somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুরআনের অত্যাশ্চর্য প্রভাব ও প্রাথমিক কুরআনিক প্রজন্ম - শেষ পর্ব

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০০৭ সকাল ৮:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

=======================
"Amazing Impact of the Qur'an and Earlier Qur'anic Generation" আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মালয়েশিয়ার "কুরআন ও সুন্নাহ্‌ স্টাডিজ" বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বন্ধুবর ডঃ নূর মুহাম্মদ ওসমানীর লিখা। এখানে অনুবাদটি প্রকাশ করা হলো।
=======================
১ম পর্ব
২য় পর্ব
৩য় পর্ব

উপসংহার

কুরআনের এই প্রভাব শুধুমাত্র প্রাথমিক যুগের লোকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলনা। কুরআন তার এই ভুমিকা আজো পালন করতে পারে। কোন অত্যাচারী শাসক যখন কোন মারাত্মক অবিচার করতে উদ্যত তখনও সে আল্লাহ্‌র ভয়ে কেঁপে উঠে যখন আল্লাহ্‌র এক নিবেদিতপ্রাণ বান্দা তাকে কুরআনের বাণী স্মরণ করিয়ে দেন। সে তাত্‌ক্ষণিকভাবে তওবাহ করে আল্লাহ্‌র কাছে ফিরে আসে। একজন ভারতীয় আলিম, কাজ়ী সাইয়্যিদ আলী মুহাম্মদ (মৃত্যু ১০৭০ হিঃ), একদা জানতে পারলেন যে, বিজাপুরের জনৈক আমীর তার বাড়ির পরিধি বড় করতে গিয়ে মসজিদের জায়গা দখল করে নিতে চাচ্ছিলেন। এলাকার লোকেরা ঐ স্বৈরাচারী আমীরের বিরুদ্ধে কিছুই বলার সাহস পাচ্ছিলনা। কাজ়ী সায়্যিদ আলী তার কাছে চিঠি লিখলেন এবং তাতে নীচের আয়াত উল্লেখ করলেনঃ “তার চেয়ে অধিক জ়ালিম আর কে হতে পারে যে আল্লাহ্‌র মসজিদে তার স্মরণ করতে বাধা দেয় এবং এগুলোকে ধ্বংস করার চেষ্টা করে? তাদের জন্য এই দুনিয়ার জীবনে রয়েছে বেইজ়জ়তি এবং আখিরাতে রয়েছে ভীষণ শাস্তি” -বাকারাঃ ১১৪। ঐ স্বৈরাচারী আমীর লোকটি কুরআনের এই আয়াত শুনে কেঁপে উঠে এবং তাত্‌ক্ষণিকভাবে তার বাড়ির মাঝে মসজিদের জায়গা দখল করার পরিকল্পনা বাদ দেয়।

মুঘলদের সবচেয়ে বিখ্যাত শাসক ও দীন-ই-ইলাহী নামক আজব ধর্মের প্রবর্তক আকবর (১৫৪২-১৬০৫ খ্রীঃ) একবার প্রস্তাব করলেন যে তাঁর সীল-মোহরের মধ্যে “আল্লাহু আকবর” খোদাই করবেন। সব মোসাহেব মন্ত্রী ও দরবারীরা এই ধারণাকে স্বাগত জানান এবং তাত্‌ক্ষণিকভাবে এর প্রয়োগ দাবী করেন। কিন্তু আল্লাহ্‌র এক নিবেদিত প্রাণ বান্দা ও আলিম হাজী ইব্রাহীম বললেন, “এটা দিয়ে বুঝাবে আল্লাহ্‌ মহান অথবা আকবর হচ্ছেন আল্লাহ্‌। আপনি বরং খোদাই করুন, ‘ওয়ালা জ়িকরুল্লাহি আকবর’ - আল্লাহ্‌র স্মরণই হলো সবচেয়ে বড়।” আকবর এটা পসন্দ করলেন এবং বললেন, “এটাতো - মানে তার নিজের প্রস্তাব - একটা শাব্দিক সামঞ্জস্য মাত্র, কিন্তু আমরা তা বুঝাতে চাইনি।” এই আলিম জবাবে বললেন, “আল্লাহ্‌ এ ধরণের সামঞ্জস্য পসন্দ করেননা।”

কুরআন অতীতে বিস্ময়কর ভূমিকা পালন করেছে, আর আজো কুরআন তার অলৌকিক ক্রিয়া সাধন করতে পারে এবং কিয়ামত পর্যন্ত পারবে। অতীতে কুরআন এক অনন্য প্রজন্ম সৃষ্টি করেছিল। আজো সেই কুরআন আমাদের মাঝে সেভাবেই বিদ্যমান এবং এই কুরআন বর্তমানে ও ভবিষ্যতেও এই অনন্য প্রজন্মের জন্ম দিতে সক্ষম। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হলো মুসলমানরা বেশ কয়েক শতাব্দি আগেই এই কুরআনের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেছে।

এ কিতাব শুধু বরকত ও ফায়েজ় হাসিলের কিতাব নয়; বরং এটাতো পড়ার, অধ্যয়ন করার এবং বাস্তবে আমল করার কিতাব। কুরআন পড়তে হবে আল্লাহ্‌ ও তার রসূলের জন্য যথার্থ ভক্তি ও ভালবাসা সহকারে। তাহাজ্জুদে এই কুরআনের তিলাওয়াত এখণো অলৌকিক ক্রিয়া সাধন করতে পারে। সে সময়ে আল্লাহ্‌র বান্দারা তার খুব কাছে থাকে এবং হৃদয় দিয়ে এর স্বাদ উপলব্ধি করে; তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং হৃদয় শিহরিত হয়। তারা আল্লাহ্‌র স্মরণে নিয়োজিত হয়। তাদের জীবন নাফরমানী থেকে মুক্ত হয়ে খোদাভীতিতে পূর্ণ হয়। তাদের জীবন রঞ্জিত হয় আল্লাহ্‌র রঙে ও প্রকৃতিতে।

নীচের আয়াতগুলো মুমিনদের জীবনে কুরআনের প্রভাবের প্রতিফলন বর্ণনা করেছেঃ
“প্রকৃত ঈমানদার হচ্ছে তারা যাদের দিল আল্লাহ্‌র স্মরণকালে কেঁপে উঠে আর আল্লাহ্‌র আয়াত তাদের সামনে তিলাওয়াত করা হলে তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায়। আর তারা আল্লাহ্‌র উপরই শুধু ভরসা করে।” [কুরআন, ৮/২]
“আল্লাহ্‌ই নাজ়িল করেছেন এক অতি উত্তম কালাম। এ এমন এক কিতাব যার সব অংশ সু-সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং যাতে পূনরাবৃত্তি করা হয়েছে একই কথার। এই কালাম শুনলে তাদের গায়ে শিহরণ জাগে যারা আল্লাহ্‌কে ভয় করে, আর তাদের দেহ ও মন আল্লাহ্‌র ভয়ে কোমল হয় এবং তারা আল্লাহ্‌র স্মরণের দিকে ফিরে আসে।” [কুরআন, ৩৯/২৩]
২১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বৃষ্টি এলেই মন নরম নরম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:৪০



যত বিতৃষ্ণা এক লহমায় যায় দূরে চলে, বৃষ্টি এলেই,
কী ফুরফুরে হাওয়া বয় দেহ জুড়ে, ভালো লাগে আমার
ভালো লাগে জমানো কর্মে মন দিতে,
দেহ যেন পাখিরর পালক, ছুটোছুটিতে নেই ক্লান্তি;
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিধির খেলাঃ ওরা মারছে একটা, যাচ্ছে ৫টা!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩৮

(লেখাটা না পড়লেও ছবি গুলো দেখুন, টাকোমা ওয়াশিংটনের পাশেই একটা শহর এবং সেই শহরের কিছু রাস্তাঘাটের দৃশ্য) উন্নত দেশ/শহর বলে দাবী করা দুনিয়ার নানান শহরের দৃশ্য দেখলে আমার মনে অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় সার্কাস দল!!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:১৫

আওয়ামিলীগ আমলে আওয়ামি মন্ত্রী এম্পিরা বিনোদনবঞ্চিত :( এই দেশের জনগনকে বিনোদিত করত তাদের বিভিন্ন মন্তব্যের দ্বারা। এখন এই স্থান একছত্রভাবে দখল করেছে বিএনপি !! দুই রাজনৈতিক দলের নেতাদেরই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষ ইজ গুড ফর হেলথ !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১:২৩


সিরাজদিখানের মাহফুজুর রহমান সাহেবের কান্ড দেখে মনে হলো, তিনি ব্রিটিশ আমলের একটা গল্প খুবই সিরিয়াসলি নিয়েছেন। গল্পটা পুরনো, কিন্তু ঘুষখোরদের মধ্যে এখনো জনপ্রিয়। এক ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট বাংলায় দুর্বল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রিয় কন্যা আমার- ৭৪

লিখেছেন রাজীব নুর, ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:৪২



প্রিয় কন্যা আমার-
ফারাজা, তুমি কি শুরু করেছো- আমি কিছুই বুঝতে পারছি না! রাতে তুমি ঘুমানোর আগে ঘুমানোর দোয়া পড়ে ঘুমাতে যাও। প্রতিদিন তোমার মুখে ঘুমের দোয়া শুনতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×