somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জন্মদিন এবং মৃত্যুদিন

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার নাম আব্দুল ওয়ালী । কেউ কেউ আব্দুল ডাকে আবার কেউ কেউ ওয়ালী ডাকে । আগামী ডিসেম্বরে আমার সাতাশ বছর পূর্ণ হবে ।ঘটনাক্রমে নীলিমা নামের এক প্রবাসী মেয়ের সাথে হঠাৎ করেই আমার বিয়ে হয়ে যায় । সেটা ছিল আজ থেকে চার বছর আগে আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ । চার বছর আগে নভেম্বরের শেষের দিকে আমিও প্রবাসে পাড়ি জমাই । আমার বিদেশে আসার জন্য যাবতীয় কাজ আমার প্রবাসী স্ত্রী নীলিমা করেছিল ।এমন কি বিমান ভাড়াটাও পর্যন্ত সে দিয়েছিল ।

আমি বিদেশে এসে আমার শশুর শাশুড়ির সাথে বাসবাস করতে লাগলাম ! নীলিমা চেয়েছিল আলাদা ঘর নেয়ার জন্য কিন্তু আমার শশুর শাশুড়ী তা মানেননি । কারণ নীলিমা তার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান । উনারা চাননি সে তাদের ছেড়ে অন্য কোথাও থাকুক । আমার শশুর রিটায়ার্ড করার পর স্ত্রীকে নিয়ে বেড়ানোর জন্য দেশে গেলেন । ছয় মাসের জন্য গিয়েছিলেন । যেদিন ছয় মাস ভেকেশন কাটিয়ে ফিরবেন - সেদিনই এয়ারপোর্ট আসার পথে গাড়ী এক্সিডেন্ট করে দুজনেই মারা গেলেন । আমি আর নীলিমা উনাদের শেষ দেখা দেখতে পারলাম না । কারণ নীলিমা প্রেগনেন্ট থাকার কারণে বিমানে ফ্লাই করতে ডাঃ নিষেধ করেছিল ।

আমার যখন সাত বছর বয়স তখন আমার বাবা মারা যান । বাবার আদর তেমন পাইনি - তবে আমার শশুর আবুল হুসেন সাহেবের কাছ যে আদর পেয়েছি,মনে হয়েছে বাবা বেঁচে থাকলে হয়ত তার কাছ থেকে এই রকমি আদর পেতাম । দশ ভাইবোনের বড় ফেমিলি হওয়ার কারণে মায়ের আদর আমি যে বক্সে জমাতাম সেটা সামান্য অসম্পূর্ণ ছিল । তবে মা যদি আরো কিছুদিন বেঁচে থাকতেন তাহলে হয়ত আমাকে তার আদর জমানোর জন্য আরো বেশ কয়েকটা বক্স কিনতে হত । আমার শাশুড়ি নিলুফার বেগম আমার অসম্পূর্ণ বক্সটা সম্পূর্ণ করে দিয়েছিলেন ।

গত বছর ফেব্রুয়ারির প্রথমদিকে আমার মেয়ে সাজদা জন্মগ্রহণ করে। পৃথিবীর সব বাবাদের মত বাবা হওয়ার একটা অন্যরকম সুখ আমার মাঝে কাজ করছিল - তবে সে সুখের অনুভূতিটা আমার মাঝে আধাঘন্টার বেশি স্থায়ী ছিল না । কারণ নার্স আমাকে সাজদার জন্মের খবরের আধাঘন্টা পর নীলিমার মৃত্যুর খবর দেয়। হাসপাতালের যে বেডে যেদিন সাজদা'র জন্ম হয়েছিল,সে বেডে সেই দিনই নীলিমা মারা গেল ।

সাজদা জন্মের পর থেকে সে অতিরিক্ত কান্নাকাটি করে । পরিচিত কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করলাম - সবাই একি উত্তর দিল বাচ্চারা নাকি এরকমই কান্নাকাটি করে। কিন্তু আমার মন মানত না,ওর কান্না আমাকে বারবার মন খারাপ করে দিত । পরে আমি আমাকে বুঝ দেই এই ভেবে -ও হয়ত অতিরিক্ত কান্নাটা ওর মায়ের জন্য কাঁদে । আমারও মাঝেমাঝে পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু বিল্ডিংয়ের ছাদে উঠে চিৎকার দিয়ে কাঁদতে ইচ্ছা করে । এই কান্না নীলিমার জন্য,যে আমাকে সত্যি ভালবাসত - একদম সত্যি । আমিও তাকে সত্যিকারের ভালবাসতাম তবে তা তাকে বলা হয়নি। আমি একটা নির্দিষ্ট দিন ঠিক করে রেখেছিলাম - তাকে বলব আমিও তোমাকে সত্যিকার ভালবাসি । আমার সেই ঠিক করে রাখা নির্দিষ্ট দিন আসার আগেই সে আমার থেকে আজীবন দুরে চলে গেলো।

ফেব্রুয়ারির ৫ তারিখ সাজদার প্রথম জন্মদিন আর নীলিমার প্রথম মৃত্যুদিন । সকালে ঘুম থেকে উঠে সাজদাকে নিয়ে নীলিমার কবরে গেলাম । কবরের পাশে যাওয়ার পর আমার মেয়েটা একবার কবরের দিকে তাকায় একবার আমার দিকে তাকায় ! তার এই চাওনি আমার বুকে পেরেক ঠুকে । আমি আমার মেয়েকে আরো জোরে বুকে জড়িয়ে ধরি ।

ঘরে আসার পর দেখি পাশের ফ্ল্যাটের লুবনা খালা আর উনার ছেলেমেয়েরা সাজদার জন্মদিন পালনের জন্য কেক আর ঘর সাজানোর জিনিসপত্র নিয়া আসছেন ।আসার পথে সে আমার কোলে ঘুমিয়ে পড়েছিল তাই তাকে বেডে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে আমিও ওদের সাথে ঘর সাজাতে যাই । সবকিছু শেষ করে বেডরুমে এসে দেখি আমার মেয়েটা এখনও ঘুমাচ্ছে তবে বুকের উপর আমাদের বেডের পাশে রাখা ফটোফ্রেম টা যেটাতে নীলিমার ছবি রাখা আছে ।

আমি সাজদাকে মা সাজদা বলে ডাকতাম ।কিন্তু এখন আমি তাকে শুধু সাজদা বলে ডাকি । কারণ যখনি তাকে মা সাজদা ডাকতাম তখনি সে ঘরের দেয়ালে টাঙ্গানো নীলিমার ছবির দিকে বারবার তাকাতো । সে এখন নতুন হাঁটা এবং ভাঙাভাঙা ভাষা কথা বলতে শিখেছে । মাঝেমাঝে সে আমার সাথে অভিমান করে,ডাকলে কাছে আসতে চায় না । যখন কাছে আসার জন্য জোরাজুরি করি তখন সে বিড়বিড় করে কি একটা বলেবলে কাছে আসে । তার বিড়বিড় ভাষা আমি না বুঝলেও আমি তা আন্দাজ করে নেই, সে বলে - আমার যদি মা থাকতো তাহলে এখন আমি তোমার কাছে আসতাম না ।

সাজদা আমার পৃথিবী,তাকে জড়িয়ে ধরেই আমার বেঁচে থাকা ।তাকে আমি বাবা মা দুইজনেরই আদর দিতে প্রানপন চেষ্টা করি । তারপরেও মাঝেমাঝে মনে হয় মায়ের আদরে তার কমতি পড়ছে । তখন ভাবি সাজদার একজন মা দরকার । কিন্তু সিনেমা গল্প উপন্যাসের সৎ মায়ের চরিত্রগুলো আমার সে ভাবনাকে গলাটিপে মেরে ফেলে ।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১১ ভোর ৪:৫৪
২০টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×