কোনকিছু দ্বারা ইন্সপায়ার হয়ে কবিতায় আসিনি। কীভাবে কবিতায় এসেছি সেটাই সচেতনভাবে জানি না। নিজেকে কবিতায় অভ্যাস করা— আমার কাছে অনেকটা দূর কোন কাছিমের বন থেকে ধেয়ে আসা ধীর হাওয়ার তলে, চিৎ হয়ে থাকা স্বাভাবিক পথ। কবিতার মেকানিজম আমার কাছে গোলি’র মাথায় নিচুমুখে জুতো সেলাই করা লোকটার আঙুলের সান্দ্রতা। লোকটা তো এক অর্থে পথ সেলাই করে। কবিতায়ও ভাষাকে সেলাই করার অভিনয়ে তৈরি করা হয় ভিন্ন এক জগৎ। ভাষা তাই সেকেন্ডারি একটা ব্যাপার। গুরুত্বপূর্ণ তবে আমার কবিতা ভাষানির্ভর হবে, এমনটা আমি চাই না। 'ঈর্ষার পাশে তুমিও জুঁইফুল' তাই ভাষার অধিক এক আবহ। এই বইতে আমি একজন নিপাট পত্রিকা বিক্রতে। যার জামার ভিতর লুকোনো থাকে ভোরবেলা।
‘ঈর্ষার পাশে তুমিও জুঁইফুল’— বিভিন্ন সময়ে আমার লেখা কবিতার একটা সংকলন। আমি যে ডাইমেনশনগুলো পার ক’রে এসেছি, তা এখানে স্পষ্টভাবেই আছে। নিজের ভাষা সৃষ্টির সচেতন কোন চেষ্টা এই বইতে নেই। আমি বাঙলা ভাষাতেই লিখেছি। তবে নিজের একটা ধরণ তৈরির চেষ্টা হয়তো চোখে পড়বে। যদি পড়ে, ওই অব্দিই জুঁইফুল।
‘ঈর্ষার পাশে তুমিও জুঁইফুল’— একটা জার্নি। বইয়ের ভিতর আপনি কবিতা পেতেও পারেন আবার নাও পারেন, এইটা পাওয়া খুব একটা দরকারি বিষয় না। চারপাশে এতো কবিতা লেখা হচ্ছে যে আমি যদি জুঁইফুল লিখি, সেইটা অধিক আনন্দের প্রসঙ্গ। ধরেন, জুঁইফুল একটা বাসস্টপ। যাকে ছুঁয়ে দিলে যাতায়াত হয়ে যায় আপনার আঙুল। এই আঙুল আপনি গোপন রাখেন। কেউ কখনো আপনার সেই আঙুলে চড়ে বসলে, ঈর্ষার পাশে আপনিও জুঁইফুল।
‘ঈর্ষার পাশে তুমিও জুঁইফুল’ থেকে একটি কবিতা
‘অভাব’
বাবা ভাল আঁকতে পারতেন। তিনি একটা কাঠের সরোদ এঁকে দিলে আমরা সবাই মিলে গান শুনতাম। একবার ঈদে বাবা আমায় একটা জামা এঁকে দিয়েছিলেন। আমি সারাদিন সেই জামা গায় দিয়ে শহর ঘুরেছিলাম। মা একটা কাঁসার থালা এনে রাখলে বাবার আঁকার খাতায় তা পেরিয়ে যেত গোটা একটা শাদা পৃষ্ঠা।
মা ভাত রান্না করতে চোখের দামে চুলো কিনে আনলে বাবাও দরদ ভরে জ্যোৎস্নার মতো ভাত আঁকতেন।
আমার ক্ষুধা লাগলে বলতাম— বাবা, একটা ক্ষুধা আঁকুন।
বাবা আমায় মায়ের মুখ এঁকে দিতেন।
‘ঈর্ষার পাশে তুমিও জুঁইফুল’
চন্দ্রবিন্দু প্রকাশন
মূল্য ১৫০ টাকা
প্রাপ্তিস্থান: চট্টগ্রাম বাতিঘর/কুরিয়ার