গত জানুয়ারিতে হঠাতই গুগলের ঘোষণায় তোলপাড় উঠলো প্রযুক্তি-বিশ্বে। শত কোটি ডলারের চীনের সার্চ ইঞ্জিন বাজার ছেড়ে তারা এবার ফিরতি পথে হাঁটবে! এমনিতেই চীনে ব্যাবসায় শুরুর পর থেকেই চীন-গুগলের সম্পর্কে ছিল টানাপোড়েন। আর চীনের ইন্টারনেট ব্যাবহারকারীদের সার্চ ফলাফলে কোন প্রকার ফিল্টারিং না করার ঘোষনায় এ সম্পর্ক পৌছে গেছে হিমাংকে। বর্তমানের চীন আর গুগলের এ বৈরি সম্পর্কের জের লেগেছে বেইজিং-ওয়াশিংটন সমপ্রীতিতেও।
২০০৬ সালে চীনে প্রথম সার্চ ইঞ্জিন ব্যাবসায় শুরু করে গুগল। ব্যাবসায় শুরু করার পরপরই চীনা সরকারের নজরদারিতে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। চীনের ইন্টারনেট ব্যাবহারকারীদের সার্চ ফলাফলে ফিল্টারিংয়ের দাবি তোলে চীনা কর্তৃপ। চীনে ব্যাবসা করতে হলে এ শর্ত মেনে নিতেই হলো গুগলকে। শর্ত অনুযায়ী ১৯৮৯ সালের তিয়েনআমেন স্কয়ার বিদ্রোহ, তিব্বতের ঘটনা এবং ফালুং গংয়ের স্পর্শকাতর বিষয়গুলো ছাড়াও বেশকিছু তথ্যসংক্রাšত ওয়েবসাইট বন্ধ করে লি গুগল। চীনের বিশাল সংখ্যক ইন্টারনেট ব্যাবহারকারীদের মধ্যে যুবক আর কিশোরের সংখ্যায়ই মুলত বেশি। আর তাই এ শ্রেনীর ইন্টারনেট ব্যাবহারকারীদের ল করে দেশটিতে দ্রুত বাড়তে থাকে পর্নোগ্রাফিক সাইটগুলো। পর্নোগ্রাফিক সাইটগুলোর দৈারাÍ বন্ধে চীনে ওয়েবসাইটের ডোমেইন নিবন্ধনে কড়া নিয়šত্রন পদ্ধতি চালু করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপ। ডোমেইন নিবন্ধনে চীনা নাগরিকদের পরিচয়পত্র, ব্যাবসায়িক নিবন্ধনপত্র এবং আরোও কিছু কাগজপত্র জমাদান বাধ্যতামুলক করা হয়। তবে এতকিছুর পরও ইতিবাচক ফলাফল আসে খুবই কম। চীনা সরকারের আদেশে পর্নোগ্রাফিক সাইটগুলোকেও ফিল্টারংয়ের আওতায় এনে সার্চ ইঞ্জিন থেকে মুছে ফেলতে বাধ্য হয় গুগল। গুগলের এ চীনা নিয়ন্ত্রন অনেকটাই অসহ্য ছিল প্রতিষ্ঠানটির কাছে। আর সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে গুগলের নিজ দেশের 'মুক্ত ইন্টারনেট' সমর্থনকারীদের সমালোচনা। টাকার জন্য চীনা সরকারের সব দাবি কেন মেনে নেবে গুগল? এমন কথা বলে সবাই ধিক্কার জানাচ্ছিল গুগলকে। কিন্তু সব কিছুই মুখ বুজে সহ্য করেছিল গুগল। তার কারণ অবশ্য একটাই। কারন চীনের বিশাল ইন্টারনেট বাজার নিজেদের দখলে রাখা। চীনের ইন্টারনেট ব্যাবহারকারী এখন ৩৮ কোটি ৪০ লাখ। যা যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার চেয়েও অনেক বেশি। আর তাই চীনে গুগলে সার্চ ইঞ্জিন ব্যাবসাও তাই কয়েকশ কোটি টাকার। গুগলের বিজ্ঞাপন ব্যাবসায় গুগল এডওয়ার্ডে চীন ভিত্তিক বিজ্ঞাপনদাতাদের সংখ্যাও তাই বিশ্বব্যাপি উল্লেখযোগ্য পরিমানে। কিন্তু হঠাত চীন কেন ছাড়বে গুগল? গুগলের ক্ষেপে ওঠার কারণ কি? মুল কারনটি হলো সাইবার আক্রমন আর জিমেইল অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং। চীনে গুগলের কম্পিউটার কোডিংয়ে হামলা চালানো হয়েছে সম্প্রতি। গুগলে সাইবার আক্রমন ছাড়াও চীনের মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের জিমেইল অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়ার ঘটনা নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিনত হয়েছে। জিমেইলের মালিক হওয়ার কারনে হ্যাকিং ঘটনা ঠেকানোর ব্যার্থতার দায় বর্তায় গুগলের উপর। আর তাই গুগলের চীনা ভাষার সার্চ ইঞ্জিন সংস্করন গুগল ডটসিএন চিরতরে বন্ধ করা এবং চীন ছাড়ার ঘোষনা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ইতিমধ্যে গুগলে সাইবার আক্রমনের ব্যাপারে চীনের দুটি স্কুলের যোগসুত্র খুঁজে পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এ ঘটনার ব্যাখ্যা চেয়েছেন বেইজিংয়ের কাছ থেকে। কিন্তু চীন সরকারের একই কথা। চীনে ব্যাবসায় করতে হলে স্থানীয় আইনকে শ্রদ্ধা করতে বাধ্য গুগল। গুগলের প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ এবং সার্জিও ব্রিন চীনে গুগল সার্চের ক্ষেত্রে সকল ফিল্টারিং বন্ধ করা হবে বলে ঘোষনা দিয়েছেন সম্প্রতি। আর এ ঘোষনার পর চীনের শিল্প ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী লি ইয়োঝাং সতর্কতা দেন গুগলকে। সার্চ ইঞ্জিনে ফলাফল ফিল্টারিং বন্ধ করলে আইন অনুযায়ী গুগলের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যাবস্থা নেবে চীন! না গুগল আর থেমে থাকতে চায়না। সার্চ ফলাফলে এবার ফিল্টারিং বন্ধ হবেই বলে জানিয়েছেন গুগলের প্রধান নির্বাহী এরিক স্কিমিডিট। অনিশ্চয়তার মাঝে এখন গুগল আর চীন ব্যাবসায়িক সম্পর্ক। তবে চীনা গনমাধ্যম জানিয়েছে, আগামী ১০ এপ্রিল চীনা অফিস বন্ধ করে দিবে সার্চ ইনজিন জায়ান্ট গুগল। গনমাধ্যমের প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা জানতে পেরেছি গুগল আগামী মাসের ১০ তারিখে চীন ছাড়বে। তবে অফিসিয়ালী এ ব্যাপারে গুগলের কোন মন্তব্য আমরা পাইনি।’ তবে গুগলের চীন ছাড়াটা দেশটির জন্য সত্যিই হবে দু:খজনক। প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে দেশটি অনেক এগিয়ে থাকলেও গুগল ছাড়া চীন চলবে এমন দম্ভক্তি খুব বেশিদিন টিকবেনা বলেও মনে করছেন প্রযুক্তিবাজার সংশ্লিষ্টরা।
১০ তারিখে চীন ছাড়ার নিউজটা দেথতে পারেন ইন্ডিয়া টাইমসে
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০১০ রাত ৯:২৯