somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আন্তর্জাতিক নারী দিবস-প্রেক্ষাপটঃ বস্তু বনাম ব্যক্তি

০৮ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিশ্বজুড়ে নারী কিংবা পুরুষের ঘরোয়া কাজসমূহের অর্থনৈতিক মূল্যায়ন শুরু হয়েছে মাত্র কয়েক বছর আগে। গত বছরে সম্ভবত আমাদের দেশেও গবেষণা হয়েছে, সেমিনার-কনফারেন্স হয়েছে। সঙ্গতভাবেই মানুষের নজরে আসেনি এসব।


পরিবার গঠন হয় মূলত নারী এবং পুরুষের বিয়েকে কেন্দ্র করে। দুজন বাইরে কাজ করে আয় করুক, কিংবা একজন, ঘরোয়া কাজ দুজনকেই কম বেশি করতে হয়। বিভিন্ন কারণে বাইরে আয়ের কাজ পুরুষেরা বেশি করে থাকে। পরিবারের জন্য নারী ঘরে থেকে যা করে, তার সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভূমিকা পুরুষের চেয়ে অনেক বেশি। বাইরে কাজ না করা একজন মহিলা ঘরে শিক্ষক, সেবিকা, নিয়মকানুন রক্ষণাবেক্ষণকারী, রাঁধুনী, পরামর্শক, ঘর তদারককারী, এমন কি কাজের মানুষের ভূমিকাও পালন করে থাকেন। এসব করে নারীর কোন ক্ষতি হয় না! শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রফুল্ল/সচল থাকেন একজন নারী।



নারী অধিকার বা নারী স্বাধীনতার নামে আমরা দিন দিন যেসব অদ্ভুতুড়ে ধ্যান ধারণার জন্ম দিচ্ছি, তাতে সমাজ সংসারে বিভেদ-বিচ্ছেদই বাড়বে। কোন নারীর ঘরের কাজে অক্ষমতা বা অপারগতা থাকলে সমস্যা নেই; তার স্বামী বাইরে কাজ না করে ঘর সামলাবে। দুজনেই কাজ করলে ঘরের কাজের জন্য অতিরিক্ত টাকা খরচ করে বুয়া/রাঁধুনী/বাচ্চার আয়া রাখবে। আজকালের শহুরে নারীরা স্বামীর চেয়ে বুয়াকেই বেশি ভালবাসে। ঘরের কাজের প্রতি অবজ্ঞাই ধীরে ধীরে এই বুয়ানির্ভরতা জন্ম দেয়। এমনকি পরিবারের যেই সদস্য ঘর সামলায়, তাকেও অত্যন্ত নীচুভাবে treat করা হয়।

এরকম পরিস্থিতি শুধু আমাদের দেশের মত দেশগুলিতেই হয়। উন্নত দেশের আর্থসামাজিক পরিস্থিতিতে কোন কাজকে খাটো করে দেখার কোন সুযোগ নেই!



We should stop doing stereotypical thinking and over-generalization.

কর্মজীবি কিংবা গৃহিণী- যাই হউক না কেন আজকালের গৃহবধূদের পারিবারিক ভূমিকার অবস্থা করুণ! কারণ, তারা এরকম শিক্ষা/ধারণা নিয়েই বড় হয়েছে:- "কাজ হচ্ছে বাইরের কাজ যাতে টাকা আয় হয়, ঘরের কাজ হচ্ছে বুয়ার কাজ, নিকৃষ্ট কাজ!"

তারা ক্লাস ওয়ানের বাচ্চাকে নিয়ে যায় প্রাইভেট পড়াতে, বাচ্চাদের রোগশোক লেগেই থাকে, মেডিসিন খেতে খেতে dna structure বদলে যাচ্ছে, ভালমন্দ খাওয়ার কিছু হলেই বাইরে থেকে কেনা খাবার কিংবা ভুড়ি ভুড়ি রেস্টুরেন্ট তো আছেই! কাজের লোক না আসলে ঘরের অবস্থা dustbin এর চেয়েও করুণ থাকে। কাপড় ধোয়া, ঘর পরিস্কার করা, আসবাবপত্র পরিচ্ছন্ন রাখা তো দূরের কথা, "প্রগতিশীল নারী স্বাধীনতার শিক্ষা" এই নারীদের শিখাচ্ছে- ঘরের সদস্যদের চা বানিয়ে খাওয়াটাও দাসত্বের পরিচায়ক!

মাঝে একটা সময় ছিল শাশুড়িরা বউদের থেকে সেসবই আশা করত যা তারা নিজেদের মেয়েদের শেখায়নি, করতে দেয়নি, বা করুক তা দেখতে চায় না। আজকাল অবস্থার আরো উন্নতি হয়েছে। আজকালকার মহিলারা নিজেদের মধ্যে এই নিয়ে আলোচনা করে, কার মেয়ে ঘরে কত কম কাজ করে, কার মেয়ে কত কম পারে, যে যত কম, সে তত আধুনিক!

মায়েরা চায় না, তারা নিজেরা সংসারে যা যা ঝক্কি সামলিয়েছে, তাদের মেয়েরা সেই সেই কষ্ট করুক। তাই মায়েরা নিজের স্বামীদের সঞ্চয়ের ফিক্সড ডিপোজিটের লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে মেয়েদের প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়ায়, পারসোনাতে সাজায়, ম্যাঙ্গো ক্যাফেতে হ্যাং আউটে পাঠায়, নতুন স্মার্টফোন কিনে দেওয়া উপলক্ষে ক্লাসমেটদের treat দিতে pizza hutএ পাঠায়, আরো কত কি!

ঘরে আসলেও মায়েদের মেয়েরা ব্যস্ত থাকে ননস্টপ মোবাইল, ইন্টারনেট, ফেসবুক, মেসেঞ্জার, মিডনাইট টকটাইম, লেটেস্ট রিলিজ পাওয়া মুভি, ফেসওয়াশ, থ্রিপিস, মেকআপ, ক্লাস সেভেনের অংক স্যারের বাসার ব্যাচের রিউনিয়নে কি শাড়ি পরবে, ইত্যাদি এসব নিয়ে। আর, মূর্খ মায়েরা খেটে মরে সংসারের সব কাজের পেছনে; একা একাই! মেয়েদের কাজে হাত বাটানোর কথা এলেই- "আমার মেয়েদের পড়া আছে না!" ছেলেরা ঘরের কাজ করে দিলে- "মেয়ে হলি নাকি? যা বাইরে গতর খেটে আয় কর!"

মেয়েরাই রান্নাঘরে বা ঘরের ভেতরে পরে থাকুক, এটা কেউই চায় না। কিন্তু, গাড়ি চলতে হলে দুটো চাকা সামনে এবং বাকি দুটা পিছে থাকতে হবে। চারটা চাকাই সামনে থাকতে আন্দোলন শুরু করে দিলে গাড়ি চলবে না!

ফেসবুকে Bengal Beats নামক এক পেইজে নারী দিবস উপলক্ষে একাধিক ছবিসহকারে পোস্ট দেওয়া হয়েছে। সেখানে নারীকে রান্নাঘরে ফ্রাইপ্যান, ঘরের ওয়াশিং মেশিন, সকালের নাস্তার চায়ের কাপ, লবণের চামচ, স্যান্ডউইচ বানানোর মেশিন, ইত্যাদির সাথে তুলনা করার প্রসঙ্গ এনে বলা হয়েছে- "নারী কোন বস্তু নয়!"

ঘরে আমাদের মা, বোন, দাদী-নানী, খালা-ফুফু, মামী-চাচী, ভাবী কিংবা বউয়েরা যা-ই কাজ করেন, বা ভূমিকা রাখেন, সবই তাহলে বস্তুর সাথে তুলনীয়? ব্যক্তি কি কাজের অধিকার রাখেন না, পরিবারে অবদান রাখেন না? সুফিয়া কামাল, বেগম রোকেয়ারা ব্যক্তি; আর, যেই সুফিয়া আপনার ভার্সিটির সালোয়ার কামিজ ধুয়ে দিল, যেই রোকেয়া আপনার বন্ধুদের জন্য সুস্বাদু খাবার রান্না ও পরিবেশন করে আপনার মান বাঁচালো, তারা "বস্তু"??

তাহলে পুরুষেরাও বাদ যাবে কেন? পুরুষরা কি এটিএম মেশিন, চেকবুক, মানিব্যাগ, সম্পদের দলিল, স্পার্ম ব্যাংক, পাহারাদার কুকুর?

যেসব পুরুষেরা এবং নারীরা নারীর ঘরোয়া ছোটবড় যেকোন কাজকে এবং তাদের ভূমিকাকে অপমানিত করে, অবজ্ঞার চোখে দেখে তারাই বরং নারীকে বস্তু ভাবে। সেই বস্তুগুলি হল বিনোদনের বস্তু, বিপণনের বস্তু, সস্তা ব্যবহারের বস্তু, চক্ষুপ্রশান্তির বস্তু, কামবাসনা পূরণের বস্তু।

"ব্যক্তি" নারীর মর্যাদা সুমহান করতে সভ্যতার সূচনালগ্ন হতে নারীরা পরিবার, সমাজ, দেশ, কিংবা মানবজাতির জন্য যা যা করে এসেছে, সেসব কাজকে শ্রদ্ধা করার কোনই বিকল্প নেই!

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ৮:২১
১৩৭ বার পঠিত
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগামী কয়েক মাসে যা যা ঘটতে পারে এবং চ্যাটাং চ্যাটাং

লিখেছেন রাজীব নুর, ০২ রা মে, ২০২৫ দুপুর ১২:৪১



শেখ হাসিনা চলে যাবার পর-
উপদেষ্টারা ভালো কিছু করে দেখাতে পারেননি। বরং সমগ্র বাংলাদেশে চুরী, ডাকাতি, ছিনতাই এবং চাঁদাবাজি ত্রিশ গুন বেড়েছে। সেই সাথে দূর্নীতি ও ধর্ষন অব্যহত আছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নীরব বিদ্রোহ: অস্তিত্বের অচেনা মুখ

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ০২ রা মে, ২০২৫ দুপুর ২:১২



কোনো কিছুর ভেতরে থেকেও তার অংশ না হওয়া, এটাই অস্তিত্বের নীরব বিদ্রোহ।
এই কথা শুধু একটি চিন্তা নয়, এক গভীর অস্তিত্ববাদী স্বীকৃতি। এটি সেই নিঃশব্দ প্রতিবাদ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হবে না যে কারণে

লিখেছেন নতুন নকিব, ০২ রা মে, ২০২৫ বিকাল ৩:১৬

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হবে না যে কারণে

ছবি কৃতিত্ব এআই।

দক্ষিণ এশিয়ার দুই পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র—ভারত ও পাকিস্তান—দীর্ঘদিন ধরে বৈরিতা, সীমান্ত সংঘর্ষ এবং অবিশ্বাসের মধ্যে রয়েছে। তবে বর্তমান বৈশ্বিক বাস্তবতা এবং কূটনৈতিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ণ করে দিবে

লিখেছেন আবু ছােলহ, ০২ রা মে, ২০২৫ বিকাল ৪:১৮

আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ণ করে দিবে

The image created by AI

আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক ঐতিহাসিক ও প্রভাবশালী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও, সময়ের ব্যবধানে দলটির চরিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড. ইউনূস যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন: সেভেন সিস্টার্স দখল করতে বলেননি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০২ রা মে, ২০২৫ রাত ৮:৩২


পাকিস্তান-ভারতের এক্স মিলিটারি কর্মকর্তারা জোশে অনেক কথাই বলে থাকেন তাদের জনগণকে আলী বুঝ দেয়ার জন্য। ভারতের প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানে হামলার বিষয়ে ভারতের সেনাবাহিনীর সিদ্ধান্তকে চূড়ান্ত বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×