(ক) প্রথমত, এক শ্রেণির নাস্তিক আছে যারা নিজেদের পরিচয় দেয় নাস্তিক হিসেবে, কিন্তু কার্যত তারা না আস্তিক, না নাস্তিক। এদের ধর্ম হলো ‘হিপোক্রিসি’। এরা নিজেদের নাস্তিক পরিচয় দেয় শুধুমাত্র বন্ধু-বান্ধব ও সহকর্মীদের ভয়ে, প্রেসটিসের কথা ভেবে। যেহেতু আধুনিকতার অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে নাস্তিকতা, তাই তারা নাস্তিকতার সিঁড়ি বেয়ে আধুনিকতার চরম শিখরে আরোহন করতে সচেষ্ট। এদের মতো হিপোক্রেট, যারা নিছক নিজেকে আধুনিক প্রমাণ করার জন্য ফেসবুক বা ব্লগের ধর্ম ক্যাটাগরিতে এথিজম লিখেন বা মানবতা লিখেন, তারা আসলে যে কী, সে সম্বন্ধে হয়তো নিজেরাই সন্দিহান থাকেন। আজ বাদে কাল যদি আস্তিকতার পালে হাওয়া লাগে এবং এরা টুপি পরে মসজিদ-মাদ্রাসায় দৌড়ায় তাহলে অবাক হবার কিছু নেই। এদেরকে অনেকে ‘নিউ এথিস্ট’ও বলে থাকে।
(খ) দ্বিতীয়ত, নাস্তিক বলা হয় এমন আরেকটি দল আছে, যারা অনেকাংশে উপরোক্ত শ্রেণিটির মতোই, তবে পার্থক্য হলো, এরা আরও এক ধাপ এগিয়ে নিজেদের নাস্তিকতাকে প্রচার করতে ভালোবাসে। এবং তা করতে গিয়ে এমন কদর্যতার আশ্রয় নেয়, যা মানবজাতির ইতিহাসে অতীতে খুব কমই ঘটেছে। দিনের আলো প্রকাশ হলে রাতের অন্ধকার এমনতিতেই কেটে যায়, এ সত্য এরা জানে তবে মানে না। যদি মানতো তাহলে নির্দিষ্ট ধর্মের নবী, অনুসারী, ধর্মগ্রন্থ ও ধর্মীয় স্থাপনা নিয়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি বা অশ্লীল কমেন্ট করতো না। এমন কোনো কাজ করত না যাতে কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে আঘাত লাগে। যার স্বপক্ষে শক্তিশালী যুক্তি-প্রমাণ আছে, সে কোন কারণে প্রতিপক্ষের মোকাবেলা করতে গিয়ে গালাগালি করবে? তাদের আচরণই তাদের দুর্বলতা প্রমাণ করে। এই শ্রেণিটি এই কাজ অর্থাৎ, ধর্মবিদ্বেষ ছড়ানোর কাজটা খুবই নগ্নভাবে করে চলেছে। মানুষের রুচিবোধ কত নীচে নামতে পারে, মানসিকতা কত সংকীর্ণ হতে পারে এদের না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। মূলত এদেরই অপকর্মের কারণে বাংলাদেশে আস্তিক-নাস্তিক ইস্যু মাথাচাড়া দেয়, যার ধারাবাহিকতায় বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডও ইতোমধ্যেই সংঘটিত হয়ে গিয়েছে।
(গ) তৃতীয় শ্রেণিটিই মূলত নাস্তিকতার চর্চা করতে চেষ্টা করেন যুক্তির কষ্ঠিপাথরে যাচাই-বাছাই করে। যদি সংখ্যার হিসাব করা হয়, তাহলে আগের দুই শ্রেণির অনুপাতে এদের সংখ্যা খুবই কম। এই শ্রেণিটি কম-বেশি সব সময়ই ছিল, কিন্তু বর্তমানে যে কারণে নাস্তিকতা বিতর্কিত হচ্ছে এবং দেশের রাজনীতি ও ধর্মীয় পরিমণ্ডলে অস্থিরতা ছড়াচ্ছে তার জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী নাস্তিক নামধারী আগের দুই শ্রেণি, যারা আসলে কোনো আদর্শেরই ধারক নয়, আদর্শ ও নীতিহীনতাই যাদের ধর্ম।
https://www.facebook.com/asadali.ht