সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বিডিআর বিদ্রোহে শহীদ ৫৬ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন পাঁচ জন সেনাসদস্য। ঢাকায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ৪৮ সেনাকর্মকর্তার জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে। অন্তিম শয়ানে সেনাকর্মকর্তাদের চোখের পানি ও ভালোবাসায় বিদায় জানিয়েছে সমগ্র জাতি। এখন নির্দ্বিধায় বলা যায়, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের শত্রুরা বাংলাদেশকে অরক্ষিত ও নিরাপত্তাহীন করার এক গভীর ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করেছে। দেশের শত্রুদের এই কিলিং মিশন অপরিকল্পিত ছিল না। সময় যত যাচ্ছে রহস্যের জট এক এক করে খুলতে শুরু করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বাদ দিয়ে তদন্ত কমিটি পুনর্গঠিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর তদন্ত কমিটি পুনর্গঠন করে এবং সেনাবাহিনীর নিজস্ব তদন্ত কমিটির অনুমোদন দিয়ে ভালো কাজ করেছেন। এখন জনমনে সন্দেহ দূর হবে। তদন্ত কমিটি দুটোর ওপর ভরসাও বাড়বে। এত বড় ঘটনায় গোয়েন্দা তৎপরতার ব্যর্থতা অত্যন্ত পীড়াদায়ক। সে বিবেচনায় গোয়েন্দাদের ওপর ভরসা করা কষ্টকর হলেও নিষ্ঠা ও ধৈর্যের সাথে অনুসìধান চালাতে হবে। তদন্তকাজকে সমন্বয় করে ঘটনার স্বরূপ উন্মোচনে আন্তরিক হতে হবে। এখন আর দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকার সুযোগ নেই। শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার দিকে নজর দিতে হবে। এ লক্ষ্যে জনগণকে সাথে পাওয়া ও নেয়া জরুরি। সমপরিমাণ জরুরি রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা। রাজনীতিবিদদের বুঝতে হবে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে জনগণ সংবেদনশীল। স্বাধীনতার প্রশ্নে জনগণ দলাìধ ও মতাìধ নয়, একেবারে আপসহীন। তাই বাংলাদেশের মানুষ এখনো মর্মবেদনায় কাঁদছে। স্বজনহারাদের সাথে সাধারণ মানুষেরও শোক মাতম এখনো থামেনি। পিলখানা এলাকার বাতাস এখনো ভারী হয়ে আছে। বাতাসে লাশের গìধ। আকাশে-বাতাসে-মাটিতে ভাসছে ষড়যন্ত্রের নানা আলামত। বিদ্রোহীদের খুঁজে বের করতে ইতোমধ্যে ‘অপারেশন রেবেল হান্ট’ শুরু হয়েছে। মামলা হয়েছে সহস্রাধিক বিডিআর সদস্যের বিরুদ্ধে। রাষ্ট্রদ্রোহ এ মামলার বাদি হয়েছে পুলিশ। দানবদের শাস্তির জন্য মামলা হওয়া বড় কথা নয়। বড় কথা বিদ্রোহের শেকড় উপড়ে ফেলা। নেপথ্যশক্তির মুখোশ উন্মোচন করা। সবচেয়ে বড় কথা দ্রুত ক্ষত শুকিয়ে তোলা। ষড়যন্ত্রের বিষদাঁত ভেঙে দিয়ে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা।
পিলখানার ঘটনাকে দেখা হচ্ছে দেশের প্রতিরক্ষাব্যবস্খা দুর্বল করার অপপ্রয়াস হিসেবে। আরো স্পষ্ট করে বলা যায়, এটি ছিল স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে ঠাণ্ডামাথার ষড়যন্ত্র। ব্যর্থ ও অকার্যকর রাষ্ট্র প্রমাণের পরিকল্পনা। এক ধরনের প্রতিশোধও। তাই রাজনৈতিকভাবে বিদ্রোহ মোকাবেলার কৌশল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অকপটে স্বীকার করা উচিত, সময়ক্ষেপণ কৌশল সঠিক ছিল না। প্রধান বিরোধী দল বলেছে, এ কৌশল সঠিক ছিল না। এ বক্তব্যকে রাজনৈতিকভাবে নেয়া ঠিক হয়নি। প্রধানমন্ত্রী জেদের বশবর্তী না হয়ে এ কথাটি মেনে নিয়ে বিরোধী দলের সহযোগিতা চাইতে পারতেন। সেটাই হতো দায়িত্বশীলতা। তাতে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার কাজটি সহজ হতো। সে বাস্তবতা না বুঝে অনেকটা ক্ষোভের সাথে প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে বললেন, সেনানিবাসে সেনাসদস্যদের কাছে যা শুনেছেন, সংসদে বিরোধী দলের মুখেও একই কথার প্রতিধ্বনি শুনছেন। এ বক্তব্য দিয়ে তিনি সেনাবাহিনীর ক্ষোভ-দু:খের ভাষাকেও অবমূল্যায়িত করলেন। প্রধানমন্ত্রী বুঝতে চাইলেন না তিনি সরকার চালাচ্ছেন। তার কথায় অর্থ কী দাঁড়াচ্ছে? এর সরল অর্থ দাঁড়ায়, সেনাবাহিনীর অভিমত ও বিরোধী দলের মূল্যায়ন অভিন্ন। অনেকেই প্রথমে ভেবেছেন এটি নিছক ক্ষোভ-দু:খের ব্যাপার। রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা রক্তক্ষরণ কমাবে। এমন ধারণা একটা সীমা পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য হতে পারে। কিন্তু চূড়ান্ত বিচারে এ বিদ্রোহ যে শুধু দাবি-দাওয়ার বিষয় ছিল না; ছিল হত্যাযজ্ঞ সেটা মেনে নেয়াই উচিত ছিল। এ মূল্যায়নে সরকারের কোনো কৃতিত্ব নেই। বরং বিরোধীদলীয় নেত্রীর কথায় সহমর্মিতা ও দেশপ্রেম দুটোই আছে। এ জন্য সরকার বিব্রত না হয়ে সাধুতা প্রদর্শন করলেই জনগণ খুশি হতো। বিরোধীদলীয় নেত্রীর কথার মাধ্যমে সত্যই প্রকাশ পেয়েছে, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যিনি কিনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীও তিনি কি সেনাবাহিনীর প্রতিপক্ষ হতে চেয়েছেন? আমরা জানি না, প্রধানমন্ত্রী গভীর ভাবনায় না গিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কে কেন নিজেকে জড়িয়ে নিলেন। এই ইস্যুতে রাজনীতি মোটেও কাম্য নয়। দেশ-জাতির প্রশ্নে রাজনীতি সব সময় শাপেবর হয় না। এ ইস্যুতে সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা দুটোই চিহ্নিত হবে এবং সেটা অস্বাভাবিক নয়।
সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে বুঝেছি, পিলখানা ট্র্যাজেডি নিয়ে রাজনীতি হোক এটা কেউ চান না। আমাদের ধারণা, বিরোধী দল রাজনীতি করেনি। বিরোধী দল রাজনীতি করলে সরকারি দলের জন্য পরিস্খিতি আরো বিব্রতকর হতো। বিরোধী দল সরকারকে বিব্রত করতে চায়নি। মুখস্খ রাজনীতিও টেনে আনেনি। বিরোধী দল সরকারি কর্মকৌশলের সমালোচনা করেছে। সমালোচনার ধরনও আক্রমণাত্মক ছিল না, সমালোচনার ধরন ছিল কিছুটা একাডেমিক। প্রধানমন্ত্রী সেই বক্তব্য খণ্ডন করে তার দলের ও সরকারের অবস্খান ব্যাখ্যা করলে পরিমিতিবোধই প্রধানমন্ত্রীকে রক্ষা করত। এখন প্রধানমন্ত্রী অভিযুক্ত। বিটিভিও। তা ছাড়া বিদ্রোহকে বুঝতে অপারগতার কারণে এখন শত শত প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। কোনো কিছু গোপন নেই। গোপন থাকবে না। তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে গোয়েন্দারা বিভ্রান্ত হতে পারে, কিন্তু তথ্য বেরোবেই। তা ছাড়া দেশের সব রাজনীতিবিদ একই ঘটনার ভিন্ন ভিন্ন মূল্যায়ন করতেই পারেন। বিরোধী দলের মূল্যায়ন সেনাবাহিনীর অভিন্ন হওয়ার কারণে এই ভরসাটা তো পাওয়া গেল, সেনাবাহিনীর মতো ভাবার রাজনৈতিক শক্তি ও জনগণ আছে। এটি তো দোষের কোনো বিষয় নয়।
সেনাসদস্যরা বিনা কারণে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেনি। সমগ্র জাতি যখন কাঁদছে তখন সেনাসদস্যরা শুধু কাঁদবে না, কিছুটা সংক্ষুব্ধ হবে এটা মানতে দোষ কী? এত রক্ত, পৈশাচিকতা, বর্বরতা ও নৃশংসতায় পাথরমন এবং পাষণ্ড হৃদয়ও গলে যায়। সেনাসদস্যরা আবেগতাড়িত হবে এটা অনেক বেশি স্বাভাবিক, দোষের নয়। মানবিক বৈশিষ্ট্য।
প্রধানমন্ত্রীর এখন অনেক প্রশ্নের জবাব দিতে প্রস্তুত থাকা উচিত। বিদ্রোহ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অসংখ্য জিজ্ঞাসা সাধারণের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। দেনদরবার থেকে বৈঠকি ব্যবস্খা, জিম্মি উদ্ধার থেকে নিরাপদে পলায়ন পর্যন্ত এত সব জিজ্ঞাসার জবাব ছাড়া তদন্তই অসম্পূর্ণ থাকবে। এ জবাব আগের মতো সহজ হবে না। এটা বিরোধী দলকে ঠেঙানোর ব্যাপার নয়, দেশের অস্তিত্বের প্রশ্ন। কারণ সবার মূল্যায়ন এটা ষড়যন্ত্র, বিদ্রোহ। যুক্তিগ্রাহ্য ক্ষোভের বহি:প্রকাশ নয়, তা ছাড়া সব কিছু পূর্বপরিকল্পিত। এর সাথে বাইরের স্বার্থান্বেষী মহল জড়িত। বহি:শক্তি জড়িত নয়, এটি সরকারকেই প্রমাণ করে জনগণকে প্রবোধ দিতে হবে। নাড়ির টান, বìধুত্বের বোঝাপড়া ও ক্ষমতার মারপ্যাঁচ দিয়ে সেটা সম্ভব হবে না। প্রণব মুখার্জি বলেছেন, হাসিনা সরকার বিডিআর বিদ্রোহ মোকাবেলায় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। এটি তার সনদ হতে পারে। আমাদের জনগণ এভাবে সনদ দেয়নি। যতক্ষণ দেশের জনগণ সনদ দেবে না, ততক্ষণ সরকারের প্রধান নির্বাহী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী অভিযুক্ত থাকবেন। এ অভিযোগ জনতার আদালতের। কারণ, দেশের অভ্যন্তরে বসে আমাদের জনগণ বিষয়টা প্রণব বাবুর মতো দেখছে না। যেভাবে দেখছেন প্রণব বাবু এবং তার দেশের মিডিয়া। আমাদের সেভাবে দেখলে চলে না। আমাদের অনেক কিছু হাতিয়ে দেখতে হবে। অনেক প্রশ্নের জবাব পাওয়ার পর সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা বিচার বিবেচনায় আনার প্রশ্ন উঠবে। সমস্যা হচ্ছে বিরোধী দল বলেছে, রাজনৈতিক কৌশল সঠিক ছিল না। তাতেই যদি প্রধানমন্ত্রী সংযম হারান তাহলে বুঝতে হবে আমরা বড় কোনো সমস্যা আড়াল করছি। এখন দেশের প্রশ্ন। আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র রাজনীতির প্রশ্ন নয়। প্রশ্ন নয় চারদলীয় জোট ও মহাজোটের অ্যাজেন্ডা কিংবা দাবি-দাওয়ার। তদন্ত কমিটি পুনর্গঠন করে প্রধানমন্ত্রী দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন। সেনাবাহিনীকে নিজস্ব প্রক্রিয়ায় কাজ করার অনুমোদনও বুদ্ধিজাত। বিরোধী দলের মূল্যায়নকে বুদ্ধিজাত হয়ে গ্রহণ করলে সমস্যা কমত। বাড়ত না। এটা স্পষ্ট এখন প্রধানমন্ত্রী না চাইলেও অনেক কিছু হবে। অনেক চাপও সহ্য করতে হবে। তিনি অনেক কিছু অনুমোদন দিতেও বাধ্য। তার পরও তিনি বিরোধী দলের গুরুত্ব ও প্রয়োজন বুঝবেন না, এটা তো মানা যায় না। সংসদীয় ধারায় বিষয়টি নতুনভাবে শিখতে হবে কেন?
আমাদের নিরাপত্তা বিঘিíত হলে কিংবা সীমান্ত অরক্ষিত হলে, কার লাভ কার ক্ষতি এটা বোঝার জন্য যথেষ্ট প্রাজ্ঞ হতে হয় না। প্রধানমন্ত্রী নিজেও জানেন, অরক্ষিত স্বাধীনতা-পরাধীনতার নামান্তর। তাই আমাদের এখন সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠে যেতে হবে। কারণ তদন্ত কমিটিগুলো কাজ শুরু করেছে। এখন সবার উচিত তদন্তকাজে সহযোগিতা করা। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করা। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করার ক্ষেত্রে তোষামোদ কোনো কাজ দেয় না। একদল জ্ঞানপাপী বলছেন, রক্তপাতহীন সমাধান করে প্রধানমন্ত্রী বাহ্বা পাচ্ছেন। এসব চাটার দল ও মোসাহেব শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকেও ডোবাবে। অথচ এরা চেতনার সওদাগর। স্বাধীনতার একক ঠিকাদার। আমরা জানি না জ্ঞানপাপীরা আর কত রক্তপাত চান। আর কত হত্যার পর তারা বুঝবেন রক্তপাত হয়েছে। এ ধরনের তোষামোদ শোনার জন্য যদি প্রধানমন্ত্রী আগ্রহী থাকেন তাহলে তার খালেদা জিয়ার কথায় নাখোশ হওয়ারই কথা। কারণ চাটুকাররা প্রধানমন্ত্রীকে এখনো সত্য বুঝতে বাধা দিচ্ছে। তারা ভাবছে সামান্য ক্ষতি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মহা ক্ষতি ঠেকিয়েছেন।
এখন গুজবে কান না দিয়ে প্রচারণা পরিহার করে প্রকৃত বিদ্রোহীদের শনাক্ত করা জরুরি। নেপথ্যশক্তি চিহ্নিত করা তার চেয়েও জরুরি। অন্যথায় নিরপরাধীরাও শাস্তির মুখোমুখি হতে পারে। যদিও প্রধানমন্ত্রীর সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা এখন অনেকটা তাৎপর্যহীন। এখন সাধারণ ক্ষমা ধরনের কিছু ভাবতে গেলে সেটা হবে আরো ক্ষতির কারণ। তদন্ত ও বিদ্রোহী গ্রেফতারের সাথে সাথে জনমতকে ইতিবাচক করাও জরুরি। পারস্পরিক সন্দেহ, তদন্তের আগেই অভিযুক্ত করে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে হবে। ভারতীয় মিডিয়া এ কুকাজটি করে আমাদের দৃষ্টি ফেরাতে ও চিন্তাশক্তিকে অস্বচ্ছ করতে অপচেষ্টা চালিয়েছে। বিডিআর’র নাম পরিবর্তন, চাকরিরত সৈনিকদের অবসরের সময় বাড়িয়ে দেয়া, সদ্য অবসরপ্রাপ্তদের কাজে যোগদান করিয়ে তাৎক্ষণিক সঙ্কট মোকাবেলাসহ কোনো কোনো সাবেক সেনাকর্মকর্তার দেয়া পরামর্শগুলো বিবেচনায় নিতে হলে সাতপাঁচ ভাবা প্রয়োজন। অনেক কিছুই করা সম্ভব। তবে কোনো কাজই স্বৈর প্রক্রিয়ায় নয়, ভেবেচিন্তে ঠাণ্ডা মাথায় করতে হবে। স্মরণ করার ও রাখার বিষয় হচ্ছে, প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার সাথে পরিস্খিতি মোকাবেলার স্বার্থে ইস্যুটিকে রাজনীতিকায়ন করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হবে। এ বিরত থাকার অর্থ কাউকে ছাড় দেয়া নয়, সত্য আড়াল নয়, জাতীয় ঐক্য বিঘিíত না করা। প্রকৃত সত্য খুঁজে পেতে আন্তরিক থাকা। আমরা লক্ষ করছি, দায় এড়াতে অথবা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে অনেক দায়িত্বশীল ব্যক্তিত্বও অসংযমী আচরণ করছেন। মানবসৃষ্ট ভয়াবহ এ বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে হলে দায়িত্বশীলতা প্রদর্শনের কোনো বিকল্প নেই। প্রাতিষ্ঠানিক সেনাবাহিনীর মর্যাদা ও গৌরব যেমন পবিত্রজ্ঞান করতে হবে, তেমনি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা রক্ষা করে সার্বভৌমত্ব হেফাজত করাও অপরিহার্য কর্তব্য ভাবতে হবে। একই সাথে সাংবিধানিক ধারার ধারাবাহিকতা রক্ষা করে গণতান্ত্রিক বিকাশকে অবারিত রাখার ক্ষেত্রেও যত্নবান হতে হবে। আমাদের জন্য এখন কোনোটি গৌণ নয়। যেমন গৌণ নয় দেশকে সামনে এগিয়ে নেয়ার জন্য পরিকল্পিত ভবিষ্যৎ যাত্রা অব্যাহত রাখার বিষয়টিও।
তদন্তকাজকে স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য ও বস্তুনিষ্ঠ করা সহজ কাজ নয়। এ দিকে সবার মনোযোগ আকৃষ্ট না হলে জাতি তদন্তের নামে সময়ক্ষেপণ ও তাৎপর্যহীন কিছু তৎপরতা বৈ আর কিছু লক্ষ করবে না। তদন্তের স্বার্থে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ গ্রহণ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদত্যাগ করলে ভালো নজির সৃষ্টি হবে। তা ছাড়া এমন নজির নতুনও নয়। মুম্বাই ঘটনার পর ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদত্যাগ করে ভুল করেননি। এতে লজ্জা নেই। সরকারের ভাবমর্যাদা বাড়ে। এখন মানবাধিকার ও আইনের মূল্যবোধকেও অনেক বেশি সমীহ করতে হবে। আশা করি যার যার অবস্খান থেকে সবাই চরম দায়িত্বশীলতা প্রদর্শন করবেন। সঠিক বিচার আর নিষ্ঠুর আচরণ এক কথা নয়। আইনের মুখোমুখি করে শাস্তি নিশ্চিত করা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন এক কথা নয়। বিনা বিচারে মানুষ হত্যার কোনো এখতিয়ার মানুষের নেই। তাই আমাদের সামনের দিনগুলো হবে সতর্কতার এবং অনেক বেশি সতর্কতার।
আইনের একটি চিরায়ত নিয়ম হচ্ছে, হাজার অপরাধী ক্ষমা পেয়ে যাক, নিরপরাধী একটি প্রাণীও যেন ক্ষতির মুখোমুখি না হয়। কিলিং মিশনের হোতাদের ব্যাপারে অনুদার থাকাই সব বিবেচনায় যুক্তিযুক্ত। কারণ বিদ্রোহ কোনো দিনই ক্ষমাযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয় না। এর শেকড়সুদ্ধ উপড়ে না ফেললে বিদ্রোহ আশকারা পায়। বারবার ছোবল মারতে উদ্যত হয়।