিব্যাগ ও এক জোড়া বাটা জুতা। ৪৩৪ নম্বর কক্ষ থেকে একটি ল্যাপটপ, মডেম, মাউস, হ্যান্ডসুপ ও টয়লেট টিস্যু লুট হয়েছে। ৪৩৮ নম্বর কক্ষ থেকে একটি কম্পিটারের মনিটর, সিপিউ, ও লাগেজ খোয়া গেছে। ২৩৫ নম্বর কক্ষ থেকে একটি ল্যাপটপ ও ১০৪ নম্বর কক্ষ থেকে একটি ল্যাপটপ খোয়া গেছে। এ ছাড়া আরও বেশ কিছু কক্ষে ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ এফ রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী বাহাদুর মিয়া দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আমি শহরে (চট্টগ্রাম) ছিলাম। শহর থেকে সংঘর্ষের খবর পেয়ে তাড়াতাড়ি ক্যাম্পাসে আসি। এসে আমার রুমে গিয়ে দেখি রুম তছনছ হয়ে আছে। রুমের তালা, লকারের তালা ভাঙ্গা। রুম থেকে ডেস্কটপ ও লাগেজ পাওয়া যাচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছি। কিন্তু এগুলো পাওয়ার বিষয়ে এখনও আশ্বাস পাইনি।’
এ এফ রহমান হলের আরেক আবাসিক শিক্ষার্থী শওকত মোল্লা দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘সংঘর্ষের সময় ভয়ে বাহিরে বেরিয়ে যাই। পরে রুমে গিয়ে দেখি রুমের তালা ও লকারের তালা ভেঙ্গে ল্যাপটপটা নিয়ে গেছে। স্যারদের কাছে গিয়ে অভিযোগ দিয়েছ, কোনো লাভ হয়নি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ এফ রহমান হলের আরও একাধিক শিক্ষার্থী দ্য রিপোর্টকে বলেন, সংঘর্ষের এক পর্যায়ে শিবির কর্মীরা হল থেকে পালিয়ে গেলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হলে ভেতরে ঢুকে সাধারণ ছাত্রদের কক্ষ ভাঙচুর করে। এ সময় তারা রুমের তালা ভেঙ্গে রুম থেকে ল্যাপটপ থেকে শুরু করে দামি ও শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের সামান্যতম দ্রব্যও তারা লুট করে নিয়ে যায়।
এ এফ রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান লুটপাটের বিষয়টি স্বীকার করে দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘যেসব রুমে লুটপাট করা হয়েছে আমরা তার একটি তালিকা করছি। তালিকা প্রশাসনের কাছ পাঠানো হবে। প্রশাসন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। আমাদের এখানে কিছুই করার নেই। কারণ, আমদের কোনো অতিরিক্ত তহবিল নেই।’
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাওল হলে খুঁজ নিয়ে ছয়টি কক্ষ থেকে ব্যাপক লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৫ দুপুর ২:৫৮