আমাদের দেশে আইন বা সংবিধান পরিবর্তন হয়ে গেছে গরিবের পান্তা ভাতের মত। ২৭ তারিখে নাকি আবারও পান্তা ভাতের আয়োজন করতে যাচ্ছে সরকার। সরকার খুবই কৌশলী। দেশ বিরোধী, সংবিধান বিরোধী বা গণ-বিরোধী কোন আইন পাশ করতে চাইলে প্রথমে আদালতের ঘাড়ে বন্দু ফেলে বৈধ করে নেওয়া নেয়। বিচারপতিরাও সেই অবৈধ কাজ গুলো করতে বাধ্য। কেননা বাহাত্তরের সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ পুনঃস্থাপনের মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। তাদের আদেশ অমান্য করলে যে কোন মূহুর্তে অপসারণ হতে পারে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীও একই কায়দায় পরিবর্তন করে জনগনের ঘাড়ে চাপিয়ে দিল ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ধর্মহীনতা। রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে সংবিধান থেকে মুছে দিতে একই পথ বেছে নিতে যাচ্ছে সরকার। তবে এবারের আয়োজনটা দেশের জনগন খুবই গুরুত্বের সাথে দেখছে। কেননা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগন যাকে প্রাণের চেয়েও বেশি যাকে ভালবাসে সেখানেই আঘাত করতে যাচ্ছে সরকার। মনে হয় না জনগন খুব সহজে ছেড়ে দেবে।
ইসলাম বিরোধীরা ধর্মনিরপেক্ষতার দোহায় দিয়ে বলে থাকেন রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধান বিরোধী। আমার মূল আলোচ্য বিষয় হল সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার অসারতা। যা কিনা সংবিধানের চারটি মূলনীতির একটি। তবে চারটি মূলনীতি একটি অপরটির সাথে উতপ্রোতভাবে জড়িত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গভীরে চোখ রাখলে দেখা যাবে যে মূলনীতিগুলো একটা অপরটির সাথে সাংঘর্ষিক এবং রাষ্ট্র বিরোধী। আসুন একটু খতিয়ে দেখি।
প্রথমত আসি জাতীয়তাবাদ। জাতীয়তাবাদ হিসেবে সংবিধানে বলা আছে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের কথা। অথচ এ দেশ বাঙ্গালী ছাড়াও অন্যান্য জাতির আবাসস্থল। আমরা জানি যে একটি চক্র পার্বত্য চট্রগ্রাম কে নিয়ে স্বাধীন জুমল্যান্ড করার ষড়যন্ত্র করছে। সংবিধানে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের কথা বলায় তাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছে। এতে প্রমান হয় যে জাতীয়তাবাদ মূলনীতিটি বিতর্কিত এবং দেশ বিরোধী।
দ্বিতীয়ত আসি সমাজতন্ত্র। এটি এমন একটি মতবাদ যার জন্মস্থান তৎকালিন সোভিয়েত ইউনিয়ন বর্তমান রাশিয়ায়। যার রাজনৈতিক গুরু লেনিন ও তার অনুসারীরা খুবই চমকপ্রদ স্লোগান তুলে মানুষ কে আকৃষ্ট করেছিল। যেমন, "কেউ খাবে আর খাবে না, তা হবে না, তা হবে না"। যখন ক্ষমতায় গেল তখন বেরিয়ে আসল আসল চেহারা। জনগনের সকল ধরনের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিল এই ডিক্টেটর। কোন প্রকার প্রতিবাদ করলেই স্বশ্রম কারাদণ্ড দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হত পৃথিবীর শীতলতম স্থান সাইবেরিয়ায়। সেখান থেকে ফিরে আসার রেকর্ড নাই বললেই চলে। এভাবে কত লক্ষ কয়েদিকে যে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। কিন্তু জনগনকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। তারা প্রতিবাদ করে সমাজতন্ত্রের মত স্বৈরাচারী মতবাদ থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করেছে। শেষ পর্যন্ত টিকতে না পেরে সমাজতন্ত্র তার নিজের জন্মস্থানেই গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু খুবই আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, সেই মৃত মতবাদ কে বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। এখন আমার নিজেরই আত্মহত্যা করতে ইচ্ছে হচ্ছে।
এখন আসি গণতন্ত্র এবং ধর্ম নিরপেক্ষতায়। গণতন্ত্র কে লিংকন সাহেবের সংগায় সংগায়ীত করি আর অন্যান্য রাষ্ট্র বিজ্ঞানীদের ভাষায় সংগায়ীত করি; সবকিছুর মূল কথা হল, একটি রাষ্ট্রের জনগনই সবকিছু। তারা সংখ্যা গরিষ্ঠতার ভিত্তিতে আইন প্রনয়ণ করবে, রাষ্ট পরিচালনা করবে এবং জাতীয় কোন ইস্যুতে সরাসরি মতামত প্রধান করবে। সুতরাং সংবিধানের মূলনীতি নির্ধারনে আমরা গণতন্ত্রকে মানদণ্ড হিসেবে ধরতে পারি। উপরে উল্লেখ করেছি কেন জনগন বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ এবং সমাজতন্ত্রকে মূলনীতি হিসেবে মেনে নেয়নি। এখন আমরা দেখব গণতন্ত্রের মানদণ্ডে বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতার অবস্থান। ধর্মনিরপেক্ষতা একটি বিশ্বাস, যেমন করে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টানও একটি বিশ্বাস। ২০০১ এর আদমশুমারি অনুসারে বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৮৯.৭ শতাংশ মুসলিম এবং ৯.২ শতাংশ হিন্দু ধর্মাবলম্বী। বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মালম্বীরা মোট জনসংখ্যার ১.২ শতাংশ। বাংলাদেশে ধর্মহীন বা ধর্মের ব্যাপারে নিরপেক্ষতা অবলম্বনকারী(যারা বলে আমি হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান কোনটাই না) বা এথিস্টদের সংখ্যা দশমিক কত পার্সেন্ট আমার জানা নেই। এখন আমাকে বলেন কোন যুক্তিতে আমাদের উপর ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ বিশ্বাস কে আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হল।
উপরের আলোচনা থেকে বুঝা গেল যে বাংলাদেশ সংবিধানের মূলনীতি গুলো একটি আরেকটির সাথে সাংঘর্ষিক। বিশেষ করে সংবিধানে একই সাথে গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা অবস্থান করতে পারে না । সুতরাং ধর্মনিরপেক্ষতার দোহায় দিয়ে যারা বলে থাকেন রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধান বিরোধী তারা এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন কথাটা কতটা অযৌক্তিক এবং অমূলক।
সূত্র:
বাংলাদেশ সংবিধান
বাংলাপিডিয়া
উইকিপিডিয়া
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৫:১৩