somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্রাজিল -মেক্সিকো ( ০-০ )। শুন্য ফলাফলে পূর্ণ জয়ের অনুভূতি।

১৮ ই জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভেবেছিলাম এবারকার বিশ্বকাপ ফুটবলের খেলাগুলো আগ্রহের সাথে দেখব না। শিশুতোষ আবেগসমূহ অতিক্রম করতে চাওয়াই প্রধান উদ্দেশ্য ছিল। যেখানে অন্যায়-অবিচার-বৈষম্যের চাপে, দুর্নীতি-সন্ত্রাসের মহোৎসবে জ্বলছে-পুড়ছে, না খেয়ে মরছে মানুষ।মরছে স্বদেশে এবং বিদেশেও, সেখানে নিছক একটা খেলায় বুঁদ হয়ে থাকা, সেই অন্যায়-অবিচারে কিছুটা সংহতি প্রকাশেরই নামান্তর। তাও আবার এমন একটি সংস্থার ( ফিফা ) আয়োজনে অনুষ্ঠিত এ মহোৎসব, যারা আসলে ফুটবলের নামে দুর্নীতি আর পুঁজিবাদি বৈষম্যে পংগু করে চলেছে খেটে খাওয়া মানুষের অর্থনীতি। ১৪০০ কোটি ডলারের অফিসিয়াল খরচ আর প্রায় সমপরিমান অনানুষ্ঠানিক খরচের বিনিময়ে কিছু মানুষের বিনোদনের চাহিদা একটু হয়তো মিটবে, কিন্তু বুনিয়াদী অর্থনীতির পরিভাষায় উপযোগ প্রায় শুণ্য। প্রায় পুরোটাই অপচয় আর বিভিন্ন মাত্রার ক্ষতি ছাড়া আর কিছু নয়, যে জন্য খোদ ব্রাজিলেরই অর্ধেকের বেশি জনগোষ্ঠি আজ বিশ্বকাপের বিপক্ষে প্রতিবাদ মূখর। আর বাঙ্গালীর হুজুগেপনার কথা কী আর বলব! এক পতাকার পেছনেই কম করে হলেও শত কোটি টাকা চলে গিয়েছে কর্পোরেট পুঁজির পকেটে। পতাকা টানাতে গিয়ে পড়ে গিয়ে, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নিহত হবার ঘটনাগুলো কেবল বাংলাদেশেই সম্ভব। তাই এবার ভেবেছিলাম, যথাসাধ্য অনাগ্রহের সাথে এবারকার বিশ্বকাপ ফুটবলকে উপেক্ষা করে যাব। নইলে, খেলা হিসেবে ফুটবল এর গোঁড়া একজন ভক্তই ( স্বভাবতঃই ক্রিকেট বিরোধী) ছিলাম আমি।

মনে পড়ে সেই ৯০ এর বিশ্বকাপ ফুটবলের কথা যখন আমার বয়স নয়-দশ বছর হবে। খেলা উপলক্ষ্যেই সেবার আমাদের অভাবের সংসারে একটা সাদা-কালো টিভি কেনা হয়েছিল। প্রথম খেলা আর্জেন্টিনা-ক্যামেরুন। আর্জেন্টিনা তখনকার চ্যাম্পিয়ন দল। ক্যামেরুন নবাগত। দেশটি এসেছেও দারিদ্রপীড়িত আফ্রিকা থেকে। দুর্বল ও বঞ্চিতের পক্ষে, প্রবল প্রতাপশালী জনপ্রিয় দলের বিপক্ষে অবস্থান হিসেবে আমি ক্যামেরুনের সমর্থক হয়ে গেলাম। তাছাড়া পত্রিকায় আগের বিশ্বকাপে ম্যারাডোনার হাত দিয়ে গোল করা, গোল সেইভ করা ইত্যাদি খবর পড়ে ম্যারাডোনার প্রতি শিশুমনে একটু বিরূপ প্রভাবই পড়েছিল। সেই ছিল আন্তর্জাতিক ফুটবলে কোন দলকে সমর্থন করা আর কোন দল ও খেলোয়াড়কে অসমর্থন করার শুরু। সেদিনের খেলায় ক্যামেরুন যোগ্য দল হিসেবেই জিতে গিয়েছিল। ম্যারাডোনার খেলোয়াড়ী নৈপুন্যের তেমন কিছুই চোখে পড়ে নি, ট্যাকল ছাড়াই পড়ে যাওয়ার শিল্পিত অভিনয় ছাড়া। চোখে পড়েছিল 'রজার মিলা' নামের এক কৃষ্ণকায় খেলোয়াড়ের অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্য আর গোল করে কর্ণারের কাছে গিয়ে কোমর দুলিয়ে মনোজ্ঞ নাচ। যাই হোক, তারপর প্রতিটা ম্যাচই ( বিটিভিতে যেগুলো দেখিয়েছিল) আগ্রহের সাথেই দেখেছিলাম। আর্জেন্টিনার বিপক্ষের হিসেবে বড় দল ব্রাজিলকে সমর্থনের ইচ্ছা ছিল। কিন্তু ব্রাজিলের খেলা সেবার একদমই ভাল লাগে নি আমার কাছে। সম্ভবতঃ প্রথম রাউন্ডেই বিদায় নিয়েছিল ব্রাজিল সেবার। আর প্রথম ম্যাচ হেরেও কোনমতে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছিল আর্জেন্টিনা। তারপর ভাগ্য আর গোলকীপার গোয়কোচিয়ার অসাধারণ নৈপুণ্যে ভর করে ফাইনালেই চলে গেল আর্জেন্টিনা। সেমিফাইনালে অবশ্য আর্জেন্টিনার পক্ষে ছিলাম, কারণ বিপক্ষে ছিল স্বাগতিক ইতালী। স্বাগতিক দল বাড়তি সুবিধা পায়, এছাড়া রেফারীর ফেভারও পেয়েছিল কিছুটা আগের ম্যাচগুলোতে, তাই তাদের বিপক্ষে আর্জেন্টিনা সমর্থন করেছিলাম। ফাইনালে অবশ্য প্রথম দিকে জার্মানীর পক্ষে থাকলেও, বিতর্কিত পেনাল্টি থেকে এগিয়ে যাওয়ার পর জার্মানীর বিপক্ষে চলে গেলাম এবং শেষ পর্যন্ত হার দিয়েই শেষ হয়েছিল আমার প্রথম বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখার পর্ব। আর্জেন্টিনা হয়তো ভাল না খেলেও এবং অনেকটা ভাগ্যের জোরেই ফাইনালে গিয়েছিল, তবে দুর্নীতি অন্ততঃ করে নি, এটুকুই ছিল প্রাপ্তি।

পরের ৯৪ বিশ্বকাপ ফুটবলে রোমারিওর কারনে ব্রাজিলের সমর্থক ছিলাম। ব্রাজিল চ্যাম্পিয়নও হয়েছিল, কিন্তু খারাপ লেগেছে ড্রাগ বিতর্কে ম্যারাডোনার নিষিদ্ধ হবার ব্যাপারটি। যদিও ডোপ-পাপী হিসেবে ম্যরাডোনা নিন্দারই যোগ্য, কিন্তু ততদিনে বুঝতে শিখেছি যে, খেলার পেছনেও অনেক বড় বড় ষড়যন্ত্র কাজ করে যা করে খোদ শয়তানেরা, শিকার হয় ভুল-ত্রুটি দিয়ে গড়া সাধারণ মানুষেরা। তাই একদিক দিয়ে তাদের অপরাধের জন্য সমর্থন না করলেও, পেছনের ক্রীড়নকদের কারণে তাদের প্রতি আলাদা একটা সহানুভূতিও কাজ করে।

৯৮ এর বিশ্বকাপে এমনই এক ট্রাজিক হিরো ছিলো ব্রাজিলের রোনালদো, তবে জিদান অবশ্যই হিরো। সেটা ফীল করেছি, ২০০৬ এর বিশ্বকাপে এসে। মাঝে ২০০২ এ ব্রাজিলের সমর্থকই ছিলাম। রোনালদিনহোর খেলা, রোনাল্ডোর রেকর্ডও উপভোগ করেছি। এবার অবশ্য চাইছি, জার্মানীর মিরোস্লাভ ক্লোজ সে রেকর্ড ভেঙে ফেলুক।

এত কিছু বললাম এ জন্য যে, আবেগতাড়িত হয়ে কোন দলকে বা খেলোয়াড়কে সমর্থন করি না আমি। তাই সমর্থনের অবস্থান বদলায় বারবার পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে। অনেকে এটাকে সুবিধাবাদী অবস্থা বলতে চাইলেও বলতে পারে, কিন্তু আমি বেছে বেছে কেন যেন হেরে যাওয়া ( আসলে অন্যায়ভাবে হারিয়ে দেওয়া) দলগুলোকেই সমর্থন করে বসি। নইলে, যোগ্য দল হিসেবে ভাল খেলে যে জিতবে, আমি তারই সমর্থক।

গতকালের ম্যাচেও তাই ব্রাজিলের সমর্থক ছিলাম খেলা শুরু হওয়ার মিনিট দশেক পর থেকেই। আগেই বলেছি, এবার আমি পুরো টুর্ণামেন্টেরই বিপক্ষে অনেকটা। তবুও ঠেকাতে যেহেতু পারছি না, তাই উপভোগ করা শ্রেয় ( আসলে সময় কাটাতে ও ঘুম তাড়াতেই খেলা দেখায় বেশি মনোযোগী এবার আমি)। দোটানা মনে খেলা দেখতে বসে মিনিট পনের পর থেকেই খেলার মাঝে জমে গেলাম। অসাধারণ খেলছিল ব্রাজিল। যারা ব্রাজিলের বিপক্ষে আবেগ ধারণ করে খেলা দেখেছেন, তারা হয়তো বুঝবে না এটা। কিন্তু আসলেই দারুণ খেলেছে ব্রাজিল একদম শেষ সময় পর্যন্ত। অবশ্য পুরো ব্রাজিল দলের চেয়েও অনেক ভাল খেলেছে মেক্সিকোর গোলকীপার গ্যুল্লেরমো ওচোয়া একাই। তাই খেলার শেষের দিকে এসে আমি আবার দোটানায় পড়ে গিয়েছিলাম যে, যোগ্য হিসেবে কার জেতা উচিৎ? যদি মেক্সিকো গোল খেয়েই যায়, তাহলে ওচোয়ার এত অসাধারণ নৈপুন্য ভেস্তে যায়। আবার ব্রাজিলই যদি গোল খেয়ে বসে, তাহলে তাদের এত ভাল খেলার কী দাম রইল! গোল করতে না পারা নেইমার, অস্কার, ফ্রেডদের যতটা না ব্যার্থতা তার চেয়ে বেশি হল ওচোয়ার গুণ। তাই শেষ দিকে এসে খেলার ধারার বিপরীতে ব্রাজিল যখন গোল খেতে বসেছিল এবং তারপর গোল দেয়ার শেষ সুযোগটাও হারালো তখন যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। আমার মনে হয় উভয় দলের কোচ ও সমর্থকেরাও তাই মনে করেছে শেষ পর্যন্ত। তাই খেলা অমীমাংসীত হলেও, আমার মতে জিতেছে দুদলই। আমিও একজন নিরপেক্ষ সমর্থক কালকের খেলার পর দুই দলেরই সমর্থক বনে গেলাম। আশা করছি দুই দলই দ্বিতীয় রাউন্ডে যাবে, যদিও ক্যামেরুনের প্রতিও একটা দূর্বলতা ছিল আমার, তবে মেক্সিকোর কাছে হেরে যাওয়ায় তাদের আশা কম। তাই ব্রাজিল ও মেক্সিকোর উপরই আশা রাখছি। আরও বেশি আশা রাখছি ভাল খেলার জয় হোক, এর উপর। শুভ হোক, বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৪।

বিশেষ দ্রষ্টব্য : বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার গোঁড়া সমর্থকদের উপর একরাশ করুণা। অন্য কোন দলের সমর্থককেই এতটা গোঁড়া দেখি নি আমি। আমি নিজেও চাইছি মেসি ভাল খেলুক, ভাল খেলেই বিজয়ী হোক আর্জেন্টিনা।

উৎসর্গঃ কাল্পনিক_ভালোবাসা ( একজন আর্জেন্টিনা সমর্থক :P ) এবং কান্ডারি অথর্ব ( একজন ব্রাজিল সমর্থক ;) )
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১০:৫৩
৩৭৫ বার পঠিত
১৭টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভারতীয় পতাকার অবমাননা

লিখেছেন সরলপাঠ, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ ভোর ৪:৪৩

বাংলাদেশের ২/১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতীয় পতাকার অবমাননা আমার কাছে ছেলেমী মনে হয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে ভারত বাংলাদেশের রাজনীতিতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করার কারণে বাংলাদেশের মানুষের মনে প্রচন্ড রকমের ভারত বিদ্বেষ তৈরি হয়েছে।

কিন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভিসা বন্ধ করায় ভারতকে ধন্যবাদ।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩



ভারত ইদানীং ভিসা দিচ্ছেনা; তারা ভিসা না দিয়ে আমাদেরকে শিক্ষা দিতে চায়! তাদের করদ রাজ্য হাতছাড় হওয়া খুবই নাখোশ, এতোই নাখোশ যে মোদী মিডিয়া দিনরাত বয়ান দিচ্ছে এই দেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতের চিকিৎসা বয়কট এবং

লিখেছেন পবন সরকার, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৫৬


ভারতের এক হাসপাতাল ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশের কোন রুগিকে তারা চিকিৎসা দিবে না। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো যে হাসপাতাল থেকে এই ঘোষণা দেয়া হয়েছে সেই হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার জন্য বাংলাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। চামচা পুঁজিবাদ থেকে চোরতন্ত্রে পরিণত হয়েছিল দেশ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:১৩






চামচা পুঁজিবাদ থেকে দেশ চোরতন্ত্রে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, আমলা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা মিলে চোরতন্ত্র করেছে।

সোমবার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখ হাসিনাকে ভারত ফেরত পাঠাবে তবে............

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪২


শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে বিচারের জন্য ভারতের কাছে ফেরত চাইতে হলে অবশ্যই বাংলাদেশকে প্রতিহিংসামূলক বিচারপদ্ধতি বাদ দিতে হবে। বিচারে শেখ হাসিনা যাতে ন্যায় বিচার পান বাংলাদেশকে আগে তা নিশ্চয়তা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×