কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় কবি। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ১৫ ডিসেম্বর ‘নজরুল সংবর্ধনা সমিতি’ কাজী নজরুল ইসলামকে ‘জাতীয় কবি’ হিসেবে ভূষিত করে। স্বাধীন বাংলার জনগণও তাঁকে যে জাতীয় কবির মর্যাদা দিয়েছে, তাতে নিঃসন্দেহে বাঙ্গালি জাতি সমগ্র বিশ্বে মর্যাদার আসনে উন্নীত হয়েছে। নজরুল একাধারে কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, অনুবাদক, প্রাবন্ধিক, শিশুসাহিত্যিক; গীতিকার, সুরকার, সাংবাদিক, সম্পাদক, চলচ্চিত্র পরিচালনা ও অভিনেতা হলেও তাঁর প্রধান পরিচয়- তিনি কবি। বহুমাত্রিক রচনা শৈলীর মাধ্যমে নজরুল বাংলা সাহিত্যের এক অন্যতম আবিষ্কার। রবীন্দ্র সাহিত্য যুগ থেকে বের হয়ে নিজেকে সম্পূর্ণ আলাদা ভাবে প্রকাশ করার কাজে সফল যে কয়েকজন লেখক রয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম দুখু মিয়া খ্যাত নজরুল। জীবনের যে অবস্থান থেকে তিনি বাংলা সাহিত্যকে ঢেলে দিয়েছেন তা-ই আজ তাকে মহান করে তুলেছে। ঠিক সেই অবস্থানে থেকেও জীবন, সমাজ ও রাষ্টকে তিনি উপলব্ধি করেছেন অতি কাছে থেকে যা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে প্রায় বিরল। দুখের পেয়ালায় চুমুক দিয়ে তিনি অঙ্কন করেছেন রাজাসন; দুখের রাজ্যে বাস করে মনকে করেছেন বিশাল অট্টালিকা। (যেখানে আজ আশ্রয় নিতে চায় দিকভ্রান্ত সভ্যতা।) বিংশ শতকের বিশের দশকে বাংলার সংবাদ, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক এমনকি রাজনৈতিক জগতে সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের কেবল একজন কবি বা সাহিত্যিক বা গীতিকার নন, ক্রমে আজ একটি প্রতিষ্ঠানে রূপ লাভ করেছে।
কাজী নজরুল ইসলাম সাম্যের কবি। নজরুল সমসাময়িক সাহিত্য পরিসরে বিভিন্ন ধর্মের কৃষ্টি কালচার সম্পর্কে অবগত থেকে সাহিত্য চর্চা এবং সাম্যবাদের চেতনা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে ব্যবহার করতে খুব কম সাহিত্যিককেই দেখা গেছে। অথবা এটা বলা সমীচীন হবে রবীন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্র প্রভাবে প্রভাবিত কবিদের রচনায় যেখানে প্রেম প্রকৃতি ও আধ্যাত্মিকতা প্রবল ভাবে উঠে এসেছে সেখানে কাজী নজরুল ইসলাম কেবল এসবের বা ভৌগোলিক স্বরূপের রূপায়ন না করে তাঁর সাহিত্যে সমাজ রাষ্ট্র ও ভিন্ন ভিন্ন ধর্মীয় রীতিনীতিকে গভিরভাবে উপলব্দি করেছেন। আর সাহিত্যে অতিযতেœর সহিত স্থান করে দিয়েছেন সেসবের মূল উপাদান। তাতে করে তাঁর বিশ্বাসকে সুনির্দিষ্ট করে না বলা গেলেও প্রত্যেকটি ধর্মের মূল সুর যে কি ছিল তা সহজেই অনুমান করা যায়। তিনি যখন মুসলিম ঐহিত্য নিয়ে কোন কিছু রচনা করেছেন ঠিক সে সময়েই অন্যত্র লিখেছেন হিন্দু ঐহিত্য নিয়ে। অর্থাৎ এই মহাদেশের হিন্দু এবং মুসলিম এই দুটি ধর্মের মেল বন্ধন রচনা করার ক্ষেত্রে নজরুলের এই ভিন্নতর প্রচেষ্টাই তাঁর সাহিত্যের অন্যতম মূল সূর। সাহিত্যের আদি যুগ থেকে হিন্দু মুসলিম মিলনের কথা যে কেবল নজরুলের মাধ্যমেই এসেছে তা নয়। তাঁর পূর্বেও বহু সাহিত্যিকের মাধ্যমে (মীর মশাররফ হোসেন এর প্রবন্ধ ‘গো জীবন’, কায়কোবাদ এর মহাকাব্য ‘মহাশ্মশান’, শ্যামা-সঙ্গীত, বৈষ্ণব-পদ ও রচিত হয়েছে) এসব বিষয় এসেছে তবে নজরুল ইসলাম সাম্যবাদের মাধ্যমে তাঁর এই দাবিকেই যেভাবে প্রধান আসনে স্থান দিয়েছেন সেভাবে কখনোই তা প্রাধান্যতা পায় নি।
ব্যক্তিজীবনের সাথে সাহিত্যিক জীবনের যে মেল বন্ধন কবি সৃষ্টি করেছেন তাতে করেই তিনি কালাতিক্রমে হয়ে উঠেছেন বাংলা সাহিত্যের এক সাম্যের কবি। নজরুল যুগে এই বাংলায় হিন্দু বা মুসলিম উভয় ধর্মের মধ্যেই কিছু কুসংস্কার ধর্মীয় রীতিনীতির মতো জটলা পাকিয়ে রেখেছিল। মাঝে মাঝে সেসব সমাজ নির্মিত নিয়ম কানুনই সমাজের সৃষ্টিশীলতাকে বাধা দিত। কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর রচানার মাধ্যমে ধর্মীয় সংকীর্ণতা ও কুসংস্কার থেকে যেমন সমাজকে মুক্ত করতে চেয়েছেন তেমনি সে প্রচেষ্টা থেকে নিজেকে পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও কখনোই তিনি আলাদা ভাবে চিন্তা করেন নি। তাই মুসলমান হয়ে তিনি বিয়ে করেছেন হিন্দু নারীকে। প্রচল ভেঙে ছেলে মেয়েদের নামেও নিয়ে এসেছেন ধর্মীয় মিশ্রণ। নাম রেখেছেন- কৃষ্ণ মুহম্মদ, অরিন্দম খালেদ, কাজী সব্যসাচী, কাজী অনিরুদ্ধ।
লক্ষ্য করলে দেখা যাবে বিংশ শতাব্দির বিশ কিংবা অব্যবহিত পূর্বের দশকের সাহিত্যিকদের রচনায় নিজস্ব ধর্মীয় উপাদান খুব যতেœর সহিত স্থান পেয়েছে। যার সঙ্গে সঙ্গে তাদেরও বিশ্বাসও। এর ফলে সা¤প্রদায়িক বন্ধন এই উপমহাদেশে একটা অলীক বিষয় হিসেবেই স্থান পেয়েছিল মানুষের চিন্তা চেতনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এগুলোকে সা¤প্রদায়িক সংকীর্ণতা ও ঐতিহাসিক সচেতনতার প্রতি উদাসীনতা যা-ই বলা হোক না কেন তাঁদের উদার মনোভাবের অনুপস্থিতির ফলে বর্তমান যুগ যে অতি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট জানা থেকে বঞ্ছিত হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও এই অভিযোগ থেকে পার পাবেনা না। ঠিক এই বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যেও অবহেলা বা উদারতা ছিল। তাঁর রচনায় যেভাবে হিন্দু সংস্কৃতির উপাদান প্রবলভাবে স্থান পেয়েছে সেখানে অন্য কোন ধর্মীয় উপাদান প্রায় অনুপুস্থিত বলা যেতে পারে। রবীন্দ্রনাথও ইচ্ছা করলে এই মহাদেশে একটি গভীর একতা প্রতিষ্ঠা করতে পারতেন যা বর্তমানে ধর্মের ভিন্নতার কারণে প্রায় ম্রিয়মান। তবে ১৯২৬ সালে কলকাতায় সা¤প্রদায়িক দাঙ্গার প্রতিবাদে কাজী নজরুল যেমন ‘কাÐারী হুঁশিয়ার’ নামক রণসঙ্গীত রচনা করেছিলেন সেভাবে ১৯০৩ সালের ১৬ অক্টোবর বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনেও রবীন্দ্রনাথ প্রত্যক্ষ ভাবে ভূমিকা রেখেছেন। শোভাযাত্রা, বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে কবিগুরু সে আন্দোলনে সকলের সাথে স্বতঃস্ফুর্তভাবে অংশ গ্রহণ করেছেন। হিন্দু-মুসলমান সকলেই সেই আন্দোলনে সোচ্ছার হয়ে উঠেছিলেন। অন্য এক সূত্র থেকে পাওয়া যায় ঠিক সেই তারিখেই হিন্দু স¤প্রদায়ের লোকেরা জাত ভেদ ভুলে সকলের হাতে রাখি পরিয়ে দিচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে রবীন্দ্রনাথও কলকাতার নাখোদা মসজিদে গিয়ে উপস্থিত মুসলমানদের হাতে রাখি পরিয়ে দেবার লক্ষ্যে বেরিয়ে পড়েছিলেন। তাঁকে যেতে দেওয়া হয় নি। রাখি বন্ধনের উদ্দেশ্যে কবিগুরু যদি ওই কাজটি সম্পাদন করতে পারতেন তাহলে বোধকরি হিন্দু মুসলিম এর এই চিরকালীন (অনেকে ভাবতে পারেন যে বর্তমানে এদেশে কোন সা¤প্রদায়িক সমস্যা নেই। তবে সা¤প্রতিক রাজনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিত তা অতিক্রম করেছে। বর্তমান বিরোধী দল যখন চার দলের সমর্থন পেয়ে ২০০১ সালে সরকার গঠন করেন ঠিক সেই সময়ে সারা বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার তার জ্বলন্ত প্রমান হতে পারে। কিংবা বাবরি মসজিদে হিন্দুদের হামলা অত:পর সারা বাংলাদেশে মন্দিরের উপর মুসলমানদের একযোগে উৎসবের সাথে চড়াও হয়ে উঠা।) দাঙ্গার অবসান হলেও হতে পারতো আবার না-ও হতো পারতো। কবিগুরুর এহেন উদ্যোগ সা¤প্রদায়িক জটিলতা মুক্তির লক্ষ্যে অন্যতম উদাহরণ বলা যেতে পারে।
সাম্য শব্দের অর্থ সমতা। বিভিন্ন ধর্মের বিষয়গুলোকে কবি যেভাবে নিজের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান দিয়ে তাঁর সাহিত্যে ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করেছেন কেবল সেই জন্য তাঁকে সাম্যের কবি হিসেবে চিন্তা করা বাতুলতা হবে। প্রত্যেকটি ধর্মেরই নিজস্ব ভিত্তি রয়েছে। নিজস্ব বিশ্বাস ও নিয়মনীতির উপরে প্রতিষ্ঠিত সবগুলো ধর্মকে একটি Plat form এ নিয়ে আসা যে শূন্য হাতে পর্বতারোহনের মতো তা বর্তমান প্রেক্ষাপটে খুবই স্পষ্ট। যেখানে-
হিন্দু ধর্মের রয়েছে তেত্রিশ লক্ষ দেব-দেবী। প্রত্যেকটি দেবতাই যাদের কাছে সমান পূজনীয় ও ক্ষমতাধর পক্ষান্তরে মুসলিম স¤প্রদায় বিশ্বাস করে ‘কালেমা শাহাদাত আসহাদু আল্লা-ইলাহা ইল্লালাহু লা শরিকালাহু..।’ ইসলামের মূল নীতিগুলোর সাথে হযরত ঈসা আ. এর অনুসারী খ্রিস্টান স¤প্রদায়ের কিছু কিছু দিক দিয়ে মিল থাকলেও কয়েকটি বড় রকমের মতভেদ এই দুটি ধর্মকে আলাদা করে রেখেছে। খ্রিস্টানদের বিশ্বাস আদি পিতা হযরত ইব্রাহিম আ.’র ছেলে হযরত ইসহাক আ. কে কুরবানির জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল আর ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা বিশ্বাস করে দ্বিতীয় স্ত্রী বিবি হাজেরা আ.’র ছেলে হযর ইসমাইল আ.'কে। এবং রোজ কেয়ামতে ইসলামের অনুসারীদের সুপারিশকারী হবেন হযরত মুহাম্মদ (সা) আর খ্রিস্টানদের হযরত ঈসা (আ যাকে তারা যিশু খ্রিষ্ট বলে সম্ভোধন করে।
এভাবে প্রতিটি ধর্মের ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তি খুবই কঠিন এবং প্রত্যেকের কাছে তা যুক্তিযুক্তও। এসব যুক্তির বিশ্লেষণ আপাতত দরকার নেই। অবশ্য নজরুল ইসলাম তাদের এই যুক্তিগুলোকে ভেঙ্গে একটি ধর্মের মধ্যে নিয়ে আসার জন্যও কোন লেখার মাধ্যমে বলেননি। তিনি গেয়েছেন সাম্যের গান-
গাহি সাম্যের গান-
যেখানে আসিয়া এক হ'য়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান,
যেখানে মিশেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম-ক্রীশ্চান।
গাহি সাম্যের গান!
তাই বিভিন্ন ধর্ম সম্পর্কে তাঁর নিজস্ব কোন মতবাদ প্রয়োগ পরিলক্ষিত না হয়ে বরং প্রকাশিত হয় সকল ধর্মের স্তুতিগান। যার চিহ্ন পাওয়া যায় তাঁর ভিন্ন ভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে রচিত সাহিত্য কর্মের মাঝে।
তওফিক দাও খোদা ইসলামে
মুসলিম জাঁহা পুন হোক আবাদ।
দাও সেই হারানো সুলতানত্
দাও সেই বাহু, সেই দিল আজাদ।
ইসলামকে তার হারানো ঐতিহ্যে ফিরিয়ে নিয়ে যাবার জন্য বা ইসলামের মহিমা বর্ণনা করে তাঁর রচনা সবচেয়ে বেশী, তিনি গজল, হামদ নাথ, কেরাত, ইসলামী গান এবং বহু কবিতা ও গদ্য লিখেছেন এ বিষয়ে। তারপরেও তিনি যখন হিন্দু দেব-দেবীর স্তুতি গেয়েছেন তখন সেই দেব-দেবী’রাই তাঁর কাছে মহৎরূপে দেখা দিয়েছে। সাম্য চিন্তার ফলে তাঁর বিশ্বাসের ভিত্তি কোন স্থানে তা বিচার করা প্রায় দুরুহ। কখনো কখনো তিনি মহালক্ষী কল্যাণদাত্রীর কাছে রাষ্ট্রীয় শক্তি কামনা করে সকল প্রকার অতৃপ্তি, অশান্তি, বিরোধ, হিংসা, দ্বেষ ইত্যাদি অকল্যান দুর করার বিনতি আর্জি করেছেন-
নমো অনন্ত কল্যাণদাত্রী।...
সহস্রভুজা ভীতজনতারিণী জননী জগৎ-ধাত্রী
দীনতা ভীরুতা লাজ গ্লানি ঘুচাও
দলন কর মা লোভ-দানবে।
রূপ দাও, জয় দাও, যশ দাও, মান দাও
দেবতা কর ভীরু মানবে।
আবার অন্যত্র খ্রীষ্টের কণ্টক মুকুট শোভা পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করেছেন। বিলিয়ে দিয়েছেন তাঁর সকল অযোগ্যতা এবং দারিদ্রে মহান এই মহামানব এর স্তুতি করে লিখেছেন-
হে দারিদ্র, তুমি মোরে ক'রেছ মহান।
তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রীষ্টের সম্মান
কণ্টক-মুকুট শোভা। -দিয়াছ, তাপস,
অসঙ্কোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস;
কাজী নজরুল ইসলাম এর রচনায় সকল ধর্মের স্তুতিগান আসলেও ইসলাম প্রতিষ্ঠায় তাঁর উদাত্ত আহবান সকলকে নাড়া দেয়। বেশ কিছু অভিভাষণে তিনি ইসলামের প্রসার ও ঐতিহ্যকে বাংলায় প্রতিষ্ঠার জন্য সরাসরি তরুন, নারী পুরুষ সকলকে আহবান করেছেন। তিনি তরুনদের আহবান করেছেন- “... তোমাদের কর্তব্য সম্মিলিত হওয়া। ... আজ তোমাদের সে একতা নেই- হিংসায় ঈর্ষায়, কলহে, ঐক্যহীন বিচ্ছিন্ন। দেয়ালের পর দেয়াল তুলে আমরা ভেদ-বিভেদের জিন্দানখানায় সৃষ্টি করেছি; কত তার নাম- সিয়া, সুন্নি, শেখ, সৈয়দ, মোঘল, পাঠান, হানাফি, শাফি, হাম্বলি, মালেকি, লা-মজহাবি, ওহাবি ও আরও কত শত দল। এই শত দলকে একটি বোঁটায়, একটি মৃণালের বন্ধনে বাঁধতে পার তোমরাই।” সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য নজরুল তাঁর সাহিত্য নিয়ে যেভাবে আন্দোলন করেছেন তার পূর্ববর্তীদের মধ্যে সে চেতনা প্রবলভাবে কাজ না করলেও তাঁর প্রতি ভিন্নমত যে ছিল না তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই দেশের রাজনৈতিক জটিলতার সময় রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল দুজনেরই অবদান উল্লেখযোগ্য। তাদেরকে নিয়ে সস্তা রাজনৈতিক টানাটানি ও ধর্মীয় বিভেদের শেষ নেই। একদল রবীন্দ্রনাথকে হিন্দু ধর্মের এবং কাজী নজরুল ইসলাম কে মুসলমানদের বলে আলাদা করে রেখেছেন। অথচ তাঁরা নিজেরা কখনোই এই বন্ধনে আবদ্ধ থাকেন নি। ধর্মীয় দৈনতা থেকে সাহিত্যের দুই মহান প্রতিষ্ঠানকে মুক্ত করার কোন বিকল্প নেই। একদল মৌলবাদি যেভাবে নজরুলকে একটি নির্দিষ্ট সা¤প্রদায়িক বন্ধনে আবদ্ধ করে রেখেছেন তার ফলে নজরুলের সাম্য চিন্তার বেঘাত ঘটে এবং জাতিয় সংকটের সৃষ্টি হয়। কাজী নজরুল ইসলাম এই দ্বন্ধের অবসান করেছেন। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ১৫ ডিসেম্বর ‘নজরুল সংবর্ধনা সমিতি’ আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ভাষণে বলেন- ‘যারা আমার নামে অভিযোগ করে তাঁদের মতো হালুম না বলে তাঁদেরকে অনুরোধ- আকাশের পাখিকে, বনের ফুলকে, গানের কবিকে তাঁরা যেন সকলের করে দেখেন। আমি এই দেশে এই সমাজে জন্মেছি বলেই শুধু এই দেশেরই এই সমাজেরই নই। আমি সকল দেশের, সকল মানুষের।’
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ:
১. প্রবন্ধ ‘পরাধীন যুগের স্বাধীন কবি’- রফিকুল ইসলাম, দৈনিক সমকাল ১ সেপ্টেম্বর ২০০৬ (কালের খেয়া)
২. রবিজীবনী-প্রশান্তকুমার পাল, আনন্দ পাবলিশার্স প্রা: লিমিটেড। পঞ্চম খÐ-২৬৯।
৩. উপন্যাস ‘অলীক মানুষ’- সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ
৪. সাম্যবাদী
৫. ইসলামী গান- গুলবাগিচা
৬. দেবীস্তুতি; নজরুল-রচনাবলী, তৃতীয় খÐ- বাংলা একাডেমী, পৃষ্ঠা-১৯৫
৭. সিন্ধু-হিল্লোল
৮. ১৩৪৩ সালে ফরিদপুর জেলা মুসলিম ছাত্র সম্মিলনীতে প্রদত্ত সভাপতির অভিভাষণ- ‘বাংলার মুসলিমকে বাচাও’। নজরুল রচনাবলী , চতুর্থ খÐ- বাংলা একাডেমী, পৃষ্ঠা-১০৯
৯. কাজী নজরুল ইসলাম জন্মতবার্ষিকী স্মারকগ্রন্থ- ভূমিকা, পৃষ্ঠা-৩৭, অ্যাডর্ন পাবলিশার্স, ঢাকা।
কাজী নজরুল ইসলাম: সাম্যচিন্তা ও কিছুুুু বিতর্ক
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর


আলোচিত ব্লগ
স্যাটায়ার পোস্ট : " মুজিব " ছবিতে অভিনয় করেও জায়েদ খান যে কারণে বেঁচে যেতে পারেন !
ইন্টেরিম সরকার দেশ ব্যাপী মারাত্মক সংস্কার শুরু করেছে। সে সংস্কারের অংশ হিসাবে ' মুজিব : একটি জাতির রূপকার ' ছবির সাথে সম্পৃক্ত লোকজনকে সাইজ করতে মাঠে নেমেছে পুলিশ।... ...বাকিটুকু পড়ুন
৩০ লক্ষ মানুষকে অতিদারিদ্র হওয়া থেকে রক্ষা করতে যা করা প্রয়োজন
বিশ্বব্যাংক আশংকা করছে এই বছরে বাংলাদেশে আরো ৩০ লক্ষ মানুষ অতিদরিদ্র হবে।
বাংলাদেশে আগামী ছয় মাসের মধ্যে ৩০ লাখ মানুষকে অতিদরিদ্র হওয়া থেকে রক্ষা করতে হলে দ্রুত, কার্যকর... ...বাকিটুকু পড়ুন
Attack on Titan দেখার অনুভূতি
স্পয়লার ফ্রি লেখা। পড়তে পারেন।
Attack on Titan এনিমে সিরিজটা দেখে শেষ করেছি মাসদেড়েক আগে। এইটা যখন শেষ করেছি তখন মাথার মধ্যে এমন অবস্থা ছিলো যে এইটা নিয়ে লেখার মত অবস্থায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাদিসের মান নির্ধারণের প্রচলিত পদ্ধতি সঠিক নয়
সূরাঃ ২ বাকারা, ২৮৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৮৬। আল্লাহ কারো উপর এমন কোন কষ্ট দায়ক দায়িত্ব অর্পণ করেন না যা তার সাধ্যাতীত।সে ভাল যা উপার্জন করে তার প্রতিফল তার।... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। দেশে স্টারলিংকের ইন্টারনেটের সর্বনিম্ন মাসিক খরচ ৪২০০ টাকা
অবশেষে বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করেছে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক। মঙ্গলবার সকালে যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবের ইলন মাস্কের মালিকানাধীন এই প্রতিষ্ঠানটি তাদের অফিশিয়াল এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেলেও একই... ...বাকিটুকু পড়ুন