somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাঁহাতি বিড়ম্বনা !!!

২০ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমার হাতের লেখা ভালোনা। শুধু ভালোনা বললে কম বলা হবে খুব বেশীই খারাপ। এই হাতের লেখা নিয়ে স্কুলের টিচারদের কাছেও অনেক বকুনি খেয়েছি। ক্লাসের বন্ধুরাও আমার এই হাতের লেখা নিয়ে দুই একটি মজা করছে ছাড়তো না। বড় হয়ে অবশ্য এটার একটা প্রত্যুত্তর ঠিক করেছিলাম। আমার খারাপ হাতের লেখা নিয়ে কেউ কিছু বললেই বলতাম, ইশ লেখাটা যদি আরেকটু খারাপ হতো তাহলে আর পড়াশুনাই করতাম না। পরীক্ষার খাতায় যাচ্ছেতাই লিখে দিতাম টিচার আর পড়তে না পেরে ভাবতো হয়তো ঠিকই লিখেছে!! আমার এই খারাপ হাতের লেখার জন্য আমি যতটা দায়ী তার সাথে আরেকটা কারণ হচ্ছে অনেকের মত আমার মা'র কিছু সংস্কারে বিশ্বাস। এই সংস্কার কতটুকু যৌক্তিক আর কতটুকু অযৌক্তির সে বিচারে বা তর্কে যাব না। তবে এই সংস্কার আমার হাতের লেখা খারাপ হওয়ার পেছনে কিছুটা অবদান রেখেছেই বলে কথাগুলো বলা। অবশ্য মা পরে এটা নিয়ে অনেকবার আফসোসও করেছে। কারণটা খুলেই বলি, আমি আসলে বাঁহাতি। খুব স্বাভাবিক ভাবেই মা'র হাতে যখন পড়া শিখতে শুরু করেছি তখন কলমটাও ধরেছি বাঁহাতে। কিন্তু আমার সংস্কার মনষ্ক মা নাকি কিছুতেই বাঁ হাতে আমাকে কলম/পেন্সিল ধরতে দিতোনা। এমনও নাকি হয়েছে সুযোগ পেলেই নাকি আমি বাঁহাতে কলম/পেন্সিল ধরতে চাইতাম। যার কারণে মা যখন আমাকে লিখতে দিত তখন আমার সামনে বসে থাকতো যাতে বাঁহাতে আমি লিখতে চেষ্টা না করি।

বিড়ম্বনা এখানেই শেষ হলে কথা ছিলো কিন্তু ছোটবেলা থেকেই বিশেষ করে মুরুব্বীদের কাছে আমার এই বাঁ হাতের কাজ নিয়ে অনেক কথা শুনেছি যার বেশীরভাগ ছিল সংস্কার নির্ভর যার সাথে কিছুটা ধর্মীয় আবহও জড়িত হতো। আর এটা স্বাভাবিক সংস্কারের সাথে একটা ধর্মীয় আবহ বরাবরই জড়িত থাকে কারণ এগুলো যতটা না প্রমাণ সাপেক্ষ তার চাইতে বেশী বিশ্বাস নির্ভর। কয়েকবার অন্যের প্লেটে খাবার বেড়ে দিতে গিয়ে কথা শুনেছি শুধু বাঁহাতে চামচ ধরার কারণে। যার পর থেকে কোন অনুষ্ঠানে বা দাওয়াতে কাউকে খাবার বেড়ে দেয়া আমি বলতে গেলে চিরতরেই বন্ধ করেছি। যদিও যারা আমাকে কথা শুনিয়েছে তাদেরই আবার দেখেছি নিজেরা খাওয়ার সময় যখন ডান হাত বন্ধ থাকে তখন বাঁ হাতই খাবার বেড়ে দেয়ার একমাত্র ভরসা। অবশ্য এমন নিয়ম আছে কিনা যে ডান হাত বন্ধ থাকলে বাঁ হাতে খাবার বেড়ে দেয়া যাবে কিন্তু ডান হাত খালি থাকলে যাবেনা সেটা জানিনা। তবে অধিকাংশ মানুষই যেখানে ডানহাতি সেখানে নিয়ম কানুষ সংস্কার সব ডানহাতিদের সুবিধা বিবেচনা করেই হবে এটাই স্বাভাবিক। আর শুধু যে নিয়ম কানুনেই ব্যাপারটি সীমাবদ্ধ তাই নয়, দৈনন্দিন ব্যবহার্য্য জিনিষপত্রও সবসময় ডানহাতিদের সুবিধা বিবেচনা করেই তৈরী করা হয়। শার্টের বোতাম থেকে প্যান্টের জিপার কিংবা কম্পিউটার কীবোর্ড।

এবার ঈদের বেশ অনেকদিন বাড়িতে ছিলাম। উপদেশ প্রবণ বাংগালী সমাজ উপদেশ দেয়ার সুযোগ যাতে সহজে না পায় সেজন্য বরাবরই আমি যথেষ্ট সচেতনতা অবলম্বন করি। হোয়েন ইন রোম ডু লাইক রোমান বা যদ্দেশে যদাচার যাকে বলে কিছুটা তেমন আর কি! তবুও এক বাড়ীতে চায়ের নেমতন্ন রক্ষা করতে গিয়ে এবারও সেই উপদেশ আর এমন আচরণ সহ্য করতে হলো যে সভ্যতা ভদ্রতা সেভাবে অতটা শিখিনি এমন একটা ভাব। কারণটা হচ্ছে চা খেতে গিয়ে বাঁ হাতে কাপের হাতল ধরা। আর একটা দেখেই মুরুব্বী একজন টানা উপদেশ দিয়ে গেলেন আর সে উপদেশের ভেতরে এটাও চলে আসল এভাবে বাঁহাতে খেতে গিয়ে কিভাবে আমি আল্লাহ্‌ এবং রাসুলের নির্দেশেড় অবমাননা করছি। এবং যেহেতু উনি আমাকে শাসন করার অধিকার রাখেন সেহেতু এটাও বলে দিলেন ভবিষ্যতে এমন কাজ যাতে আমি না করি। আমার কিছু বলার নাই, এমন পরিস্থিতিতে আমি আগেও অনেকবার পড়েছি কিন্তু অভ্যাস এবং বাঁহাত বেশী চলার কারণে সচেতন ভাবে ডান হাতে কিছু না ধরলে অবচেতনে সেটা আমার বাঁ হাতেই চলে আসে। যেমন ঘড়ির ফিতে বাঁহাত দিয়ে বাঁধা আমার জন্য সুবিধাজনক মনে হয় বলে ডান হাতে ঘড়ি পড়া এখন শুধু অভ্যাসই নই বরং বাঁহাতে ঘড়ি পড়লে বেশ অস্বস্থিও হয় যেমনটা হয় ডান হাতে কাপ বা মগের হাতল ধরে চা বা কফি খেতে। আর যে কারণেই হয়তো কোন একদিন অবচেতনে ঐ মুরুব্বীর সামনেই হয়তো অবচেতবে আবার বাঁ হাতে কাপের হাতল ধরবো তখন মুরুব্বী ভাববেন বা বলবেন যে তার উপদেশ আমি অগ্রাহ্য করেছি। আর যেটা আমার প্রতি উনার আন্তরিকতায় আবশ্যিক ভাবেই ফাটল ধরাবে। যেমনটা আগেও অনেকে সাথে হয়েছে।
বলা বাহুল্য ছুরি চামচ কালচারের বাইরে থেকে খাবার টেবিলে বাঁ হাতে ছুরি ধরার কারণেও একবার এক ভারতীয় আন্টির কাছে শুনেছিলাম এটা নিয়ম বহির্ভুত এবং দৃষ্টিকটু। যদিও আমি এখনও জানিনা সঠিক নিয়মটা কি, আর জানার ইচ্ছাও নেই। যেহেতু বাঁ হাতে ছুরি ধরেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি তাহলে হতে পারে ডানহাতিরা ডান হাতে ছুরি ধরে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে বলেই এমন নিয়ম বানিয়েছে!!

এবার ইন্টারনেট ঘেঁটে বাঁহাতিদের ব্যাপারে কিছু তথ্যঃ

=> সাধারণত ৫/৭% মানুষ বাঁহাতি হয়ে থাকে।

=> ১৯৯৬ সাল থেকে ১৩ আগস্টকে বাঁহাতি দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

=> ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় কালে কালে বাঁহাতিদের বাম হাতের অধিক ব্যবহারকে একটি বদভ্যাস বা শয়তানের প্ররোচনা হিসেবে দেখা হয়েছে।

=> ইংরেজী left শব্দটি এংলো-স্যাক্সন শব্দ lyft হতে এসেছে। যার অর্থ দুর্বল, অব্যবহার্য্য।

=> সেমেটিক ধর্মগুলোতে সাধারণতঃ ডান হাতকে পবিত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাইবেলে ডান হাতের কথা উল্লেখ আছে ১০০ বার এবং প্রতিবারই পজেটিভ ভাবে আর বাম হাতের উল্লেখ আছে ২৫ বার এবং প্রতিবারই নেগেটিভ ভাবে।

=> বিয়ের আংটি বাম হাতে পড়ানো হয় কেন এটা নিয়ে একটি তত্ত্বে বলা হয়, প্রাচীন মিশরে বাম হাতকে অপূর্ণতার প্রতীক হিসেবে দেখা হতো। যেখানে আংটি পড়িয়ে দুইজন অপুর্ণতাকে পুর্ণতা প্রদান করা হয়।

=> টেনিস, ব্যাডমিন্টন, ফেন্সিং, ক্রিকেট, বেজবল প্রভৃতি খেলায় বাঁহাতিরা ডানহাতিদের চাইলে বেশী সুবিধা পেয়ে থাকে। তবে একজন বাঁহাতি পোলো খেলার অনুপযুক্ত।

=> ডিজনীর Phineas and Ferb কার্টুন সিরিজের প্রধান চরিত্রগুলোর সবাই বাঁহাতি।

=> এক গবেষণায় দেখানো হয় যে বাঁহাতিরা ডানহাতিদের চাইতে গড়ে নয় বছর কম বাঁচে।

=> জনপ্রিয় এবং বিখ্যাত বাঁহাতি ব্যাক্তিবর্গের মধ্যে অন্যতম লিওনার্দো ডা ভিঞ্চি, মাইকেলএঞ্জেলো, ভিনসেন্ট ভ্যানগক, আইজ্যাক নিউটন, বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন, অ্যালবার্ট আইনস্টাইন, নেপোলিয়ান, মোটজার্ট, বব ডিলন, মহাত্না গান্ধী, ফিদেল ক্যাস্ট্রো, হুগো চ্যাভেজ, বিল ক্লিনটন, জর্জ বুশ, বারাক ওবামা, ওসামা বিন লাদেন, জেমস ক্যামেরন, টম ক্রুজ, ব্রুস উইলিস, এঞ্জেলিনা জোলি, জুলিয়া রবার্টস, মেরিলিন মনোরো, জিম ক্যারি, অপেরাহ উইফ্রে, অমিতাভ বচ্চন।

৬০টি মন্তব্য ৬০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×