জ্বী আজ আমি আমার গল্পই শোনাতে এসেছি। সময় কেটে যায়, ভাবনার বিচ্ছিন্নতায় আপন মনেই মাঝে মাঝে নিজের হিসাব মেলাতে বসি। মেলেনা কখনও এবং এটাও জানি যে মিলবেনা। ভাবতে ভাবতেই আজ হঠাৎ ইচ্ছে হলো জীবনের কিছুটা গল্প আপনাদের শোনাই। আমি জানি আমার এই গল্প পড়ে কেউ বিরক্ত হবেন, কেউ বলবেন সবই বোগাস আবার যারা আমার গল্পটা বিশ্বাস করবেন তারা বলবেন এমন যুক্তিহীন উচ্ছন্নতার মানে কি!
আমিও জানি যা কিছু আজ শোনাব আপনাদের হয়তো তার সবই যুক্তিহীনতা। কিন্তু আপনারা নিজেরা একবার নিজেদেরকে প্রশ্ন করে দেখুন তো জীবনের মূল সিদ্ধান্ত ভালোলাগা আবেগ এর কতটুকু আপনারা যুক্তি দিয়ে পেরেছেন আর কতটুকু যুক্তিহীন ভাবে? প্রেয়সীর চোখে পৃথিবী দেখেছেন অথবা নিজের গাড়ীর রঙ পছন্দের ক্ষেত্রে করেছেন লাল রঙ, জীবনের সবকিছু দিয়ে সন্তানকে ভালোবেসেছেন অথবা বাজারে গিয়ে টাংগাইলের শাড়ীর বদলে মনে ধরেছে ঢাকাইয়া জামদানি অথবা রোলেক্স বাদ দিয়ে সিকোকেই করেছেন আপনার হাতের সঙ্গী। ইত্যাদি ইত্যাদি কত কিছু! কিছু কেন? ভালো লেগেছে বলে? ভালোবাসা বোধ করেন বলে? এই ভালোলাগা ভালোবাসা বোধ এসব কোথায় ধরে কেন ধরে যুক্তির পাল্লায় কখনও মেপে দেখেছেন কি? দেখেননি তো!! তাহলে আসুন এবার আমার গল্পও শুনে যান।
হয়তো এতক্ষণে ভাবছেন আমি কে! আমি আপনাদের কাছেরই একজন। কখনও আপনাদের ব্যালকনির ফাঁকে কখনও বা আপনাদের গ্যারেজের তুলনামূলক অন্ধকারময় স্থানেই আমার বসতি। কি করব বলুন জন্মসূত্রেই তীব্র আলো সহ্য করতে পারিনা যে! নিজের ঘর গাড়ী বানানোর যোগ্যতা নেই, নেই আপনাদের মত বুদ্ধিবৃত্তিক সৃষ্টিশীলতা। আপনাদের দেখেই আমাদের শিক্ষা। বিড়ালরা যেমন আপনাদের ছাড়া কোথাও বাঁচতে পারেনা আমরাও ঠিক তাই। আপনাদের উচ্ছিষ্টই আমাদের খাদ্য। আপনাদের বসতির ফাঁকেই আমাদের বসতি। আমরাও আপনাদের মতই সামাজিক। বাবা মা ভাই বোন পাড়া প্রতিবেশী আমাদের সবই আছে। আছে সামাজিক রীতি নীতি।
যাইহোক এবার গল্প আসি। আসলে কিভাবে বলি বলতেই কিছুটা ইতস্ত হচ্ছে। আসলে আমি একবার প্রেমে পড়েছিলাম। দুর্নিবার সে প্রেম। কিভাবে যে কি হয়ে গেল! যার প্রেমে পড়েছিলাম সে আপনাদের সমাজেরই একজন। জানেন কি অসম্ভব সুন্দর যে সে ছিল বলে বোঝাতে পারব না। ঐ মুখটার দিকে যখন তাকাতাম মনে হতো এ দুনিয়ার আমার আর কিছু দেখার নেই, লুকিয়ে শুধু ওকেই দেখে যেতাম। কি যে এক তীব্র দেখার নেশা হয়তো আপনাদের মাঝেও কেউ সেটা অনুভব করেছেন। কিন্তু ঐযে আমি অপর বাস্তবের এক বাসিন্দা, কাছে থেকেও অনেক অনেক দূরে! কঠোর সামাজিক নিয়ম দাবী করে আপনাদের সাথে থেকেও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলতে। আপনাদের সামান্যতম ক্ষোভ থেকে আমাদের উপর নেমে আসতে পারে অবর্ণনীয় শাস্তি। নিজেকে সান্তনা দিতাম এই বলে যে এর সবই মায়া, খুব শীঘ্রই এ মায়া কেটে যাবে। কিন্তু যায়নি। মাদকাসক্তদের মত নেশাগ্রস্থ হয়ে দিন দিন এর চাহিদা বেড়েই চলেছে শুধু। ওর খুব কাছে যেতাম না। বোঝেনই তো অপরবাস্তবের বাসিন্দা আমরা! তবুও একদিন কি মনে করে একটু কাছ থেকে দেখার আশায় খুব কাছে চলে গিয়েছিলাম। একটু অসাবধান হওয়াতেই ওর চোখে ধরা পড়ে যাই। প্রচন্ড ভয়ে কেঁপে উঠে ও। মুহুর্তেই তাল হারিয়ে ফেলে। আমি দৌড়ে পালিয়ে যাই। কি যে ভয়ংকর কষ্ট সেদিন পেয়েছিলাম। দুটো দিল শুধুই কেঁদেছি। ওর সেই ভীত মুখ অনেকগুলো দিন আমাকে অপরাধীর মত তাড়িয়ে বেড়িয়েছে। ভেবেছি পালিয়ে যাব কিন্তু ঐযে মায়া, একটি মুখের মায়া এক পলক দেখার মায়া এ মায়া আমাকে পালাতে দেয়নি। মাদকাসক্তের মাদকের চাহিদা যেমন দিন দিন বেড়েই চলে তেমনি এক নেশার ঘোরে ওকে দেখার টানও আমার দিন দিন বেড়েই চলতে লাগল। আবারো আমি দূর থেকে ওকেই দেখা শুরু করলাম। কখনও খেয়ালে আবার কখনও বা বেখেয়ালে। কিন্তু অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম ওর চকিত চোখ সকলের মাঝে থেকেও সকলের আড়ালে যেন কি খুঁজে ফেরে। মানুষ যাকে ভয় পায় কোন এক বিচিত্র কারণে দেখি মানুষ সে ভয় পাওয়া জিনিষকেই বার বার পেছন ফিরে দেখতে চেষ্টা করে, পছন্দ করে ভয় মেশানো গল্পের। যাইহোক, সময় পেরিয়ে গেল ওর অনুসন্ধানী চোখের থেকে নিজেকে বেশীদিন লুকিয়ে রাখতে পারলাম না। যত দূরেই থাকি যেভাবেই নিজেকে লুকিয়ে রাখি ওর অনুসন্ধানী চোখ কিভাবে যেন আমাকে দেখে ফেলে। কেমন একটা ভয় মেশানো কৌতুহলী চোখে সে আমাকে দেখে ফেরে। মানুষের আরেকটি বিচিত্র স্বভাব আমি দেখেছি, যদি কোন হিংস্ত্র বা কিম্ভুত কিছু দেখে মানুষ ভয় পায় আর তারপর যদি সে বুঝতে পারে যে যতটা ভয় আসলে সে পেয়েছিল তা আসলে অতটা ভয়ের নয় তখন তার মধ্যে সেই হিংস্ত্র বা কিম্ভুত দেখতে জিনিষটির প্রতি তার এক ধরনের মায়া জন্মে। তার বেলাতেও ব্যাতিক্রম হলো না। টেলিপ্যাথি বা অন্য কিছু আছে কিনা জানিনা তবে তার চোখে অবাক বিস্ময় দেখলেও আর কখনও ভয়ের ছাপ দেখিনি। সে যাই হোক সময় গড়িয়ে গেল সময়ে ওর থেকে ভয়ের ভাবটা দূর দেখে আমিও সাহসী হয়ে গেলাম। এগুতে থাকলাম এক যুক্তিহীন অপরবাস্তবের বাস্তবতাহীন এক ফ্যান্টাসির পথে। একটু দেখা একটু কাছে যাওয়া মনে হতো এটাই আমার জীবনের শেষ চাওয়া। কত রকম পাগলামী যে করেছি! কখনও একটু আলো ধরে এনে অন্ধকারে সেই আলোর বাবল বানিয়ে উড়িয়েছি। ও অবাক হয়ে দেখেছে। কখনও বিড়াল ছানার সাথে দুষ্টুমি করেছি বিড়াল খামচি দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিয়েছে। আর ও খিলখিল করে হেসেছে। কি অপরূপ সে হাসি, অপলক দেখেছি আর ভেবেছি ওর এই হাসির জন্য আমি সব করতে পারি সব। কখনও পাশের বনে গেলে যদি দেখতাম কোন ফুল সুন্দর গন্ধ ছড়াচ্ছে সাথে সাথে ওর জন্য কিছু গন্ধ নিয়ে আসতাম। ফুলের গন্ধটা ও সত্যিই অনেক পছন্দ করত।
তীব্র মাদকতার মাঝে কঠোর সামাজিকতা এসে সব এলোমেলো করে দিতে চাইল। ওর পরিবারের লোকজন ওকে নিয়ে সন্দেহ করা শুরু করল যে ওর নিশ্চই কোন মানসিক সমস্যা হয়েছে নইলে এভাবে কার সাথে কথা বলে কেন অকারণে হাসে। তাদের ভাবনার যৌক্তিকতা ছিল। একবার ওর ফ্যামিলি ওকে কোন এক লোকের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। ওর মুখ থেকে শুনেছি সে লোক নাকি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কি সব জিজ্ঞাসা করেছে। কিন্তু শুধু আমাকে ভুল বুঝতে পারে বলে ও কৌশলে অনেক কিছু এড়িয়ে গিয়েছে। তবুও সে লোক নাকি শেষ পর্যন্ত কি সব খেতে দিয়েছে। যাইহোক ওর এড়িয়ে যাওয়াতে সে যাত্রায় কোন সমস্যা হয়নি। কিন্তু তার কিছুদিন পরই দেখি তীব্র চোখের কিছুটা বিচিত্র সাজপোষাকের এক লোক ওর বাড়িতে আনাগোনা করতে। প্রথমে গুরুত্ব দেইনি। কিন্তু কিছুদিন পরই দেখলাম ওর কাছাকাছি যেতে আমার রীতিমত কষ্ট হচ্ছে। ওকে যখন দেখতে পাই তখনই মনেহয় কে যেন আমাকে তীব্রভাবে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিতে চাচ্ছে। তবুও চেষ্টা করে যাই। কিন্তু কোন এক অদৃশ্য শক্তি আমাকে প্রচন্ড ধাক্কা দিয়ে দূরে পাঠিয়ে দেয়। সে শক্তির সাথে আমি পেরে উঠিনা। এদিকে এতটা কষ্টের পরও ওকে দেখার ইচ্ছাটাও দমিয়ে রাখতে পারিনা। একদিন হঠাৎ ওর কাছাকাছি যেতে চাইলে দেখি সেই শক্তিটা আমাকে বাঁধা দিচ্ছেনা। আস্তে আস্তে এগিয়ে যাই, নাহ কেউ আমাকে বাঁধা দিচ্ছেনা। বেশ অনেকদিন পর আবার মুখোমুখি। একটি নিদ্রিষ্ট দিন পর্যন্ত প্রতিকূলতার মাঝে থেকে হঠাৎ এভাবে সবচাইতে কাঙ্ক্ষিত মুখ দেখতে পাওয়ার যে বোধ সেটা অপার্থিব। কিন্তু হঠাৎ দেখি সেই বিচিত্র পোশাকের মানুষটা এসে ওর কপালের মাঝ বরাবর চেপে ধরেছে। চারিদিকে একটা তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধ, দম বন্ধ করা এক পরিবেশ। প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে আমার কিন্তু আমার সে কষ্ট ম্লান হয়ে গেল যখন দেখলাম সেই লোকের হাতের চাপে মীনাক্ষী কাটা পশুর মত ছটফট করছে। এক ভয়ংকর ক্রোধ চেপে গেল। ঝাঁঝালো সে গন্ধ উপেক্ষা করে লোকটার বিপরীতে দাঁড়ালাম। প্রচন্ড ক্রোধে আক্রোশে হিংস্ত্র পশুর মত গর্জে উঠলাম। আচমকা এই হিংস্ত্রতায় লোকটি কিছুটা মনোযোগ হারিয়ে ফেলে। ঐ লোকের হাত থেকে মীনাক্ষী ছিটকে গিয়ে জ্ঞান হারায়। মীনাক্ষীর জ্ঞানহীন অচেতন দেখ আমার আক্রোশ বাড়িয়ে দেয় শতগুন। সুতীব্র জিঘাংসা নিয়ে সেই বিচিত্র পোষাকের লোকের উপর ঝাপিয়ে পড়ি। একই সাথে ঝাঁঝালো গন্ধটা অনেকটাই কমে যাওয়ায় বেশ খানিকটা শক্তি ফিরে পাই। বিচিত্র পোষাকের লোকটি ছটফট করতে করতে এক সময় অচেতন হয়ে পড়ে। এমন সময় বাইরে মানুষের হৈহুল্লোড় শুনে নিজেকে লুকিয়ে ফেলি। আর কিছুদিন সে মুখো হইনা।
কয়েদিন পর জানতে পারি ওরা নাকি এ বাড়ী ছেড়ে চলে যাচ্ছে। অপরিসীম এক শুন্যতা ঘিরে ধরল আমাকে। প্রচন্ড আলো উপেক্ষা করে ছুটে গেলাম ওদের বাড়ী দিকে। যখন পৌছলাম তখন ওরা বেড়িয়ে যাচ্ছে। ধীর পায় এগিয়ে যাচ্ছে বোধহীন এক শুন্যতার মাঝে দূর থেকে ওকে দেখছি। কষ্ট বেদনা কান্না কোন অনুভূতিই নেই শুধুই এক শুন্যতা। ওর চকিত চোখও কৌতুহলী হয়ে কি যেন খুঁজে ফিরছে। আমি জানি সে আমাকেই খুঁজছে কিন্তু আমার নিশ্চল দেহ কোন গতি পেলনা। গাড়ীর দরজা বন্ধ হয়ে একসময় এগুতে শুরু করল। আমার সামনে এখন শুধুই শুন্যতা।
এতক্ষণ ধৈর্য ধরে আমার গল্পটা শোনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই। হয়তো ভাবছেন হঠাৎ করে কেনই বা আপনাদের এ গল্প শোনাতে আগ্রহী হলাম এবং কিছুটা জোর করেই শোনালাম। হয়তো মীনাক্ষী আপনাদের সমাজেরই একজন বলে হঠাৎ মনে হলো আপনাদের গল্পটা শোনাই। অথবা এজন্য শোনাচ্ছি যে যদি কোনদিন মীনাক্ষীর সাথে আপনাদের কারো দেখা হয় তবে একটু কষ্ট করে আমার এই চিঠিটি তাকে দিয়ে দিবেন,
মীনাক্ষী,
যুক্তি আর অযৌক্তিকতার মাঝে বসবাসকারী অপরবাস্তবের এই আমি তোমার থেকে যা পেয়েছি তা অমূল্য। সমস্ত পৃথিবী আমার হাতে আসলেও সে প্রাপ্তি আমার অজানাই থেকে যেত। তীব্র বোধ অপার্থিব শুদ্ধতা জীবনের মানে আমি দেখেছি তোমার থেকে। শাশ্বত সুন্দরের প্রার্থনা শিখেছি। জীবনের বোধকে স্পর্শ করে শুদ্ধ হয়েছি। শিখেছি মঙ্গলালোকের প্রদীপে নিজেকে সম্পর্পন করতে। তুমি ভালো থেকো। দুফোটা বৃষ্টির জলে নিজেকে ভিজিয়ে ভেবো কোন একদিন এ জলে আমিও ভিজেছিলাম। পথে যদি দেখ কোন এক পথশিশু বকুলের মালা গেঁথে তোমার গাড়ীর জানালার ধারে এসেছে ওকে ফিরিয়ে দিওনা। ওর থেকে দুটো মালা নিয়ে গন্ধ শুঁকো। কারণ আমিও এখন বকুলের গন্ধ নিয়ে তোমায় লিখছি এই বিশ্বাসে যে এ চিঠি তুমি পাবে। আমার সে বিশ্বাস বৃথা যায়নি কারণ এই মুহুর্তে চিঠিটা তুমি পড়ছ। আমি ভালো আছি। সব পথ হারিয়ে গেলেও আমি জানি তোমার মুখের ঐ ছবি আমায় পথ দেখাবে। আমার কোন ভাবনা নেই। মেঘের আড়ালে ধ্রুবতারা লুকানোর ভয় থেকে তুমি আমায় মুক্ত করেছ। তুমি আছো তুমি থাকবে। তুমি আমার চির সত্য, চির শাশ্বত, চির সুন্দরতম।
কোন এক বড় কবির লেখা প্রিয় একটি কবিতা দিলাম তোমাকে। যখন খুব বেশী মন খারাপ হবে তখন কবিতাটি পড়বে।
কবিতার নাম- শাশ্বতী, লিখেছেন- সুধীন্দ্রনাথ দত্ত
শ্রান্ত বরষা অবেলার অবসরে
প্রাঙ্গণে মেলে দিয়েছে শ্যামল কায়া;
স্বর্ণ সুযোগে লুকাচুরি-খেলা করে
গগনে-গগনে পলাতক আলোছায়া।
আগত শরৎ অগোচর প্রতিবেশে;
হানে মৃদঙ্গ বাতাসে প্রতিধ্বনি :
মূক প্রতীক্ষা সমাপ্ত অবশেষে
মাঠে, ঘাটে, বাটে আরব্ধ আগমনী।
কুহেলিকলুষ দীর্ঘ দিনের সীমা
এখনই হারাবে কৌমুদীজাগরে যে;
বিরহবিজন ধৈর্যের ধূসরিমা
রঞ্জিত হবে দলিত শেফালি শেজে।
মিলনোত্সবে সেও তো পড়েনি বাকি,
নবান্নে তার আসন রয়েছে পাতা :
পশ্চাতে চায় আমরই উদাস আঁখি;
একবেণী হিয়া ছাড়ে না মলিন কাঁথা।।
একদা এমনই বাদলশেষের রাতে
মনে হয় যেন শত জনমের আগে
সে এসে সহসা হাত রেখেছিল হাতে,
চেয়েছিল মুখে সহজিয়া অনুরাগে;
সে-দিনও এমনই ফসলবিলাসী হাওয়া
মেতেছিল তার চিকুরের পাকা ধানে;
অনাদি যুগের যত চাওয়া, যত পাওয়া
খুঁজেছিল তার আনত দিঠির মানে।
একটি কথার দ্বিধাথরথর চুড়ে
ভর করেছিল সাতটি অমরাবতী;
একটি নিমেষে দাঁড়ালো সরণী জুড়ে,
থামিল কালের চিরচঞ্চল গতি;
একটি পণের অমিত প্রগল্ ভতা
মর্ত্যে আনিল ধ্রুবতারকারে ধ’রে
একটি স্মৃতির মানুষী দুর্বলতা
প্রলয়ের পথ দিল অবারিত ক’রে।।
সন্ধিলগ্ন ফিরেছে সগৌরবে;
অধরা আবার ডাকে সুধাসংকেতে,
মদমুকুলিত তারই দেহসৌরভে
অনামা কুসুম অজানায় ওঠে মেতে।
ভরা নদী তার আবেগের প্রতিনিধি,
অবাধ সাগরে উধাও অগাধ থেকে;
অমল আকাশে মুকুলিত তার হৃদি
দিব্য শিশিরে তারই স্বেদ অভিষেকে।
স্বপ্নালু নিশা নীল তার আঁখিসম;
সে-রোমরাজি কোমলতা ঘাসে-ঘাসে;
পুনরাবৃত্ত রসনায় প্রিয়তম;
আজ সে কেবল আর কারে ভালবাসে।
স্মৃতিপিপিলিকা তাই পুঞ্জিত করে
অমার রন্ধ্রে মৃত মাধুরীর কণা;
সে ভুলে ভুলুক, কোটি মন্বন্তরে
আমি ভুলিব না, আমি কভু ভুলিবো না।
** ফার্স্ট পার্সন হয়ে গল্পটা লিখে গেলাম। কতটুকু হলো জানিনা। আর আমারো অবশ্য দোষ নেই, এক পিচ্চি টাইপের একজন বলতে গেলে আমাকে দিয়ে জোর করে লিখিয়েছে। আর এদিকে সহব্লগারদের উদারতা আর আন্তরিক ভালোবাসা পেয়ে পেয়ে সাহসটাও ইদানিং বেড়ে গেছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০১৩ রাত ৯:১৫