আমার ভ্রমনটা ঠিক 'পর্যটকের' ভ্রমন ছিল না। টুরিস্ট টাইপের মানুষেরা চায় যতটা সম্ভব কম সময়ে এবং কম খরচে একটা এলাকার বিখ্যাত সব জায়গাগুলো ঘুরে দেখতে এবং ঘুরে যে দেখা হয়েছে সেটার প্রমানস্বরুপ এক গাদা ছবি তুলতে। আমি শুধুই ক্লান্তি কাটাতে, স্রষ্টার পৃথিবীর সুন্দরতম জায়গাগুলো দেখে নিদারুণ ভাল লাগায় মগ্ন হওয়ার জন্য ঘুরা ঘুরি ভালবাসি, একেবারেই প্ল্যান ছাড়া। যখন যা সামনে আসে তখন তা করা টাইপের। প্রচলিত অর্থে 'দর্শনীয়' স্থানের চেয়ে সঙ্গ আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যপূর্ণ সাধারণ জায়গা আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমার মত প্ল্যানহীন, চিন্তাহীন (বা আজাইরা চিন্তায় ভরপুর) সঙ্গী চাই, হাসাতে আর হাসতে পারলে সবচেয়ে ভাল। যত বেশি মিসম্যানেজমেন্ট হয়, আমার তত মজা লাগে। এবারেরটা এসব বৈশিষ্ট্যে ভরপুর ব্যাড়াছ্যাড়া টাইপের ভ্রমণ ছিল, তাই নিয়ে ব্যাড়াছ্যাড়া ধরণের লেখা ছাড়ছি। ঘাটতি পূরন করতে সাথে ছবি দিয়ে দিচ্ছি আচ্ছা মতন।
ক্যানবেরা ঘুরতে যাওয়ার আগে শহরটা সম্পর্কে জানুন তো... ক্যানবেরা অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী। সবচেয়ে ছোট্ট প্রদেশ বা উপপ্রদেশ। টেরিটরি। ক্যানবেরার ইতিহাসটা মজার। 1900 সালে যখন পুরো অস্ট্রেলিয়ার খন্ড প্রদেশগুলো মিলে একটা বড় দেশ হল তখন গোল বাঁধল সংসদ ভবন কই হবে তাই নিয়ে। সব প্রদেশের মানুষেরা তো বিশাল চিল্লাপাল্লা, আমাদের এখানেই হতে হবে। শেষ মেষ রাজনৈতিক নেতারা ঠিক করলেন, রাজধানী হবে সব প্রদেশের বাইরে, একটা আলাদা প্রদেশ সৃষ্টি করে ওখানে। বেছে নেয়া হল এক টুকরো অনাবাদী ভূমি, ব্যাস, ওটাই আবাদ করে হল নতুন প্রদেশ ক্যানবেরা--আদিবাসীদের ভাষায় এই শব্দের অর্থ 'দি মিটিং প্লেস' বা মিলন স্থান। এটা ক্যানবেরার একটা মজার ব্যপার। সাধারণত সব বড় বড় শহর, রাজধানী গড়ে উঠে কল কারখানা, জন বসতিকে কেন্দ্র করে, ধীরে ধীরে ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে। ক্যানবেরা পুরো শহরটাই আগে জায়গা বেছে তারপরে খুব ভাল করে ডিজাইন করে ভেবে চিন্তে গড়ে তোলা হয়েছে।
সিডনী থেকে কয়েকশ কিলোমিটার দুরে ক্যানবেরা। পাঁচ ঘন্টার পথ। আগে একবার গিয়েছিলাম, বাসার সবার সাথে, গাড়িতে করে। এবার আমরা ক'জন মেয়ে হালকা স্বাবলম্বী অ্যাডভেঞ্চারের জন্য বেছে নিলাম বাস।
(চলবে)
[ইটালিক]বি:দ্র: এই সিরিজের নামে অরিজিনালিটি নেই, কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি মুখফোড়ের ছড়ার। পুরো সিরিজটাই উৎসর্গ করলাম ধূসর গোধুলীকে।[/ইটালিক]
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০