১ম পর্ব
২য় পর্ব
৩য় পর্ব
বিন হামাসান হেরিটেজ ভিলেজের কথা অনেক শুনেছি। আমার পরিচিত এক টিএ বলেছিল সেখানে নিয়ে যাবে। কিন্তু সে আমেরিকায় চলে যাওয়ায় তা আর হয়ে উঠেনি। আবহা থেকে খুব একটা দূরে নয়। কিন্তু পরিচিত কারো চেনা জানা না থাকায় কাছের জায়গাটিতেই এতদিনেও যেতে পারিনি।
আবহাতে কেউ অফিসিয়াল ভিজিটে এলে, কাজকর্ম শেষে তাকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। এই ভিলেজ পরিদর্শন করলে নাকি আসির প্রভিন্সের ইতিহাস, ঐতিহ্য নিয়ে খুব দ্রুত একটা ধারণা পাওয়া যায়। ইংলিশ ডিপার্টমেন্টে একটা কনফারেন্স হল, বাহিরের বিভিন্ন দেশের ইউনিভার্সিটি থেকে টিচাররা এসেছে। কনফারেন্স শেষে তাদেরকেও বিন হামাসান হেরিটেজ ভিলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই দলের হয়ে সাঈদ সেখানে ঘুরে এসেছে। সাঈদ জায়গাটির দারূণ প্রশংসা করল।
একদিন সে আমাদের সবাইকে সেখানে নিয়ে যেতে চাইল। স্বভাবতই আমি রাজি হয়ে গেলাম। যদিও সাঈদ প্রোগ্রাম আয়োজন করলে আমরা অনেকেই ভীত থাকি। সে নানামূখী তৎপরতার মাধ্যমে প্রোগ্রামকে আকর্ষনীয় করতে গিয়ে মূল লক্ষ্য থেকে দূরে সরে যায়।
সাঈদ “ওয়াদি বিন হাশবাল” এর মরুভূমিতে রাতে একটা বারবিকিউ পার্টি করবে করবে বলে দুই বছর পার করে দিল। “ওয়াদি বিন হাশবাল” চমৎকার একটি জায়গা, আমরাও খুব আগ্রহী ছিলাম। আমাদের তাগাদায় অতিষ্ঠ হয়ে সে হঠাৎ করেই “ওয়াদি বিন হাশবাল” এর মরুভূমিতে চাঁদ দেখার আয়োজন করল। আমরা প্রায় ৬০ কি.মি. ড্রাইভ করে গিয়ে দেখি সেখানে মেঘের কারনে চাঁদই দেখা যাচ্ছে না। ফলে আমরা রাস্তা থেকেই শুধুমাত্র মেঘ দেখে ফিরে আসলাম। আদিল ভাই কোন কারনে আমাদের সাথে যেতে পারেননি। চাঁদ আর জ্যোৎস্না দেখতে গিয়ে মেঘ দেখে ফিরে আসায় আদিল ভাইয়ের সে কি হাসি!
তারপরও অন্যদের তুলনায় সাঈদ বিভিন্ন কাজে অনেক পারদর্শী। এক বিকালে সাঈদ আমাদেরকে বিন হামাসানের পথে নিয়ে চলল। কচি ভাইও তনুমা থেকে এসেছেন। আমি গাড়ী না নিয়ে ওসামার গাড়ীতে চড়ে বসি। ওদিকে মিলনও আমাদের সাথে জয়েন করেছে। জায়গাটা খুব কাছেই, পাশের শহর খামিস মোশাইত এ। আমরা চমৎকার করে সাজানো মিউজিয়ামটির সামনে থামলাম। মিউজিয়ামের মালিক জাফর হামসান আমাদের সবাইকে স্বাগত জানালেন। সাঈদ আগেই যোগাযোগ করে এসেছিল। উনি দারূণ ইংরেজি বলেন। তিনি আমাদেরকে মিউজিয়ামটির ইতিহাস ও তার সংগ্রহ সম্পর্কে বিস্তারিত জানালেন। আমাদেরকে আরবীয় কফি ও বিভিন্ন ধরনের খেজুর খেতে দিলেন।
ভদ্রলোক আমাদেরকে তার সংগ্রহশালা ঘুরিয়ে দেখান। প্রথমেই চোখে পড়ে পাথরের তৈরি Speakers’ Corner-এটা একটি প্রাচীন আরবীয় রীতি। যে কেউ এখানে এসে যে কোন কিছু বলতে পারত। কেউ তাকে বাঁধা দিত না। অনেকটা হাইড পার্ক বা আমাদের দেশের মুক্তাঙ্গনের মতো। আরবদের এই প্রথা নাকি সুপ্রাচীন। ওসামার ছেলে রাফসান এটার উপরে উঠে দারূণ খুশী। কথা বলতে পারেনা, অথচ আংগুল উচিয়ে কি সব জানি একটানা বলে গেল। এই জায়গাটার একটা প্রভাব থাকতেই পারে।
পাশেই একটা ৩/৪ তলা বাড়ী সংরক্ষণ করে হয়েছে। পাথর, মাটি, কাঠ দিয়ে তৈরি এধরনের বাড়ী এক সময় আরবের দক্ষিণাঞ্চলে দেখতে পাওয়া যেত। আমারা সেই বাড়ির ভেতরে ঢুকলাম। ভেতরে ছোট ছোট রুম। বাড়ীটি নতুন করে সাজানো হয়েছে। রং করা হয়েছে, ভেতরের সিড়িগুলো পাকা করা হয়েছে, ইলেকট্রিক বাতি, মেঝেতে কার্পেট, সোফা- প্রাচীন বাড়িটিতে প্রাচীন আরবকে খুঁজে পেলাম না। দেয়ালগুলোতে বিভিন্ন ধরণের পেইন্টিং বোঝাই। পেইন্টিংগুলো দেখে পুরনো দিনগুলোকে কিছুটা বুঝা যায়। কিন্তু ছবি ও পেইন্টিং এর মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার দৃষ্টিকটু লাগল।
বাড়ী থেকে বের হয়ে আমরা পাশেই আরেকটি হল রুমে ঢুকলাম। সেখানে পুরনো কিছু হাড়ি পাতিল, পানি রাখার মশক রাখা ছিল। একদিকে একটা অডিটরিয়াম, সুন্দর করে সাজানো। অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া দেয়া হয়। পাশে নতুন করে একটি কমিউনিটি সেন্টার করা হচ্ছে। সেটাও ভাড়া দেয়া হবে। এটা যতটা না মিউজিয়াম, তার চেয়েও ব্যবসায়িক লক্ষ্য বেশী মনে হল।
আরেকটি রুমে হাজারো ছবি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। বিখ্যাত যেসব লোক এখানে এসেছিলেন তাদের ছবি, চিঠি বাঁধাই করে রাখা হয়েছে। দেখলাম এডউইন অলড্রিন, প্রিন্স চার্লস, প্রাক্তন রাজা এই মিউজিয়াম ঘুরে গেছেন। আর তা থেকেই মিউজিয়ামটির এত সুখ্যাতি।
কিন্তু আসির প্রভিন্সের ইতিহাস, ঐতিহ্যকে তুলে ধরে – যেভাবে বলা হয়েছিল-এমন কিছু খুঁজে পেলাম না। তবে দিন শেষে চমৎকার একটি আউটিং তো হল। তাতেই আমরা সবাই খুশী।
(শেষ)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৩:১৮