somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নতুন বছরের পরথম দিনে তিনখান প্রতিজ্ঞা করিলাম

০১ লা জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৩:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আবারও আরেকটা নতুন বছর আসিয়া পড়িল। কিভাবে কিভাবে যেন বছর আসিতে আসিতেই পুরান হইয়া যায়। আর বছর পুরান হইতে হইতে তাহা বিদায় নেয়। আসে নতুন বছর। এইভাবেই চলিতে চলিতে জীবনের ম্যালা সময় চলিয়া গেল। মানবজনম রইল পতিত ..............

প্রতি বছরই নতুন বছর উপলক্ষে গোপনে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করিয়া থাকি। এইবার একটা কিছু করিয়া ফেলিব হে। নতুন বছর উপলক্ষে যে কঠিন কঠিন প্রতিষ্ঠা করিতে হয়, তাহা শৈশবকালেই শিখাইয়া ছিলেন আমার মরহুম আম্মাজান। আমার আম্মাজান বছরের প্রথম দিন আমাদের নতুন পোশাক পরাইতেন, ভালো মন্দ মোগলাই খানা প্রস্তুত করিতেন, আমাদের খাওয়ানোর পূর্বে নতুন শপথ নিতে বলতেন। বলিতেন, নতুন বছরে একটা প্রতিজ্ঞা কর, তুমি যা করতে চাও।

আমরা ভাই বোনেরা নানা রকম প্রতিজ্ঞা করিতাম। বলাই বাহুল্য, সেই সব প্রতিজ্ঞার বেশির ভাগই পরে প্রতিপালন করা সম্ভব হয় নাই। যাহার ফলে ' মানবজনম পতিত রইল ' এইটা প্রতি বছরের শেষে প্রবলভাবে স্মরণ হয়। আর আমার মরহুম আম্মাজানের কথা স্মরণ করিয়া বুকটা হু হু করিয়া ওঠে।

আজ থেকে বহু বছর পূর্বে প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলাম, এই বছর হইতে আর দাঁতে নখ কাটিব না। কিন্তু তাহার পর বহু বহু বছর কাটিয়া গেল, দাঁতে নখ কাটিতেই লাগিলাম। প্রতিজ্ঞা প্রতিজ্ঞার জায়গায় রহিয়া গেল।
স্কুলে পড়ার সময় প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলাম, মেডিক্যাল কলেজে পড়াশুনা করিব। কিন্তু কলেজে আসিয়া মনে হইল, ডাক্তার হওয়াটা বাজে ব্যাপার। বরং লেখক হওয়া ভাল। সেই প্রতিজ্ঞা করিয়া কলেজ জীবনেই দুইখান উপন্যাস (সন্দেহ আছে সেইগুলি আদৌ উপন্যাস হইয়াছে কি না ) লিখিয়া ফেলিলাম। উপন্যাস লিখিয়া ছাপাইয়া বিখ্যাত হওয়ার জন্য কত প্রকাশককে ধরিলাম, কোনভাবেই কোন কিছু্ হইল না। মালপানি না দিলে যে উপন্যাস প্রকাশিত হয় না, সেই নির্মম সত্য জানিয়া দমিয়া গেলাম।

নাটকের দলের সঙ্গে যোগ দিয়া প্রতিজ্ঞা করিলাম, উপন্যাস লিখিতে ফেল করিয়াছি তাহাতে কিছু যায় আসে না, এবার নাটক লিখিয়া নিজেকে লেখক বলিয়া প্রমাণ করিব। নাটক লিখিলাম বটে, কিন্তু নাটকের দল সেই নাটক গ্রহণ করিল না।
নাটক ও অভিনয় শিখিবার জন্য থিয়েটার স্কুলে ভর্তি হইলাম, পড়াশুনা করিলাম, কিন্তু ঢাকায় গিয়া কোন নাটকের দলের সঙ্গে কাজ কবিবার হাত খরচ নাই বিধায় কাজ করিতে পারিলাম না। আমার আম্মাজান নাটক পছন্দ করিতেন না, তিনি ঘোষণা করিয়া দিলেন, আমি যদি নাটক ও অভিনয় ত্যাগ না করি তাহা হইলে তিনি আমাকে ত্যাজ্য পুত্র ঘোষণা করিবেন। সেই হইতে আমি লুকাইয়া লুকাইয়া অভিনয় ও নাটক চালাইয়া যাইতাম।
আমার এক বন্ধু পরামর্শ দিল, টিভির জন্য নাটক লেখ। টিভির জন্য ভালো নাটক লিখিতে পারিলে বিরাট ব্যাপার। নাটক লিখিলাম এবং কয়েক জন পরিচালককে নাটক দিলাম। তাহারা হাসিমুখে স্ক্রিপ্ট নিলেন এবং আর কোন কিছুই জানাইলেন না। আমি অপেক্ষা করিতে করিতে তাহাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করিলাম। তাহারা আবারও স্ক্রিপ্ট চাহিলেন। আবারও লিখিলাম। এইভাবে স্ক্রিপ্ট লিখিয়া লিখিয়া অনেক জনকেই অনেক স্ক্রিপ্ট দিলাম। কোন অজানা কারণে সেই স্ক্রিপ্টগুলি আর চিত্রায়িত হইল না।
অবশেষে আমার এক বুদ্ধিমান বন্ধু বুদ্ধি দিল, নিজেই নাটক বানাও। এবার পরিচালনা শিখিবার জন্য ভর্তি হইলাম, ঢাকা ফিল্ম ইনস্টিটিউটে। কোর্স করিলাম, ফিল্ম ডিরেকশন, ফিল্ম এডিটিং, ফিল্ম রাইটিং ও ফিল্ম একটিং। হাউজ অব মিডিয়া এন্টারটেইনমেন্ট হইতে শিখিলাম টেলিভিশন ক্যামেরা অপারেটিং।
তারপর বন্ধুদের টাকায় এবং নিজের টাকা মিলাইয়া বানাইলাম একটা শর্ট ফিল্ম। অনেকটা পরীক্ষামূলক কাজ। কী কাজ শিখিয়াছি তাহাই প্রমাণ করিবার চেষ্টা। এইভাবে কয়েকখান শর্টফিল্ম বানাইয়া হাত পাকাইয়া নিলাম।

অনেক প্যাচাল হইয়া গেল । এইবার আসল কথায় আসি।

এই বছর মাত্র তিনখান প্রতিজ্ঞা করিব।

০১। এখন হইতে নিয়মিত টিভি স্ক্রিপ্ট, গল্প ও উপন্যাস লিখিতে শুরু করিব। প্রতিদিন লিখিব। যাহা কিছুই ঘটুক না কেন, থামিব না, হতাশ হইব না।

০২। এই বছরে কয়েকখান টিভি নাটক পরিচালনা করিব। যাহা কিছু ঘটুক না কেন পিছ পা হইব না। কিছুতেই এই প্রতিজ্ঞা হইতে সরিব না।

০৩। আমার অভিনয় স্কুলকে আরও সামনে আগাইয়া নিয়া যাইব। যাহাই ঘটুক না কেন দমিব না।

তবে একটাই দুঃখ আমার মরহুম আম্মাজান আমাকে ত্যাজ্যপুত্র করিতে চাহিয়াছিলেন যেই সব অপকর্মের জন্য, এই তিনটি প্রতিজ্ঞা তাহার সবগুলো শর্তই পূরণ করে। তিনি বাঁচিয়া থাকিলে এত দিনে ত্যাজ্যপুত্র হইয়া যাইতাম।

এতক্ষণ এই প্যাচাল পোস্ট পড়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ। সকলকে নববর্ষের শুভেচ্ছা।

পুনশ্চ :
আমার মরহুম আম্মাজান যে আমাকে ত্যাজ্যপুত্র করিতেন না, তাহা একটা ঘটনায় নিশ্চিত হইয়াছিলাম। অনেক ঘটনার পর কোন এক নাটকের দল আমার চারখানি নাটক মঞ্চস্থ করে। নাটকের প্রথম প্রদর্শনীর সময় দেখি, সামনের সারিতে আমার মরহুম আম্মাজান তাহার বোনদেরসহ দর্শক হিসেবে উপস্থিত। আমি ভয়ে কুকড়াইয়া গেলাম। আজ বাড়ি ফিরিলে ধুন্দুমার হইবে নিশ্চিত। কিন্তু আমি তাহার সন্তান বলিয়াই হয়তো তিনি সেই নাটকের খুব প্রশংসা করিয়াছিলেন। মাতৃস্নেহ বড়ই অন্ধ হয়।

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৮:৪৬
৫৫টি মন্তব্য ৫৬টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ওয়াকফ: আল্লাহর আমানত নাকি রাজনীতির হাতিয়ার?

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ০৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:৫৯


"একদিকে আমানতের আলো, অন্যদিকে লোভের অন্ধকার—ওয়াকফ কি এখনও পবিত্র আছে?"

আমি ইকবাল হোসেন। ভোপালে বাস করি। আমার বয়স প্রায় পঁইত্রিশ। জন্ম থেকে এখানেই বড় হয়েছি, এখানেই আমাদের চার পুরুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড. ইউনুসের সরকার..........দীর্ঘ সময় দরকার!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ০৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:২৫



সম্প্রতি জাতীয় নাগরিক পার্টির সারজিস আলম ড. ইউনুস সম্পর্কে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছে। সে মোটাদাগে যা বলতে চেয়েছে তা হলো, ড. ইউনুসের আরো পাচ বছর ক্ষমতায় থাকা উচিত। অত্যন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেমন মুসলিম ??

লিখেছেন আরোগ্য, ০৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ২:০৫



বিলাসিতায় মগ্ন মুসলিম জাতি তার আরেক মুসলিম ভাইয়ের নির্মম হত্যার সংবাদ শুনে কেবল একটি নিঃশ্বাস ছেড়ে নিজেদের রাজভোজ আর খোশগল্পে মনোনিবেশ করে। হায় আফসোস! কোথায় সেই মহামানব যিনি বলেছিলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবাবিল পাখি আরবদেরকে চর্বিত তৃণের ন্যয় করবে! ছবি ব্লগ

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৯


ফিলিস্তিনকে বোমা মেরে ছাতু বানিয়ে ফেললো ইসরাইল, অর্ধলক্ষ মানুষকে পাখি শিকারের মতো গুলি করে হত্যা করলো তারপরও মধ্যপ্রাচ্যের এতোগুলো আরব রাস্ট্র শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছে আর ভাবছে আমার তো কিছুই... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা (বোনাস পর্ব)

লিখেছেন সামিয়া, ০৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:০৮



চারদিক হাততালিতে ভরে উঠলো।
বর্ষা আপু চিৎকার করে বলে উঠলো, "ইশান-অহনা!! অফিস কাপল অফ দ্য ইয়ার!!"
বুলবুল ভাই অহনাকে বললেন, “এখন বলো আসলেই সাগরে ঝাঁপ দিবা, না এই হ্যান্ডসাম যুবকটারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×