সময়টা অস্থির!
অস্থির বড়!
এই অস্থিরতাকে বুকে ধারণ করে যারা লেখেন, তারাও অস্থির। কিন্তু, তাদের অস্থিরতার মাত্রাটা ভিন্ন। তাদের অস্থিরতা বিষয়বস্তুতে, বিষয়বস্তু প্রকাশের রীতিতে তারা বিস্ময়করভাবে সুস্থির। আশ্চর্য ঠাণ্ডা তাদের মাথা। অদ্ভুত বিনয়ী তাদের যুক্তি দেয়ার ক্ষমতা।
কেন যেন মনে হয়, আনোয়ার সাদাত শিমুল সবসময় একটা মর্মপীড়ায় ভোগেন। সে মর্মপীড়া বড় বিষয় থেকে শুরু করে তুচ্ছ বিষয়ে।
তার মর্মপীড়ার কেমন একটা প্যাটার্ন যেন আছে!
'একজন গরুর গল্প' - এ আমরা যে প্যাটার্ন পাই, সেই প্যাটার্নই যেন দেখতে পাই 'মংগা সেলিব্রেশন' এ। অথচ দুটো আলাদা লেখা- বিষয়বস্তুও আলাদা। তারপরেও একটা সূক্ষ্ম মিল কিন্তু থেকে যায়। মিলটা কি শিমুলের গদ্যরীতির কারণে পাই?
হবে হয়তবা! আবার না হলেও ক্ষতি নেই। কোথায় যেন পড়েছিলাম, যা ভাল লেগে গেছে, তার কারণ খুঁজতে যেও না। খুঁজে পাবে না।
শিমুলের গদ্য অদ্ভুত রকমের! ছোট ছোট বাক্য, সহজ সাধারণ শব্দ। মজা করে রসিয়ে বলা হয়ত বা, কিন্তু অদ্ভুত বিষাদের সুর। এই বিষাদটাকেই বড় আপন লাগে।
শিমুলের বিষাদমাখা সুর চোখে পানি আনে না, বরং দাউ দাউ করে বুকে আগুন জ্বালায়, অনবরত প্রশ্নের মুখোমুখি করে। তাই, শিমুল অন্য মাপের, অন্য ধাচের।
আবার এর বিপরীত চিত্রও আছে। 'আপনি, তুমি ও তুই' - এর মত কবিতা মনে নিটল আনন্দ দেয়।
অথবা, সিডনী শেলডন এর লেখা উপন্যাস এর রিভিউ পড়ে তক্ষুণি মূল উপন্যাসটি পড়বার ইচ্ছা জাগে।
'সম্প্রীতির সন্দেশ' এ নারাণবাবুর জন্য বুকের মধ্যে উথাল পাথাল এক ধরণের কষ্ট হয়। একই সাথে সব কিছু ভেঙে চূড়ে ফেলবার এক অদম্য ইচ্ছা মনের মধ্যে জাগে। আপনা থেকেই জাগে। আন্দোলন করে, বা হরতাল করে জাগাতে হয় না।
শিমুলের লেখা ঝড়ের মত নয়। এসে সবকিছু চুরমার করে দেয় না। বরং স্লো পয়জনিং করে। একটু একটু করে অ্যাডিক্ট করে । একটু একটু করে ভাবায়!
ব্লগে ক্রিকেট বিষয়ক অনেক লেখা পড়েছি। মন্দিরা বিষয়ক পড়েছি। তাকে কামড়ানো বিষয়ে পড়েছি। ভারতের কমেন্ট্রী টিমের প্রতি তীব্র ঘৃণা নিয়ে যারা লিখেছেন, সবার লেখাই পড়েছি। একমতও হয়েছি।
কিন্তু, আনোয়ার সাদাত শিমুল 'ফোর্থ আম্পায়ার' - এ যেরকম করে লিখেছেন এর ধারেকাছেও একটা লেখা পড়িনি। মৃদুভাষণ, বা বিনয়ী ভাষণ যে দুর্বলতা নয়, বরং ভয়ংকর এক হাতিয়ার তার প্রমাণ আমরা পেয়েছি।
'পাকমন পেয়ার'- কী আর বলব? অনেক কথাই অলরেডী বলা হয়ে গেছে। আমার চেয়ে শতগুণে জানেন, বোঝেন সবাই অলেরডী বলেছেন, এই অনবদ্য ভীতি জাগানিয়া গল্পটি নিয়ে।
গল্পটিতে শিমুল কোথাও কারও নাম উল্লেখ করেননি। তবুও কেউ কেউ মিল পেয়ে গেছেন নিজের সাথে, নিজেদের সাথে। পাল্টা পোস্ট ঝেরেছেন।
লেখক হিসাবে শিমুল এখানেই সার্থক। কিছু না বলেও এমন অনেক কথা বলেছেন যা সরাসির গায়ে লেগেছে পাকমন পেয়ারদের।
'পাকমন পেয়ার' এর চেয়ে সমালোচনার জবাবে লেখা- 'পাকমন পেয়ার: আস্তমেয়ের শেঁকড় সন্ধানের অনাদায়ী দেনা সঞ্চিতি' আরও ভাল লাগে। ভাল লাগে তার বিনয়ের জন্য।
অস্থির জনপদের পথিক তিনি!
কিন্তু পথভ্রান্ত নন।
তার এই বিনয়টুকুই তাকে নিয়ে যাবে পথের শেষে।
[বানান ভুল থাকতে পারে। আমি ইউনিকোডে অভ্যস্ত না।]