ধরে নেয়া যাক আমি লিখলাম, “ আকাশে উড়ে যায় একপাল গরু ”
সঙ্গে সঙ্গে দেখা যাবে দুটি দলে বিভক্ত হয়ে গেছে সবাই। একদল বলছে যে এটি একটি অতীব উচ্চ মর্গের স্যাটায়ার আর একদল বলছে যে বাংলা ভাষার বিপক্ষে কোন গভীর ষড়যন্ত্রের জাল বুনেছি। আসলে আমাদের এই বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি অনেকটা এমনই হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোন বিষয়ে আমরা ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারিনা। সব কিছুতেই বিভাজন না করলে আমাদের মনোবাসনা পূর্ণ হয়না। আমরা তৃপ্ত হই বিভাজনে।
পথে, ঘাটে, বাসে, টেম্পুতে, টং দোকানে, এমনকি ব্লগে আর ফেসবুকে যেখানেই যাই না কেন দেশ প্রেমিক বুদ্ধিজীবীদের অভাব নেই। সবাই যেভাবে দেশ ও দেশে ঘটে যাওয়া ঘটনা প্রবাহ নিয়ে মাতামাতি করে যে কোন ইস্যুতে তাতে করে আমিও আর নিজের বুদ্ধি নিয়ে চুপ করে বসে থাকতে পারিনা। কিন্তু যাই হোক এত বুদ্ধির পরেও যে কেন দেশের উন্নতি হয়না সেটা বুঝিনা ! আমরা শুধু বুদ্ধি খাটাই নিজ নিজ পছন্দের দলের প্রতি আস্থা ভাজন হতে। আমরা আসলে দেশ নয় যেন দলের প্রতি অন্ধ ভক্ত। আমরা প্রকৃত দেশ প্রেমিক না হয়ে দল প্রেমিক একটি জাতিতে পরিনত হয়ে গেছি। আসলে আমরা হয়ে যায়নি খুব সুক্ষ ভাবেই আমাদের মাঝে এই বিভেদ সৃষ্টি করে দেয়া হয়েছে। আমরা ভুলে যাই একজন ব্যাক্তির চেয়ে দল বড় আর দলের চেয়ে দেশ বড়।
রাজনীতি হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কিছু ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত কোন গোষ্ঠী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। যদিও রাজনীতি বলতে সাধারণত নাগরিক সরকারের রাজনীতিকেই বোঝানো হয়, তবে অন্যান্য অনেক সামাজিক প্রতিষ্ঠান, যেমন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যেখান মানুষের মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক বিদ্যমান, সেখানে রাজনীতি চর্চা করা হয়। রাজনীতি কতৃত্ব ও ক্ষমতার ভিত্তিতে গঠিত সামাজিক সম্পর্ক নিয়ে গঠিত। রাষ্ট্রবিজ্ঞান হচ্ছে শিক্ষার এমন একটি শাখা যা রাজনৈতিক আচরণ শেখায় এবং ক্ষমতা গ্রহণ ও ব্যবহারের উপায় সম্পর্কে আলোচনা করে।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের দেশে যারা রাজনৈতিক নেতা রয়েছেন কিংবা রাজনীতি করছেন বাস্তবে অথবা ভার্চুয়ালি তাদের অধিকাংশেরই রাজনীতি করার কোন যোগ্যতাই নেই। একদল রয়েছেন যারা নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বলে দাবি করেন অর্থাৎ বাকিরা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি সেই হিসাবে। আর একদল রয়েছেন যারা নিজেদের জাতীয়তাবাদী বলে দাবি করেন অর্থাৎ বাকি যারা রয়েছেন তাদের ভেতর আর যাই হোক জাতীয়তা নেই। স্বাধীনতার বেয়াল্লিশ বছর পরেও যে দেশের রাজনীতিতে এমন বিভাজন থাকে তাদের দিয়ে আর যাই হোক দেশের উন্নতি সম্ভব নয় কিংবা সেটা প্রত্যাশা করা নিছক ছেলেমানুষী ব্যতীত আর কিছুই নয়। সেই সাথে যুক্ত রয়েছে ধর্মীয় দল যারা ধর্ম মেনে দেশ চালাতে প্রস্তুত। অবশ্যই ধর্মীয় অনুশাসন আমাদের মেনে চলতে হবে কিন্তু শুধু যদি সেটা মূর্তি ভাঙ্গা, মসজিদ-মন্দির অথবা আস্তিক-নাস্তিক দন্দ নিয়ে আন্দোলন অথবা নারীর পর্দার মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে তবে দেশ যে রসাতলে হারিয়ে যাবে সেটা নিশ্চিত। ধর্ম ব্যবসা অথবা চেতনা ব্যবসাই যখন রাজনীতির মূলমন্ত্র তখন দেশের উন্নয়ন যে শুধু কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ থাকবে সেটা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
পরিতাপের বিষয় এই যে আমরা আজও একাত্তুরে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করি, দ্বিমত পোষণ করি আমাদের জাতীয় নেতাদের অবদান নিয়ে। ইতিহাস বিকৃত হতে হতে এমন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে যে মাঝে মাঝে সন্দেহ হয় আসলেই দেশে একাত্তুরে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিলো নাকি শুধু একটু গণ্ডগোল হয়েছিলো। মাত্র নয় মাস তাই হয়ত স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের কাছে খুব সস্তা হয়ে গেছে। যদি প্যালেস্টাইনের মত যুগের পর যুগ নির্যাতিত হতে হত হয়ত আমরা তাহলে ইতিহাস বিকৃত করার উন্মাদনায় মেতে থাকার মত হীন মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে পারতাম।
আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে পৃথিবীর বুকে অযথাই গর্ব করি। আমাদের ইতিহাসের কোন ঠিক ঠিকানা নেই। আমরা আজও পরে আছি ইতিহাস নিয়ে। দেশের জাতীয় ইস্যুগুলো নিয়ে কোন মঞ্চ গড়ে ওঠেনা, হয়না কোন আন্দোলন কিংবা হরতাল। আমাকে শুধু হতে হবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি নতুবা আমি রাজাকার অথবা আমাকে হতে হবে জাতিয়তাবাদী নতুবা আমি ভিনদেশী। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি এই বিষয়টি আমার সল্পজ্ঞানে বুঝতে কষ্ট হয়। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়েছে সেই কবে আর এই দেশ এখন স্বাধীন। দেশে যদি এখনও যুদ্ধ চলত তবে মেনে নেয়া যেত মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হিসেবে আমাকে যুদ্ধ করতে হবে। তবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হৃদয়ে ধারন করতে হবে আর যেসব রাজাকার এখনও এই বাংলাদেশের মাটিতে জীবিত রয়েছে তাদের সকলের বিচার করতে হবে। এবার বলি জাতিয়তাবাদী হতে হবে এই কথাটিও আমার সল্পজ্ঞানে বোধগম্য হয়না। যার ভেতর জাতীয়তা নেই সেতো এই দেশের একজন নাগরিকই হতে পারেনা। বাংলাদেশের নাগরিক হতে হলে এবং দেশ প্রেমিক হতে হলে অবশ্যই জাতীয়তা থাকতেই হবে। নাকি যারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়েই কেবল পরে থাকতে পছন্দ করে তারা কেউ জাতীয়তা বোধ জীবনে লালন করেন না। আর যদি নাকরে থাকেন তবে কিসের এতো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, যার ভেতর জাতীয়তা নেই সেতো দেশ প্রেমিক কিংবা দেশের নাগরিকই হতে পারেনা।
পৃথিবীতে হিটলার নামটি ঘৃণার সাথেই নেয়া হয়। কিন্তু এই হিটলার ক্রিকেট খেলা নিয়ে একবার তাচ্ছিল্য প্রকাশ করেছিলো সেই কারনে আজও জার্মানিতে ক্রিকেট খেলা তাদের আর হয়ে উঠল না কিন্তু ফুটবল বিশ্বে তারা নিজেদের পরাশক্তি হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। জাপানে আগ্নেয়াস্ত্রের উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে কিন্তু তারা প্রযুক্তি দিয়ে নিজেদের ধনী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। যে জাপান সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্পের দেশ তারা নিয়েছে ভূমিকম্প রোধের সর্বাত্মক আধুনিক ব্যবস্থা তাই বলে কি তারা অস্ত্র বানাতে নাপারার বেদনায় আজও বেদনাসিক্ত হয়ে রয়েছে ! তাকিয়ে দেখা যাক মালয়েশিয়ার দিকে কোথা হতে কোথায় তারা পৌঁছে গেছে কিংবা যুদ্ধ বিদ্ধস্ত একটি দেশ চীন শুধু মাত্র অগাধ দেশপ্রেম ও পরিশ্রম তাদের আজ পৃথিবীর মানচিত্রে একটি পরাশক্তিতে রূপান্তরিত করেছে। যতদূর জানি জাপানে তাদের নিজ ভাষা ছাড়া অন্য কোন ভাষার প্রাধান্য নেই। অথচ তাদের ভাষার জন্য যুদ্ধ করতে হয়নি। আর আমরা বাংলাদেশিরা ভাষার জন্য প্রান দিয়ে আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের যেখানে গৌরব অর্জন করেছি সেই আমরাই ইংরেজি আর হিন্দির মিশ্রণে এক অদ্ভুত ভাষায় কথা বলতেই নিজেদের স্মার্ট মনে করি।
পথ চলতে গেলে দেখতে পাওয়া যায় ভ্রাম্যমান দরিদ্রদের সংসার, মধ্যবিত্তদের নাভিশ্বাস জীবন যাপন কোথায় এসব নিয়ে কখনও কোন জাগরণ মঞ্চ কিংবা হরতাল হতে দেখা যায় না। এসব নিয়ে তর্ক বিতর্ক হতেও দেখা যায় না। অথচ আমরা যে যার দলের প্রশংসা আর অন্যদলের প্রতি কাঁদা ছিটিয়েই আমাদের রাজনৈতিক চেতনার স্বাক্ষর রাখতেই পছন্দ করি আর নিজেদের বড় নেতা গোছের কিছু হতে পারার আনন্দে দু একটি জ্বালাময়ী শ্লোগান দিয়েই তৃপ্ত হই।
রাজনীতি করাই মানে যে শুধু কোন দলের হয়ে কাজ করা সেটা কিন্তু নয়। যার যার অবস্থান থেকে দেশের জন্য মঙ্গল জনক কাজ করে যাওয়াই রাজনীতি এবং পাশাপাশি যাকে জনপ্রতিনিধী হিসেবে নির্বাচিত করা হয় তার কাছে রাজ্যের সঠিক নীতি তুলে ধরা এবং তাদের নীতিতে ভুল থাকলে সেটাও তুলে ধরার নামই রাজনীতি। যেহেতু আমার ভোটে একজন রাজনীতিবীদ দেশ পরিচালনা করার প্রতিনিধী হিসেবে নিযুক্ত হন তাই না ভোট বলে আমি নিজের কর্তব্যকে এড়িয়ে যেতে পারিনা। আমাকে যে রাজনিতীবীদ তাদের মিশন এবং ভিসনে সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হৃদয়ে ধারন করে জাতিয়তাবাদী হিসেবে প্রমান করতে পারবে আমি তাকেই ভোট দেব। আমি সেই রাজনীতির পক্ষে।
গতকাল রাতে স্বপ্নে দেখি, শান্তি ফিরে এসেছে যদিও শান্তির মা মারা যাবার পর থেকেই শান্তি প্রায় একরকম নিখোঁজ হয়েই দিন যাপন করে আসছিলো। শান্তি ফিরে এসেই তার নতুন জীবনের উন্নতি ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধির লক্ষে আপন কাজে মনোনিবেশ করেছে। তারপর স্বপ্ন ভেঙ্গে গেলো। স্বপ্ন যেন সত্যি হয়, শান্তি যেন সত্যি ফিরে আসে এই কামনা করি। কিন্তু শুনেছি শান্তি ফিরে আসার সোনার চাবিখানা গলায় বেঁধে রেখেছে দৈত্য। এখন সেই দৈত্যর গলা হতে সোনার চাবি ছিনিয়ে নেয়ার যুদ্ধ শুরু হওয়া উচিত।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৫ রাত ১১:৪৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




