somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নৈরাজ্য ও সন্ত্রাসের রাজনীতির কাছে মাথা নত করবেন না: জ্যোতি বসু

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ৮:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৫৯ সালের খাদ্য আন্দোলনের ৫০ বছর পূর্তিতে
গণ-আন্দোলনের শহীদ স্মরণে কলকাতায় সুবিশাল সমাবেশে জ্যোতি বসুর প্রেরিত বার্তার পূ্র্ণ বয়ানঃ


কমরেড সভাপতি
উপস্থিত বন্ধুগণ, মা ও বোনেরা,

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বামফ্রন্টের ডাকে এবছর ঐতিহাসিক খাদ্য আন্দোলনের পঞ্চাশ বছর পালন করা হচ্ছে। আজ সেই উপলক্ষে কলকাতার রাজপথে লক্ষ লক্ষ মানুষ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছেন। সেই মহান আন্দোলনকে স্মরণ করে বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। আপনারা যাঁরা এই সমাবেশে এসেছেন, তাঁদের সকলকে আমি এজন্য অভিনন্দন জানাচ্ছি।

প্রতি বছরই ৩১শে আগস্ট আমরা উপযুক্ত মর্যাদার সঙ্গে শহীদ দিবস পালন করি। ঐতিহাসিক খাদ্য আন্দোলন এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতির প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা নিবেদন করি। আমার মনে আছে, খাদ্য আন্দোলনের ২৫ বছর পালন করার সময়ও আমরা সমাবেশের আয়োজন করেছিলাম‍ নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। তবে এবার আমরা ১৯৫৯ সালের ৩১শে আগস্ট যেভাবে রাস্তায় তিন লক্ষের বেশি মানুষ সমবেত হয়েছিলেন, তাকে স্মরণে রেখে রাস্তাতেই লক্ষ লক্ষ মানুষের এই সমাবেশের আয়োজন করেছি।

খাদ্য আন্দোলনের বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি আমি আজ আবার আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। আমি শুনেছি, শহীদ পরিবারের মানুষেরাও আজকের এই সমাবেশে এসেছেন। তাঁদেরকেও আমি অভিনন্দন জানাই।

১৯৫৯ সালের ঐতিহাসিক খাদ্য আন্দোলন পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ইতিহাসে অবিস্মরণীয়। এর রাজনৈতিক তাৎপর্য অসামান্য। রাজ্যের বামপন্থী ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তা মোড় বদলের ইঙ্গিত দিয়েছিল। আমাদের কাগজ ‘স্বাধীনতা’ তখন লিখেছিল, ‘ঐতিহাসিক গণ-জাগরণ।’ কলকাতাসহ জেলায় জেলায় সংগঠিত হয়েছিল বিক্ষোভ সমাবেশ। সেই আন্দোলন দমন করতে পুলিসী অত্যাচারের চরমে উঠেছিল।

সেদিন কলকাতা মহানগরীর প্রাণকেন্দ্রে ভুখা মিছিলে শামিল লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রধান দাবি ছিল-‘খাদ্য চাই, খাদ্য দাও—নইলে গদি ছেড়ে দাও।’ কিন্তু ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে তখনকার কংগ্রেস সরকার সেই শান্তিপূর্ণ ন্যায্য গণতান্ত্রিক আন্দোলনের উপর অকথ্য পুলিসী নির্যাতন চালায়। লাঠি চালিয়ে খুন করা হয় নিরস্ত্র, নিরীহ ৮০ জন মানুষকে। এটা ছিল একটা ন্যক্কারজনক গণহত্যা। শুধু ৩১শে আগস্টেই নয়, পরপর কয়েকদিন ধরে কলকাতাসহ রাজ্যের প্রায় সব জেলাতেই পুলিসী নির্যাতন মাত্রা ছাড়িয়ে যায়।

আজকের প্রজন্মের পক্ষে এটা কল্পনা করাও কঠিন সেই সময় জনগণের ন্যায্য আন্দোলনের ওপর কংগ্রেসের সরকার কি নির্মম অত্যাচার নামিয়ে এনেছিল! মানুষের স্বার্থে সেইসব আন্দোলন করতে গিয়ে আমাদের ওপর লাঠি চলেছে, গ্যাস,গুলি চলেছে। আমরা দিনের পর দিন বিনাবিচারে জেল খেটেছি। জেলের ভেতরে গুলি চলেছে, বাইরে গুলি চলেছে। আমরা আক্রান্ত, রক্তাক্ত হয়েছি। তবু আমরা আত্মসমর্পণ করিনি, কংগ্রেসের আক্রমণের সামনে মাথা নত করিনি। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ সেটা দেখেছেন।

সেই মহান খাদ্য আন্দোলনের অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি যে, কঠিন সময়ে সংগ্রামী মানুষই বামপন্থীদের ভরসা। আজও পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস-মাওবাদীরা ও কোথাও বা কংগ্রেস রাজ্যজুড়ে উন্নয়ন স্তব্ধ করতে চাইছে হিংসা ছড়িয়ে, নৈরাজ্য সৃষ্টি করে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ওরা আমাদের পার্টি নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের নৃশংসভাবে হত্যা করছে। পার্টি অফিস ওরা আক্রমণ করছে, আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। পার্টিকর্মী-দরদীদের বাড়ি লুঠ করা হচ্ছে। মানুষকে সমবেত করে এই আক্রমণের মোকাবিলা আমাদের করতে হবে। সেজন্য মানুষের কাছে আমাদের বারেবারে যেতে হবে, গরিব সাধারণ মানুষের স্বার্থে কাজ করতে হবে, তাঁ দের ভালোবাসা আমাদের পেতে হবে। আমরা যেন মানুষের ওপরে বিশ্বাস না হারাই। গত নির্বাচনে অনেক মানুষ আমাদের বিরুদ্ধে চলে গেছেন। তাঁদেরকে আবার আমাদের দিকে টেনে আনতে হবে। শুধু তাঁদেরকেই নয়, আরো নতুন নতুন মানুষকেও টেনে আনতে হবে। পাশাপাশি নিজেদের যে ভুল আছে তাও আমাদের শুধরে নিতে হবে। আমার বিশ্বাস আছে, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ কখনই কোনও সুবিধাবাদী জোট বা নীতি-নৈতিকতাহীন দলকে মেনে নেবেন না। এরাজ্যের মানুষের চেতনা আছে, তাঁরা অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে উপলব্ধি করেছেন কে শত্রু, কে মিত্র। নৈরাজ্য ও সন্ত্রাসের রাজনীতির কাছে তাঁরা কখনই মাথা নত করবেন না।

যত বাধাই আসুক দে‍‌শের শ্রমজীবী ও সাধারণ মানুষের স্বার্থে বামপন্থীরা কাজ করে যাবে। সাম্রাজ্যবাদের কাছে কেন্দ্রের সরকারের আত্মসমর্পণ আমরা কখনই মেনে নেবো না। কেন্দ্রের নীতিতে নিত্যনতুন আক্রমণ নেমে আসছে গরিব মানুষের উপর। কৃষকরা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছেন। দেশে খাদ্যসঙ্কটও বাড়ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম ক্রমশ বাড়ছে, মজুতদারি, কালোবাজারি বাড়ছে। সি পি আই (এম) ও অন্যান্য বামপন্থী দলগুলি এসবের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলছে। গরিব মানুষকে ভাগ করার অপকৌশল আমরা মানবো না। পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকার ও বামপন্থীদের উপর আক্রমণের সঙ্গে চলছে ব্যাপক কুৎসা অভিযান। এভাবেই গরিব মানুষ শ্রমজীবী মানুষের অগ্রগতি ওরা ঠেকিয়ে রাখতে চায়।

৩১শে আগস্টের বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে তাই আমাদের শপথ নিতে হবে। আমরা শপথ নেবো, মাথা তুলে দাঁড়ানোর শপথ। নৈরাজ্য এবং হিংসা ঠেকানোর শপথ।


৩১শেআগস্ট,২০০৯
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ৮:৫০
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লামিয়ার আত্মহনন: রাষ্ট্রীয় অক্ষমতা, সামাজিক নিষ্ঠুরতা ও মনুষ্যত্বের অন্তর্গত অপমান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:৫১


সেদিন ছিল ১৮ মার্চ ২০২৫। পটুয়াখালীর দুমকীতে বাবার কবর জিয়ারত করে ফেরার পথে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন শহীদ জসিম হাওলাদারের ১৭ বছরের কলেজপড়ুয়া মেয়ে লামিয়া। সে বাবা, যিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমুদ্রের গভীরে 'অন্ধকার অক্সিজেন'!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩৩



সমুদ্রের গভীরে 'অন্ধকার অক্সিজেন'! তৈরি হচ্ছে সূর্যালোক ছাড়াই, বিস্মিত বিজ্ঞানীরা:—

♦️সমুদ্রের ৪ হাজার মিটার তলদেশ। অন্ধকারে আচ্ছন্ন এক জগৎ। আর সেখানেই নাকি রয়েছে অক্সিজেন! বিজ্ঞানীরা যাকে ডাকছেন 'ডার্ক অক্সিজেন' নামে। 'নেচার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:০৪


আজ বিমান বাহিনীর বার্ষিক মহড়ায় এমনটাই বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। এমন বক্তব্যের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন করছেন বাংলাদেশ কি তবে মিয়ানমারের সাথে যুদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবদেহের ভেদতত্ত্ব: আধ্যাত্মিক দর্শন ও প্রতীকী বিশ্লেষণ (১ম পর্ব)

লিখেছেন মুনতাসির রাসেল, ০১ লা মে, ২০২৫ রাত ১:৪৮


ভূমিকা
মানবদেহ শুধুমাত্র একটি শারীরিক কাঠামো নয়; এটি বহুমাত্রিক জ্ঞানের একটি রহস্যময় ধারক, যেখানে শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক শক্তিগুলোর অপূর্ব সমন্বয় রয়েছে। দেহ, মন, আত্মা এবং চেতনার এই সমন্বয় মানব... ...বাকিটুকু পড়ুন

Appalachian Trail ৩৫০০ কিমি পায়ে হেটে

লিখেছেন কলাবাগান১, ০১ লা মে, ২০২৫ ভোর ৬:০৭


অ্যাপালাচিয়ান ট্রেইল: এক অসাধারণ অভিযানের গল্প

প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ভাবুন, আজ আপনাকে ১৫-২০ কিলোমিটার হেঁটে যেতে হবে। রাত হবে পাহাড়ের কোলে তাঁবুতে, খাওয়া-দাওয়া চলবে নিজের রান্না করা খাবারে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×