somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"বিষণ্ণ সন্ধ্যা"

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পাড়ার অলিগলি থেকে শুরু করে যত রাজ্যের পলিটিক্স শেষ করে এবার ভারত-চীন নিয়ে তর্ক তুঙ্গে উঠেছে। এমন সময় ঘচাং করে ট্রেনটা থামলো। সিগারেটখোর ভদ্র লোকটি টাল সামলাতে না পেরে হুমড়ি খেয়ে পড়লো ঝালমুড়ি বিক্রেতার ঘাড়ে। ঝালমুড়ি বিক্রেতাও অস্বস্তির সাথে সজোরে এক ধাক্কা মারাতে সিগারেটখোর লোকটি আবার যথাস্থানে ফিরে এলো।

ধীরে সুস্থে হাই তুলতে তুলতে ট্রেন থেকে নামলাম। স্টেশনে অসম্ভব ভিড়। ভিড় ঠেলে রীতিমতো যুদ্ধ শেষ করে ফাঁকা রাস্তায় এসে উঠলাম। ঘেমে পুরো ঝোল। অসহ্য ও অস্থির করা গরমে একদম নাজেহাল করা অবস্থা।

আপন মনে হাঁটছি। চোখ দুটো যেন বন্ধ হয়ে আসছিল। নিচের দিকে তাকিয়ে প্যান্টটা ঠিক করতেই নজরে এলো জামার একটা বোতাম ছিঁড়েছে। হঠাৎ পেছন থেকে ডাক, " ও মশাই আপনি তো ট্রেনের সেই নির্বাক যাত্রীটি মনে হচ্ছে, এবাবা বোতামও ছিঁড়ে ফেলেছেন দেখছি। তা এদিকে কোথায় যাওয়া হচ্ছে?" লোকটি একটি সিগারেট ধরিয়ে দু-তিনটি রিং ছাড়তে ছাড়তে একথা বললো। আমি তো দেখেই অবাক; এ তো ট্রেনের সেই সিগারেটখোর লোকটি। চোখ দুটো একটু কচলিয়ে বললাম, "আমি তো মশাই আমার বাড়ি ফিরছি, আপনি...?" ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে সে বলল, "আমার এক দুঃসম্পর্কের কাকার ছেলে, তার ছেলের হাইড্রোফোবিয়া অর্থাৎ জলাতঙ্ক হয়েছে। আর বেশিদিন টিকবে না! তাই একটু আরকি...।"

আমি হতভম্ব হয়ে তার দিকে চেয়ে বললাম, "বলেন কি, জলাতঙ্ক! তবে সে তো এখন কোনো ব্যাপার নয়, ডাক্তার..."

কথা শেষ হতে না হতেই সে বিরক্তির সুরে বলে উঠলো, "আরে ছাড়ুনতো, ওর মা-বাপ থাকতে আপনি কেন এতো চাপ নিচ্ছেন। ওই ছোকরা এমনিতেই ছোটো থেকেই পাগলা। পাগলামি আর কদিন সহ্য করবে হ্যাঁ? যত তাড়াতাড়ি বিদায় হবে তত মঙ্গল!" আমি তার কথা শুনে থমকে গেলাম, কিছুক্ষণ বিস্ফারিত চোখে তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। কিছুক্ষণ আমার পেছন পেছন হাঁটলো, খানিক বাদে দেখি কিছু না বলেই সে হাতের ডান দিকের গলিতে ঢুকে গেলো। ছেলেটির কথা ভেবে কষ্ট হলো। মৃত্যু কতো সস্তা এখন। নিরীহ ছেলেটিকে কিভাবে তার অজান্তেই মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

সন্ধ্যা উত্তীর্ণ হয়েছে। মাথা নিচু করে হাঁটছিলাম। আর সেসব কথা মাথায় ভিড় করছিলো। হঠাৎ এক ভিখারীর আবির্ভাব। আমাকে মাঝপথে দার করিয়ে দিয়ে নিজের মতো বলতে শুরু করলো, " জানেন বাবু, আমার ছেলে; কোন পাল্লায় পড়ে পাড়ার আর সব ছেলেদের সাথে মদ খাওয়া শুরু করলো, আর তারপর জুয়া। বুঝলাম বেলাইন হয়ে যাচ্ছে, বললাম দীক্ষা নে বাবা, হরির নাম জপ কর। কিন্তু কুলাঙ্গার বলে কিনা ধর্মটর্ম সেকেলে প্রাচীন মানুষের কান্ড এ যুগে ওসব অচল। কিছুতেই আমার কথা শুনলো না..." আমি বিরক্তির সাথে বললাম, "রাখুন আপনার ছেলের কথা আপনার কাছে। আমাকে যেতে দিন দেখি।" ভিখারী আবার পথ আটকে দাঁড়ালো, "আরে মশাই শুনুন না পুরোটা। আমি কোনো ভিখারী টিখারী নই। আমি ছদ্মবেশে আছি।" এবার কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বললো, "জানেন কদিন আগে একটা খুন করে বসেছে। সে তো পলাতক। যত মরণ আমার ঘাড়ে। আমার বাড়িতে পুলিশ তলব করে। বলে কিনা ছেলে কে না পেলে বাপ কে তুলে নিয়ে যাবে। আমি মশাই সামান্য কিছু মাইনের সরকারি কেরানী ছিলাম মাত্র। এখন রিটায়ার করেছি। সাতেও নেই পাঁচেও নেই, কি জ্বালা দেখুন তো। কিছু উপায় বাতলে দিন না।" বলে আমার পা জড়িয়ে ধরলো। মহা মুশকিলে পড়লাম। এমনিতেই ভীষন টায়ার্ড, মাথাটা কেমন যেন ঘুরছিল। ভাবছি কখন বাড়ি গিয়ে বিছানায় সটাং হবো। আর কোথা থেকে সব উটকো ঝামেলা এসে হাজির। এসব ভাবতে না ভাবতে; পরক্ষনেই আবার ধূমকেতুর মতো কোত্থেকে এক ছোকরা এসে দাঁড়ালো। মুখ রুমাল দিয়ে ঢাকা। দেখে মনে হলো ভদ্র লোকের কোনো বখে যাওয়া ছেলে। মনে মনে ভাবলাম সর্বনাশ, এর আবার কি সমাচার! কিন্তু না, সে তৎক্ষণাৎ ভ্যানিশ হয়ে গেল বটে। তবে যাওয়ার আগে দুটো কথা বলেছিল, "সব খুনি পাপী হয় না বাবা। এ জগৎ খুব নিষ্ঠুর। একটু সাবধানে থেকো।"

কখন যে কি ঘটে যাচ্ছিল সব মাথার উপর দিয়ে বইছিল। যাকগে, সেখান থেকে কোনোরকমে পালিয়ে বাঁচলাম। প্রচন্ড মাথা ধরেছিল। পাশে এক চায়ের দোকান দেখে চা খাওয়ার খুব ইচ্ছে হলো। কড়া করে একটা চা বানাতে বললাম।

চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছি। আলতু ফালতু সব ভাবনা মাথায় আসছে। ট্রেন যাওয়ার শব্দ শুনলাম। হুইসেলটা শুনতে কেমন বিকট লাগলো। তীব্র ধকল আর ক্লান্তিতে শরীরের একদম জরাজীর্ণ। একটু পরে চাওয়ালা এসে হাতে চায়ের গ্লাস দিয়ে মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, "হাতি পুষছেন নাকি মশাই!" আমি হোঁচট খেয়ে বললাম, "মানে...?" তিনি বললেন, "চোখ মুখের হাল দেখে তো তাই মনে হচ্ছে!" পাশের বেঞ্চটি ফাঁকা পেয়ে পা মেলে হেলান দিয়ে বসলাম। তারপর যে কি হলো আর কিচ্ছু মনে নেই, শুধু একটি কাঁচের গ্লাস ভাঙার শব্দ ক্ষীণ ভাবে কানে এসেছিল। যখন জ্ঞান ফিরলো তখন বাড়ির বিছানায় শুয়ে। বুঝতে বাকি থাকলো না যে জ্ঞান হারিয়েছিলাম। লোকজনের ভীড় দেখে আমি ইচ্ছে করেই চোখটা একটু পিটপিট করার ডান হাত আর বা পা খানিক নাড়িয়ে পেছন দিক ফিরে ঘুমানোর ভান করে শুয়ে থাকলাম। শরীর এত দুর্বল ছিলো যে তখন শত জনের হাজার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষমতা আমার ছিলো না !
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:২৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শেখ হাসিনার শেষের ঘন্টা ও কিছু কথা!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:৩২

এই বৃষ্টি ভেজা রাতে আজ অনেক ঘটনাই মনে পড়ছে, কোনটা রেখে কোনটা লিখি তা নিয়েও ভাবতে হচ্ছে! তবে প্রথম যে ঘটনা লিখতে ইচ্ছা হচ্ছে তা হচ্ছে শেখ হাসিনার পলায়নের শেষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি নিষিদ্ধ

লিখেছেন আজব লিংকন, ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:৪১

আমি নিষিদ্ধ! হইলেও হইতে পারি!
শুনছি নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের বেশি আকর্ষণ। দূর থেইক্কা আপনি আমারে দেখেন। টুকটাক আমার লেখালেখি পড়েন। কই কখনো তো আপনারে লাইক কমেন্ট কিংবা খোঁচা মারতে দেখলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি।। আমি পদত্যাগ করিনি , ডাইনী করেছে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৪০

জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানা আপু

লিখেছেন সোহেল ওয়াদুদ, ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৩

শুভ জন্মদিন আপু! আপনার জন্মদিনে সুস্থ দেহ প্রশান্ত মন কর্মব্যস্ত সুখী জীবন কামনা করছি। আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আপনি এবং দুলাভাই অনেক প্রজ্ঞাবান মানুষ। দেশের স্বার্থে জাতির স্বার্থে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পদ ত্যাগ না করলেও ছেড়ে যাওয়া পদ কি শেখ হাসিনা আবার গ্রহণ করতে পারবেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৯



তিনি ছাত্র-জনতার ধাওয়া খেয়ে পদ ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে প্রাণে বেঁচে গেছেন। পদের লোভে তিনি আবার ফিরে এসে ছাত্র-জনতার হাতে ধরাখেলে তিনি প্রাণটাই হারাতে পারেন। ছাত্র-জনতার হাত থেকে রক্ষা পেলেও তাঁর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×