
আমরা প্রতি নিউ ইয়ার সিংগাপুরের বাইরে করার চেষ্টা করি। ২/৩ বছর সিংগাপুরে থাকলে এখানকার নিউ ইয়ার উৎযাপন আর কোন ভাবেই আকর্ষন করেনা। সেই একই ফায়ার ওয়ার্কস আর রালি যা হবার তা ক্রিসমাসেই করা হয়। তো আমরা ক্রিসমাস সিংগাপুরে করি আর নিউ ইয়ারে অন্য কোথাও যাবার চেষ্টা করি। গত বার যেমন কেম্বডিয়ায় গেছিলাম !
এবার ঠিক করলাম অস্ট্রেলিয়া যাব। কারন ক্লিফ অস্ট্রেলিয়ার সিটিজেন বলে অফিস থেকে বছরে দুবার ফ্রি টিকেট পায় যাওয়া আসার আর ওখানে ওর আত্বিয় স্বজন থাকায় আমাদের থাকার জন্য হোটেল ভাড়া করতে লাগবেনা। কম খরচে ওখানে ঘুড়ে আসা যায়। তছাড়া আমি আগে কখনও অস্ট্রেলিয়া যাইনি। ক্লিফও এক্সাইটেড আমাকে অস্ট্রেলিয়া ঘুড়ে দেখাবার জন্য।
যাই হোক যেতে গেলে আমার ভিসা লাগবে। আমি এখনো বাংলাদেশি পাসপোর্ট হোল্ড করছি বলে। ভাবলাম নো ওয়ারিস হাজবেন্ড হিসেবে ক্লিফ স্পন্সর লেটার দিলেই তো হয়ে গেল। তাছাড়া আমার সিংগাপুরে কম্পানি আছে তার পেপারও ভিসা পেতে সাহায্য করবে।
ফর্ম তুলে ফিল আপ করে প্রয়োজনীয় সমস্ত কম্পানি পেপার যেমন - পে শ্লিপ, এ্যনু্য়াল রিপোর্ট , আই সি, ক্লিফের স্পন্সর লেটার, ক্লিফের আই সি, পাসপোর্ট কপি সব নিয়ে গেলাম ভিসা এপ্লিকেশন জমা দিতে।
এক ইন্ডিয়ান অফিসারের কাউন্টারে আমার আমার ডাক পরলো। এই অফিসারদের কাজ হলো শুধু চার্ট মিলিয়া এপ্লিকেশন জমা নেয়া। দেখা সব পেপার ঠিক আছে কিনা!
সে আমার পেপার নেবার আগেই জিঙ্গেস করল কোন দেশের পাসপোর্ট আমার। বললাম বাংলাদেশের। আমার দিকে এমন ভাবে তাকাল যেন আমার চেহারাটা কেন ফকিরের বা চোরের বা টেররিস্টের মত নয় এতে সে খুবই ডিসএপোয়েনন্টেড। আমি যেন অস্ট্রেলিয়া যাবার কোন অধিকার রাখিনা।
অফিসার : কেন অস্ট্রেলিয়া যাবে।
আমি : হলিডে
অফিসার : তোমার ফর্ম ফিলাপ ঠিক মত হয়নি, তোমার পেপার ঠিক মত নেই
আমি তোমার এপ্লিকেশন নিতে পারব না।
আমি : তুমি না দেখে কি করে বললে ঠিক মত ফিলাপ হয়নি বা আমার
পেপার নিই? আমার স্পন্সর লেটার ও আছে।
অফিসার : দেখি তোমার পেপার গুলো একটা একটা করে দাও।
দিলাম ফর্ম প্রথমে। এর পরে ক্লিফের স্পন্সর লেটার। স্পন্সর লেটারটা না পড়েই সে আমার দিকে ছুড়ে ফেলে বলল ।
অফিসার : আমরা এই স্পন্সর লেটার নেব না এতে কাজ হবে না আনলেস তুমি
অস্ট্রেলিয়া থেকে কোন অস্ট্রেলিয়ানের স্পন্সর লেটার নিয়ে আস।
অামি : উনি অস্ট্রেলিয়ান এবং আমার হাজবেন্ড হোয়াট এল্স ইউ ওয়ান্ট?
অফিসার : তোমার নিজের কম্পানি হলে পে শ্লিপ কেন কাট?
আমি : আমার নিজের কম্পানি বলে কি আমি স্যালারি ড্র করবনা
একাউন্টস থাকবে না? তা না থাকলে এ্যনুয়াল রিপোর্টস কি করে
হবে। তাছারা তোমরা ওটা চেয়েছ এপ্লিকেশন ফর্মে।
এর পর এ্যনুয়াল রিপোর্ট দিলাম। আই সি দিলাম। আমার আই সি তে স্পশ্ট লেখা কম্পানির নাম ও আই সি র প্রকার এবং মিনিস্ট্রি অফ ম্যনপাওয়ার থেকে ইস্যু।
অফিসার : এসবে কিছু হবে না তোমার কত টাকা আছে তা আমাদের জানতে
হবে আর তোমার কম্পানি সত্যি কিনা তাও জানতে হবে তাই
তোমার ব্যাংক সে্টমেন্ট ও কম্পানি পেপার যেটা মিনিস্ট্রি অফ ম্যন
পাওয়ার থেকে দেয়া হয় সেটা লাগবে। তোমার হাজব্যান্ডের কি
আছে তাতে হবে না তোমার কি আছে তা আমরা দেখব শুধু।
হা হা হা... কেন আমি আমার কত টাকা আছে তা শুধু অস্ট্রেলিয়ান এম্বাসি নয় পৃথীবির কাউকেই কেন জানাব?
এনি ওয়ে আমি বললাম আমার পেপার গুলো জমা নিতে বাকি পেপার গুলো আমি পরে দিয়ে যাব। সে বলল জমা নিতে পারে তবে বাকি পেপার না পেলে ভিসা হবে না।
এম্বাসি থেকে বের হয়ে ক্লিফ কে ফোন দিয়ে বললাম যে তার স্পন্সর লেটারে কাজ হবে না ওরা আমার ব্যাংক স্টেটমেন্ট চায় আর কম্পানি পেপার।
ক্লিফ সোজা এম্বাসিতে চলে গেল তখনি। গিয়ে ঐ ইন্ডিয়ান অফিসারের সুপার ভাইজার কে (এক অস্ট্রেলিয়ান) জিঙ্গেস করল " আমাকে কারন দেখাও একজন অস্ট্রেলিয়ান হয়ে আমি কেন আমার ওয়াইফ কে স্পন্সর করাতে পারব না।"
সেই সুপার ভাইজারও তো হতবাক। বলল " স্যার আমি জানি না কি হয়েছে তবে আমি তোমাকে যে অফিসার এটা বলেছে তার কাছে নিয়ে যাচ্ছি" এটা শুনে
ক্লিফ : সে আমাকেও ত একই কথা বলবে।
সুপার ভাইজার : না সে বলবেনা কারন আমি ওর পাশে দাড়িয়ে থাকব।
সুপার ভাইজার ঐ ইন্ডিয়ান অফিসারকে বলল এই ভদ্রলোকের কমপ্লেইন আছে তোমার এগেইনস্টে উনাকে সার্ভ করো আগে।
ক্লিফ কে দেখে ত সে হুজুর হুজুর করা শুরু করল। আবার পাশে তার বস। ক্লিফের প্রশ্নের উত্তরে বলে যে আমিত এপ্লিকেশন রিসিভ করেছি তোমার স্পন্সর লেটারও রিসিভ করেছি। ক্লিফ বলল "করেছ কিন্তু তার জন্য আমার ওয়াইফের তোমাকে জোর করতে হয়েছে। কেন তুমি বলেছ আমার স্পন্সর লেটার এনাফ নয়, শো মি দ্যা রিজর্ন"। অফিসারের ত অবস্থা করুন কারন বস তার পাশে দাড়ান। সে তখন আমতা আমতা করে বলে " না আমি উনার কম্পানির কাগজটা চেয়েছিলাম তো সেটা পরে তুমি আমাকে ফ্যাক্স করে দিলেও চলবে, আই এম রিয়েলি সরি ফর মিস আন্ডারস্ট্ান্ডিং"।
যাই হোক.... আজ ভিসা সহ পাসপোর্ট ফেরত পেলাম। তবে এই তো আমাদের ট্রিটমেন্ট সব জায়গাতে। বলছিনা এখনে কার দোষ। হয়ত আমাদেরই কিছু মানুষের আচরনের কারনে পৃথীবির সবার আচরন আমাদের প্রতি এরকম। এই ইন্ডিয়ান অফিসারকেই দেখেছি আমার আগে দুজন ইন্ডিয়ানকে ও একজন জার্মান কে সার্ভ করতে। ওদের সাথে সে কিন্তু হেসে হেসে সহযোগিতার করে এপ্লিকেশন জমা নিয়েছে। অথচ আমার পাসপোর্ট বাংলাদেশী শুনেই আচরণের পরিবর্তন। শুধু এখানেই শেষ নয় যখন অস্ট্রেলিয়ায় ল্যান্ড করব এয়ারপোর্টেও আমাকে এই জ্বালা পোহাতে হবে। যেকোন দেশেই যাই না কেন সব এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশনে আমাকে এক পাশে দাড় করিয়ে অযথা হয়রানি করা হয় আমার পাসপোর্ট দেখে যেন আমি এক টেরোরিস্টের দেশ থেকে টেরোরিজ্ম করতে এসেছি এখানে। কেম্বডিয়াতে ঢোকার ও বের হাবার সময় আবার ভিয়েতনামেও একি অবস্থা !!!


আমরা কি আমাদের একটুও বদলাতে পারিনা? সারা বিশ্বের কাছে আমাদের চেহারাটা কি একটু উন্নত করতে পারিনা?
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৩:৪৭