somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তামাকজাত পণ্যের উপর কর বাড়ানোর পরামর্শ কেন ভণ্ডামী?

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগামী ২০১৪-১৫ সালের বাজেটের আলোচনা ইতোমধ্যে সংবাদ মাধ্যমগুলোতে স্থান দখল করতে শুরু করেছে। প্রতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে অর্থাৎ প্রত্যেক জুন মাসে বাজেট ঘোষণা করা হয়। এ সময়টিতে পণ্যের দাম বাড়া কিংবা কমা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। আমি অর্থনীতি বুঝি না, শুধু এইটুকু বুঝি যে, বাজেট এলেই পণ্যের দাম বাড়ে, মধ্যবিত্তের ঘুম নষ্ট হয়, বাড়ি ভাড়া ইত্যাদিক বাড়ে। কিছু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কোন্ কোন্ পণ্যের দাম বাড়তে পারে তার আগাম ধারণা করে সেসব পণ্য মজুদ করতে শুরু করে। বাজেটের পরে আবার সেসব উচ্চ দামে বিক্রি করে অধিক মুনাফা আদায় করে নেয়। যাই হোক, এটা প্রতি বছরই হয়ে থাকে। কিন্তু বিগত কয়েকটি বাজেট আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে বিশেষ একটি কারণে। বিষয়টা সাংঘাতিক বেখাপ্পা ঠাহর হওয়ায় তা আলোচনা না করে পারছি না।

আলোচনাটা শুরু হয় কতক বুদ্ধিজীবী এবং সংবাদ মাধ্যমের দ্বারা। বিভিন্ন অনুষ্ঠান, মানববন্ধন, আলোচনা সভায় তামাকজাতদ্রব্যের দাম বাড়ানোর জন্য জোর দাবি উত্থাপন করা হয়। দাম বাড়ানোর উপায়টা কি? উপায় হচ্ছে বাজেটে তামাকজাতদ্রব্যের উপর অধিক হারে কর বাড়ানোর পরামর্শ। ব্যাপারটা এরকম যে, পরমর্শ দাতারা মনে করে তামাকজাতদ্রব্যের দাম বাড়ালে তা মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে এবং সেসব উপাদান সাধারণ মানুষের জন্য অত সহজলভ্য হবে না। তামাকজাতদ্রব্যের বিরুদ্ধে জোরালো তৎপরতার, পেছনে যুক্তি হচ্ছে, এটি মানব স্বাস্থের জন্য ব্যাপক ক্ষতিকর, এসব দ্রব্য গ্রহণের ফলে মানবদেহের ফুসফুসে ক্যান্সার, যক্ষ্মাসহ নানা ধরনের রোগের জন্ম হয়, তাতে চিকিৎসা ব্যয়ও বৃদ্ধি পায়। আমাদের দেশের অর্থমন্ত্রীরাও সেসব আমলে নিয়ে থাকেন এবং তামাকজাতদ্রব্যের উপর প্রতি বছরই অধিক হারে করারোপ করেন। তাতে যে সিগারেটের একটি শলাকার দাম পাঁচ টাকা ছিল তা বেড়ে হয় ছয় টাকা। এখন বাংলাদেশে বহুল প্রচলিত একটি ব্র্যান্ডের সিগারেটের দাম বাড়তে বাড়তে প্রতিটি শলাকা নয় টাকায় গিয়ে ঠেকেছে এবং সর্বনিু একটি শলাকার দাম দেড় টাকা। আর এর মধ্যবর্তী বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিভিন্ন দামতো রয়েছেই। সামনে আসছে নতুন বাজেট। নতুন বাজেটের সময় যত ঘনিয়ে আসছে ততই এসব পণ্যের দাম বাড়ার সম্ভাবনা জেগে উঠছে। কেননা, যারা দাম বাড়ানোর পক্ষে তাদের মানব স্বাস্থ্য নিয়ে একটা দায় আছে না? সত্য সত্যই তাদের সে দায় থেকে থাকে তাহলে তাদের প্রতি আমার কয়েকটি প্রশ্ন আছে। দয়া করে সেই সচেতন ও দায়বদ্ধ ব্যক্তিগণ এসব প্রশ্নের জবাব দিয়ে নিজেদের দায়বদ্ধতার প্রমাণ দেবেন কি?

প্রশ্ন ১. কোন ধরনের ঘুরানো-প্যাচানো প্রশ্ন না করে সরাসরি প্রশ্ন করি। যদি জানেনই ধূমপান মানব স্বাস্থ্যের জন্য আসলেই ক্ষতিকর, আর আপনারা যদি হিপোক্রেট না হন তাহলে এসবের দাম না বাড়িয়ে একেবারে নিষিদ্ধের দাবি উত্থাপন করেন না কেন? একেবারে অবৈধ হলে এসব পণ্য প্রকাশ্যে কিংবা গোপনেও বাজারজাত, উৎপাদন ও পরিবহণ করা সম্ভব হবে না। যেহেতু বাজারে পাওয়া যাবে না সেহেতু ক্রেতাও থাকবে না। মানুষ ক্ষতির হাত থেকে রেহাই পাবে। সেই সাথে অপচয় রোধ হবে।
প্রশ্ন ২. মানলাম সেটা না হয় আপনারা না-ই করলেন। কিন্তু আপনারা কর বাড়িয়ে তামাকজাত পণ্যের দাম বাড়ানোর কথা বলেন কোন যুক্তিতে? আপনাদের যুক্তি- তাতে এসব পণ্য মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে এবং এর ব্যবহার কমবে-এইতো?। কিন্তু আপনারা এর পক্ষে এমন কোন পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রমাণ করতে পারবে যে, শুধুমাত্র দাম বাড়ানোর কারণে কোন মানুষ ধূমপান ত্যাগ করেছে?

প্রশ্ন ৩. তামাকজাত দ্রব্যে কর বৃদ্ধি করা হলে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ক্ষতিটা আসলে কার বেশি হয়? আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি বিক্রিত ব্রান্ডের সিগারেটগুলোর উৎপাদক মূলত বিদেশি কোম্পানি। কর বাড়ানোর কারণে তাদের ব্যবসার ক্ষতি হয়েছে এমন তথ্য কেউ আশা করি হাজির করতে পারবে না। বরং এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয় এদেশের সাধারণ ধূমপায়ী, খেটে খাওয়া দিন মজুরগণই। কর বাড়ার সাথে সাথে সেই বাড়তি করের অংশটুক কোম্পানিগুলো পণ্যের সাথে যুক্ত করে দেয়। এতে কোম্পানির কোন ক্ষতি হয় না। করটুকু দিতে হয় ক্রেতাকেই। করারোপে যদি কোম্পানিগুলোর ক্ষতি হতো তাহলে দেখা যেত সত্যিকার অর্থেই এসব ক্ষতিকারক জিনিসের উৎপাদন কমে গেছে এবং প্রকৃতপক্ষেই তা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। অন্য দিকে কর বাড়ানোর ফলে সরকারের রাজস্বে কি পরিমাণ অর্র্র্র্র্র্থ বৃদ্ধি ঘটে সে ব্যাপারে অবশ্য আমার কোন ধারণা নেই। সেটা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষই বলতে পারবে। তবে আমার মনে হয় যেহেতু এদেশে সকল ক্ষেত্রেই দুর্নীতি হয় সেহেতু এখানেও ধূর্ত কোম্পানীগুলো কর ফাঁকি দিচ্ছে না তার কোন নিশ্চয়তা নেই। অন্ততপক্ষে কর বাড়ার অজুহাতে যে হারে পণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে তাতে যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান আছে সেটাতো জোর দিয়েই বলা যায়।

প্রশ্ন ৪. তামাকজাতদ্রব্য উৎপাদনকারীদের পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা আছে। অন্যান্য কোম্পানি যেমন তাদের পণ্যের বিজ্ঞাপনের পেছনে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে থাকে, তাদের তা করতে হয় না। ফলে বিজ্ঞাপনের পেছনে তাদের তেমন কোন খরচই নেই। কিন্তু বিজ্ঞাপন প্রচার না করলে কি তাদের বিক্রি কমে যায়? না, মোটেও নয়। তাহলে তাদের পণ্য উৎপাদনে বাধা না দিয়ে বিজ্ঞাপনে নিষেধাজ্ঞা জারি রাখার দরকার আছে কি? আপনি হয়ত তো বলবেন, ক্ষতিকর জিনিসের বিজ্ঞাপন প্রচার করাটা অনৈতিক। তাহলে সেসব পণ্যের উৎপাদনকারীদেরকে লাইসেন্স দিয়ে অনুমতি দেওয়াটা কি নৈতিকতার মধ্যে পড়ে না? এখানে কেন আপনাদের নৈতিকতাবোধ জাগ্রহ হয় না?

প্রশ ৫. সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে সংবিধানের ররাত দিয়ে লেখা থাকে ‘ধূমাপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর’, ‘ধূমপান বিষপান’, ‘ধূমপানে মৃত্যু ডেকে আনে’, ধূমপানে ক্যান্সার হয়’, ‘ধূমপানে ফুসফুসের ক্ষতি হয়’ ইত্যাদি সাবধানবাণী। উচ্চ হারের করের বিনিময়ে সংবিধান দ্বারা স্বীকৃত জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর একটি পণ্য বাজারে বিক্রির বৈধতা দেওয়া কি ভণ্ডামী নয়?

প্রশ্ন ৬. একটি দেশের সংবিধানের প্রতি মানুষের সম্মানবোধ থাকতে হয়। জনপ্রতিনিধিগণ সংসদে গিয়ে যে আইন রচনা করেন তারও উপযুক্ত মূল্যায়ন হওয়া উচিৎ। প্রকাশ্যে ধূমপান নিয়ে একটি আইন পাশ করা হয়েছিলে বেশ কয়েক বছর আগে। প্রথমত সেই আইনে প্রকাশ্যে ধূমপানের শাস্তি ছিল পঞ্চাশ টাকা। পরে সেটাকে আরো বাড়িয়ে নাকি তিনশত টাকা করা হয়েছে। কিন্ত সেই আইনকে কতটুকু প্রয়োগ করা হয়েছে? লোক দেখানো কয়েকজনকে জরিমানার ঘটনার মধ্য দিয়েই আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার দায়িত্ব শেষ হয়ে গেছে। আমার প্রশ্ন হলো, ছোট হোক আর বড় হোক, একটা দেশের সংসদে আইন পাশ করে যখন কোন আইন রচনা করা হয় তখন তার প্রতিতো ন্যূনতম একটা সম্মানবোধ থাকা উচিত। কিন্তু প্রকাশ্যে ধূমপান বন্ধ হয়েছে কি? যদি বন্ধ না হয় তাহলে সেই ধূমপায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন?

প্রকৃতপক্ষে ছোট ছোট আইনকে অবমূল্যায়নের মাধ্যমেই কিংবা শাস্তিপ্রাপ্ত না হওয়ার কারণেই মানুষ বড় আইন লঙ্ঘন করতে সাহস করে। তাই আমার কথা হচ্ছে সেই আইনকে হয় বাস্তবায়ন করুন, নয় আইন উঠিয়ে নিন। নতুবা আইনের মর্যাদা লঙ্ঘিত হয়।
অন্যাদিকে তামাকজাতদ্রব্যের চাষ ও সিগারেট উৎপাদনকে বৈধতা দান করে তাদের কাছ থেকে বেশি পয়সা আদায় করার মানসিকতা পোষণ করা এবং এ জন্য বেশি করারোপের পরামর্শ দানকে আর যাই হোক, কোনভাবেই মানব কল্যাণের কাজ বলে গৃহিত হতে পারেনা। কেউ যদি এসব দাবি দাওয়ার মাধ্যমে নিজেকে মানব কল্যাণকামী দাবি করতে চান তাহলে তা পরিষ্কার ভণ্ডামী ছাড়া আর কিছুই নয়।
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×