বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতি (বাবিজস) ও বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশন (বিএফএফ) এর যৌথ উদ্যোগে প্রথম জগদীশ বসু বিজ্ঞান ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়। গত ২৮ জুন থেকে শুরু হওয়া বিজ্ঞান ক্যাম্প চলে ২ জুলাই পর্যন্ত, ৫দিনের আবাসিক বিজ্ঞান ক্যাম্পটি অনুষ্ঠিত হয় আশুলিয়ায় ড্যাফোডিল আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মূল ক্যাম্পাসে।
উল্লেখ্য ৩১মে ও ১জুন অনুষ্ঠিত ঢাকায় প্রথম শিশু কিশোর বিজ্ঞান কংগ্রেস – ২০১৩ থেকে নির্বাচিত সেরা ৫১ জনকে নিয়ে এই ক্যাম্প পরিচালনা করেন বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী।
ক্যাম্পে নানা ধরনের আয়োজনের মধ্যে ছিল বিজ্ঞান ভিত্তিক আলোচনা, বিজ্ঞানের নানান পরীক্ষা নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ, আকাশ দেখা, তারা চেনা, গাছ চেনা, মাটি চেনা, শরীর চর্চা, খেলা ধুলা সহ আরও অনেক কিছু। এছাড়াও সার্বক্ষণিক ক্যাম্পের নানান দিক তত্তাবধানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির সহ-সভাপতি মুনির হাসান ও বাবিজসের দপ্তর,প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আছিব চৌধুরী এবং সমন্বয়ক কাব্য আহমেদ ও জয়দীপ সুমন সরকার।
বিজ্ঞান ক্যাম্প এর প্রথম দিনে খুদে বিজ্ঞানীরা সকাল থেকেই শাহবাগ মোড়ে জড় হতে থাকে,সকাল ১২টার দিকে বাসযোগে চলে আসে ড্যাফোডিলের মূল ক্যাম্পাস আশুলিয়ায়। দিনের শুরুতে ছিল পরিচয় পর্ব, দুপুরে পর বুয়েটের সহযোগী অধ্যাপক ড. ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী স্যারের একটি চমৎকার সেশন ছিল অপূর্ব এই মহাবিশ্ব নিয়ে। এছাড়াও বাংলাদেশ প্রথম দিনে এস্ট্রোনমিকেল সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক এফ আর সরকারও উপস্থিত ছিলেন। তিনি খুদে বিজ্ঞানীদের সাথে এস্ট্রোনমিক সম্পর্কে নানান অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন ও তাদের উৎসাহ প্রদান করেন। বিকেলে বিএফশাহীন কলেজের শিক্ষক তানিয়া কামরুন্নাহার বেতার জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ের উপর খুদে বিজ্ঞানীদের জানান।
এরপরই খুদে বিজ্ঞানীদেরকে নানান কমিটি করে দেওয়া হয়, কেও গেস্ট ম্যানেজমেন্ট কমিটি, কেও ক্লিনিং কমিটি, কেও খাদ্য কমিটি, কেও তথ্য দেওয়া কমিটি, কেও ক্রিড়া কমিটি, কেও সিনেমা কমিটি। রাতে গল্প ও আড্ডা এবং সিনেমা দেখার মধ্যে দিয়ে প্রথম দিনের কার্যক্রম শেষ হয়।
দ্বিতীয় দিন সকালেই ক্যাম্পে এসে যোগ দেন বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। সকাল থেকেই খুদে বিজ্ঞানীদের সাথে চলে বিজ্ঞান ভিত্তিক নানান আলোচনা। তিনি বলেন তোমাকে ভালো বিজ্ঞানী হতে হলে দেশের প্রতি ভালোবাসাও থাকতে হবে এবং জাতীয় সংগীত শুদ্ধ ও সুন্দর ভাবে গাইতে হবে। এছাড়াও ঘরে বসে করা যায় এমন কিছু বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার কৌশল তিনি শিখিয়ে দেন।
তারপর খুদে বিজ্ঞানীদের মধ্যে কয়েকটি গ্রুপ করে দেওয়া হয় এবং নিজেদের গ্রুপের জন্য নাম করণ করে নেয় ওরা। এই সব দলের কাজ হচ্ছে আবাসিক ক্যাম্পের নানান কাজের পাশাপাশি ওদেরকে নিজেদের বিজ্ঞান ভিত্তিক আইডিয়া/প্রকল্প খুজে বের করতে হবে এবং তা নিয়ে গবেষণা করতে হবে এবং আলোচনা ও পর্যালোচনার মাধ্যমে সব তথ্য সংগ্রহ করে ডাটা কালেক্ট করে পোস্টার বানাতে হবে এবং তা সমাপনী দিনে প্রেজেন্ট করতে হবে। দুপুরের বিশ্রাম এর পর ক্যাম্পে আবারও ক্লাশ পর্ব, এই পর্বে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিজ্ঞান একডেমীর ফেলো অধ্যাপক ড. আলী আসগর। উনি বিজ্ঞানকে কত সহজে পড়া যায় এবং বিজ্ঞানকে মজা করে পড়ার জন্য গুরুত্বআরোপ করেন এবং খুদে বিজ্ঞানীদের নানান প্রশ্নের জবাব দেন।
বিকেলে খুদে বিজ্ঞানীরা গবেষণা চালায় লজ্জাপতি গাছের পাতা ধরলে কেন তা চুপসে যায়, কতক্ষণ পর খোলে, মাটি এতো লাল কেন, এই মাটিতে কেঁচো বেশি কেন, এই এলাকায় কাঁঠাল এর পরিমান এতো বেশি কেন, সাথে চলে মাঠে খেলা ধুলা এবং সন্ধ্যায় গ্রুপ ভিত্তিক কাজ। রাতে গ্রুপ আলোচনা ও বিজ্ঞান ভিত্তিক ডকুমেন্টারি দেখার মধ্যে দিয়ে দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম শেষ হয়।
তৃতীয় দিনের শুরুতে সকাল বেলা পিটিআই ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন এবং জাতীয় পতাকাকে শ্রদ্ধা, শারীরিক ব্যায়াম দিয়ে শুরু হয় বিজ্ঞান ক্যাম্প এর তৃতীয় দিন। সকাল বেলা খুদে বিজ্ঞানীদের সাথে জীবের বৈচিত্র্যতা কিভাবে এসেছে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন ডাঃ সোমিত্র চক্রবর্তী ও উদ্ভিদ বিজ্ঞান সম্পর্কিত বিজ্ঞান প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করেন রফিকুল ইসলাম। এরপরই আশে পাশে পাওয়া যায় খুব সহজলভ্য কিছু জিনিস দিয়ে বিজ্ঞানের মজার মজার প্রকল্প তৈরি করা যায় এমন একটি সেশন ছিল। সেখানে খুদে বিজ্ঞানীদের ফেলে দেওয়া ও আশে পাশের নানান জিনিস গুলো যোগান দেওয়া হয় তারা গবেষণা করে এবং ছোট্ট ছোট্ট প্রকল্প তৈরি করে। এ সেশনটি পরিচালনা করেন ইমতিয়াজ, তানভীর ও প্রীতম এবং আছিব। দুপুরে আবদুল্লাহ আল মাহমুদের মহাবিশ্ব ও সময় এবং প্রীতম মজুমদারের নক্ষত্রের জন্ম ও মৃত্যু নিয়ে সেশন চলে বিকেল পর্যন্ত। বিকেলে মাঠে খেলা ধুলা ও সন্ধ্যায় গানের আসর ও রাতে সিনেমা দেখার মধ্যে দিয়ে ৩য় দিনের কার্যক্রম শেষ হয়।
চতুর্থ দিন সকাল থেকেই খুদে বিজ্ঞানীরা গ্রুপ ওয়ার্ক এর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছিল, এরই মধ্যে বিজ্ঞানের একাডেমিক কাউন্সিলর মাহমুদুল হাসান সোহাগ এর পরিচালনায় বড়দের জন্য কোয়ান্টাম পিজিক্স ও ছোটদের জন্য পদার্থ বিদ্যার সব মজার আবিস্কার নিয়ে আলোচনা চলে। তিনি বলেন তোমাকে লেগে থাকতে হবে, হতাশাকে জয় করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে তাহলেই তুমি সফলতার মুখ দেখতে পাবে। তোমাকে মন কে বুঝাতে হবে যে এইটা আমার করতেই হবে, এইটা আমাকে যে করেই হউক পারতেই হবে। গ্রুপ ভিত্তিক কাজের জন্য দলে দলে মেন্টরদের নিয়ে আশে পাশে চলে যায় মাঠে, গ্রামে, বাগানে, ক্ষেতে ও অন্যান্য জায়গায়। হাতে কাগজ ও কলম এবং গবেষণার জন্য অন্যান্য দরকারি জিনিস। বিকেল হতেই শুরু হয় গবেষণার ফলাফল বের করা ও অন্যান্য ডাটা গুলো সংগ্রহ করা ও গ্রুপ ভিত্তিক আলোচনা। দুপুরে ছিল অভিক রয় এর গনিত ও গ্রাফ বিষয়ক ক্লাশ ও বিকেলে তামিম শাহরিয়ার সুবিনের সঞ্চালনায় খুদে বিজ্ঞানীদের নিয়ে একটি চমৎকার প্রোগ্রামিং আড্ডা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রোগ্রামিং আড্ডায় তথ্য প্রযুক্তির এই দিনে ছোট বেলা থেকেই প্রোগ্রামিং এর উপর চেষ্টা করলে আস্তে আস্তে বড় হলে এর উপর ভালো দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব। তিনি আরও বলেন তোমাকে প্রোগ্রামার হলেই হবে না হতে হবে কঠোর পরিশ্রমী ও নিজের মধ্যে থাকতে হবে গ্রুপ ভিত্তিক কাজ করার চিন্তা ভাবনা। সন্ধ্যায় আউসানুল্লাহ প্রযুক্তি বিশ্ববিদালয়ের প্রভাষক ফারহানা মান্নান খুদে বিজ্ঞানীরা কিভাবে পোস্টার তৈরি করবে কিভাবে পোস্টার প্রেজেন্ট করবে তাঁর উপর একটি ধারনা দেন। রাতে গ্রুপ ওয়ার্ক ও পোস্টার তৈরি অন্যান্য আনুসাঙ্গিক কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিল খুদে বিজ্ঞানীরা।
ক্যাম্পের শেষ দিনেও গ্রুপ ওয়ার্ক ও পোস্টার বানানো, উপস্থাপনা তৈরিসহ অন্যান্য কাজে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে অংশগ্রহণকারীরা। বিজ্ঞান ক্যাম্প এর শেষ দিনে ক্যাম্পের পরিচালক ড. ফারসিম মান্নান মোহাম্মদীর সঞ্চালনায় পোস্টার প্রদর্শনী পর্বে উপস্থিত ছিলেন জাপানের বিজ্ঞান ভিত্তিক সংস্থা সায়েন্স ফোরাম ২১-এর পরিচালক ড. কৃষ্ণা জি নাথ ও বিএফএফের নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী।
এরপর পরেই বিজ্ঞান ক্যাম্প এর সমাপনী পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। ক্যাম্পের সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডিআইইউর উপাচার্য অধ্যাপক লুৎফুর রহমান, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবীব হাসনাত, বিপণন বিভাগের প্রধান আজম খান, বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির সহ-সভাপতি মুনির হাসান, সাধারণ সম্পাদক ড. ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী ও দপ্তর,প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আছিব চৌধুরী, নির্বাহী সদস্য ইমতিয়াজ, আবদুল্লাহ, আহমেদ সানি, রিদয়ান, প্রীতম, সানি এবং ক্যাম্পের লজিস্টিকের দায়িত্বে ছিল সমন্বয়ক কাব্য আহমেদের নেতৃত্বে একদল স্বেচ্ছাসেবক সহ আরও অনেকে।
বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতি - বাবিজসঃ
http://spsb.org/
শিশু কিশোর বিজ্ঞান কংগ্রেস ওয়েবসাইটঃ
http://www.cscongress.org
আছিব চৌধুরী
দপ্তর, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক
বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতি (বাবিজস)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১:৫০