চৌধুরী সাহেব এক কথার লোক। না বললে আর কখনো হাঁ করেন না। তাঁর স্ত্রী পুত্র-কন্যাসহ আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, অফিস কলিগ সবাই সে কথা জানে। অতএব, তিনি যখন প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছেন যে আজ থেকে আর ধূমপান করবেন না, তখন কার সাধ্য তাঁকে আর ঐ কুকর্মে ফেরায়?
আগের রাতে ভীষণ শ্বাসকষ্টে চৌধুরী সাহেবের ঘুম হয়নি। সকালে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে ইসিজি, ইটিটি, এক্স রে ইত্যাদি হাফ ডজন টেস্ট করাবার পর বিকেলে ডাক্তার যখন গম্ভীর মুখে প্রেসক্রিপশন লিখে দিয়ে বললেন যে, সিগারেট ছাড়তে না পারলে ওষুধ খেয়ে লাভ হবে না, তখন তিনি বাসায় ফিরে এসে স্ত্রী, কন্যা ও শ্যালকের সামনে সিগারেটের প্যাকেট জুতার নিচে ফেলে মাড়িয়ে দিলেন। জানালা দিয়ে লাইটার ছুঁড়ে ফেলে দিলেন আরেক বাড়ির ছাদে। স্ত্রীকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘এবার খুশি হয়েছ তো?’
চৌধুরী-পত্নী খুশি হবেন না? তিরিশ বছর ধরে চেষ্টা করে তিনি স্বামীর এই বদভ্যাস ছাড়াতে পারেননি, আর আজ এক কথাতেই তিনি সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিলেন! খুশিতে রাহেলার ঠোঁটের কোণে বাসরঘরের হাসি। শ্যালক সুলতান বিড় বিড় করে বললো, ‘ঠেলার নাম বাবাজী!’ সুলতানের অস্পষ্ট কথা বুঝতে না পেরে চৌধুরী সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী বললি রে?’
‘বলবো আর কী? ভাবছি, আপনাকে এবার আমি একটা স্মার্ট ফোন কিনে দেব দুলাভাই। সিগারেট ছাড়ার পুরস্কার।’
‘দিবি?’ চৌধুরী সাহেব শ্যালকের প্রস্তাবে মোমের মতো গলে গেলেন। বললেন, ‘দিতে যখন চাচ্ছিস, দে। কোনদিন তো কিছু দিস না! তবে আমার তো একটা ফোন আছে রে ভাই। খামোকা আর একটা ফোন দিয়ে কী করবো? একটা মুখ দিয়ে কথা বলতে দুইটা ফোনের দরকার কী? থাক। শুধু শুধু টাকা নষ্ট করিস না।’
মেয়ে জেসমিন এমবিবিএস থার্ড ইয়ারের ছাত্রী। সে বাবাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো অভিযোগ করে বললো, ‘পাশ করা ডাক্তারের এক কথায় তুমি সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিলে, আর আমি এখনো পাশ করিনি বলে তুমি কোনদিন আমার কথায় পাত্তা দাওনি। মেয়ের চেয়ে ডাক্তারই তোমার আপন! তোমার ওপর আমার এক ডজন রাগ আছে।’
চৌধুরী সাহেব বক্তা মানুষ। তিনি ফোন করে করে আত্মীয় স্বজন সবাইকে জানিয়ে দিলেন যে, তিনি সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। প্রতিবেশী যার সাথে দেখা হলো,তাকেই ব্রেকিং নিউজের মতো প্রথম এই সংবাদটাই দিলেন। অফিসে গিয়ে সবার সাথে দেখা করে ধূমপান ছাড়ার খবর দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ভালো করিনি?’ এমন একটা ভালো কাজে কেউ কখনো না বলে? ‘খুব ভালো করেছেন’, ‘ফ্যান্টাস্টিক’, ‘দারুণ’, ‘এতদিনে সত্যিই আপনি একটা কাজ করলেন স্যার’-ইত্যাদি নানারকম প্রশংসাবাক্যে চৌধুরী সাহেব গলে হালুয়া হয়ে গেলেন। মনে মনে ভাবলেন, এত সামান্য ব্যাপারে সবাই এত প্রশংসা করছে! আশ্চর্য তো! আনন্দে সেদিন আর কোন ফাইলই সই করলেন না তিনি। ধূমপায়ী কলিগ ও ঠিকাদাররা তাঁর চেম্বারে ঢুকলে তিনি কড়া গলায় হুকুম দিলেন, ‘মুখে সিগারেটের গন্ধ নিয়ে আমার চেম্বারে কেউ ঢুকবেন না। ভালো করে মুখ ধুয়ে তারপরে আসুন।’ ভয়ে ভয়ে সবাই তাঁর চেম্বার থেকে কেটে পড়লো। চৌধুরী সাহেব তাঁর পিওনকে ডেকে ধমক দিয়ে বললেন, ‘এই এ্যাশট্রেটা এখুনি অফিসের বাইরে ফেলে দিয়ে আয়।’ পিওন আব্দুল কাদের পড়িমরি করে টেবিলের ওপর থেকে এ্যাশট্রে তুলে নিতে গিয়ে সেটা উল্টে ফেলে দিয়ে ছাই আর পোড়া সিগারেটের টুকরায় টেবিল নোংরা করে ফেললো। চৌধুরী সাহেব ‘ননসেন্স’ বলে পিওনকে গালি দিয়ে নাকে রূমাল চেপে চেম্বার থেকে বেরিয়ে গেলেন। যাবার আগে পিওনকে টেবিল পরিস্কার করে চেম্বারে এয়ার ফ্রেশনার স্প্রে করার হুকুম দিয়ে গেলেন।
এভাবে একবেলা কোন মতে কেটে গেল। কিন্তু দুপুরে লাঞ্চ ব্রেকের পর থেকে চৌধুরী সাহেবের চেহারার দিকে আর তাকানো যায় না। অফিসে আসার আগে চৌধুরী সাহেবের কোষ্ঠ পরিস্কার হয়নি। প্রতিদিন মুখে একটা জ্বলন্ত সিগারেট নিয়ে তাঁর টয়লেটে যাওয়ার অভ্যাস। আজ খালি মুখে কমোডে বসে আধা ঘণ্টার চেষ্টায় গর্জন ছাড়া বর্ষণ তেমন হয়নি। মুখটা তখন থেকেই বিস্বাদ। নাস্তা খেতে বসে রাহেলার বুড়ো গলায় আদুরে কথাবার্তা তাঁর কাছে বিষের মতো লাগছিল। জেসমিন কলেজে যাওয়ার আগে ‘বাবা, থ্যাংক ইউ ফর নট স্মোকিং’ বলে টা টা দিয়ে তাঁর মেজাজ আরও বিগড়ে দিয়ে গেছে। কিন্তু ধূমপান ছেড়ে দিয়ে মেজাজ দেখালে তো হবে না। তাই সকাল থেকে তিনি কষ্ট করে হাসিমুখেই ছিলেন। কিন্তু লাঞ্চের পর আর মেজাজ ঠিক রাখা গেল না। তিন চারটা ফাইল তিনি ছুঁড়ে ফেলে দিলেন। কম্পিউটারে কচ্ছপগতি নেটের স্পীড আর সার্ভারের ন্যাকামোপনা তাঁকে আরও তাতিয়ে দিল। মাউস খুলে তিনি ছুঁড়ে মারলেন কাদেরের দিকে। সেভেন আপের বোতল খুলে ঢক ঢক করে সবটুকু খেয়ে খালি বোতল ছুঁড়ে ফেললেন কার্পেটের ওপর। তারপর রিভলবিং চেয়ারে বসে ঢেকুর তুলতে তুলতে রাগ কমাবার চেষ্টা করতে লাগলেন তিনি।
কিন্তু ঠাণ্ডা সেভেন আপ খেয়ে চৌধুরী সাহেবের মেজাজ ঠাণ্ডা না হয়ে আরো গরম হয়ে গেল। কোল্ড ড্রিঙ্কসের নাম সেভেন আপ। অথচ এই ড্রিঙ্কস খেয়ে তাঁর ছয়টা আপ হলো আর একটা ডাউন হলো। তীব্র দুর্গন্ধে চৌধুরী সাহেব নাকে রূমাল চাপা দিলেন। মেজাজ ঠাণ্ডা হবে কীভাবে? ঠিক এই সময় তাঁর বড় ছেলে অস্ট্রেলিয়া থেকে ফোন করে বললো, ‘বাবা, তুমি নাকি সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছ? মা বললো।’
চৌধুরী সাহেব গম্ভীর মুখে বললেন, ‘হাঁ, ছেড়ে দিয়েছি। কেন, তোমার মায়ের কথা কী বিশ্বাস হয়নি? আমাকে ফোন দিয়ে সেটা জানতে হবে?’
‘না না বাবা, সে জন্যে না। আমি তোমাকে কংগ্র্যাচুলেশন জানাবার জন্যে ফোন দিয়েছি। কংগ্র্যাচুলেশন এ্যান্ড এ লট অফ থ্যাংকস,পাপা।’
চৌধুরী সাহেব আরো গম্ভীর হয়ে বললেন, ‘শোন। যে কোন একটা বলবে। হয় বাবা, না হয় পাপা। দেশে থাকতে তো কখনো আমাকে পাপা ডাকোনি। পিএইচডি করতে গেলে কী বাবাকে পাপা ডাকতে হয়?’
‘ও মাই গড! হোয়াট’স্ রং পাপা?
‘আমার সাথে ইংরেজিতে কথা বলবে না। আমি ইংরেজের বাচ্চা না। অলসো ইউ আর নট। হোয়াই আর ইউ টকিং উইথ মি ইন ইংলিশ?’
ফোন বন্ধ করে কঠিন মুখে বসে রইলেন চৌধুরী সাহেব। আব্দুল কাদের চা নিয়ে চেম্বারে ঢুকছিল। লাঞ্চের পর চা খাওয়া চৌধুরী সাহেবের অনেক দিনের অভ্যাস। চায়ের পর একটা বেনসন ধরিয়ে লম্বা সুখটান। কিন্তু আজ কাদেরের হাতে চায়ের পেয়ালা দেখে চৌধুরী সাহেবের মেজাজ বিগড়ে গেল। কষে ধমক লাগালেন তিনি, ‘চা নিয়ে যা হারামজাদা!’ কাদেরের হাত থেকে চায়ের পেয়ালা পড়ে কার্পেট ভিজে গেল।
রাতে খেতে বসে জেসমিন জিজ্ঞেস করলো, ‘তোমার কী হয়েছে বাবা? ভাইয়া ফোন দিয়ে বললো তোমার মেজাজ নাকি খুব খারাপ।’
রাহেলা শাড়ির আঁচলে চোখ মুছে বললেন, ‘ছেলেটা একা একা বিদেশে পড়ে আছে। তার ওপর বাপের কাছে যদি এমন ব্যবহার পায়.......।’
‘স্টপ! ফুল স্টপ!’ গর্জে উঠলেন চৌধুরী সাহেব, ‘ডোন্ট টক উইথ মি।’
রাহেলা কেঁদে ফেললেন। কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘অফিস থেকে আসার পর থেকে তোর বাবা আমাকে এভাবে ধমকাচ্ছে। ইংরেজিতে ধমকালে আমি কী করে বুঝবো যে আমার কী দোষ?’
জেসমিন মাকে থামতে ইশারা করে বললো, ‘বাবা, তোমার কী হয়েছে বলো তো? অফিসে কোন সমস্যা?’
‘ডোন্ট ট্রাই টু ফাইন্ড আউট প্রবলেম। অফিসে আমার কোনদিন কোন সমস্যা হয়েছে? শুনেছ কোনদিন?’
খাওয়ার পরে চৌধুরী সাহেব বেসিনে ছাড়া হাত ধোন না। আজ তিনি দিব্যি প্লেটে হাত ধুয়ে উঠে পড়লেন। জেসমিন ও রাহেলা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল তাঁর দিকে।
পরদিন চৌধুরী সাহেব মোবাইল ফোন হারিয়ে বাসায় ফিরলেন। রাহেলা স্বামীর প্যান্টের জিপার খোলা দেখে লজ্জিত মুখে ইঙ্গিত করে দেখালেন। চৌধুরী সাহেব থতমত খেয়ে জিপার লাগিয়ে মনে মনে ভাবলেন, জিপারটা কী সারাদিন এভাবেই খোলা ছিল? ছিঃ ছিঃ। ভীষণ লজ্জার কথা! রাহেলাকে বললেন, ‘তোমার ফোনটা একটু দাও তো।’
‘কেন, তোমার ফোন কী হয়েছে?’
‘ফকিরকে দিয়ে দিয়েছি। তোমাকে ফোন দিতে বললাম, দাও। ডোন্ট আসক্ এনি কোয়েশ্চেন।’
রাহেলা ভয়ে ভয়ে নিজের ফোন এনে স্বামীর হাতে দিলেন। চৌধুরী সাহেব ফোন বুক ঘাঁটতে ঘাঁটতে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার ক্রিমিনাল ভাইটার নম্বর আছে এখানে?’
‘আমার ক্রিমিনাল ভাই? কার কথা বলছ তুমি? সুলতান?’
‘হাঁ হাঁ, ঐ শয়তানটার কথাই বলছি। পেয়েছি, পেয়েছি। থামো।’ চৌধুরী সাহেব শ্যালককে কল দিয়ে স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘ওর বাপের নাম যদি আজ আমি.......হ্যালো, কে শয়তান?’
‘হাঁ, সুলতান বলছি। কে? দুলাভাই নাকি?’
‘এই হারামখোর, কথা দিয়ে যদি রাখতে না পারিস তো সেই কথা দিস কেন?’
‘কেন দুলাভাই, এ কথা বলছেন কেন?’
‘একটা স্মার্ট ফোন কিনে দিবি বলে ছয় মাস ধরে ঘোরাচ্ছিস। তোর লজ্জা করে না?’
‘তওবা, তওবা। দুলাভাই আপনি কী বলছেন? আপনার অসুখের খবর শুনে এই তো গত পরশু আপনাকে দেখতে গিয়ে স্মার্ট ফোন কিনে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আপনিই তো নিতে চাইলেন না। বললেন, একটা মুখে কথা বলার জন্য কয়টা ফোন লাগে? ছিঃ ছিঃ, ছয় মাস ধরে আপনাকে ঘোরাবো কেন? আপনার মাথা টাল হয়ে গেছে দুলাভাই। আমি কালই আপনার জন্য সবচে’ দামী ফোন কিনে নিয়ে আসছি।’
‘আমার মাথা টাল হয়ে গেছে?’ চৌধুরী সাহেব চরম অস্থির ভাবে পায়চারী করতে করতে ফোনটা নাক বরাবর ধরে চিৎকার করে বললেন, ‘লাগবে না তোর দামী ফোন। দামী ফোন তোর.......(অকথ্য শব্দ)-য়ের মধ্যে ঢোকা।’
‘দুলাভাই, শোনেন, শোনেন.......।’
চৌধুরী সাহেব লাইন কেটে দিয়ে ফোনটা স্ত্রীকে ফেরত দিয়ে বললেন, ‘আজ ড্রাইভার হারামজাদাকে রাতে ভাত দিবা না। সারা রাত না খেয়ে থাকুক। ওটা আর একটা ইবলিশ।’
‘কেন, কী হয়েছে?’
‘তোমাকে বলেছি না কোন প্রশ্ন করবা না। ভাত দিবা না বলেছি, ভাত দিবা না। ব্যস্।’
জানা গেল, ড্রাইভার সীট বেল্ট না বাঁধায় আজ ট্রাফিক সার্জেন্টকে জরিমানা দিতে হয়েছে। চৌধুরী সাহেব তখন গাড়িতেই ছিলেন। জরিমানার টাকা শোধ করে তিনি রাস্তায় পুলিশ ও লোকজনের সামনে ড্রাইভারকে চড় থাপড় মেরেছেন। ড্রাইভার এখন নিচ তলার গ্যারেজে বসে নিঃশব্দে কাঁদছে। বাড়ির দারোয়ান চাঁন মিয়া তার পিঠে হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিচ্ছে। ‘কাঁইন্দেন না ভাই, গরীবের আল্লা আছে।’
‘কে?’
‘আমি জেসমিন, বাবা।’
‘এত রাতে কী চাই?’
দুই রাত হলো চৌধুরী সাহেবের ঠিকমতো ঘুম হয় না। গভীর রাত পর্যন্ত করিডোরে চেয়ার পেতে অন্ধকারে বসে থাকেন তিনি। রাহেলা কাছে গিয়ে শোবার কথা বললে ক্ষেপে যান। বলেন, ‘আউট, আউট!’ রাহেলা ভয়ে আর কথা না বাড়িয়ে চলে যান। জেসমিনও ভয়ে ভয়ে বললো, ‘কিছু চাই না বাবা। তোমার সাথে একটু কথা বলবো।’
‘সকালে বোলো। এখন যাও। এত রাত পর্যন্ত জেগে আছো কেন? কাল কলেজ নাই?’
‘সকালে বললে হবে না বাবা। এখুনি বলা দরকার।’
চৌধুরী সাহেব কথা না বলে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইলেন। তারপর বললেন, ‘বেশ, বলো।’
জেসমিন একটা চেয়ার টেনে নিয়ে ওর বাবার মুখোমুখি বসে বললো, ‘আমার হাতের দিকে তাকাও বাবা।’
অন্ধকারে মেয়ের হাতে সাদা মতো কী একটা দেখে চৌধুরী সাহেব বললেন, ‘কী ওটা?’
জেসমিন জিনিষটা বাবার হাতে দিয়ে বললো, ‘সিগারেট। তুমি যে ব্র্যান্ড খাও, সেটা। তবে প্রতিদিন একটার বেশি না।’
চৌধুরী সাহেব আঁতকে উঠে বললেন, ‘না, না, আমি এক কথার লোক। সিগারেট খাবো না বলেছি, খাবো না। ব্যস্।’
‘আহা!’ জেসমিন চেয়ার ছেড়ে উঠে চৌধুরী সাহেবের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো, ‘তুমি এক কথার মানুষ, সেটা সবাই জানে। তুমি তো আর আগের মতো প্যাকেট প্যাকেট খাচ্ছো না। এই যে এখন যদি তুমি এখানে অন্ধকারে বসে একটা সিগারেট খাও তো কে জানতে পারবে বলো? আমরা তো আর কাউকে বলছি না। নাও ধরাও।’ জেসমিন ফস্ করে একটা ম্যাচের কাঠি জ্বালিয়ে বাবার মুখের সামনে ধরলো।
‘খাবো?’
‘হাঁ, খাবে। আমি প্রতিদিন তোমার জন্য একটা করে সিগারেট নিয়ে আসবো। তুমি রাতে এখানে অন্ধকারে বসে বসে খাবে। কেউ দেখতে পাবে না। ঠিক আছে?’
চৌধুরী সাহেব সিগারেট ধরিয়ে ভুস করে এক মুখ ধোঁয়া ছেড়ে বললেন, ‘ঠিক আছে তুই যখন বলছিস, একটা খাই।’ মেয়ের ওপর খুশি হলে চৌধুরী সাহেব ‘তুই’ সম্বোধনে কথা বলেন, অন্য সময় ‘তুমি’।
‘আচ্ছা, সকালে টয়লেটে যাবার সময় আর একটা সিগারেট খেলে কেমন হয়?’
‘মোটেই ভালো হয় না।’ জেসমিন বললো, ‘তবে তুমি যখন বলছো, তখন কাল থেকে তিন দিন সকালের জন্য আর একটা করে বরাদ্দ থাকলো। তিন দিন পর অফ। আর শোন, রাতের সিগারেটও সাত দিনের জন্য। তারপর এটাও অফ। ততদিনে তোমার নেশা অনেক কমে যাবে, বুঝেছ?’
অন্ধকারে রাহেলা স্বামীর পেছনে এসে দাঁড়িয়েছেন। জেসমিন দেখতে পেলেও চৌধুরী সাহেব টের পাননি। রাহেলা খুক খুক করে কেশে বললেন, ‘অন্ধকারে আমি কিন্তু কিছু দেখতে পাচ্ছি না। করিডোরের লাইট জ্বালিয়ে কী দেখবো বাপ-বেটি এখানে কী করছে?’
চৌধুরী সাহেব আঁতকে উঠে বললেন, ‘না, না, লাইট জ্বালিও না।’ তিনি অন্ধকারেই স্ত্রীর কাছে সিগারেট আড়াল করার জন্য তাঁর সিগারেট ধরা হাতটা চেয়ারের নিচে লুকিয়ে ফেললেন।