নিচের পোষ্টে আমি কিছু জবাব দিয়েছিলাম। কিন্তু পোষ্টের লেখক আমার প্রশ্নের জবাব তো দেননি উল্টো আমার প্রশ্নগুলো মুছে দিয়ে আমাকে ব্লক করে দিয়েছেন। পোষ্টের লেখক আবদুল্লাহ শাহেদ।
Click This Link
তাই নিজের ইমানী দায়িত্ব হিসেবে আপনাদেরকে উক্ত পোষ্টের জবাব এবং কিছু লিঙ্ক দিলাম। দয়া করে দেখবেন এবং যাচাই করবেন....
(আমাকে উক্ত ব্লগে ব্লক করে রাখা হয়েছে তাই তথ্যগুলো ব্লগারদের জানানোর জন্য সামুর সাহায্য নিলাম)
১ নং: :
উনি ওখানে ওজুর বর্ণনা দিয়েছেন কিন্তু ঘার মাসেহর কোন বর্ণনা দেন নি...
মাথা ও কান মাসেহ করার পর ভেজা হাত দিয়ে গদান মাসেহ করতে হবে।
মুসা ইবনে তালহা বলেন,
যে গর্দানসহ মাথা মাসেহ করবে সে কেয়ামতের দিন গলায় বেড়ি পরানো থেকে মুক্ত থাকবে।
হাফেয ইবনে হাজার রহ. বলেন, বর্ণনাটি সম্পর্কে একথা বলা যায় যে, যদিও তা একজন তাবেয়ীর কথা হিসেবে পাওয়া যায় কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে তা রাসূলূল্লাহর হাদীস হিসেবে গণ্য হবে। কেননা, তিনি ছাড়া অন্য কারো পক্ষে এমন সংবাদ দেওয়া সম্ভব নয়।
(আত-তালখীছুল হাবীর : ১/৯২)
আল্লামা বাগাভী রহ., ইবনে সাইয়িদুন্নাস রহ., শাওকানী রহ. প্রমুখও অযুতে গর্দান মাসেহ করার কথা বলেছেন। (নায়লুল আওতার : ১/২০৪)
নওয়াব সিদ্দীক খান এই মতকে সমর্থন করে লিখেছেন যে,
“গর্দান মাসেহ করাকে বিদায়াত বলা ভুল। আত-তালখীছুল হাবীব গ্রন্থের উপরোক্ত রেওয়ায়েত এবং এ বিষয়ের অন্যান্য রেওয়ায়েত দলীল হিসেবে গ্রহনযোগ্য। তাছাড়া এর বিপরীতে বক্তব্য কোন হাদীসে আসেনি।”
(বুদূরুল আহিল্লাহ, পৃ: ২৮)
হাম্বালীগণের একাংশের মতামত হল ঘাড় মাসেহ করা মুস্তাহাব।
(মিরদাভী, আশ-শারহুল কাবীর, খ. ১, পৃ. ১০৩,
‘উলায়শ, মিনহুল জালীল, খ. ১, পৃ. ১৮৭)
হানাফী আলেমদের মতে ঘাড় মাসেহ করা মুস্তাহাব।
(ফাতাওয়া আলামগীরী, খ. ১, পৃ. ৯২)
২ নং: :
উনি তথ্য দিয়েছেন-
বুকের উপর হাত রাখাঃ
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নামাযে দাঁড়ানো অবস্থায় ডান হাত বাম হাতের উপর রেখে বুকের উপর স্থাপন করতেন। (আবু দাউদ-নাসাঈ) বুকের উপর হাত রাখাটাই ছহীহ হাদীছ দ্বারা সাব্যস্ত। এছাড়া অন্য কোথাও রাখার হাদীছ হয় দুর্বল, না হয় ভিত্তিহীন।
এই পোষ্টগুলো দেখুন এবং বিচার করুন....
Click This Link
Click This Link
নামাযে কিয়াম অবস্থায় কোথায় হাত রাখা সুন্নাত?
Click This Link
নামাযে হাত বাঁধা ও নাভীর নিচে বাঁধা
http://www.alkawsar.com/article/479
বুকের উপর হাত বাঁধা : বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা
http://www.alkawsar.com/article/503
৩ নং :
উনি তথ্য দিয়েছেন-
মুক্তাদীর জন্য সূরা ফাতিহা পাঠ জরুরীঃ
ইমামের পিছনে মুক্তাদীও সূরা ফাতিহা পাঠ করবে। কারণ রাসূল (সাঃ) এর বাণী “যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পাঠ করবেনা, তার নামায হবেনা।” (বুখারী-মুসলিম) এ কথাটি ইমাম, মুক্তাদী এবং একাকী নামায আদায়কারী সবাইকে অন-র্ভুক্ত করে। কাজেই সকলকেই সূরা ফাতিহা পাঠ করতে হবে। যেসমস্ত নামাযে ইমাম স্বরবে কিরাত পাঠ করেন, সে সমস্ত নামাযে মুক্তাদী ইমামের কিরাত শ্রবন করবে এবং নীরবে শুধুমাত্র সূরা ফাতিহা পাঠ করবে। অন্যান্য সূরা পাঠ থেকে বিরত থাকবে।
এই পোষ্টগুলো দেখুন এবং বিচার করুন....
ইমামের পিছনে মুক্তাদীর সুরা ফাতিহা পড়া আর না পড়া
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
৪নং :
উনি বলেছেন-
সূরা ফাতিহা শেষে ইমাম-মুক্তাদী সবাই শব্দ করে আমীন বলবেঃ
এই পোষ্টগুলো দেখুন এবং বিচার করুন....
Click This Link
৫নং :
নামাযে রফউল ইয়াদাইন করাঃ
এই পোষ্টগুলো দেখুন এবং বিচার করুন....
Click This Link
৬নং :
উনি তথ্য দিয়েছেন-
তিনি মাটিতে হাটু রাখার পূর্বে হস্তদ্বয় রাখতেন। (ইবনু খুযাইমাহ)
এর জবাব হল ...
1. হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা. বলেন-
আমি রাসূল সা.-কে দেখেছি তিনি সেজদায় যেতেন তখন হাত রাখার আগে হাটু রাখতেন। আর যখন সেজদা থেকে উঠতেন তখন হাটুর পূর্বে হাত উঠাতেন।
(আবু দাউদ(হাদীস নং-838), তিরমিযী শরীফ (হাদীস নং-268), নাসায়ী শরীফ (হাদীস নং-1089), ইবনে মাজাহ শরীফ (হাদীস নং-882), ইবনে খুযায়মা (হাদীস নং-626), ইবনে হিব্বান (হাদীস নং-1909) ও ইবনুস সাকান (দ্র: আছারুস সুনান, পৃ:148)
তিরমিযী বলেছেন, এটি হাসান গারীব।
2. হযরত আনাস রা. বলেন,
আমি রাসূলুল্লাহ সা.-কে দেখলাম, তিনি তাকবীর দিয়ে সেজদায় গেলেন এবং হাত রাখার আগে হাটু রাখালেন।
দারাকুতনী, হাকেম ও বায়হাকী (দ্র: আছারুস সুনান, পৃ: 147
3. হযরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রা. বলেন,
আমরা হাটুর পূর্বে হাত রাখতাম। পরে আমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হল, হাতের পূর্বে হাটু রাখবে।
সহীহ ইবনে খুযায়মা, (হাদীস নং-628)
সিজদায় যাওয়ার সময় মুসল্লী তার হাতের পূর্বে হাঁটু রাখবে। এটি হচ্ছে হানাফী, শাফেঈ এবং হাম্বলী মাজহাবের আলেমদের অভিমত। তাদের দলীল হচ্ছেঃ
১) আবু দাউদ, নাসাঈ এবং তিরমিজী শরীফে বর্ণিত ওয়ায়েল বিন হুজর (রাঃ)এর হাদীছ। তিনি বলেনঃ
رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا سجد وضع ركبتيه قبل يديه، وإذا نهض رفع يديه قبل ركبتيه
আমি দেখেছি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সিজদায় যেতেন তখন তিনি উভয় হাত রাখার আগে তাঁর হাঁটুদ্বয় রাখতেন। আর যখন সিজদাহ হতে উঠতেন তখন হাঁটুর পূর্বে হাত উঠাতেন।
ইমাম খাত্তাবী (রঃ) বলেনঃ হাতে আগে রাখার ব্যাপারে বর্ণিত হাদীছের চেয়ে এই হাদীছটি অধিক বিশুদ্ধ। আর এই পদ্ধতিটি মুসল্লাীদের জন্য অধিক সহজ এবং দেখতেও অধিক সুন্দর। দেখুনঃ المجموع للنووي ৩/৩৯৫
ইমাম তিরমিজী (রঃ) বলেনঃ এই হাদীছটি গরীব। শারীক বিন আব্দুল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ হাদীছটি বর্ণনা করেছেন বলে আমাদের জানা নেই। অধিকাংশ আলেম এই হাদীছের উপরই আমল করেন। তারা হাতের পূর্বে হাঁটু রাখার পক্ষে মত প্রদান করেন।
সহীহ মুসলিমের শর্তে ইমাম হাকেম এই হাদীছকে সহী বলেছেন। ইমাম যাহাবীর এর সাথে একমত পোষণ করেছেন। ইমাম ইবনে হিব্বান ও ইবনে খুযায়মা হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। কিন্তু কোন হুকুম লাগান নি।
2. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
إِذَا سَجَدَ أَحَدُكُمْ فَلاَ يَبْرُكْ كَمَا يَبْرُكُ الْبَعِيرُ وَلْيَضَعْ يَدَيْهِ قَبْلَ رُكْبَتَيْهِ
“তোমাদের কেউ যখন নামাযে সিজদায় যাবে তখন যেন উটের মত করে না বসে। সে যেন হাঁটু রাখার পূর্বে হাত রাখে।
(আবু দাউদ, নাসাঈ, দারামী এবং তারিখে কবীর লিল-বুখারী)
ইমাম ইবনুল কায়্যিম (রঃ) বলেনঃ আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত উপরোক্ত হাদীছের মতনে কতক রাবী ধারণা বশত ভুল করেছেন। হাদীছের প্রথমাংশ শেষাংসের বিরোধী। কেননা হাঁটুর পূর্বে হাত রাখলে উটের বসার মতই হয়ে যায়। কারণ উট প্রথমে মাটিতে হাত রাখে। তিনি আরও বলেনঃ আমার মতে আবু হুরায়রা (রাঃ)এর হাদীছের মতন ও সনদ কতিপয় রাবীর নকট পরিবর্তন হয়ে গেছে। সম্ভবত মতনটি এমন ছিলঃ وليضع ركبتيه قبل يديه অর্থাৎ উভয় হাতের পূর্বে হাঁটু রাখবে।
ইমাম আবু বকর ইবনু শায়বা এমনই বর্ণনা করেছেন।
এই বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য হল....
কোন কোন বর্ণনায় প্রথমে হাত তারপর হাটু রাখার কথাও এসেছে। কিন্তু অধিকাংশ বিশেষজ্ঞের মতে তা সহীহ নয়। এ ব্যাপারে কিছুটা মতপার্থক্য রয়েছে।
(ইবনুল কায়্যিম, যাদুদ মায়াদ 1/215-224, হাবিবুর রহমান আযমী রহ. মাকালাতে আবুল মাআসির 1/149-174)
৭নং :
সিজদা থেকে ওঠার সময় কি কিছুক্ষন বসবে নাকি সরাসরি ওঠে যাবে ???
উত্তর :
1.
নুমান ইবনে আবী আয়্যাশ র. বলেন,
আমি রাসূলুল্লাহ স. এর অনেক সাহাবীকে দেখেছি, তারা ১ম ও ৩য় রাকাতে সেজদা থেকে উঠে সোজা দাড়িয়ে যেতেন, বসতেন না।
(মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং- 4011
নামাবী র. বলেছেন, এটির সনদ হাসান)
2.
আব্দুর রহমান ইবনে ইয়াযীদ র. বলেন,
আমি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-কে নামাযে ভালভাবে লক্ষ্য করলাম, আমি লক্ষ্য করলাম, তিনি সোজা উঠে পড়লেন, বসলেন না। তিনি বলেন, তিনি ১ম ও ৩য় রাকাতে পায়ের উপর ভর দিয়েই দাড়িয়ে যেতেন।
(মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস নং- 2966, 2967
মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং- 3399, 4001)
তাবরানী র. আলকাবীর গ্রন্থে, বায়হাকী আস সুনানুল কুবরা গ্রন্থে (2/125),
এটিকে সহীহ বলেছেন।
হায়ছামী রহ. “মাজমাউয যাওয়াইদ” গ্রন্থে বলেছেন, এর রাবীগণ সহীহ হাদীসের রাবী। (দ্র: আছারুস সুনান, পৃ. 152)
3.
আবু আতিয়্যা রহ. বণনা করেছেন,
হযরত ইবনে আব্বাস রা. ও ইবনে ওমর রা.ও অনুরূপ করতেন।
(মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস নং- 2968)
4.
আব্দুর রাযযাক র. ইবনে জুরায়য র. থেকে বর্ণনা করেন,
আতা র. আমাকে বলেছেন, হযরত আমিরে মুয়াবিয়া রা.-কে দেখেছি, তিনি সেজদা থেকে উঠে দেরি করতেন না। তাকবীর বলেই দাড়িয়ে যেতেন।
(মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস নং- 2960, সনদ সহীহ।)
5.
ওয়াইব ইবনে কাইসান র. বলেন,
আমি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়র রা.-কে দেখেছি, তিনি যখন দ্বিতীয় সেজদা থেকে উঠতেন তখন পায়ের উপর ভর দিয়ে সোজা দাড়িয়ে যেতেন।
(মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং- 4005, এর সনদ সহীহ)
6.
উবায়দ ইবনে আবিল-জা’দ র. বলেছেন,
হযরত আলী রা. নামাযে পায়ের উপর ভর দিয়েই দাড়িয়ে যেতেন।
(মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং-4000, নাফে থেকেও অনুরূপ বর্ণিত আছে, দ্র. হাদীস নং- 4007)
7.
হযরত ইবনে ওমর রা. সম্পর্কে খায়ছামা র. বলেন,
আমি তাকে নামাযে পায়ের উপর ভর দিয়ে উঠে পড়তে দেখেছি।
(মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং- 4002)
8.
শা’বী বর্ণনা করেন,
হযরত ওমর রা. আলী রা ও রাসূলুল্লাহ স. এর সাহাবীগণ নামাযে পায়ের উপর ভর দিয়েই উঠে পড়তেন।
(মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং- 4004)
9.
ইমাম যুহরী র. বলেন,
আমাদের উস্তাদগণ যখন 1ম ও ৩য় রাকাতে ২য় সেজদা থেকে উঠতেন তখন সোজা দাড়িয়ে যেতেন, বসতেন না।
(মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস নং- 4009)
10.
আল্লামা আলাউদ্দিন আল মারদীনী আল জাওরুন-নাকী গ্রন্থে লিখেছেন,
ইমাম শাফেয়ী র. ছাড়া সকল ইমাম ও আলেমই এ বিষয়ে একমত যে, প্রথম ও তৃতীয় রাকাতে দ্বিতীয় সেজদার পর সোজা দাড়িয়ে যাবে, বসবে না।
(খ.-২, পৃ- 126)
এই বিষয়ে সর্বশেষ মন্তব্য হল ...
আল্লামা ইবনুল কায়্যিম র. তার যাদুল-মাআদ গ্রন্থে বলেছেন,
এটা যদি রাসূলুল্লাহ স. এর নিয়মিত আমল হতো তবে নামাযের বিবরণ দানকারী প্রত্যেক সাহাবী তা উল্লেখ করতেন। রাসূল স. শুধু কোন কাজ করারই একথা প্রমান করে না যে, এটা নামাযের একটি অনুসৃত আমল। তবে হ্যা, যদি জানা যায় এটাকে তিনি অনুসরনযোগ্য সুন্নত আখ্যা দিয়েছেন তবে সেটা নামাযের সুন্নত বলে গন্য হবে। কিন্তু যদি ধরে নেয়া হয় যে, তিনি বিশেষ প্রয়োজনে সেটা করেছেন, তাহলে তা নামাযের একটি সুন্নত বলে প্রমাণিত হবে না।
(১ম খন্ড, ২৪০পৃ
বিচারের দায়িত্ব আপনাদের হাতে ......
উক্ত ব্লগার যে দলের অনুসারী তাদের সম্পর্কে জানতে নিচের পোষ্ট দুটি দেখুন....
Click This Link
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:৫১