চেয়ারম্যান অংলাচিন মারমা
চেয়ারম্যান আমাকে তার ইউনিয়নের চারটা গ্রাম- তম্বু পাড়া, নোয়া পাড়া, শিল ছড়ি এবং কুকি মারাতে কাজ করার অনুমতি প্রদান করেন। এবং মেম্বারদেরকে অবহিত করেন। মেম্বাররাও সানন্দে রাজী হন। গ্রামগুলোর তিনটাই মারমা এবং তংচঙ্গা পাড়া। আর শিলছড়ি গ্রামটাতে মারমা এবং বাঙ্গালীরা একত্রে বাস করে। এরপর আসে হেডম্যানকে রাজী করানোর পালা। সব শুনে হেডম্যান রাজী হন এবং গ্রামের কারবারীদের সাথে কথা বলতে বলেন।
হেডম্যানঃ ১৯০০ সনের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধির ৪১ নং বিধিমতে হেডম্যান তাঁর জুম চাষ নিয়ন্ত্রণ করবেন। ৪২ নং বিধিমতে তাঁর মৌজায় বসবাসকারী জুমিয়া জমির মালিক তথা জুম চাষীদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করবেন। তিনি পরিবার প্রধানের নাম ও সদস্য সংখ্যা, খাজনা পরিশোধকারী কিংবা খাজনা পরিশোধ অব্যাহতি প্রাপ্ত নতুন বা পুরাতন পরিবার ইত্যাদি সংক্রামত্ম তথ্য সম্বলিত একটি জুম তৌজি (জুমিয়া তথা জুম চাষীর তালিকা) প্রস্ত্তত করে প্রত্যেক বছর ১লা জুনের আগে সার্কেল চীফ তথা রাজার কাছে দাখিল ডেপুটি কমিশনারের কাছে রাজাকে দাখিল করতে হবে। হেডম্যানের (খাজনার) দাবীর অমত্মতঃ ৫০% রাজপূণ্যহর দিন এবং অবশিষ্ট অংশ পরবর্তী বছরের ১লা জানুয়ারীর মধ্যে সার্কেল চীফের কাছে পরিশোধ করবেন। হেডম্যান যদি মনে করেন যে, কোনো প্রজা জুম খাজনা প্রদান থেকে রেহাই পাবার জন্য অন্যত্র পালিয়ে যাবার প্রস্ত্ততি নিচ্ছে, তাহলে তিনি সেই চীফ ও ডেপুটি কমিশনারকে জানাবেন। যদি কোনো হেডম্যান অনুরূপ ব্যবস্থা্ গ্রহণে অবহেলা করেন, তাহলে সেই প্রজার অনাদায়ী খাজনার জন্য তিনি দায়ী হবেন। ৪৩ বিধিমতে তিনি ঘাস (শনখোলা) ও গর্জনখোলার খাজনা এবং ৪৫ (বি) বিধিমতে গোচারণ ভূমির ট্যাক্স আদায় করবেন।
হেডম্যানের সাথে কথা বলছি আমি
কারবারীঃ কারবারী নামক ব্যাক্তিটি আসলে একটা গ্রামের মাথা স্বরুপ। তিনি মূলত গ্রামের ছোট খাট ঝগড়া বিবাদ মিমাংসা, বিয়ে, পুজা এবং অন্যান্য বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহন করে থাকেন। কোন সমস্যা হলেই কমিউনিটির লোকজন তার কাছে আসেন। পরামর্শ গ্রহন করেন।
নোয়া পাড়া গ্রামের কারবারীর সাথে কথা বলছেন আমার একজন গবেষক
চারটা গ্রামের কারবারীদেরকে বুঝিয়ে আমরা রাজী করাতে সক্ষম হই। কিন্তু সেটার জন্য আমাকে প্রতিটা গ্রামে অনেক বেশি সময় দিতে হয়। তাদেরকে বোঝাতে হয় আমাদের গবেষনার উদ্দ্যেশ্য। কি করব আমরা। কেন করব ইত্যাদি ইত্যাদি। একটা বিষয় আমি লক্ষ্য করেছি কখনই কারবারীরা একা একা কোন সিদ্ধান্ত নিলেন না। তারা গ্রামের আর দশ জন মাথা জাতীয় লোকেদের সাথে আলোচনা করে তারপর সিদ্ধান্ত নেন আমরা আদৌ কাজ করতে পারব কিনা। কিন্তু আমি সকলকেই বোঝাতে সক্ষম হই আমার উদ্দ্যেশ্য।
যেহেতু আমরা রাঙ্গামাটি শহরে থাকতাম তাই কাপ্তাই উপজেলাটা জেলা সদর থেকে বেশ দূরে ছিল এই উপজেলা। প্রতিদিন দীর্ঘ পথ সি এন জি তে করে যেতে হত আমাকে। আর সাথে থাকত অপহরনের ভয়। গ্রামে যেতে গিয়ে আমি আকাবাকা রাস্তা আর রাস্তার পাশের পাহার গুলোর দিকে শুধু মন্ত্রমুগ্ধের মত চেয়ে থাকতাম।
(চলবে)
রাঙ্গামাটি ছবি ব্লগ (পর্ব-এক)
রাঙ্গামাটি ছবি ব্লগ (পর্ব- দুই)