
মুভিঃ OMG
অস্ট্রেলিয়ার The Man Who Sued God এর রিমেক মুভি।
Directed by: Umesh Shukla
Produced by: Akshay Kumar
সিনেমার শুরুতেই এক লোককে দেখা যায় যার মা মারা গিয়েছেন। এবং তিনি বলছিলেন যে তার মার শেষ ইচ্ছা ছিল কিছু মানুষকে তীর্থযাত্রা করানো। এজন্য তিনি বেশ কিছু মানুষকে তীর্থ যাত্রার দাওয়াত দেন তার নিজের খরচে যাতে তার মার আত্মার শান্তি হয়। সিনেমার নায়ক কানজি (পরেশ রাওয়াল) এর দোকানের কর্মচারী (মাদে) ও সেখানে দাওয়াত পান। তাকেও তীর্থ যাত্রার নিমন্ত্রন দেন সেই লোকের স্ত্রী। সিনেমার নায়ক কানজি ভগবানের মুর্তি চড়া দামে বিক্রি, কলের জলকে গঙ্গা জল হিসেবে বিক্রি করতেন। অনেক বড় দোকান তার। সে তার কর্মচারীকে তীর্থ যাত্রায় যাওয়ার ছুটি দিতে চায় না। পরে যখন সে দেখে যে তার দোকানে কিছু মূর্তি কম আছে তখন সে সিদ্ধান্ত নেয় যে সেও যাবে তীর্থযাত্রায়। সে যে তীর্থযাত্রায় যাচ্ছে এটা গাড়িতে কেউ বিশ্বাস করতে চায় না। সবাই গাড়ি থেকে নেমে যখন মন্দিরে যায় তখন সে যায় মূর্তি কিনতে। মূর্তির দোকানদার কানজির মূর্তি গুলোকে সম্বোধন এবং বোনাস চাওয়া দেখে চমকে যায়। এরপর তিনি ফেরার পথে গঙ্গাজলের ঘটিতে মদ ভরে নেন এবং বাসে ঘটিতে করে মদ খাওয়া শুরু করেন। তার মদের গন্ধে সকলে বুঝতে পারেন যে ঘটিতে মদ আছে এবং সকলে তা নিয়ে নিয়ে খেতে থাকেন। কাহিনীতে ধীরে ধীরে কানজী লালকে একজন নাস্তিক হিসেবে দেখানো শুরু করা হয়, যার কিনা ধর্মের কোন বিষয়ের প্রতি সেভাবে কোন বিশ্বাস থাকেনা। যে কিনা মানুষকে মিথ্যা কথা বলে ২৫০ টাকার মূর্তি বাদ্রিনাথের মন্দির ফেড়ে বের হয়েছে এমন কথা বলে চড়া দামে বিক্রি করত। সে বলে এই যে ভগবান এটা তোমাদের মত লোকের ভ্রম। যতদিন মানুষজন এই মূর্তিগুলোকে খেলনা না মানা শুরু করবে, ততদিন তার ব্যবসা চলতে থাকবে। সে তার দোকানে টিভিতে দেখে যে, তার ছেলে গোবিন্দ সেজে মটকা ফোড়াতে (এক ধরনের ধর্মীয় আচার) অংশ নেয়, এতে করে তার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। সে যায় তার ছেলেকে সেখান থেকে নিয়ে আসতে। যাওয়ার সময় তার পাশের এক দোকানদার তাকে, তার দোকানের খেয়াল রাখতে বলে কারন সে এক মাসের জন্য হজে যাচ্ছে। সে তাকে হজের খরচ না করে, তার দোকানের মেরামত করতে বলে। বলে যে দুইজন লোক তোমার দোকানের ভেতর কাশি দিলে ভেঙ্গে পড়বে। মোটকা ফোড় তথা দই হাড়ির অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিদ্ধেশ্বর মহারাজ নামের একজন ধর্মগুরু। কানজি সেখানে গিয়ে দেখেন অনেক ভীড়, তাই তিনি মাইকের মাউথফিস হাতে নিয়ে সবাইকে শান্ত হতে বলেন এবং বলেন যে সিদ্ধেশ্বর মহারাজ একটু আগে বলেছেন যে ভগবান কৃষ্ণ আজকে ১ ঘন্টার জন্য জায়গায় জায়গায় তার ভক্তদের হাতে দুধ আর মাখন খাবেন। সিদ্ধেশ্বর মহারাজ অবেক হয়ে যান, এই ভেবে যে তিনি এটা কখন বললেন। সিদ্ধেশ্বর মহারাজ মাইকে কিছু বলার আগেই তার মাইকের তার খুলে দেয়া হয় এবং মানুষ জন ছোটেন ভগবানের মূর্তিকে দুধ আর মাখন খাওয়াতে। ভীর কমলে কানজী লাল তার সন্তানকে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হলে সিদ্ধেশ্বর মহারাজ তাকে বলেন যে ভগবান তোকে তোর এই পাপের জন্য নিজেই শাস্তি দিবে। কানজী সিদ্ধেশ্বর মহারাজকে বলেন যে ভগবানের ভয় অন্য কাউকে দেখাবেন মহারাজ, দেখি আপনার ভগবান কি করে। ঠিক সে সময় আকাশ কালো হয়ে আসে। আর এখান থেকেই হয় কাহিনীর শুরু। টিভি চ্যানেলে দেখানো শুরু হয় যে, সারা দেশে মানুষ জন ভগবানের মূর্তিকে দই মাখন খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন। টিভিতে এসব দেখে কানজি খুব মজা পায়। কিন্তু তার একটু পরেই আরেকটা খবর দেখায় টিভিতে যে মাত্র ৩.৫ রিখটার স্কেলের ভূম্মিকম্পে চোর বাজারে কানজি লালের দোকান ভেঙ্গে যায়। সবাই খুব অবাক হয় যে এই মার্কেটে আরো অনেক পুরাতন দোকান থাকার পর ও কেন এই সামান্য ভূমিকম্পে কানজি লালের দোকান ভেঙ্গে পড়ল। তার স্ত্রী তার নাস্তিকতার কারনে এমন হয়েছে বলে দাবী করেন। দোকানে গিয়ে দেখেন কানজি তার দোকানের ৪০ লাখ টাকার মাল সব শেষ হয়ে যায় কিন্তু তাকে বিন্দু মাত্র বিচলিত দেখা যায় না। কারন তার দোকানের নামে ইন্সুরেন্স করা ছিল। কিন্তু পরে তিনি যখন ইন্সুরেন্স কোম্পানির কাছে যান তখন সেখানকার কর্মকর্তা তাকে বলেন যে আপনি এই ক্ষতি পূরন পাবেন না কারন আমাদের টার্মস এন্ড কন্ডিশন এক্ট অফ গড এর আমি তো ভগবানে মানি ই না। এভাবে সেখানে সেই কর্মকর্তার সাথে তার হাতাহাতি হয়। সে কর্মকর্তা তাকে বলে যে আপনার টাকা আপনি ভগবানের কাছ থেকে নেন। সে সিদ্ধান্ত নেয় যে সে ভগবানের উপর কেস করবে। সে যখন কোর্টে যায় এবং লয়ার রা শোনেন যে সে ভগবানের উপর কেস করতে চাচ্ছেন তখন সকলে তাকে পাগল ভাবে। কেউ তাকে কোন ভাবে সাহাজ্য করে না। পরে তিনি হানিফ নামের একজন মুসলমান পঙ্গু লয়ারের বাড়িতে যান যিনি তার পক্ষে লিগাল নোটিস তৈরি করে দেন। এবং এই নোটিস গুলো পাঠানো শুরু হয় মন্দিরে, মসজিদে, গীর্জায়। তার এই কেসে মানুষজন ফেটে পরে। তারা মিছিল দেয়া শুরু করে। সিদ্ধেশ্বর মহারাজ এর থেকেও বড় একজন স্বামীজী কে অনেক উদ্বীগ্ন দেখা যায় এই বিষয়ে। তিনি শহরের সব থেকে বড় লয়ারের সাথে পরামর্শ শুরু করেন। এখানে ধর্মগুরুদের একটা গ্রুপ দেখায় এবং সেখানে একজনের পর আরেকজনের অবস্থান চিহ্নিত করা। গুরু দেব সিদ্ধান্ত নেন যে তারা ভগবানের হয়ে কোর্টে যাবেন। কানজি লালের কেস যেহেতু কেউ লড়তে চাচ্ছিলেন না তাই তাকে নিজেকেই সেটা লড়তে হয়। সেখানে তার প্রতিপক্ষের উকিল সেই কেস বন্ধ করে দিতে আর্জি জানালে কানজি লাল বলেন আমার তো এই কেসে পড়ার ইচ্ছাই নেই শুধু ইন্সুরেন্স ওয়ালারা বলছে যে ভগবান তার দোকান ভাংছে তাই আমার কোর্টে আসা। সিদ্ধেশ্বর মহারাজ সেখানে তাকে বলেন যে ভগবান তার দোকান কেন ভাংবে। কানজী লাল আবারো বলেন আমি তো সেটাই বলছি যে ভগবান আমার দোকান কেন ভাংবে? আপনি এই ইন্সুরেন্স ওয়ালাদের কাছ থেকে আমার পয়সা নিয়ে দেন। আবার বিপক্ষের লয়ার বলেন যে ইন্সুরেন্সের টার্মস এন্ড কন্ডিশনে তো এই কথা লেখা নাই তাহলে তারা কেন আপনাকে টাকা দিবে তখন কানজি লাল বলেন যে তাহলে আপনাদের ভগবানকে ডাকেন আমি তার কাছ থেকে টাকা নিব। সিদ্ধেশ্বর মহারাজ তাকে বলেন যে, তার মত নাস্তিকের কথায় ভগবান কেন আসবে? সে উত্তরে বলেন ভগবান থাকলে না আসবে। তিনি সেখানে ভগবানের সেবা করাকে বিজনেস হিসেবে অবিহিত করেন। তিনি কোন ধর্ম স্থলে গেলে কোথায় কোথায় টাকা দিতে হয় তা তুলে ধরেন। বিপক্ষের উকিল তাকে বলেন ইন্সুরেন্স ওয়ালা আপনাকে টাকা দিলেও মন্দির আপনাকে কেন টাকা দিবে? উত্তরে কানজি বলেন কারন আমি মন্দিরেও প্রিমিয়াম ভরেছি। সেখানে আমি আমার পরিবারের শান্তির জন্যই টাকা ভরেছিলাম। এভাবে নানা জটিলতায় তার মামলা চলতে থাকে। একপর্যায়ে তার উপর হামলা হয় এবং ভগবান কৃষ্ণ মানুষরুপে এসে তাকে বাচায়। তার পরিবার ও নানা সমস্যায় পড়তে থাকে। সি ভগবান তার ঘরে থাকা শূরু করে এই বলে যে তার ঘর যার কাছে বন্ধক ছিল তার কাছে থেকে সে তা কিনে নিয়েছে। এবং তাকে নানা ভাবে বিরক্ত করা শুরু করে। এদিকে লয়ার হানিফ কোরেশির ঘরে বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষজন আসা শুরু করে যাদের ইন্সুরেন্স কোম্পানিগুলোর কাছে এক্ট অফ গডের কারনে টাকা আটকে আছে। হানিফ কোরেশি সকলের লিগাল নোটিশ তৈরি করা শুরু করেন। এবং সেগুলা পাঠাতে থাকেন মন্দির, মসজিদ, গীর্জার এগুলোর ঠিকানায়। এমন ৪০০ কোটির ক্লেইম জমা পরে। ইন্সুরেন্স কোম্পানি গুলো গডের অস্তিত্ব আছে এটা প্রমান করার জন্য উঠে পরে লাগেন। কোর্টে এবার হিন্দু ধর্ম গুরুদের সাথে মৌলভী এবং ফাদার ও এসে হাজির হন। কানজীর ও কিছু ভক্ত তৈরি হওয়া শুরু করে। ধর্ম গুরুরা চিন্তায় পরে যান। তারা আমরন অনশনে বসেন। কানজির ঘরে বসা ভগবান তাকে বুদ্ধি দেয় তাকে মানুষের সামনে গিয়ে কথা বলার, এবং ধর্ম গুরুদের ব্যবসার গোমর ফাস করার। কানজী মিডিয়াতে যায়। সেখানে গিয়ে তিনির শ্রদ্ধার কিভাবে ধান্দা হয় তা বলেন। তার কথায় মানুষজন প্রভাবিত হতে থাকে। কোর্টে তিনি ধর্মের নামে ধান্দা এবং অপচয় এই বিষয় গুলো দেখাতে থাকেন। কোর্ট তাকে রাইটিং প্রুফ করতে বলে যে সেই ভূমিকম্প ভগবানই করেছে। সে প্রুফ দিতে পারে না। কোর্ট তাকে এক মাসের সময় দেয় প্রুফ দেয়ার জন্য। তার ঘরে বসে থাকা ভগবান তাকে গীতা দেয় পড়ার জন্য। সে গীতা, কোরান পড়া শুরু করে। এক মাস পর আবারো কোর্টে উঠেন তিনি। কোর্টে সিদ্ধেশ্বর মহারাজ তার গায়ে হাত তুলেন, তিনি গীতা থেকে উদবৃত্তি করে তাকে বুঝায় দেন সিদ্ধ পুরুষ কাকে বলে। তিনি সেখানে গীতা, বাইবেল, কোরান থেকে টেনে প্রমান দেখান যে ঈস্বর ই সব কিছুই করেন। তিনি বলেন যত মানুষ এক্ট অফ গডের কারনে ইন্সুরেন্স কোম্পানি থেকে টাকা পায় নাই, তাদের সবার টাকা ঈশ্বরই দিবেন। কোর্টে কথা বলতে বলতে কানজি লাল তার বাকশক্তি হারান। এবং তিনি পরে যান। তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। সে কোমায় চলে যায়। এক সময় আবারো হাসপাতালে সে মানুষ রুপী ভগবান কানজি এর কাছে আসেন এবং তাকে সুস্থ করে, দেখাতে শুরু করেন, তার অসুস্থ হওয়ার দিনগুলিতে তাকে নিয়ে ধর্ম গুরুরা কিভাবে তাকে নিয়ে রাজনীতি শুরু করেন। তাকে তারা ভগবান বিষ্ণুর ১১ তম অবতার বানান। তার নামে মন্দির তৈরি করে তাকে নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। তার মন্দির উদ্বোধন ছিল সেদিন। সেখানে কানজি গিয়ে মানুষজনকে ধমক দেন, রাগ করেন তাকে এভাবে ভগবান বানানোর জন্য এবং ধর্ম গুরুদের অপমান করেন। তাদের প্রধান ধর্ম গুরু কানজিকে বলেন, এই আস্থা, শ্রদ্ধা আফিমের নেশার মত। একবার লেগে গেলে তা আর সহজে ছুটে না। এই যে লোকজন দেখছেন, দে আর নট গড লাভিং পিপল, দে আর গড ফিয়ারিং পিপল।
(মুভি শেষ)
সংস্কৃতিগত মিল এবং ভাষা সহজবোধ্য হওয়ার কারনে হিন্দি মুভিটার রিভিউ দিলাম। ডাউনলোড লিংক দিতে পারলাম না বলে দুঃখিত।
এই মুভির মূল উপজীব্য হল ধর্মের নামে কিছু ব্যাক্তি কিভাবে নিরন্তর ব্যবসা করে যাচ্ছে ধর্মকে পুজি করে। আর যেটাকে সাধারন জনগন শ্রদ্ধা, ভক্তি হিসেবে মেনে নিচ্ছে দিনের পর দিন।
(চলবে)