প্রথমেই বলে রাখছি এটা কোন আক্রমণাত্মক কিংবা কাদা ছোড়াছুড়ি সংক্রান্ত পোস্ট নয়। সাখাওয়াত হোসেন বাবনের পোস্ট ‘সমকামিতা একটি মানসিক ও হরমোন ঘাটিত রোগ, প্রয়োজন কাউন্সিলিং এবং চিকিৎসা সেবা’ Click This Link শীর্ষক পোস্টে কিছু অসঙ্গতি লক্ষ্য করেছি, অসঙ্গতি ছিল তার কিছু মন্তব্যেও। এ সকল অসঙ্গতির পরিপ্রেক্ষিতে এই পোস্ট।
লেখক বলেছেন, জিনগত, হরমোনগত এবং পরিবেশগত কারণ একত্রে যৌন অভিমুখীতা নির্ধারণের জন্য একজন মানুষ সমকামী হতে পারে ।
এটা সত্যি যে পরিবেশগত কারণে কখনও কখনও একজন মানুষ সমকামি হয়ে উঠতে পারে। যেমন শৈশবে কেউ যদি সম লিঙ্গের কারো দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হয় তখন সেই কোমলমতি শিশুটি বুঝতেও পারেনা যে তাকে যৌন হয়রানি করা হচ্ছে। পরবর্তীতে সে তার শৈশবের সৃতিকে ইতিবাচক হিসেবে নেয় এবং পরিনামে সে সম লিঙ্গের মানুষের প্রতি আকর্ষিত হয়। তবে সমকামিতাকে কোন ভাবেই জিনগত বা হরমোনজনিত কারণ বলা চলে না। বিষয়টা সম্পূর্ণ অমূলক। সমকামিতা বংশপরম্পরায় চলে আসে না, এর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। আবার মানুষের ভেতর টেস্টোস্টেরন (পুরুষ হরমোন) কিংবা এষ্টোজেন (স্ত্রী হরমোন) এর তারতম্য থাকতে পারে। এতে একজন পুরুষের ভেতর নারীসুলভ আচরণ কিংবা একজন নারীর ভেতর পুরুষসুলভ আচরণ লক্ষ্য করা যেতে পারে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে তারা সবাই সমকামি।
তীব্র যৌনাকাংখার সময় বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গীর অভাবে অনেক পুরুষ বা মহিলার ভেতর সমকামিতা দেখা দিতে পারে ।
লেখকের ভাষ্য যদি এই হয় তবে বাংলাদেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী সমকামি হত। কিভাবে? বাংলাদেশে কম্বাইন স্কুলের চেয়ে কিন্তু বয়েজ কিংবা গার্লস স্কুলই বেশি। এবং জীবনের শৈশব এবং কৈশোরের মত একটা বড় অংশ ছেলে-মেয়েরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাটায় এবং তারা বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গি পায়না। যদি বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গীর অভাবে সমকামিতা দেখা দিত তবে দেশে বিপরীতকামি মানুষের চেয়ে সমকামি লোকজনে লোকারণ্য হয়ে যেতো। কিন্তু বয়েজ কিংবা গার্লস স্কুলের সবাই সমকামি হয় না।
মস্তিষ্কের নিউরনে অসুস্থতার কারণেও মানুষ সমকামি হয়ে থাকে । বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় অনেকে উভয়কামি থাকলেই এক সময় সমকামী হয়ে উঠে ।
মস্তিষ্কের নিউরনে অসুস্থতার কারণে কিভাবে মানুষ সমকামি হয় সেটা আমার বোধগম্য হল না। নিউরনগুলোর শেল ভেঙে গিয়ে কি সমকামি হয়ে ওঠে মানুষ? আবার বলা হয়েছে উভকামি মানুষগুলো এক সময় সমকামি হয়ে ওঠে। কিন্তু একটু খোঁজ নিলেই দেখা যাবে উভকামি মানুষগুলো পরবর্তীতে বিয়েথা করে স্বাভাবিক জীবনযাপন করে। অর্থাৎ তাদের ভেতর সমকামিতার ব্যাপারগুলো বিলুপ্ত হয়ে যায়। আর যদি থেকেও থাকে তার সংখ্যা খুবই নগণ্য।
লেখক একটি মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিউত্তর করেছেন, হরমোনের তারতম্য থাকলে সঠিক মাত্রায় তা প্রয়োগ করলে সমকামিতা দূর হয়ে যাবে। তবে হরমোন ইঞ্জেকশন প্রয়োগে শুধু আচরণগত পরিবর্তনই সম্ভব। যেমন কোন পুরুষের ভেতর নারীসুলভ আচরণ থাকলে হরমোন প্রয়োগে তার পুরুষসুলভ আচরণ ফিরিয়ে আনা সম্ভব। তবে তার মানসিক দিক পরিবর্তন সম্ভব নয়। অর্থাৎ তার ভেতর থেকে সমকামিতার শেকড় উপড়ে ফেলা সম্ভব নয়। হয়তো বলা যায় যে কাউন্সিলিং করে সমকামিতা দূর করা সম্ভব। বিভিন্ন মনোচিকিৎসকের মতামত নিলেই জানা যাবে যে, বিভিন্ন সময়ে তাদের কাছে বহু সমকামি গিয়েছে কাউন্সিলিং-এর জন্য। তবে তারা পুনরায় বিপরীতকামি হয়ে গিয়েছে চিকিৎসা নিয়ে এমনটা শোনা যায়নি কখনও।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১৬ রাত ২:০২