আমার এক ভাই বুকের উপর হাত বাঁধা সংক্রান্ত একটি পোষ্ট দেখে অবাক হয়ে গেলাম। তিনি লিখেছেন-
সালাতে নাভির নীচে হাত বাঁধার কথা সহীহ হাদীসে নেই। বরং হাত বুকের উপর বাঁধার কথা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
সাহ্ল বিন সা'দ (রাযীঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ সালাতে লোকদেরকে ডান হাত বাম হাতের বাহুর উপর স্থাপন করার নির্দেশ দেয়া হত। (বুখারী-১ম খণ্ড, আল-মাদানী প্রঃ হাঃ ৭৪০, পৃঃ ২৮৩, ১ম খণ্ড, তাঃ পাঃ হাঃ ৭৪০, পৃঃ ৩৫৭-৩৬০, ইঃ ফাঃ, হাঃ ৭০৪, আঃ প্রঃ, হাঃ ৬৯৬)
ওয়াইল বিন হুজল (রাযীঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আমি নাবী (সঃ) এর সাথে সালাত আদায় করেছি। (আমি দেখেছি) নাবী (সঃ) স্বীয় ডান হাত বাম হাতের উপর রেখে বুকের উপর রাখলেন। (সহীহঃ ইবনু খাযাইমাহ্- ২০ পৃঃ; বুখারী- ১০২ পৃঃ, ১ম খণ্ড, আযীযল হক্ব, হাঃ ৪৩৫, ১ম খণ্ড, আঃ প্রঃ, হাঃ ৬৯৬, ২য় খণ্ড, ইঃ ফাঃ, হাঃ ৭০৪, ১ম খণ্ড, আল-মাদানী প্রঃ হাঃ ৭৪০, পৃঃ ২৮৩, ১ম খণ্ড, তাঃ পাঃ হাঃ ৭৪০, পৃঃ ৩৫৭-৩৬০; মুসলিম- ১৭৩ পৃঃ, ২য় খণ্ড, ইঃ ফঃ, হঃ ৮১; আবূ দাঊদ- ১ম খণ্ড, আল-মাদানী প্রঃ হাঃ ৭২৩, পৃঃ ৪৬৫-৪৬৬। হাঃ ৭২৬, পৃঃ ৪৬৭, ১ম খণ্ড, ইঃ ফঃ, হাঃ ৭৫৯; সহীহঃ আত্-তিরমিযী- ১ম খণ্ড, আল-মাদানী প্রঃ হাঃ ২৫২, পৃঃ ২৩০; নাসাঈ- ১৪১ পৃঃ; ইবনু মাজাহ্- ৫৮, ৫৯ পৃঃ; মিশকাত- ৭৫ পৃঃ, ২য় খণ্ড, নূর মুহাম্মাদ আযমী, মাদ্রাসা পাঠ্য, হাঃ ৭৪১, ৭৪২; মুয়াত্তা মালিক- ১৭৪ পৃঃ; মুয়াত্তা মুহাম্মাদ- ১৬০ পৃঃ; যদুল মায়াদ- ১২৯ পৃঃ; হিদায়া দিরায়াহ-১০১ পৃঃ; কিমিয়ায়ে সআদাত- ১ম খণ্ড, ১৮৯ পৃঃ; বুলূগুল মারাম- আল-মাদানী প্রঃ হাঃ ২৭৮, পৃঃ ৮০)
লিঙ্ক- Click This Link
এর উত্তর হল-
আবদুর রউফ ভাই বলেছেন- সালাতে হাত বাধার কথা সহীহ হাদীসে নেই। বরং বুকের উপর বাধার কথা সহীহ হাদীসে আছে।
তিনি প্রমান পেশ করেছেন বুখারীর এই হাদীস হযরত সাহল ইবনে সাদ (রা) থেকে বর্নিত। তিনি বলেন নামাজে লোকদেরকে ডান হাত বাম হাতের বাহুর উপর স্থাপন করার নির্দেশ দেয়া হত।
আবদুর রউফ ভাই এবং যারা এ সম্পর্কে ভ্রান্তিতে আছেন তাদের বলছি, এই হাদীসের কোন শব্দ দ্বারা আপনি প্রমান পেলেন যে হাত বুকের উপর বাধা হত ? দয়া করে জানাবেন।
বরং এই হাদীস কোনভাবেই হাত বুকের উপর বাধার সামান্যতম প্রমান নেই।
এরপর তিনি (আবদুর রউফ ভাই)একটি মুনকার হাদীস পেশ করেছেন। হাদীসটি হল ওয়াইল বিন হুজর(রা) থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, “আমি নবী করিম (সা) এর সাথে সালাত আদায় করেছি। (আমি দেখেছি) নবী (সা) স্বীয় ডান হাত বাম হাতের উপর রেখে বুকের উপর রাখলেন।”
এর পর আবদুর রউফ ভাই রেফারেন্স পেশ করেছেন:
১. বুখারী। হাদীসটি বুখারী শরীফে নেই। যে কেউ চাইলে বুখারী শরীফ খুলে দেখুন। বরং ইমাম বুখারী এই হাদীসের রাবী মুয়াম্মেল ইবন ইসমাঈলকে মুনকারুল হাদীস বলেছেন (মুনকার হাদীস জাল বা বানোয়াট হাদীসের সবচেয়ে নিকটবতী )। এতএব ইমাম বুখারীর মত অনুযায়ী হাদীসটি মুনকার। এবং আল্লাম ইবনুল কায়্যিম (র) যিনি ইমাম ইবনে তাইমিয়া (র) এর শিষ্য তিনি ইলামুল মুয়াককিয়ীন গ্রন্থে বলেছেন বুকের উপর হাত বাধার কথাটুকু মুয়াম্মেল ইবন ইসমাঈল নামক রাবীর নিজস্ব বৃদ্ধি। এতএব আল্লামা ইবনুল কায়্যিমের মত অনুযায়ী হাদীসটি মাউযু (বানোয়াট)। এতএব এই হাদীসটি মাউযু (বানোয়াট) কমপক্ষে মুনকার ।
তাছাড়া সুফইয়ান সাউরীর অন্যান্য শিষ্যরা তাদের বর্নিত হাদীসে এই অংশটি উল্লেখ করেননি।
২.মুসলিম।মুসলিম শরীফের এ বিষয়ে হাদীস আছে কিন্তু তাতে বুকের উপর কথাটি নেই।
তাহলে বুখারী এবং মুসলিমের রেফারেন্স কেন দেয়া হল ?
৩. আত তিরমীযি। তিরমিযী শরীফে হাত বাধার বিষয়ে বর্নিত হাদীসটি হল : কুতায়বা (র)....... কাবীসা ইবন হুলব তার পিতা হুলব (রা)থেকে বর্ননা করেন যে, তিনি বলেন : “রাসূল (সা) যখন আমাদের ইমামত করতেন তখন ডান হাত দিয়ে তার বাম হাত ধারন করতেন।”
এই বিষয়ে ওয়াইল ইবন হুজর, গুতায়ফ ইবনুল হারিছ, ইবন আব্বাস,ইবন মাসউদ ও সাহল ইবন সাদ (রা) থেকে হাদীস বর্নিত আছে।
ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী (র) বলেন হুলব বর্নিত হাদীসটি হাসান।
সাহাবী তাবিঈ ও পরবতী যুগের আলিমগন এই হাদীস অনুসারেই আমল করেছেন। তারা সালাতে বাম হাতের উপর ডান হাত রাখার অভিমত ব্যক্ত করেছেন। কেউ কেউ উভয় হাত নাভীর উপর স্থাপন করার আর কেউ কেউ নাভীর নীচে স্থাপন করার অভিমত দিয়েছেন। তবে আলিমগনের নিকট উভয় সুরতেরই অবকাশ রয়েছে।
হুলব (রা) এর নাম হল ইয়াযীদ ইবন কুনাফা আত তাঈ। (তিরমীযি হাদীস নং ২৫২)
আমি হাদীসটি আপনার নিকট হুবুহু উপস্থাপন করলাম। বলূনতো হাদীসটির কোন শব্দে বুকের উপর কথাটি আছে? তবে তিরমিযীর রেফারেন্স কেন দেয়া হল ?
৪. নাসঈ শরীফ : নাসাঈ শরীফে সালাতে বাম হাতের উপর ডান হাত রাখার স্থান নামক অনুচ্ছেদে ওয়ায়িল ইবন হুজর (রা)থেকে বর্নিত হাদীসের কোথাও বুকের উপর কথাটি নেই।
তাহলে কেন বুকের উপর হাত বাধার ব্যাপারে নাসাঈ শরীফের রেফারেন্স দেয়া হল ?
এভাবে রেফারেন্স দেখে পাঠক নিশ্চয় ধোকা খাবে। তাই আমি অনুরোধ জানাব আবদুর রউফ ভাইকে এভাবে রেফারেন্স না দেয়ার।
সুনানে আবু দাউদ এবং ইবনে মাজাহর হাদীস সম্পর্কে এখানে কোন পোষ্ট করলাম না। পোষ্টটি দীর্ঘ হয়ে যাবার কারনে। অপেক্ষা করুন ইনশাল্লাহ অচিরেই সে সম্পর্কে জানতে পারবেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন। আমার কোন কথায় আবদুর রউফ ভাই কষ্ট পেলে মাফ করে দিবেন। সম্ভবত আপনি ভালভাবে যাচাই না করে কারো কথায় বিশ্বাস করে ভুল করেছেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় তিনিই সবাধিক জ্ঞাত।