somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: মনোগ্রাম

২৫ শে মে, ২০১৩ রাত ১০:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে যাত্রী শ্রমিকের হিরিকে ভাংচুর, হাতাহাতি, আগুন লাগান সব মিলে এক মহা খিটকেল যজ্ঞ শুরু হয়ে গেল। যজ্ঞ থেকে পালিয়ে পলাশ এক অচেনা আচরণের অচেনা রাজ্যে প্রবেশ করে টাসকি খেয়ে গেল। স্থাপত্য, চলন, বলন, চেহাড়া সবকিছুতেই একটা ‘কবন্ধ কবন্ধ’ ভাব।

রাস্তায় শিশ্নোদরপরায়ণ উর্দি পরা প্রহরারত বেতনভুক অর্ধচেতন মূর্তির সামনে পলাশের সব কিছু ছিনতাই হয়ে গেল। তার চিত্কারে মূর্তিগুলো মৃদুমন্দ নড়লো কিন্তু চড়লো না।

পথ চলতি এক ছাত্রীর উড়না কেড়ে নিয়ে পাণ্ডব বর্জিত দেশে রাজার দরবারে নয় রাজার পথে পিঁপড়ার ঝাঁকের চেয়েও গিজ গিজ করা লোকের সামনে, এক দল পাঠা মেয়েটির দ্রৌপদী দশা লেহন করে নির্বিঘ্নে হল্লা করছে। মেয়েটি নিজের শ্লীলতা হানীর জন্য যতটা নয়, পথ ভর্তি লোকের নপুংশক দশা দেথে তার চেয়েও বেশি লজ্জায় চুলের আড়ালে মুখ লুকালো।

স্কুল থেকে বাড়ি ফেরতা এক ছাত্রকে রাজার কালো হেজাব ধারীরা তাদের মাসান্তে নির্ধারতি খরপোষের বাহিরে কিছু আয়ের লোভে অন্যের প্ররচনায়, ৪৭ নাম্বার যন্ত্র দিয়ে গুলি শুরু করল। ছেলেটি পালাতে গেলে তার দেহে তপ্ত শিশার ক্ষতের সংখ্যা বেড়ে যেতে লাগলো। বই, থাতা, কলম ছড়িয়ে ছিটিয়ে যেতে যেতে সে হুমড়ি খেয়ে পড়লো। চাঁদমারীর নিসানায় কম বারুদ অপচয় হওয়ার আনন্দে কালো হেজাবীরা দম্ভিত সপ্র্ধায় উল্লাস করতে করতে ছেলেটিকে চ্যাংদোলা করে উদ্দিষ্ট গন্তব্যে গতর মিলিয়ে ফেল্লো ক্রস ফায়ারের প্রেস রিলিজ দেবার জন্য। দূর থেকে ছেলেটির বয়স আন্দাজে এল না, সে আল্লা আল্লা চিত্কার করতে করতে যখন মা মা কান্না শুরু করলো, তখন তার কান্নার স্বরলিপিতে বয়স অনুমান করা গেল।

ভিত উত্সুক দরদী কয়েকজন পথচারীর সাথে পলাশ রাস্তায় পড়ে থাকা রক্তের কাছে গিয়ে দেখে কলম ফেটে কালো কালি রক্তের লোহিত কণিকাকে বিষিয়ে দেবার চেষ্টা করছে, কিন্তু; তরুণ রক্তের ওমের কাছে পেরে উঠছে না, বরং রক্ত গড়িয়ে গড়িয়ে কালো কালিকেই রাঙা করে দিল। সবাই এক সাথে চেচিয়ে উঠল, এ অন্যায় মানি না মানব না, রাজার কালো হেজাবীরা জাহান্নামে যাও।

এ সমস্ত অকাম কুকাম দেখে পলাশের ক্যালরী ঘাটতি হয়ে গেল; খাবার খোঁজ করতে করতে একটা বাজারের দেখা পেল। এক মণ্ত্রীর ছবিআলা বড় বোর্ডে পণ্যমূল্যের আজব তালিকা। বড় করে লেখা:

যা নিবেন তা ৫(পাঁচ) টাকা।


১০০গ্রাম আটা ৫(পাঁচ) টাকা
৭৫ ,, চাল ,, ,,
৩০ ,, ডাল ,, ,,
৫০ ,, চিনি ,, ,,
২৫ ,, ছয়াবিন ,, ,,
….. ……. ……..
….. ……. …….
এ তালিকা মানতে বাধ্য করার জন্য চৌপর প্রহরার ব্যবস্থা মজুদ। পাশাপাশি ফোকল গলানোর লাইনও পাকা।

পলাশ ঘুরতে ঘুরতে বৃটিশ ধাচের অতি পুরাতন ঢাউস আকৃতির একটি ভবনের সামনে এসে থমকে গেল। ছাল উঠা একটি নেড়ি কুকুর ছাদের কার্ণিশে চিত্কার করে আকাশ বাতাস হাংটে ফেলছে। তার চিত্কার ধ্বনি জনতার মাঝে তো দূরের কথা, একক কোন বনি আদম বা মনুর বংশধরের মনে কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে না। বরং তার এই আচরণকে তারা নেহায়েত ‘কুত্তার বাচ্চার’ খেয়ালিপনা ভেবে চলে যাচ্ছে দেখে সে হতাসায় কিছুক্ষণ চুপ মেরে থাকলো। কুকুরটি তার প্রহরী স্বভাবের কাছে হার মেনে, আপদ কালীন তত্পরতায় প্রতি লাফে কয়েকটি করে সিঁড়ির ধাপ ভেঙ্গে দুই এক তলা নেমে এসে তার চেয়েও ক্ষিপ্র গতিতে ছাদে উঠে নতুন উদ্যমে ঘেউ ঘেউ রাগে জাগরণী গেয়ে যাচ্ছে।

পলাশ কুকুরের এই রহস্যজনক অদম্য পুন:পুনিক আচরণে কৌতুহলী হয়ে একটি ছোট্ট সেতু পেরিয়ে বাড়িটির নিচ তলায় প্রবেশ করলো। ডায়নসরের পায়ের চেয়েও মোটা মোটা বাহুল্য মার্কা পিলারের উপর এটি দাড়িয়ে আছে। এটি দৈর্ঘ্য- প্রস্থে যতটা বিশাল, উচ্চতায় ততটা দসাসই না। জায়গায় জায়গায় চুন সুরকীর আস্তর খসে গেছে, নোনা ধরা লালচে ইট দেখে মনে হচ্ছে পান খাওয়ায় অভ্যস্ত কোন বৃদ্ধ যেন পোকা খাওয়া দাঁত বের করে তার ধ্বসে যাওয়া জীবনের বিদ্ধস্ত হাসী হাসছে।

বাড়িটি অতি জড়াজীর্ণ হলেও ব্যারামের নমুনায় মনে হচ্ছে এটি এখোনো নিয়মিত কোন সরকারী কাজে ব্যবহৃত হয়। কারণ কয়েকটি তালাবদ্ধ ঘরে বৈদ্যুতিক বাতি ও পাখা ইচ্ছার বিরুদ্ধে আলো হাওয়া বিতরণ করে যাচ্ছে। একটি পানির ট্যাপ নষ্ট হওয়ার কষ্টে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে কেটে বাথরুমের মেঝে ভাসিয়ে দিচ্ছে।

ঘনায়মান সন্ধার ফিকে ধরা আলতেও স্থাপত্য শৈলীর কায়দার ফায়দায় কোনা-কানির সব কিছু এখনো পরখ যোগ্য। জায়গায় জাযগায় আড়ালে আবডালে টিকটিকির মতো জোড় লাগা মাগি-মর্দ বিশেষ ভংগীতে ঘন হয়ে আছে, কেউ কেউ ভংগী ধরার অপেক্ষায়, কেউবা পরতায় কাম সারার জন্য দড়দাম নিয়ে কাই করছে, কেউবা ঠ্যাটামি, কেউবা ঘ্যাঘামি করছে। কিশোর-যুবা, পৌড়-বৃদ্ধ, রিক্সাওয়ালা-পয়সাওয়ালা, ছাত্র-শিক্ষক, ইতর-ভদ্র নানান পেশার ও রুচির মানুষ নেশার শুকনো তরলের রকমফের আয়োজনে ধোঁয়া ও উত্কট গন্ধ ছড়ানো নানা রকম প্রসাদের ছিন্নি করে সাম্যবাদ জারি করছে। কেউবা প্রসাদ গুনে কোনা-কাঞ্চি থেকে শুরু করে স্বর্গ-মর্ত-গর্ত সব জয় করে ফেলছে ।

ভবনের ভেতর আঙিনা পার হয়ে এক পোড়ো বাড়িতে জংগী প্রশিক্ষণ ঘাঁটি ও অস্ত্রের আড়ত। এখানকার যারা আড়তদার তাদের দেখে পলাশ আঁতকে উঠলো, কারণ এঁরা দেশের বিখ্যাত কর্তা বাবা ও আলখেল্লা ধারী হযরত (নাউযু:)

দোতলায় মুক্তিপন আদায়, ছিনতায়ের মাল ভাগ, গুম করার পায়তারা প্রভৃতি নানান রকম কালচারের চাষ দেখায় পলাশ যখন ব্যস্ত, তখন কুকুর পলাশকে দেখতে পেয়ে ছুটে তার কাছে আসে। ‘সরবনাশ হয়ে গেল’- এই রকম অস্থিরতায় একবার পলাশের কাছে একবার সিঁড়ির কাছে ছোটা ছুটি করতে লাগলো। পলাশ কুকুরকে অনুসরণ করে উপরে গেল । কুকুর একটি অন্ধকার বন্ধ ঘরের দরজার সামনে গিয়ে ঘেউ ঘেউ করছে, মাথা দিয়ে দরজায় জোড়ে জোড়ে ধাক্কা দিচ্ছে আর বিকট ভাবে গো গো আওয়াজ করছে। পলাশ কারণ বুঝতে না পেরে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রইল। কুকুর পলাশের মাঝে উত্তেজনা সংক্রামিত করার জন্য লাফিয়ে লাফিয়ে সামনের দু’পা দিয়ে দরজায় ধাক্কা দিতে লাগলো। এক কিশোরী ‘না না’- রবে কাতর মিনতি করে উঠলে পলাশ জোড়ে জোড়ে কয়েক বার কড়া নাড়লো। সেল্ফ ঠিকমত কাজ না করায় গাড়ি ষ্টার্ট না নিয়ে যেমন ব্যর্থ আওয়াজ করে, সে রকম মুখ চেপে ধরার গোঙানির আওয়াজ হয়ে থেমে গেল ।

কুকুর ছুটতে ছুটতে ছাদে উঠে গেল। পলাশ ছাদে যেতেই কুকুর ক্ষ্যাপা আচরণ করতে লাগলো। চার পায়ের নখ দিয়ে আঁচড়িয়ে ছাদের চুন-সুড়কী উড়িয়ে ঘেউ ঘেউ করছে। আঁচড়ানোর চোটে তার নখ উপড়ে রক্ত ঝড়ছে, সে দিকে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। পলাশ মুখে চুচ্চু চুচ্চু শব্দ করে শান্ত করার চেষ্টা করলে কুকুর পলাশকে ছাদের কিনারায় অর্ধ চন্দ্রাকৃতি ছোট্ট দেয়ালের কাছে নিয়ে গিয়ে, ঘেউ ঘেউ করে কি যেন দেখাতে লাগলো। ক্ষয়ে যাওয়া একটি মনোগ্রাম পলাশের চোখে পড়তেই, সেটি ভালো করে দেখার জন্য কার্ণিশে গিয়ে অতি কষ্টে পাঠ উদ্ধার করল ‘বাংলাদেশ পুলিশ’ - পলাশের কৌতুহলের ভার সহ্য করতে না পেরে কার্ণিশের পুরাতন টালি তাকে নিয়ে নিচে পড়ে গেল। মাটির কঠিন আতিথেয়তা গ্রহণের আগেই চিত্কার দিয়ে পলাশের ঘুম ভেঙ্গে গেল।

৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×