সালটা আনুমানিক ৩২৭৫
এক অতিমানবীয় শহর দাঁড়িয়ে আছে তার আধখানা শরীর নিয়ে। পেছনে সূর্যটা হেলবন দিয়ে আছে মধ্যযুগীয় দেহপসারিণীর মতো।
নির্লজ্জ বেহায়া।
যেন শেষ হয়ে আসা মুহূর্তে অতি অল্পের বিনিময়ে বিকিয়ে দিতে চায় নিজের শেষাংশ।
ফুরিয়ে যাওয়া পৃথিবীর কোন এক কোণে একটা ঘাসফুল যদি উঁকিঝুঁকি দেয় যদি কোন এক অবেলায় হঠাৎ কোন চড়ুই ফুড়ুৎ করে ভাঙা কার্নিশে উড়ে এসে বসে বিরস মুখে ঝিমাতে থাকে। লণ্ডভণ্ড শহরটা যান্ত্রিকতা ভেঙে উঠে দাঁড়াবে। হন্যে হয়ে খুঁজবে এক অষ্টাদশী বালিকাকে।
আধা রোবটিক কোন মন হয়তো ইট বালু লোহার স্তুপ ঘেটে খুঁজে আনবে একমুঠো সবুজ। আর ঐ আধখানা শরীরের ভয়াল দর্শন শহরের কোন হিমশীতল ঘরে বন্দিনীর নির্লিপ্ত ঠোঁটে নামাবে শতকের প্রথম চুম্বন। সারা মুখে বুকে লেপ্টে দেবে মুঠোভরতি সবুজ।
কতশত বর্ষের ঘুম ভেঙে ছোট্ট তুলতুলে হাতে স্পর্শ নেবে অর্ধমানবের। সেই যন্ত্রমানবের বুকে হাত দিয়ে অনুভব করবে ধীর কিন্তু স্পষ্ট বেঁচে থাকার প্রমাণ। নিস্পৃহ চোখে হারিয়ে যাবে অন্ধকারাবৃত বিজ্ঞানের আধিপত্যে যেখানে একটি কবিতার জন্য ট্রয় নগরী ধ্বংস হয়েছিল দ্বিতীয়বার। ব্যস্ততা হারিয়ে অবসাদগ্রস্ত মানুষ দলে দলে হারিয়ে গেছিল হেমলকের বিষে। নতুন শিশুর জন্য পৃথিবীর কান্না শত আলোকবর্ষ দূরেও শোক জন্ম দিয়েছিল।
সাক্ষী হয়ে সেই সভ্যতার কর্দমাক্ত জলাশয়ের টলমলে পায়ে এসে দাঁড়াবে শহরের রাস্তায়। বিষাক্ত বাতাসে নীল হয়ে আসবে তার মুখ। তবু এগিয়ে যাবে। সূর্যের কাছে। বহুদিনের অদেখা রয়েছে যে।
হাত বাড়িয়ে খুঁজে নেবে রোবটিক প্রেম। দীর্ঘতর হতে থাকা ছায়া দুটো ঢেকে দেবে শহরের বুকচেপে বসা হাহাকারদের। সেই সাথে প্রতীক্ষা আরেক অপেক্ষার। সূর্য ডোবার অপেক্ষা।
ইহা একটি ভয়াবহ কল্পনাবলে সৃষ্ট মুক্তগদ্য। বিজ্ঞানে আমার প্রেম নেই। তাই বলে তিতিক্ষেও না। তবু মনে হয় কেন জানি আমরা দিনদিন যন্ত্র হয়ে যাচ্ছি। যার শেষটা দুঃস্বপ্নের মতো হবে। আমরা ভুলেই গেছি হয়তো একটা চড়ুই কিংবা ঘাসফুলের কথা।
শুভ্র