somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

( কল্প-গল্প ) – মানস স্বজ্ঞা

১৭ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১.
সকাল থেকেই আজ আকাশটা মেঘলা মেঘলা; কেমন যেন গুমোট ভাব সারা দিন ধরে; জানালা দিয়ে বহু দূরে, যতদূর দৃষ্টি যায় উদাস নয়নে তাকিয়ে আছে ক্লোরা। মেঘের এমন আচরন তার মনের উপরে বিশেষ চাপ তৈরি করে, কেমন যেন বিষণ্ন করে দেয়। পিছনে কনফারেন্স টেবিলের উপর ধুমায়িত কফির কাপ; অনেকক্ষণ ধরে ধোঁয়া উদ্‌গিরন করে করে প্রায় ঠান্ডা হয়ে এসেছে; পাশেই একটি লাল রঙের ফাইল। হঠাৎ ক্লোরা ঘাড় ঘুরিয়ে একদৃষ্টিতে ফাইলটার দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ; বা ভ্রু পাশের রগটা তিরতির করে কেঁপে উঠে মুহূর্তে।

ক্লোরা ভিনসেন্ট, কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান কাউন্সিলের প্রধান; মধ্য চল্লিশের ক্লোরাকে অনায়াসে তরুণি হিসাবে চালিয়ে দেওয়া যায়। চেহারায় মেয়েলি মেয়েলি ভাব থাকলেও চোখের দৃষ্টিতে রয়েছে দূর্বোদ্ধ কঠোরতা। “কাউকে যদি নির্যাতন করতে চাও তাহলে ক্লোরার সামনে ওকে ছেড়ে দাও, তার দৃষ্টিই যথেষ্ঠ”, তার সহকর্মীদের মাঝে বহুল প্রচলিত এই কথাটি মোটেও অতিরঞ্জিত নয়। আর রয়েছে প্রগাড় ব্যক্তিত্ব ও মেধার অসাধারন সমন্বয়; এত কম বয়সে অকল্পনিয় এই সাফল্যের পিছনে এটাই বড় কারন।

অনেকক্ষণ চেপে রাখা দীর্ঘশ্বাসটা ছেড়ে দিয়ে ফাইল থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আবার দূরের মেঘে নিবন্ধন করে ক্লোরা। সুইজারল্যান্ডের নূচাতাল লেকের পাশে যে ছোট শহরটা শত বছরের ভাংগা গড়ার স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল, এই শতকের প্রথমে এসে চিরসবুজ এই শহরকে ঢেলে সাজান হয় আধুনিকতার নতুন অবয়বে। সমগ্র শহরকে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তার বেষ্টনিতে ঢেকে ফেলা হয় তিনদিক থেকে আর একদিকে বিস্তৃত কালের সাক্ষী হিসাবে থাকে মায়াময় নূচাতাল লেক। লেকের পাড়েই একশ বিশ তলা বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান কাউন্সিলের প্রধান কার্যলয়; আর সমগ্র শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অসংখ্য ল্যাবরেটরি, গবেষণাগার, প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থা, বিশ্বের প্রতিটি দেশের প্রতিনিধিদের কার্যালয়; সেই সাথে একটি সয়ংসম্পূর্ণ আধুনিক শহরের যাবতিয় উপকরন।

ভবনের অদূরে শহরের একমাত্র এয়ারপোর্ট থেকে ভেসে আসা হাইপারসনিক* জেট প্লেন উড়ে যাওয়ার বিকট শব্দে সম্বিত ফিরে পায় ক্লোরা; অস্ফুট স্বরে জিজ্ঞেস করে, “মিনার্ভা, কনফারেন্সের ব্যাপারে সবাইকে ঠিক মত জানানো হয়েছে তো ?”

“জ্বী, মহামান্য ক্লোরা। শুধু মাত্র কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা সেক্রেটারি স্যার আন্তোনিন বাদে বাকি সবাই আজ সকালের চলে এসেছেন। উনারা নিজেদের রুমে বিশ্রাম নিচ্ছেন। মিস্টার সেক্রেটারি কিছুক্ষণ আগে জেটে করে রওয়ানা হয়েছেন। এক ঘন্টা পনের মিনিটের মধ্যে ল্যান্ড করবেন”, মেয়েলি কিন্তু যান্ত্রিক কণ্ঠে জবাব দেয় কেন্দ্রিয় সুপার-ল্যান্থোনাইড* কম্পিউটারের ভয়েজ ইন্টারফেজ মিনার্ভা।

-ভলান্টিয়ারদের কি অবস্থা?

তারা নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন, এক আর তিন নাম্বার ভালান্টিয়ারের অবস্থা ভাল, তবে দুই নাম্বার ভলান্টিয়ারের অবস্থা এখনো বিপর্যস্থ। স্বাভাবিক হতে আরও এক সপ্তাহের মত লাগবে। আমি কি “সম্পূর্ণ রিপোর্ট পেশ করবো?”, যান্ত্রিক গলায় জরুরিভাব ফুটিয়ে তুলে জিজ্ঞেস করে মিনার্ভা।

নাহ, লাগবে না; হঠাৎ চোয়াল শক্ত হয়ে যায় ক্লোরার, বুক ফুলিয়ে লম্বা করে শ্বাস টেনে আবার খুব ধীরে ধীরে বাতাসটুকু ছাড়ে যেন নিঃশ্বাসের প্রতিটা পরমানু অনুভব করতে পারে; ঘুরে চেয়ারটায় বসে বরফশীতল কণ্ঠে আবার জিজ্ঞেস করে, “মিনার্ভা, কয়টা বাজে”?

“একটা বেজে পচিশ মিনিট, মহামান্য ক্লোরা”

আর মাত্র দুই ঘন্টা পয়ত্রিশ মিনিট বাকি; শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা বরফ শীতল বিদ্যুতের স্রোত পা পর্যন্ত নেমে যায় ক্লোরা ভিনসেন্টের।

২.
অনেকক্ষণ ধরেই উশখুশ করছে বিভোর; কেমন অস্থির অস্থির লাগছে, ম্যাডামের লেকচার কিছুই কানে ঢুকছে না। আড়চোখে তাকিয়ে দেখে তিন ডেস্ক পরেই তন্ময় হয়ে ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে আছে তূর্য। রাগে গা শিরশির করে উঠে তার। আনমনে কলম খুলে খাতার উপর বড় বড় করে লেখে, “শয়তান”, লেখাটার উপর অলসভাবে হাত ঘুরাতেই থাকে; ঘুরাতেই থাকে, কি যেন ভাবতে থাকে অবচেতন মনে; লেখা গাঢ় হতে হতে এক সময় কাগজ ছিড়ে যায়। হঠাৎ বাস্তবে ফিরে আসে বিভোর; এখনও ক্যাবলাকান্তের মত হা করে ম্যাডামের লেকচার শুনছে তূর্য! দেরি না করে পলিফোনটা* খুলে ম্যাসেজ পাঠায় তূর্যকে, “ক্লাসে একদম ভাল লাগছে না, চল বেরিয়ে যাই”

“আমি ত খুব মজা পাচ্ছি, এত গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস ছেড়ে যাওয়াটা ঠিক হবে না। আর খবরদার তুমি এখন ক্লাস থেকে বের হবে না। আমি কিন্তু পরে এই লেকচার বুঝাতে পারব না” সাথে সাথে রিপ্লাই পাঠায় তূর্য।

“আসছে আমার শিয়াল পন্ডিত” মেসেজটা পড়েই মুখ ঝামটা মেরে বলে বিভোর। থিউরিটিক্যাল ফিজিক্সে আবার মজার কি আছে? আমি কি কিছু বুঝিনা মনে করেছ! আর ফিজিক্সের টিচার হবে থুড়থুড়ে বুড়া, চোখে মোটা কাচের চশমা; উসকোশুসকো চুলওয়ালা হাবলা ক্যাবলা ধরনের লোকজন, এখানে ম্যাডামরা কেন? তার উপর ডাইনিটা কিছুই বাদ দেইনি, গোলাপি লিপস্টিপ, লাল রঙের টিপ, গালে হালকা মেকাপও দিয়েছে, শাড়ীটা পড়েছে নাভীর একটু উপরে যাতে ব্লাউজের নিচে অল্প একটু মসৃন পেট দেখা যায়; সেন্ডেলটাও পড়েছে শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে। বেটি তুই কি পড়াতে এসেছিস নাকি মডেলিং করতে! ইচ্ছা করছে চুলগুলো টেনে ছিড়ে ফেলি, গলা টিপে ধরি! মনেমনে ম্যাডামের গুষ্টি উদ্ধার করতে করতে গটগট করে পিছন দরজা দিয়ে বের হয় যায় বিভোর।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ভবন থেকে বের হয়ে রাস্তায় নেমে আসে সে, রাস্তার পাশে ফুটপাতের উপর দিয়ে গাছের ছায়ায় ছায়ায় গন্তব্যহীনভাবে হাঁটতে থাকে। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ নিজেকে জীববিজ্ঞান ভবনের নিকটে পানির ট্যাংকি পাশে আবিষ্কার করে বিভোর। স্যাতস্যাতে। কার্জন হলের দক্ষিণ পার্শ্বে কালের স্বাক্ষী হয়ে শ্রীহীন কংকালের মত দাঁড়িয়ে আছে এই ট্যাংকি। বিশাল বিশাল পানির পাইপ অর্বাচিনের মত বাহিরের দিকে ঝুলে আছে আর জং ধরে আস্তরন খসেখসে পড়ছে, কত বছর রক্ষণাবেক্ষণ হয় না কে জানে; একটা গোল মই এর মত সিঁড়ি প্যাঁচিয়ে প্যাঁচিয়ে একেবারে উপর পর্যন্ত উঠে গেছে, জায়গায় জায়গায় দুএকটা ধাপ ভেঙ্গে একপাশে ঝুলে আছে।

ভর দুপুর; খাঁ খাঁ করছে ক্যাম্পাস, একা একা কাঠফাটা রোদে হেঁটে বেড়াচ্ছে বিভোর; রাস্তার পাশে ফুটপাতের উপর ছোট দেবদারু গাছের মাথায় একটা কাক ক্রমাগত পাখা নেড়ে যাচ্ছে, মনে হয় পাখার মধ্যে কিছু একটা আটকে গেছে, বেচারা কাক সেটা ঝাড়তে পাড়ছে না অনেক চেষ্টা করেও; ঈশপের গল্পে কাকের অনেক বুদ্ধি থাকলেও বাস্তবে সবই হাবাকাক; তা না হলে নিশ্চয় কোন উপায় বের করে ফেলত এতক্ষণে। “হাবাকাক!”, নিজের মনেই হেসে উঠে। আহারে! একটু সামনে এগিয়ে ডানে ঘুরে শহীদুল্লাহ হলের পূর্ব পাশের পুকুর ঘাটে এসে বসে সে। অনেক প্রিয় একটা জায়গা, এখানে বসলেই খারাপলাগা উবে যেতে থাকে। পুকুরে চারপাশ গাঁধাফুল গাছের ঝোপ দিয়ে ঘেরা, ঘাটে বসলে যেদিক দিয়েই বাতাস বহুক না কেন সাথে করে গাঁধা ফুলের তীব্র একটা সুঘ্রাণ নিয়ে আসে; মন মাতাল করে দেয়। এখনো ফুল ফোটেনি যদিও ফাকে ফাকে দুএকটা কলি উকি দিয়ে তার আগমনি জানান দিচ্ছে। চোখ বন্ধ করে সূর্যের দিকে তাকায় বিভোর; মুহূর্তে কমলা বর্ণের হয়ে যায় তার জগত; বন্ধ চোখের নিচেই ক্রমাগত দিগবিদিক লাফাতে থাকে কর্নিয়া আর দ্রুতলয়ে নড়াচড়া করতে থাকে পাপড়ি। অদ্ভুত। বেশ কিছুক্ষণ পর; পরম আবেশে খুব ধীরে ধীরে চোখ খুলে, দৃষ্টি ঘুরাতে থাকে চারপাশ; গাছ থেকে গাছে, ভোজভাজির মত কমলা রং এর আলোর ছন্দ নেচে উঠে তার চোখের সামনে, গোল গোল বলের মত আলোর ছটা যেদিকে চোখ যায়, মনে হতে থাকে ফুলহীন গাঁথাফুলের গাছের উপরদিয়ে ফুলের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। আবেশ। ছেলেমানুষি এই ব্যাপারটা অনেক ছোট থেকেই করে আসছে সে; একটা দীর্ঘশ্বাস বুকচিড়ে বের হয়ে আসে অজান্তেই। হঠাৎ পিছন থেকে পিঠে হাত! চমকে উঠে মুহূর্তেই আবার সামলে নেয় নিজেকে বিভোর।

“আমি জানতাম তোমাকে এখানে পাওয়া যাবে, সেই কখন থেকে কল করে যাচ্ছি; সংযোগ বিচ্ছিন্ন বলছে অপারেটর। ফোন বন্ধ করে রেখেছ কেন?”, এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে তূর্য।

আকস্মিক! অভিমানের ঢেউ উছলে উঠে, অজানা আবেগে চোখ ছলছল করে উঠে তার; ছি ছি ! কি লজ্জা! এখন যদি তূর্য চোখের জল দেখে ফেলে! হাত তুলে মুছতেও পারছেনা পাছে ধরা পড়ে যায়! কণ্ঠও ধরে ধরে আসছে! এখন কথা বললেও কান্না কান্না শুনাবে। একটু নড়েচড়ে কিছুটা এগিয়ে তূর্যকে পিছনে বসার জায়গা করে দিয়ে গাট মেরে বসে থাকে বিভোর, অপেক্ষা করতে থাকে চোখের জল উবে যাওয়ার।

“কি! এখনো রাগ করে আছ? আচ্ছা তোমাকে না কতবার বলেছি ফিজিক্স ক্লাসে আমাকে নিজের মত করে ছেড়ে দিতে, আর তুমি বেছে বেছে এই ক্লাসেই একেক বার একেকটা কান্ড কর”, পিছন থেকে বিভোরের কাঁধে হাত দিয়ে এখনও দাঁড়িয়ে আছে তূর্য।

আশ্চার্য! ছেলেটা এখনও দাঁড়িয়ে আছে কেন? গাধাটা কি এতটুকুও বুঝে না! আবার রাগ চড়ে যায় বিভোরের, দাঁতে দাঁত কামড়িয়ে মুখ শক্ত করে আচমকা দাঁড়িয়ে চলে যেতে উদ্দোত হয় সে।

“আরে, আরে কি হল আবার! রাগ করলে কেন? তোমার মর্জি কিছুই বুঝি না; কিছু আগে পর্যন্ত তোমার একটা অনুভূতির সাথে পরিচয় ছিল ‘ভালবাসা’, আর এখন একেক দিন একেক রুপ দেখছি। আচ্ছা বাবা, স্যারি, এই যে হাত জোড় করছি; এখন থেকে আপনি যখন যা বলবেন হে সম্রাজ্ঞী, শীরঃধার্য”, বলতে বলতে দুহাতে কাধ চেপে আবার ঘাটের বেঞ্চে বসিয়ে দেয় তাকে; নিজেও তার পিছনে ধীরে ধীরে বসে পড়ে।

খোলা কাধের উপর তূর্যের গরম নিঃশ্বাস অনুভব করে পুলকিত হয় বিভোর, নিঃশ্বাসে প্রতিটি বিন্দু কাঁপিয়ে কাঁপিয়ে দিচ্ছিল তাকে, ধীরে ধীরে অবস হয়ে আসে স্নায়ুতন্ত্র, ঠোটদ্বয় মৃদু মৃদু কাঁপতে থাকে, নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসে, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে থাকে; শেষে চিবুকটা একটু উচু করে দুচোখ বুঝে পিঠ এলিয়ে দেয় তূর্যের বুকের বা পাশে।

বুকের ধুকপুক ধুকপুক পিঠে অনুভব করতে থাকে বিভোর; এক সেকেন্ড, দুই সেকেন্ড, পাঁচ সেকেন্ড! আচমকা বরফের মত জমে যায় সে, মনে হয় কয়েক হাজার ভোল্টের কারেন্ট মাথা থেকে পা পর্যন্ত বয়ে যায় তার। আচমকা দাঁড়িয়ে যায়, দাঁড়িয়েই থাকে, ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে, নিঃশ্বাসও যেন বন্ধ হয়ে গেছে তার! হঠাৎ হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়ার মত সঙ্গা হারিয়ে পড়ে যায় তূর্যের কোলের উপর। সঙ্গা হারানোর ঠিক আগে আগে তার অবচেতন মনে কি যে ভেসে উঠে; ঠিক মত বুঝতে পারে না সে, তবে মনে হতে থাকে এক বছর আগে খুব ভয়ংকর কিছু একটা ঘটে গিয়েছিল, খুব ভয়ংকর!

৩.
২৫ – ৩২; প্রাণপনে দৌড়াচ্ছে ইরো; বা চোখের নিচে মাংস থেতলে গিয়ে থোকথোক রক্ত জমাট বেধে শুকিয়ে আছে; গায়ের জামাটা বুকের ডান দিকে ছিঁড়ে গেছে, সারা গা ঘামে জবজব অবস্থা। হাত, গলা, পিঠ কাদায় মাখামাখি। বিধ্বস্থ একবারে! পিছনে ভয়ংকর দর্শন জনা দশেক প্রবলবেগে ধেয়ে আসছে, হঠাৎ বা পাশ থেকে তার কমোড় লক্ষ করে ড্রাইভ দেয় একজন; একই সাথে ভোজভাজির মত সামনে থেকে উদয় হয় দুজন, যেন মাটিফুঁড়ে বের হয়েছে, চোখে তীব্র ক্রোধ। যা করার এ মুহূর্তেই করতে হবে, ভাববার বিন্দুমাত্র সময় নেই; এমন পরিস্থতিতে সাধারনত সবাই যা করে, ডান দিকে মোচড় দিয়ে কোনাকোনি দৌড় দেয়, সেকেন্ডের শতভাগের একভাগ সময় চিন্তা করে ইরো, নাহ এভাবে পার হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম; মুহূর্তে করনিয় ঠিক করে নেয় সে, বা পাশ থেকে যে ড্রাইভ দিয়েছে তার দিকে ঘুরে আরও উপরদিয়ে ড্রাইভ দেয় সে। সামনের দুজন হতচকিত হয়ে যায়, ইরো এমনটা করতে পারে স্বপ্নেও ভাবেনি তারা, বা পাশের জন হুড়মুড় করে ধাক্কা খায় সামনের দুইজনের সাথে; ইরো বুকের উপর বলটা চেপে ধরে ঐ খেলোয়ারের উপর দিয়ে ড্রাইভ দিয়েই একটা গড়ান দিয়ে স্প্রিং এর মত লাফিয়ে উঠেই আবার দৌড়; সামনে ফাকা পেয়ে তিন সেকেন্ডেই ক্রস করে যায় ট্রায় লাইন। ট্রায় এবং ৫ পয়েন্ট যোগ হয় লরেন্স নর্থ হাইস্কুলের পাশে; পয়েন্টের ব্যাবধান কমে হয় ৩০-৩২।

আন্তঃরাজ্য হাইস্কুল রাগবি চ্যাম্পিয়ানশিপের সেমিফাইনাল চলছে; লরেন্স নর্থ হাইস্কুল, ইন্ডিয়ানাপলিস ওহাইও বনাম ক্যামডিন হাইস্কুল, নিউজার্জি। গ্যালারি ভর্তি শুধু নীল আর কমলা রং এর পতাকা, ক্যাপ, মুখোস ও জার্সি, শরীরের নানান জায়গায় আল্পনা আকা তরুন-তরুনী; হাজার হাজার মানুষের গলা ফাটান চিৎকার সমুদ্রের ঢেউ এর মত ভেসে ভেসে আসছে মূহুর্মহু। উত্তেজনায় কাঁপছে নাটালিয়া, চারদিকের চেচামেচি ছাপিয়ে তার হৃদপিন্ডের কম্পনই কানে আসছে, মনে হচ্ছে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাবে যে কোন সময়, খেলা দেখা চালিয়ে যাওয়ার মত মানসিক শক্তি পাচ্ছে না আর; চোখ বন্ধ করে দুইহাত জোড় করে কপালের উপর রেখে বিড়বিড় করছে, “গড, ওহ গড; প্লিজ প্লিজ হেল্প আজ, প্লিজ”!

খেলার একেবারে শেষ পর্যায়, ২ মিনিট বাকী। স্ক্যাম করে আছে ক্যামডিন হাইস্কুলের খেলোয়ারেরা, মাঝে বল রেখে চারদিক থেকে ঘিরে আছে তারা, উদ্দেশ্য শেষের কয়েক মিনিট কাটিয়ে দেওয়া। তাদের ঘিরে মরিয়া হয়ে বল দখলের চেষ্টা করছে লরেন্স স্কুলের প্লেয়াররা। খেলা আর বাকি ১মিনিট ২৫ সেকেন্ড, শেষ চেষ্টা হিসাবে ১৫জন একজোট হয়ে গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে ধাক্কা দিয়েই আবার ছেড়ে দেয়; মুহূর্তের মধ্যে ক্যামডিয়ানের খেলোয়াড়রা ভারসাম্য হারিয়ে কাত হয়ে পড়ে, চট করে ইরো হাত বাড়িয়ে বলটা পিছনে ঠেলে দিয়েই উলটো দিকে দৌড় দেয়। বলটি গিয়ে পড়ে আন্তনিনের হাতে, সে আড়াআড়ি দৌড়ে প্রায় কর্নারের চলে যায়, তার পিছনে ধাওয়া করে পাচ ছয়জন ক্যামডিনের খেলোয়াড়, প্রায় কর্নারের কাছ থেকে বল ছুড়ে মারে আন্তনিন। বল এসে পড়ে দানবাকৃতির ব্লার্টের হাতে, বন্ধু মহলে সে আমাজনের ক্ষেপা ষাড় বলে বেশি পরিচিত; বল হাতে পেয়েই মাথা ঝুকিয়ে ঝড়ের বেগে ছুট লাগায় সে। খেলা বাকি আর ৩৮ সেকেন্ড, সামনে পুরাই ফাকা! গতি বাড়িয়ে দেয় ব্লার্ট, পিছনে ক্যামডিয়ানের দশ বার জন ধাওয়া করে আসছে, যে গতিতে দৌড়াচ্ছে সে ; আর ছয় সাত সেকেন্ডেই পৌছে যাবে ট্রায় লাইনে; যোগ হবে আরও পাচ পয়েন্ট সেই সাথে ফাইনালের পৌছে যাবে লরেন্স হাইস্কুল। খেলা বাকি আর ২৪ সেকেন্ড; আটকানোর আর কোন উপায় না দেখে ক্যামডিনের একজন শেষ চেষ্টা হিসাবে পিছন থেকে দুইপা শুণ্যে তুলে ব্লার্টের কাধ লক্ষ করে লাফিয়ে উঠে। জোড়া পায়ে লাথিটা লাগার মুহূর্ত আগে একটা পা টেনে নিয়ে আরেক পা একটু এগিয়ে দেই, ফলে সর্বশক্তি এক পায়ে পূঞ্জিভুত হয়ে প্রবল এক লাথি গিয়ে পড়ে ব্লার্টের কাধের ঠিক নিচে। বিপুল শক্তির এই লাথিতে ভারসাম্য হারিয়ে সামনের দিকে দুইতিনটা গড়ানি দিয়ে উলটে পড়ে ব্লার্ট। সাথে সাথে বাশি বেজে উঠে, এবং ফাউলের ইশারা করে রেফারী; পেনাল্টি পায় লরেন্স স্কুল, লাথি দেওয়া খেলোয়াড়কে রেডকার্ড দিয়ে মাঠ থেকে বের করে দেয়া হয়।

খেলা আর বাকী ১৫ সেকেন্ড; বলটা প্রথমে বুকে জড়িয়ে ধরে পরে আলত করে ঠোটে ছোয়ায় ইরো, পেনান্টি ঠিক মত হলে ৩ পয়েন্ট পেয়ে ৩৩-৩২ পয়েন্টে জিতে যাবে তার দল। গ্যালারী স্তব্ধ হয়ে আছে, পিনপতন নিস্তব্ধতা! নিজের নিঃশ্বাসের শব্দও শুনতে পাচ্ছে ইরো, মাথা তুলে গ্যালারিরে দিকে তাকায় সে, ব্যস্ত চোখে খুঁজতে থাকে নাটালিয়াকে, যদিও জানে এই ভিড়ের মধ্যে তাকে খুঁজে পাওয়া দুস্কর, নাটালিয়া পাশে থাকলে তার মনের জোড় অনেক বেড়ে যায়। গ্যালারিতে নাটালিয়া এখনো চোখ বন্ধ করে আছে আর মনে মনে ঈশ্বরকে ডেকে চলছে। ধীরে ধীরে বলটা মাটিতে রেখে কিছুটা পিছিয়ে আসে, চোখ বন্ধ করে নাটালিয়ার মুখটা কল্পনা করে বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয়, তারপর দৃঢ পায়ে তিন চার কদম এগিয়ে গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে বলে কিক করে গোলপোষ্ট বরাবর। খেলা বাকি ৯ সেকেন্ড, হাওয়ায় ভেসে বল এগিয়ে যাচ্ছে, উপর দিকে উঠছে, আরও উপরে, ডানদিকে একটু কেটে কেটে উঠে যাচ্ছে, খেলা আর বাকী ৮ সেকেন্ড; এখন বল নিচের দিকে নামছে, বাতাস কেটে আরও ডানদিকে মোড় নিচ্ছে, খেলা আর বাকী ৮ সেকেন্ড; ডান দিকের পোষ্ট বারের কাছাকাছি পৌছে গেছে; দম বন্ধ হয়ে আছে ইরোর, গ্যালারিতে চোখ বন্ধ করে আছে নাটালিয়া, খেলা বাকি ৭ সেকেন্ড, ডানদিকের পোষ্টবার প্রায় ঘেষে বেয় হয়ে যায় বল, হলো না! পারলাম না, বলতে বলতে হাটুমুড়ে মাথার পিছনে দুহাত দিয়ে মাটিতে শুয়ে পড়ে ইরো, মুহূর্তেই মাথা একটু চক্কর দিয়ে উঠে, দূর্বল লাগতে থাকে অনেক।

ড্রেসিং রুমে আরামদায়ক চেয়ারে চোখ বন্ধ করে বসে আছে ইরো, সামনে মেঝেতে বসে আছে নাটালিয়া, পাশে ছোট্ট ট্রেতে তুলা, ব্যান্ডেজ, স্প্রিরিট স্প্রে ও নানান ঔষধ আর কিছু কিট। চোখ টলমল করছে তার, চিৎকার করে কাঁদতে পারলে মনটা একটু হালকা হত, রুম ভর্তি লোকজন; ছোট ছোট জটলা পাকিয়ে আজকের খেলা নিয়ে আলোচনা করছে, এদের সামনে কেঁদে ফেললে লজ্জায় মরে যাবে সে, অনেক কষ্টে চেপে রেখেছে। মাথা ঝুকিয়ে, চোখ আড়াল করে ক্ষতগুলো ড্রেসিং করে দিচ্ছে নাটালিয়া, পাছে ভাই এর কাছে ধরা পড়ে যায়! তোমাকে কত বলেছি গুন্ডাদের এই খেলাটা না খেলতে!

- হেরেছি বলে কি আমার ইঁদুর ছানাটার মন খারাপ?

চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারে না নাটালিয়া। টপটপ করে কয়েক ফোঁটা ঝরে পড়ে ইরোর ভাজ করে রাখা হাটুর উপর।

“ছোট খরগোশটা কাঁদছে কেন! দেখি দেখি”, বলে ছোট বোনের থুতুনি ধরে উপরে তোলে ইরো।

ঈশ্বৎ, ভাই এর চোখে চোখ পড়তেই মুহূর্তে দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে নেয় সে।

বজ্রাহত। এ কি চোখ দেখলাম আমি! কি আছে এই দৃষ্টিতে? কি নেই এই দৃষ্টিতে? দূর্বোদ্ধ! না! না! কি যেন ভেসে উঠে তার অবচেতন মনে! অনেক অনেক দূর থেকে কেন যেন খুব দুর্বল কণ্ঠে কিছু বলতে চায় তাকে! খুব ভয়ংকর কিছু! লাফিয়ে উঠে সে, চোখ বন্ধ করেই কয়েক কদম পিছিয়ে যায় সে, কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জ্ঞান হারিয়ে ধরাম করে মেঝেতে পড়ে যায় ইরো।

৪.
কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান কাউন্সিলের কনফারেন্স রুমের ডিম্বাকৃতির টেবিল ঘিরে বসে আছে বিশ জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, সবার সামনে একটা করে লাল রঙের ফাইল, তবে কেউই ফাইলের দিকে তাকিয়ে নেই, সবাই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ক্লোরার দিকে, চোখের পাতাও যেন পড়ছে না তাদের, থমথমে অবস্থা।

- নিরবতা ভেঙ্গে ক্লোরা বললেন, “মিনার্ভা, এক নাম্বার কেইসটা দেখাও”; বদ্ধ ঘরে গমগম করে উঠে তার কণ্ঠ।

“মহামতী ক্লোরা, এক নাম্বার কেইসটার কোন ফাইলটা আগে চালাব?”, যান্ত্রিক কণ্ঠে জানতে চায় মিনার্ভা।

- প্রথমে টর্চার তারপর এক্সামিনেশন ফাইলটা চালাবে।

মিনার্ভা, যাতে কারও চোখের উপর চাপ না পড়ে সেভাবে হিসাব করে খুব ধীরে আলো মাত্রা কমিয়ে আলো-আধারী একটা আবহ নিয়ে আসে কনফারেন্স রুমে, তারপর একপাশের দেয়ালের প্রজেক্ট করে চালিয়ে দেয় টর্চার ফাইলটি।

রুমের সবাই যেন দম ফেলতেও ভুলে গেছে, পিনপতন নিস্থব্ধতা, এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্রোজেক্টেট স্ক্রীনের দিকে।

প্রায় অন্ধকার ঘর, অল্প পাওয়ারের ছোট একটা লাল বাতি জ্বলছে সিলিং থেকে, কোন জানালা নেই। দরজা বন্ধ করে দিলে কবরের নিস্তব্ধতা নেমে আসে এই এখানে। বাহির থেকে কোন শব্দ আসেও না, আর ভিতরে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করলেও বাহিরের কেউ টু শব্দটি পাবে না। শহর থেকে দূরে নির্জন এই পরিত্যাক্ত বাড়িটি খুঁজের বের করতে অনেক ঝক্কি পোহাতে হয়েছে গ্লাফিরাকে। ঘরটির মধ্যে কোন আসবাবপত্র নেই; শুধু দুইকোনে দুইটা বিশাল আকারের লোহার গোলক আর একটা ছোট যন্ত্রপাতি রাখার বক্স; গোলকগুলোর সাথে কয়েকটা ছোট আংটাওয়ালা শিকল লাগান আছে।

- “মাম্মি, আমরা এখানে কেন এসেছি? আমার ভয় লাগছে”, গা ছমছম করা পরিবেশে মায়ের কোমড় আলত করে জড়িয়ে ধরে ভিত কাঁপাকাঁপা কণ্ঠে বলে পার্সী।

আমরা একটা মজার খেলা খেলব, বাবা; অনেক মজার খেলা; মা সাথে আছি না! ভয় কিসের।

- সত্যি ? ওয়াও! ছোট্ট দুই হাত এক করে মুখের কাছে এনে একটু লাফিয়ে উঠে মিষ্টি প্রাণচঞ্চল নয় বছরের ছেলেটি। অজানা রোমাঞ্চকর কিছুর আশায় চোখে থেকে ভয় দূর হয়ে আনন্দের আভা ছড়িয়ে পড়ে সারা মুখজুড়ে।

হাত ধরে পার্সীকে ঘরের মাঝখানে নিয়ে আচমকা আংটাওয়ালা শিকলগুলো ওর দুই হাতপে লাগিয়ে দেয় গ্লাফিরা।

- কি করছ! মা? চমকে উঠে ছোট পার্সী। এবার কণ্ঠে সত্যি সত্যি ভয় ধরা পড়ে; চোখের কোনে বিন্দু বিন্দু জল জমতে শুরু করে।

হঠাৎ মুখে ভয়ংকর একটা ভাব ফুটে উঠে গ্লাফিরার; ঘুরে ঘরের কোনে রাখা বক্সের দিকে এগিয়ে যায়। একে একে বের করে আনে ছুরি, হাতুড়ি, করাত, প্লায়ার্স ও নানান জাতের ভয়ংকর দর্শণ ছোট ছোট যন্ত্র।

- পিছনে পার্সীর কান্না ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে; “মা, হাতে ব্যাথা পাচ্ছি, তুমি কি করছ ? আমাকে ছেড়ে দেও; মা, চল বাসায় চলে যাই; আমার ভীষণ ভয় করছে, আমি খেলব না এই খেলা। মা, প্লিজ!” শেষে এসে আকুতির ঝড়ে পড়ে তার কণ্ঠে। হাত পা টানাটানি করে নিজেই চেষ্টা করে শিকল থেকে মুক্ত হতে।

ছুরিটা হাতে নিয়ে কঠোর মুখে পার্সীর দিকে এগিয়ে যায় গ্লাফিরা। কোন কথা না বলে ছুরির তীক্ষ্ণ ফলাটা কপালের বা দিকে চেপে ধরে; ধীরে, খুব ধীরে টেনে গাল হয়ে একেবারে থুতনির মাঝ বরাবর চালিয়ে নিয়ে আসে। সাথেসাথে হালকা একটা রক্তের রেখা স্পষ্ট হয়ে উঠে সেখানে।

- চিৎকার দিতেও যেন ভুলে গেছে পার্সী! চোখ ফেটে বের হয়ে আসতে চাচ্ছে তার, কিছুই সে বুঝতে পারছে না, মা কি পাগল হয়ে গেল! তার গলা দিয়ে কিছুই আর বের হচ্ছে না, শুধু মা মা ডেকে যাচ্ছে আর চোখ দিয়ে পানি ঝড়ে পড়ছে অবিরত।

চোখ যেন অগ্নিগিরি, পার্সীর হাত টেনে ধরে ধাই করে স্ট্যাপলারের একটা পিন বসিয়ে দেয় তালু উপর, চিৎকার দিয়ে উঠে সে মা বলে! পাচ আঙ্গুলের নখের নিচে একটি করে ছোট পিন চেপে রেখে ধীরে ধীরে আঘাত করতে থাকে হাতুড়ি দিয়ে। একেক আঘাতে গগন বিদারি চিৎকার বেরিয়ে আসে তার গলা থেকে। “বল তুই কে?”, এই প্রথম কথা বলে গ্লাফিরা

- মাথায় কিছুই ঢুকছে না পার্সীর! এটা কি ধরনের খেলা ? “আমি পার্সী, মা”, তুমি এমন কেন করছ? মা?

আবার মিথ্যে কথা? চোখে যেন ধ্বক করে জ্বলে উঠে ক্রোধের ভয়ংকর আগুন; “ঠিক করে বল কে তুই? আমি জানি তুই পার্সী না, তুই একটা জঘণ্য পিশাচ” বলেই এক গোছা চুল আঙ্গুলে প্যাঁচিয়ে হেচকা টানে তুলে নিয়ে আসে মাথা থেকে, চুলের গোড়ার সাথে চামড়ার কিছু অংশও উঠে আসে।

- মা! আমি পার্সী, মা ! তুমি কেন আমাকে মারছ? কেমন যেন নিস্তেজ হয়ে আসে গলার স্বর।

নিপীড়নের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয় গ্লাফিরা, গ্যাস লাইটারটা ধপ করে জ্বালিয়ে ধীরে ধীরে চোখের পাতার কাছে নিয়ে আসে; আগুনের আচ চোখের কর্নিয়ায় টের পাচ্ছে পার্সী, আরও কাছে চলে আসে আগুনের শিখা, প্রথমে চোখের উপরের পাপড়িগুলো পটপট শব্দ করে পুড়ে যায়, তারপর নিচেরগুলো; চুল পোড়া উৎকট গন্ধে বমি চলে আসে গ্লাফিরার, আগুনসহ লাইটারটা ডান চোখের ভিতর ঢুকিয়ে দেয় সে; গলা দিয়ে শুধু গোঙ্গানীর মত শব্দ বের হতে থাকে পার্সীর, সে কিছুই বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে, মা কি জানতে চাচ্ছে? এত ছোট একটা ছেলে বানিয়ে মিথ্যে যে বলবে সেটাও পারছে না। বেশ কিছুক্ষণ পর, গ্লাফিরা একটু ক্লান্ত হয়ে পড়ে, পার্সীও ঝিম মেরে যায় ক্রমাগত রক্তক্ষরনে; মেঝেতে থোকথোক রক্ত পড়ে আছে, দুজনের কাপড়ও ভেসে গেছে রক্তের রঙে।

সহ্যের চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌছে গেছে গ্লাফিরা, বড় একটা চোখা ও তীক্ষ্ণ ইস্পাতের দন্ড মাথার ঠিম মাঝখানে সেট করে আরেক হাতে বড় দেখে হাতুড়ি তুলে নিয়ে বলে, “শেষবারের মত বলছি, ঠিকঠাক মত বল কে তুই? তুই কি এলিয়েন?”

- কিছুই না বুঝতে পেরে শুধু অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে মায়ের দিকে, বাম গাল বেয়ে জল আর রক্তের মিলিত ধারা বেয়ে বেয়ে পড়ছে; শুধু বলে, “মা!”

সজোরে হাতুড়ি উপর থেকে নিচে নিয়ে আসে মাথার উপর রাখা ইস্পাতের দন্ডের গোড়ালি বরাবর। আঘাতের ফলাফল দেখার আগেই জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে গ্লাফিরা।


অনেকক্ষণ ধরেই ঠায় বসে আছে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ডঃ আরেভ মিতিন, মাঝেমাঝে নিজের অজান্তেই মাথার পিছনে প্যারিটাল ও ওকিপিটাল জয়েন্টে চুলকাচ্ছে, খুব বেশি টেনশন হলে তার এটা হয়। সাইকোলজিস্ট হলে কি হবে, উনি নিজেই নানান মানসিক সমস্যা পুষে দিব্বি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ওনার সবচেয়ে বড় সমস্যা হল অল্পতেই প্রচন্ড নার্ভাস হয়ে যান; যেমন এখন উনি প্রচন্ড রকমের নার্ভাস অনুভব করছেন। ঠোট শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে, জিহ্বা দিয়ে কয়েকবার চেটে নিয়েছেন, কিন্তু কোন লাভ হয়নি; বরং জ্বিহ্বাই শুকিয়ে গেছে।

স্তব্ধ! কন্সফারেন্স রুমের সবাই নির্বাক হয়ে গেছে। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না তারা; এ কি দেখছে! সবাই ঘুরে একবার করে তাকায় আরেভ মিতিনের দিকে। বেচারা! সাইকোলজিস্ট! ঢোক গিলে, কণ্ঠনালীর হাড়টা একটু স্ফীত হয়েই মিলিয়ে যায় শুধু; গলা যেন আরও শুকিয়ে গেছে, হতবিহ্ববল একটা হাসি দিয়ে সবাইকে আশ্বস্থ করতে চায় যে, “আমি কি জানতাম এমনটা হবে?” তবে প্রাণহীন শুকনো এই হাসিটা শুধু ঠোটেই ঝুলে থাকে চোখে তার কোন ছায়া পড়ে না।

৫.
এক সপ্তাহ ধরে বেশ খাটাখাটুনি যাচ্ছে বিভোরের। তূর্য ছাড়া আর কারও ফোন ধরছে না, ইউনিভার্সিটিতেও যাচ্ছে না, এমন কি তূর্যের সাথে বাইরেও বের হচ্ছে না; জিজ্ঞেস করলে পাশ কাটিয়ে যায়, বলে ইউনিভার্সিটির একটা প্রোজেক্টের কাজ করছি, শেষ হলেই দেখবে। সারাদিন ওয়ার্কশপের দরজা আটকিয়ে খুটুর খুটুর কাজ করে যাচ্ছে। মাঝমাঝে নিজেই গাড়ি নিয়ে বের হয় আর কালো একটা সুটকেস ভর্তি করে প্রয়োজনীয় সব জিনিসগুলো নিয়ে আসে। কাজের মেয়েটাও খুব খুশি এই কয়েকদিন ধরে। বিভোর ব্যাস্ত থাকলে সে সারাদিন টিভি নিয়ে পড়ে থাকতে পারে, শুধু সময়মত টেবিলে খাবার দিয়ে আপাকে ডাকলেই হল।

রোড এক্সিডেন্টে বাবা-মা মারা যাওয়ার পর পৈতৃক এই বাড়িটিতে বলতে গেলে একাই থাকে বিভোর। বাড়িটির পাশ ঘেষেই ১১ কিলোভোল্টের কারেন্টের লাইন। শেষের এই কাজটাই সবচেয়ে কঠিন আর বিপদজনক। বাপরে! ১১ কিলোভোল্ট কি আর যাতা কথা! একবার গায়ে লেগে গেলে মুহূর্তেই শেষ, চোখের পাতি ফেলবারও সুযোগ নেই! আর যদি দুইটা ফেজ কানেক্ট হয়ে যায় তাহলে যে বিষ্ফোরন হবে ভাবতেই কেমন গা গুলিয়ে উঠে বিভোরের, পেটের ভিতর গুড়মুড় করে প্যাঁচিয়ে উঠে ভয়ের দানা। আজ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই এই কঠিন কাজটা শেষ করতে পেরে খুব ফুরফুরে লাগছে। আনমনে গুনগুন করে গান ধরে,

“আমার মত সুখী কে আছে; আয় সখি আয় আমার কাছে
সুখী হৃদয়ের সুখের গান; শুনিয়া তোদের জুড়াবে প্রাণ
প্রতিদিন যদি কাদিবি কেবল; একদিন নয় হাসিবি তোরা
একদিন নয় বিষাদ ভুলিয়া; সকলে মিলিয়া গাহিব মোরা”


রবীন্দ্রসংগীতের এই চারটি লাইন সকাল থেকে মাথার মধ্যে আটকে গেছে; কিছুতেই সরাতে পারছে না। গুনগুন করে গেয়েই চলছে সে কখন থেকে। হঠাৎ দরজায় ঠকঠক,

- আফা! খাইবেন না?

মাথা বের করা যায় দরজাটা শুধু এতটুকু ফাক করে বলে, “তোকে না কত দিন বলেছি আমি কাজ করার সময় বিরক্ত করবি না!”

- “খাউন তো ঠান্ডা হয়া গেলগা! আমি কইলাম আবার গরম করতে পারমু না”, বলেই “কি আকাম-ডাই না করতাছে আল্লায় জানে” ভাবতে ভাবতে চলে যায় সে

পলিফোনটা বেজে উঠে হঠাৎ, তূর্য কল করেছে; “কৈ তুমি?”
কোথায় আবার? বাসায়! ওহ! তুমি কল করেছ ভালোই হয়েছে, আমিই কল করতে যাচ্ছিলাম তোমাকে। আজ আমরা একসাথে বাসায় লাঞ্চ করব। তুমি কিছুক্ষণ পর আমার বাসায় চলে এসো। আমি আজ নিজ হাতে সব রান্না করব। কাজে মেয়েটাকেও তিন চার দিনের ছুটি দিয়ে দেশের বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি।

বেশ অবাক হয় তূর্য! এই প্রথম তাকে বাসায় ডেকেছে বিভোর, একটু রোমাঞ্চও অনুভব করে।

আজ অনেক সময় নিয়ে যত্ন কর সেজেছে বিভোর, লিপষ্টিক, কাজল, গালে হালকা ব্লাসনের সাথে টিপও পড়েছে কপালে, বেশ সুন্দর লাগছে তাকে, ঘরে ঢুকেই বিষ্ময়ে অপলক তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ তূর্য। একে অপরের সান্নিধ্যে সময় যেন উড়েউড়ে যাচ্ছিল; হঠাৎ তূর্য জিজ্ঞেস করে, আচ্ছা তুমি যে গত কয়েকদিন ধরে ভার্সিটির কি একটা প্রোজেক্টের কাজ করছিলে ঐটার কি অবস্থা?

- “বলব কি আর? চল নিজ চোখেই দেখবে”, বলে হাত ধরে তাকে টেনে বাসার এককোনের ওয়ার্কশপের দিকে নিয়ে যায় সে। খুব সন্তপর্নে চেপে রাখা উদ্বেগের দীর্ঘশ্বাসটা ছেড়ে একটু হালকা হয় বিভোর। অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছিল কখন তূর্য এই প্রসঙ্গটা তুলবে, নিজ থেকে কিছু বলে ওর সন্দেহের উদ্দেগ করার কোন ইচ্ছা তার ছিল না, অনেক দূর এগিয়ে গেছে বিভোর, এখন তীরে এসে তরী ডুবানোর মত কোন ঝুকি নিবে না সে।

ওয়ার্কশপে ঢুকে অবাক হয়ে যায় তূর্য, যেন আশা ভঙ্গ হয়, ঘরের মধ্যেখানে শুধু একটা লোহার চেয়ার সাথে নানা সাইজের তার লাগান, “এটাই তোমার প্রোজেক্ট?”

- “নিজেই পরীক্ষা করে দেখ না?” বলে পিঠে মৃদু ধাক্কা দিয়ে এগিয়ে দেই তাকে।

একটু অস্বস্থি নিয়ে, আমতা আমতা করে চেয়াটার বসে তূর্য। মুহূর্ত দেরি না করে হাতে থাকা ছোট রিমোটের লক বাটনটা ক্লিক করে বিভোর। সাথে সাথে চেয়ারের সাথে দুহাত-পায়ে বেড়ী লেগে যায় তূর্যে। অবাক হয়ে চোখ একটু কুঁচকে তাকিয়ে তাকে থাকে সে, “এই, কি করছ? কি করছ?”

কোন কথা না বলে দুই কদম এগিয়ে এসে তূর্যে ডান গালের উপর গায়ের জোরে চড় মারে বিভোর। কড়ে আঙ্গুলের নখের আচড়ে গাল কেটে রক্ত বের হয়ে যায় সাথেসাথে। থ মেরে যায় তূর্য! কোন আওয়াজ বের হয় না গলা দিয়ে, কথা বলার শক্তিও কে যেন কেড়ে নেয়া হয়েছে। ঐদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই বিভোরের, থেমে না থেকে নিশ্চিন্ত মনে চুলের মুঠি ধরে মাথাটা পিছনে ঠেলে ধরে গলার উপর আরেকটা বেড়ি পড়িয়ে দেয় বিভোর। চুল পরিমান নড়ার ক্ষমতা নেই আর তূর্যের, চেয়ারের সাথে পুরোপুরি আটকে গেছে সে। কি হচ্ছে এসব! কিছুই বুঝতে পারছে না সে, কোন দুঃস্বপ্ন দেখছে নাত?

প্লাস্টিকের হাতল ওয়ালা দুটি লৌহদন্ড মাঝ বরাবর মোটা তার লাগান, মাথাটা তীক্ষ্ণ, দুটি ভিন্ন ফেজের হাইভোল্টের বিদ্যুৎ প্রবাহিত হচ্ছে এদের মধ্যে দিয়ে; সাক্ষাতমৃত্যু, ভয়ংকর দর্শণ এই দন্ডদুটো দুহাতে ধরে ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় বিভোর। “বল তুই কে ?” বিভোরের মুখের এই প্রশ্নটা সারা ঘর প্রতিধ্বনিত হতে থাকে যেন মুহুর্মহু।

চোখে তীব্র আতঙ্ক নিয়ে বিভোরের হাতের দিকে থাকিয়ে থাকে মুহূর্তক্ষণ তারপর দৃষ্টি ফেলে চোখে, ভয়ে একেবারে জমে যায় সে, হৃৎপিন্ড থমকে যায় তার; কি খুনে দৃষ্টি, ঘোলাটে অপকৃতস্থ চোখ!

৬.
বিরতি চলছে, একের পর এক বিভৎস দৃশ্য দেখে ক্লান্ত কনফারেন্স রুমের সবাই। শুধু মেজর জেনারেল ক্রগার অবিচল, এতসব ধ্বংসাত্মক কার্জকলাপ তার মনে কোন আচড় ফেলতে পারেনি, সৈনিক মানুষ; ধ্বংসই যার খেলা, বাদবাকি সবার চিন্তায় ঝড় বয়ে চলছে, “এমন তো হওয়ার কথা না”!

“বিরতির সময় শেষ, দশ সেকেন্ডের মধ্যে তিন নাম্বার কেসটার এক্সামিনেশন ফাইটা চালাচ্ছি”, মিনার্ভার কণ্ঠ বেজে উঠে ঘরে, সবাই আবার নড়েচড়ে বসে।

টেবিলের একপাশে মাথা নিচু কর বসে আছে ইরো, মাঝেমাঝে মাথা তুলে আশেপাশে তাকাচ্ছে, যে ঘরে বসে আছে তার চারপাশ কালো কাচ দিয়ে ঘেরা, বুঝতে পারে বাহির থেকে তার উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখছে বেশ কয়েকজন অফিসার। তবে তার মত ভয়ংকর সাইকোপ্যাথকে কেন হাতকড়া ছাড়া বসিয়ে রাখা হয়েছে এটা তার মাথায় ঢুকছে না। বেশ খাতিরযত্নও করছে, টেবিলের উপর হালকা নাস্তা ও কোমল পানিয়। তিনজন হঠাৎ ঘরে ঢুকে দরজা ঠেলে, পোশাক দেখে যতটুকু বুঝা যায় প্রথম জন স্পেশাল সিকিউরিটি ব্রাঞ্চের কেউ হবে খুব সম্ভবত কর্নেল পদবীর, দ্বিতীয়জন আইন বিভাগের খুব সম্ভবত ব্যারিষ্টার ট্যারিষ্টার হবে, তৃতীয় জন সিভিলিয়ান ড্রেস তবে টাই ক্লিপে বিজ্ঞান কাউন্সিলের লগো লাগান।
ইরো ভেবেছিল কর্নেলই হয়ত জেরা শুরু করবে, তাকে অবাক করে প্রথম কথা বলল সিভিলিয়ান লোকটাই, তার মানে নিশ্চয় কেউকেটা কেউ হবে, ছোট খাট কেউ না।

- আমি সাইকোলজিস্ট আরেভ মিতিন। আমি তোমাকে যা যা জিজ্ঞেস করব ঠিক ঠিক উত্তর দিবে।

আমি ত প্রথম থেকেই সব বলে যাচ্ছি, কোন কিছুই বানিয়ে বলিনি।

- সেটা জানি, তবে আমি বলতে চাচ্ছি সবকিছু একেবারে খুটিনাটি সব। যে ব্যাপারটা তোমার কাছে স্পষ্ট না বা ঠিক নিজেও বুঝতে পারছ না বা খটকা আছে সেগুলোও।

ঠিক আছে

- তুমি কেন নাটালিয়াকে খুন করেছ?

কারনটা আপনাদের কাছে হাস্যকর মনে হবে বা আমার কাছে এখনও পুরাপুরি ক্লিয়ার না। আমার কেন যেন মনে হচ্ছিল এটা নাটালিয়া না। আসল নাটালিয়ার ভয়ংকর কিছু একটা হয়েছে আর এটা একটা পিশাচ বা এলিয়েন টাইপের কিছু একটা হবে।
ঘরের সবাই একে অপরের দিকে মুখ চাওয়া চাওয়ি করে, অভিব্যাক্তিহীন

- ঠিক কবে থেকে তোমার এমন মনে হল?

“সঠিক তারিখ মনে নেই, তবে প্রায় আট নয় মাস হবে। আমার রাগবী টিম সেমিফাইনালে হেরেছিল, খেলা শেষে নাটালিয়া আমার ক্ষতগুলো পরিষ্কার করছিল, তখনই আমার কেন যেন মনে হয় এটা নাটালিয়া না”, বলতে বলতে কেমন যেন একটু অন্যমনষ্ক হয়ে যায় ইরো। মনের মধ্যে কিসের যেন দ্বিধা চলতে থাকে।

- তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন আরেভ মিতিন, তোমার মনে কিসের দ্বিধা চলছে?

আমি! আমি আমার বোনকে মেরে ফেলেছি! কথাগুলো গলায় আটকে আটকে আসে তার। চোখ একটু ভিজে আসে।

- গ্লাস ভরা পানি তারদিকে এগিয়ে দিতে দিতে বলে ঠিক কি মনে হয়েছিল এবং ঠিক কোন মুহূর্তে সেটা?

খেলায় হেরে এমনিতেই খুব বিপর্যস্থ ছিলাম, নাটালিয়া মাথা নিচু করে কাঁদছিলো, আমি ওর থুতুনি ধরে উপরে তুলতেই চোখে চোখ পড়ে; ঠিক তখনই মনে হয়েছিল যে এই চোখ নাটালিয়ার না। তারপর আর কিছু মনে নেই, আমার জ্ঞান ফিরে হসপিটালে। তারপর প্রায়ই তার চোখের ভিতরে কি যে খুঁজতাম কিন্তু আর কখনও এমন মনে হয়নি। তার ঠিক দেড়দুই মাস পরে আবার এমন হয়েছিল, সেবারও সঙ্গা হারিয়ে পড়ে গিয়েছিলাম। নাটালিয়া খুব বিচলিত হয়ে গিয়েছিল, বলেই আবার গলা ধরে আসে, এবার চোখ ছাপিয়ে কয়েক ফোঁটা অশ্রু টেবিলে পড়ে।

- তারপর?

ওহ! গড়, আমি নিজ হাতে তাকে মেরে ফেলেছি, দুতিন দিনের না ঘুমানো চোখ টকটকে লাল হয়ে আছে যেন ফেঁটে বের হয়ে যাবে, দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে হুর্হু করে কেঁদে ফেলে ইরো।

- কিছুক্ষণ সময় নেয় আরেভ, ইরো একটু ধাতস্থ হলে বলে, “ঠিক কখন কখন মনে হত যে সে নাটালিয়া না?”

এটা নির্দিষ্ট ছিল না, তার খুব কাছাকাছি হলে, ছুঁয়ে গেলে এমন মনে হত; দ্বিধান্নিত কণ্ঠে বলে সে।

- তাকে খুন করলে কেন?

“প্রথম দিকে যখন মনে হত সে নাটালিয়া না তত গুরুত্ব দেইনি। পরে প্রায়ই মনে হতে থাকে এমন, বেশ ঘনঘন। কেন যেন বলতে থাকে এটা নাটালিয়া না, কোন এলিয়েন। এটা আমার বোনকে সরিয়ে তার জায়গা নিতে চায়। আমি কি তা হতে দিতে পারি? কক্ষনো না। শেষের দিকে তাকে দেখলেই ভয়ে শিউরে উঠতাম, সেই সাথে প্রচন্ড ঘৃণা জাগত ওর উপর, ডাইনি! আমার প্রাণপ্রিয় আদরের ছোট বোনকে সরিয়ে দিয়েছিস, তোকেও আমি বাঁচিয়ে রাখব না।”, চোখেমুখে ভয়ংকর খুনে ভাবটা ফোঁটে উঠে ইরো।

- সামনে রাখা ফাইলের ভিতর থেকে থেকে বেশ কতগুলো কাগজ বের করে ইরোর দিকে এগিয়ে দেয় আরেভ, “দেখ ত এগুলোর কথা মনে পড়ে কি না?”

বেশ কতগুলো কাগজ, সবগুলোর শেষে তার নাম ও স্বাক্ষর, একটু চমকে উঠে; এগুলোর কিছুই সে মনে করতে পারছে না; তারিখ প্রায় এক বছর আগের। “নাহ, মনে করতে পারছি না”।

- লম্বা করে দম নেয় আরেভ; তারপর খুব সন্তর্পনে বলে, ইরো,“তোমাকে এখন যে কথাটা বলব সেটার জন্য তোমাকে মানসিক ভাবে শক্ত হতে হবে” , বলেই জিজ্ঞাসু নয়নে তাকায় তার দিকে।

ঠোঁটের কোনে হালকা তাচ্ছিল্যের ভাব ফুটিয়ে তুলে, “কয়েকদিন ধরে মনের উপর যে ধকল গেছে সে তুলনায় আপনি কি আর বলবেন?”, আমি ঠিক আছি।

- “ইরো, নাটালিয়াকে আসলে তুমি খুন করনি, সে এক বছর আগে এক রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছে”, খুব ধীরে ধীরে প্রতিটা শব্দ আলাদা করে উচ্চারণ করে আরেভ

হঠাৎই যেন চোখে তাচ্ছিল্যের ভাবটা উধাও হয়ে যায় ইরোর, নিজের কানকেও যেন বিশ্বাস করতে পারছে না সে। হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে থাকে শুধু জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে।

- বিজ্ঞান কাউন্সিলের একটি বিশেষ টিম বহুদিন ধরে গবেষণা করছিল মানবিক আবেগ সম্পূর্ণ এবং মানুষের সমান বুদ্ধিমত্তার রোবট বানাতে, অবশেষে প্রায় চার বছর আগে আমাদের বিজ্ঞানিরা এতে সফল হয়। সেই সাথে এটার এপ্লিকেশন নিয়েও চলতে থাকে আলোচনা। অবশেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যাদের খুব কাছের এবং প্রিয়জন অতিসম্প্রতি মারা গেছে তাদের খুঁজে বের কারার এবং ফিল্ড টেস্ট হিসাবে সেই প্রিয় মানুষটাকে রোবট দিয়ে রিপ্লেস করা। আমরা বেশ অনেকগুলো ভলান্টিয়ার পেয়ে যাই তবে অনেক বেছে শেষ পর্যন্ত তিনজনকে চুড়ান্ত করা হয়। সবাই স্বেচ্ছায় এই এক্সপেরিমেন্টে রাজি হয়, ভলান্টিয়ারদের এক সপ্তাহের মত স্মৃতি মুছে দেওয়া হয় যাতে রোবটমানবকে আপন করে নিতে কোন সমস্যা না হয়। আমরা রোবটমানব পার্ফেক্ট হিসাবেই বানাতে পেরেছিলাম কিন্তু বাধ সাধলো ভলান্টিয়াররাই। মানুষ বড়ই দূর্বোদ্ধ সৃষ্টি। মানুষের মস্তিষ্ক এক সপ্তাহের স্মৃতি ফাঁকা রাখতে পারেনি, অবচেতন মন নানানভাবে অদ্ভুত কিছু দিয়ে শুণ্যস্থান পুরন করতে চেয়েছে। অদ্ভুত! বড়োই অদ্ভুত!

- একসাথে অনেকক্ষণ কথা বলে প্রায় হাঁপিয়ে উঠেন ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিষ্ট, মিস্টার আরেভ মিতিন, একটু আগে ইরো দিকে বাড়িয়ে দেওয়া পানির গ্লাসটা নিয়ে ঢগঢগ করে গলায় ঢেলে দিলেন।

স্তব্ধ হয়ে যায় ইরো, অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে তারপর বলে, “এখন আমার কি হবে, সারা জীবন বোন হত্যার স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে?”, চোখে এখনো অবিশ্বাসের ছায়া, “আমার স্মৃতি কি আবার মুছে ফেলা যায় না?”, কেমন যেন কাতর আকুতির ফুঁটে উঠে তার কণ্ঠে।

- স্মৃতি মুছাটা এখন খুব জটিল হবে কারন একে ত এই প্রযুক্তি নতুন তার উপর এক বছরের স্মৃতি মুছে ফেলা প্রায় অসম্ভব। কারন এক বছরে স্মৃতির অসংখ্য ডালপাল জালের মত বিস্তৃত হয়ে আছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হল এই প্রক্রিয়া প্রথমবার ঠিকমত কাজ করে, দ্বিতীয়বার সফল হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শুন্যের কাছাকাছি। তবে তুমি যদি নিজে দায়িত্ব নিয়ে আবেদন কর তাহলে আমরা বিজ্ঞান কাউন্সিলররা বোর্ড মিটিং এ এটা আলোচনা করে দেখতে পারি।


ভিডিও শেষ হয়ে গেলে কনফারেন্স রুমের আলো ধীরে ধীরে আবার উজ্জল হয়ে উঠে। সবাই নিরবে বসে আছে, কেউ কোন কথা বলছে না; সবাই এটা বুঝে গেছে প্রজেক্ট ভেনাস সম্পূর্নভাবে বিফল হয়েছে।

হঠাৎ নিরবতা ভেঙ্গে ব্যারিষ্টার রিনিতা চৌধুরী সাইকোলজিষ্ট আরেভের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছে একটা জিনিস আমার কাছে পরিষ্কার হচ্ছে না, এই যে রোবটমানব গুলোকে হত্যা করা হলো, একটু থেমে আসলে যেহেতু তাদের ঈন্দ্রীয়গুলো মানুষের মতই ছিল তাই একে ধ্বংস না বলে হত্যা বলছি; এই যে হত্যা করা হলো কিন্তু এত নিষ্ঠুরভাবে কেন? আর তারা মাঝেমাঝে সঙ্গা হারাত কেন?”

- আমার একটা ব্যাখ্যা আছে এটা নিয়ে বলেন আরেভ, “ প্রথমে অবচেতন মনে একটা দ্বন্ধের সৃষ্টি হয়, পরে ধীরে ধীরে তা পাকাপোক্ত হয়। মুলত অবচেতন মনে এই রোবটমানবগুলোকে তাদের প্রিয় মানুষের প্রতিদ্বন্দি হিসাবে দাড়া করায়; ফলে সেই প্রিয় মানুষটার জন্য যতটুকু ভালবাসা ছিল ততটুকুই ঘৃণা জমতে থাকে রোবটমানবের প্রতি। মানুষের বিকল্প আসলেই সম্ভব নয়”

- একটু বিরতি নিয়ে, “আর সঙ্গা হারানোটা কিছুই না, সচেতন আর অবচেতন মন যখন একসাথে সক্রিয় হতে চায় তখন কে চালকের আসনে থাকবে তা নিয়ে দ্বন্দ লাগে; আর তাই দুটোই একসাথে নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় এবং সাবজেক্ট সঙ্গা হারায়। আর এটা ঘটে যখন প্রচন্ড আবেগের কারনে বা পরিবেশের কারনে অথবা শারীরিক পরিশ্রমের কারনে সচেতন মন অবসন্ন হয়ে যায় সেই সময় অবচেতন মনের পক্ষে যদি কোন প্রভাবক যেমন চোখের দৃষ্টি, হৃদস্পন্দন, হাতের ছোয়া ইত্যাদি কাজ করে। তারপর আবার জ্ঞান ফিরলে সচেতন মন পুরো কন্ট্রোল নিয়ে নেয়।”

কিছুক্ষণ আবার সবাই চুপমেরে থাকে। নিরবতা ভেঙ্গে ক্লোরা বলেন, “আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন ‘প্রজেক্ট-ভেনাস’ সম্পূর্ণরুপে ব্যর্থ হয়েছে। আমি চাই এই প্রজেক্টের সব কার্যক্রম এই মুহূর্তে বন্ধ করে দেওয়া হোক”, কণ্ঠে দৃঢতা চমকে দেয় সবাইকে। আর তিন জন ভলান্টিয়ারই আবেদন করেছে তাদের স্মৃতি মুছে দেওয়ার জন্য। আপনাদের মতামত কি?

- কেউই আপত্তি করলো না, শুধু জেনারেল ক্রগার বললেন , “প্রজেক্ট বন্ধ না করে আমি চালিয়ে যাওয়া পক্ষে, এমন কিছু অনাকাক্ষিত ঘটনা ঘটবেই, দেয়ার ইজ নো সাচ থীং এজ এ ফ্রী লাঞ্চ, ইউ হেভ টু আর্ন ইট অর পার্চেজ ইট উইথ।”

“মানুষ এতটা নিষ্ঠুর হয় কিভাবে?” ভাবে ক্লোরা, তারপর অত্যন্ত শীতল কণ্ঠে বলে, “আপনারা সবাই মিলেও যদি প্রজেক্ট চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে ভোট দেন, বিজ্ঞান কাউন্সিলের প্রধান হিসাবে আমার যে ভেটো আছে আমি তা প্রয়োগ করব। হ্যা, রিসার্চ আগের মতোই চলবে, কিন্তু কোন প্রকার মানব এক্সপেরিমেন্ট আমি থাকতে চলতে দিব না”।

- এই কণ্ঠটা সবারই চেনা আছে, তাই জেনারেল সাহেব আর উচ্চবাচ্য করলেন না।

হঠাৎ করেই সারাদিনের মেঘলা আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি শুরু হয়। কি প্রচন্ড সেই বৃষ্টি, যেন সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। শেষে এমন কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পেরে নিজের উপরই সন্তুষ্ট হয় ক্লোরা। সারাদিনের মন খারাপ করা ভাবটা বৃষ্টির মত ঝড়ে পড়ে, প্রশান্তি ছেয়ে যায় হৃদয় জুড়ে।

৭. পরিশিষ্ট
দ্বিতীয়বার স্মৃতি মুছে ফেলার প্রক্রিয়া তিন জনের কারোই সফল হয়নি। তিন জনেই এখন বিজ্ঞান কাউন্সিলের মেন্টাল ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন আছে গত এক বছর ধরে, তাদের সব স্মৃতিই একেবারে মুছে গেছে।

“হ্যালো, গ্লাফিরা! গুডমর্নিং, বাহ! আজকে ত বেশ ফ্রেস লাগছে আপনাকে? নাস্তা খেয়েছেন?”, ঘরে উকি দিয়েই অনেক গুলো কথা একবারে বলে ফেলে ডাঃ নভেলা প্রিশলী।

চরম বিরক্তি নিয়ে তার দিকে একবার তাকিয়েই অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নেয় গ্লাফিরা।

ডাঃ নভেলা অনেক সময় নিয়ে বেশ কিছু পরীক্ষা করেন, উনি কাজে বেলায় সবসময়ই আন্তরিক, তিন মাস হয়েছে এখানে এসেছেন, এসেই প্রায় সব রুগীর সাথে একটা সহজাত সম্পর্ক করে ফেলেছেন।

সব পরীক্ষা শেষে, “আপনিত এখন বেশ সুস্থ, আমরা চিন্তা করছি আগামি সপ্তাহে আপনাকে রিলিজ করে দেব।”, গুড লাক বলে উনি চলে যেতে উদ্দত হলেন।

হঠাৎ ঘুরে তার দিকে তাকায় গ্লাফিরা, পিলে চমকে উঠে সে, চোখের দৃষ্টি ঘোলা হয়ে উঠে মুহূর্তেই অনেক দূর থেকে কে যেন বলে উঠে, “পিশাচ, এলিয়েন, কিল হিম; কিল হিম, কিল হিম.....................”

-x-x-x-x-x-x-x-x-x-x- সমাপ্ত -x-x-x-x-x-x-x-x-x-x-x

টীকা
১. সুপার-ল্যান্থোনাইড কম্পিউটার - (কাল্পনীক) : ল্যান্থোনাইড বেইজড সুপার কম্পিউটার। ল্যান্থোনাইড পিরিওডিক টেবিলের ৫৭তম মৌল। এই গোত্রে ১৫ জোড়া মৌল আছে। এদের “ইনার ট্রানজিসন ধাতু” বলে। একবিংশ শতাব্দির শুরুতে এসে এই মৌলের ইনার ট্রানজিসন ধর্মকে ব্যাবহার করে সুপার কম্পিউটার উদ্ভাভন হয় যা এক ধাপে আগের প্রজন্মের চেয়ে লক্ষগুণ দ্রুতগতির।

২. পলিফোনটা – (কাল্পনীক) : ভবিষ্যতের কমিউনিকেশন ডিভাইস। পলিথিনের মত পাতলা, রুমালের মত ভাজ করে রাখা যায়।

৩. হাইপারসনিক - (কাল্পনীক) : সাধারনত শব্দের বেগের সমান গতি হলে “ম্যাক ১” স্পিড বলে। আর গতি “ম্যাক ১০ থেকে ২৫” এর মধ্যে হলে একে High-hypersonic স্পিড বলে। গতির সীমা প্রায় ১২,৩০০ থেকে ৩০,৭৪০ কিলোমিটার/ঘন্টা
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:৫০
৩৭৫ বার পঠিত
২৩টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভারতীয় পতাকার অবমাননা

লিখেছেন সরলপাঠ, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ ভোর ৪:৪৩

বাংলাদেশের ২/১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারতীয় পতাকার অবমাননা আমার কাছে ছেলেমী মনে হয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে ভারত বাংলাদেশের রাজনীতিতে সরাসরি হস্তক্ষেপ করার কারণে বাংলাদেশের মানুষের মনে প্রচন্ড রকমের ভারত বিদ্বেষ তৈরি হয়েছে।

কিন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভিসা বন্ধ করায় ভারতকে ধন্যবাদ।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩



ভারত ইদানীং ভিসা দিচ্ছেনা; তারা ভিসা না দিয়ে আমাদেরকে শিক্ষা দিতে চায়! তাদের করদ রাজ্য হাতছাড় হওয়া খুবই নাখোশ, এতোই নাখোশ যে মোদী মিডিয়া দিনরাত বয়ান দিচ্ছে এই দেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতের চিকিৎসা বয়কট এবং

লিখেছেন পবন সরকার, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৫৬


ভারতের এক হাসপাতাল ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশের কোন রুগিকে তারা চিকিৎসা দিবে না। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো যে হাসপাতাল থেকে এই ঘোষণা দেয়া হয়েছে সেই হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার জন্য বাংলাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। চামচা পুঁজিবাদ থেকে চোরতন্ত্রে পরিণত হয়েছিল দেশ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:১৩






চামচা পুঁজিবাদ থেকে দেশ চোরতন্ত্রে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, আমলা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা মিলে চোরতন্ত্র করেছে।

সোমবার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখ হাসিনাকে ভারত ফেরত পাঠাবে তবে............

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪২


শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে বিচারের জন্য ভারতের কাছে ফেরত চাইতে হলে অবশ্যই বাংলাদেশকে প্রতিহিংসামূলক বিচারপদ্ধতি বাদ দিতে হবে। বিচারে শেখ হাসিনা যাতে ন্যায় বিচার পান বাংলাদেশকে আগে তা নিশ্চয়তা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×