দ্য ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর মিডিয়াম-রেঞ্জ ওয়েদার ফোরকাস্টস (ইসিএমডব্লিউএফ) মতামত অনুযায়ী আগামী কয়েক সপ্তাহ জুড়ে বাংলাদেশে বেশ ভয়াবহ আকারের বন্যা হওয়ার সম্ভবনা বেশি। আগামী ১০ দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কের কার্যালয় (ইউএনআরসিও) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের যৌথ গবেষণা কেন্দ্রের (জেআরসি) বৈশ্বিক বন্যা সতর্কতা পদ্ধতির (গ্লো-এফএএস) বিশ্লেষণ করে এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। তারা আরো বলেছেন আগামী ১০ দিনের মধ্যে হিমালয়ের দক্ষিণাঞ্চলে ২০০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে,আর যদি সেরকমটা হয় তাহলে ব্রহ্মপুত্রের ভারত এবং বাংলাদেশের উভয় অংশে পানি বাড়বে। ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার অঞ্চলগুলোতে ১৯শে আগস্ট পর্যন্ত এই পানি ভাটির দিকেই প্রবাহিত হবে।
পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণে দেশের উত্তর এবং মধ্যাঞ্চলের নদ নদীর পানি হু হু করে বেড়েই চলছে । আর এই পানি বৃদ্ধির কারনে উত্তরাঞ্চলের বিভন্ন জেলা এবং হবিগঞ্জ-সিলেট-সুনামগঞ্জে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যার পানিতে রেললাইন ডুবে যাওয়ায় লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দরের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
কুড়িগ্রামে ধরলায় ৮৩ সেন্টিমিটার, ডালিয়ায় তিস্তায় ৩৫ সেন্টিমিটার, বদরগঞ্জের যমুনেশ্বরীতে ৯৩ সেন্টিমিটার, বাহাদুরাবাদ ঘাটে যমুনায় ৬০ সেন্টিমিটার, দিনাজুপরে পুনর্ভবায় ১০৮ সেন্টিমিটার ভুসির বন্দরে আপার আত্রাইয়ে ১১৫ সেন্টিমিটার এবং হবিগঞ্জের খোয়াই নদীতে ১২৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
পানির চাপে তিস্তা ব্যারাজের পাশে ফ্লাড বাইপাশ ভেঙে যায় আর সে কারনে লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার অধিকাংশ এলাকাই প্লাবিত হয়েছে। পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী এবং সদর উপজেলার ৬০ গ্রামের ৩ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। ৯টি উপজেলার তিন শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ২ লাখ মানুষ। পানির তীব্র স্রোতে সদরের আরডিআরএস বাজারে ৩০ মিটার, বাংটুর ঘাট এলাকার বাঁধ, কালুয়ারচরের বাঁধ এবং ফুলবাড়ী উপজেলার গোড়কমন্ডলে ১৫ মিটার বাঁধ ভেঙে গেছে।
সদর, বিরল, বোচাগঞ্জ, কাহারোল, বীরগঞ্জ এবং খানসামা উপজেলায় হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন উপজেলার সঙ্গে জেলা শহরের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া এবং পীরগাছা উপজেলার তিস্তা পারের লক্ষাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের তিস্তা, গাইবান্ধা সদরের ব্রহ্মপুত্র, ফুলছড়ি ও সাঘাটায় যমুনা এবং গোবিন্দগঞ্জে করতোয়া নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চল ও বিস্তীর্ণ চর এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। বগুড়ার সারিয়াকান্দি, ধুনট এবং সোনাতলা উপজেলার ৮ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
নওগাঁর মান্দায় দুটি স্থানে আত্রাই নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়েছে তিনটি গ্রাম। আর তাতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ওই সব গ্রামের প্রায় ৫ হাজার মানুষ। সুনামগঞ্জের নদ-নদী এবং হাওরে অব্যাহত পানি বৃদ্ধি থাকায় ওইসব এলাকার মানুষের মধ্যেও বন্যা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।অন্যদিকে অবিরাম বৃষ্টিতে হাকালুকি হাওর পাড়ে বন্যা দেখা দিয়েছে। তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি, রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, স্কুল-কলেজ-মাদরাসা আর ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কবলে পড়ে হাকালুকি হাওর পাড়ের কুলাউড়া, জুড়ী এবং বড়লেখা উপজেলায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে হাওর পাড়ের দুর্গত এলাকায় মানুষেরা। গ্রামীণ সড়ক ভেঙে গিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায়।
তথ্যসূত্র এবং ছবিগুলো সকালের সংবাদ ও মানব কন্ঠ থেকে এবং বাংলাদেশের বেশ কিছু অনলাইন রিপোট থেকে সংগ্রহ।