গত সোমবার দৈনিক প্রথম আলোতে 'ভন্ডপীরের ভয়ঙ্কর চিকিৎসা' শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটি সমালোচনার ঝড় তুলেছে। দৃশ্যমান ছবিগুলো ভণ্ডপীরের মতোই ভণ্ড বলে অধিকাংশ লোকেরই ধারণা। কেন না আড়াই মাসের কোন শিশুর পেটে ৩৫ বছর বয়স্ক কোন ব্যক্তি দাঁড়ালে আদৌ এই শিশু বেঁচে থাকতে পারে কিনা_ এ প্রশ্ন এখন মুখে মুখে। এছাড়া পত্রিকাটিতে প্রকাশিত বক্তব্য অনুযায়ী আধা ঘণ্টা উল্টিয়ে ঝুলিয়ে রাখলে আড়াই মাসের বাচ্চাদের অবস্থা কি হতে পারে? চরকার মতো ঘোরানো এবং লাথি দিতে দিতে উঠানের এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত নেয়া যমজ বোন নিপা ও দীপাকে সোমবার সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় থানায় আনা হয়, যা ভণ্ডপীরের স্বপ্নে পাওয়া ওষুধের মতোই বিস্ময়কর! এ বিষয়ে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ভণ্ডপীর আমজাদ হোসেন বলেছেন, তাঁর বাড়ির পাশের এ ফটোসাংবাদিক খ্যাতির লোভ দেখিয়ে এই ছবি তোলেন। আমজাদ হোসেন বলেন, আমি চিকিৎসা দেই ঝাড়ফুঁক এবং তেল ও পানি পড়া দিয়ে। কেন এমন ছবি তুলতে চাচ্ছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ঐ ফটোসাংবাদিক বলেন, আমি তো এলাকারই, এমন কিছু করছি যাতে আরও বেশি লোক এখানে আসে। শুধু প্রথম আলোর ফটোসাংবাদিকই নন, এই ছবি তুলতে প্রথম আলোর ফটোসাংবাদিকের ভাইও তাঁকে প্রভাবিত করেছেন। মাটিতে শুয়ে থাকা শিশুর গায়ে পা রাখতে বলেন এবং তারপর ছবি তোলেন। পা দিয়ে বাচ্চাকে সরাতে বলেন, বাচ্চাকে উল্টো করে ধরতে বলেন_ এভাবে এই ফটোসাংবাদিকের ইচ্ছানুযায়ী বিভিন্ন পোজে ছবি তোলেন।
কেন সাংবাদিকের কথায় এমন ছবি তুলতে সুযোগ দিলেন_ এই প্রশ্নের জবাবে আমজাদ হোসেন বলেন, 'ফটোগ্রাফার বলেন আপনে আমার এলাকার লোক, আমার ভাই প্রথম আলোর সাংবাদিক, যেভাবে বলি সেভাবে ছবি তুললে প্রথম আলোতে ছাপিয়ে দেব, সারাদেশের লোক জানতে পারবে তুমি ভাল ফকির, তখন আরও লোক আসবে। আমি একবার আফ্রিকায় গিয়েছিলাম, সেখানে এমন ফকির আছে, যারা এভাবে চিকিৎসা করে। এতে রোগ ভাল হয়ে যায়, তুমিও কর দেখি কি হয়.....।' দুই দিন তার আসত্মানায় ও আশপাশ থেকে আমজাদ হোসেনকে প্রলুব্ধ করে ছবিগুলো তুলে নেন।
সোমবার আমজাদ হোসেনের বাড়ির আশপাশের এলাকায় কথা বলে জানা গেছে, এভাবে নির্যাতনের কোন ঘটনা বিগত দেড় মাসেও কেউ দেখেননি। ঝাড়ফুঁক দিয়েই তিনি চিকিৎসা করতেন। তাঁর আসত্মানায় থাকা রোগী বা চিকিৎসা নেয়া রোগীরাও এমন নির্যাতনের কথা বলেননি। আরও আশ্চর্যের ব্যাপার, এমন একটি বর্বরোচিত (!) ঘটনা দিনের পর দিন প্রধান সড়কের পাশে প্রকাশ্যে চলছে আর স্থানীয় সাংবাদিক, পুলিশ, জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজ, প্রতিবেশী কেউই জানলেন না? এমনকি বিষয়টি পত্রিকাটির স্থানীয় প্রতিনিধিরও অজানা।
তবে কী কারণে এ ঘটনা, কার স্বার্থে? এই প্রশ্ন সকলের মুখে মুখে। অনেক সচেতন পাঠক বলেছেন, এই ঘটনা '৭৪ সালের দুর্ভিক্ষাবস্থার সময় বাসন্তীদের দিয়ে বমি খাওয়ানো এবং জাল পরানোর সেই ছবিগুলোরই পুনরাবৃত্তি কি না, তা খতিয়ে দেখা উচিত। অনেকেই বলেছেন, বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি নষ্টের জন্যই এ পরিকল্পনা। আবার অনেকে বলেছেন, সরকারের ভাবমূর্তি নষ্টের পাশাপাশি পুরস্কার পাওয়ার জন্যও এটা করা হতে পারে।
এদিকে আমজাদ হোসেন গ্রেফতার হয়েছেন। সিরাজদিখান উপজেলার খাসনগর গ্রামের আসত্মানা থেকে সোমবার সকালে তাঁকে পাকড়াও করা হয়। পরবতর্রীতে তাঁর দেয়া তথ্য মতে, সহযোগী নুরু মেম্বার (৪৫), কালাম (৪৬) ও ইলিয়াসকে (৬০) গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে এখনও আসত্মানায় রোগীদের ভিড় আছে। রোগীদের বিশ্বাস তাদের পীরকে (!) আটকে রাখতে পারবে না, ফিরে আসবেই। গ্রেফতারকৃত ভণ্ডপীর আমজাদ হোসেন বলেছেন, নানাভাবে চিকিৎসা করেন, তবে পত্রিকায় যেভাবে ছবি ছাপা হয়েছে, তা পাশের গ্রামের ফটোসাংবাদিক কবিরের ইচ্ছায় হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হাসানুল ইসলাম ঘটনাস্থলে জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও যারা এর সঙ্গে আছে সকলকেই আইনের আওতায় আনা হবে। তবে এতদিন বিষয়টি সম্পর্কে প্রশাসন অবগত ছিল না।
পুলিশের এএসপি সাইদুজ্জামান ফারুকী জানান, গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। ভণ্ডপীর আমজাদ হোসেন অনেক তথ্য ইতোমধ্যেই দিয়েছেন, সেই অনুযায়ী পুলিশ কাজ করছে। এই ভণ্ডপীরের কর্মকাণ্ড নিয়ে ব্যাবের ও কাজ করছে। ব্যাবর স্থানীয় ক্যাম্প কমান্ডার এএসপি মোঃ মিলন মাহমুদ জানান, ভণ্ডপীরের কর্মকাণ্ডর বিষয়ে তিনি ৫/৭ দিন আগে জেনেছেন। তিনি বৃহস্পতিবারের অপেক্ষায় ছিলেন। কারণ প্রতি বৃহস্পতিবারই লোকজন বেশি হয়। এ সময় সব সহযোগীসহ ধরার জন্যই অপেক্ষা করছিলেন বলে জানান তিনি।
থানার ওসি মোঃ মতিউর রহমান জানান, এ বিষয়ে ভণ্ডপীর আমজাদ ও তাঁর ৩ সহযোগীকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। আমজাদ দু'টি সূরা জানেন তাও ভুল ।
পুলিশ সুপার মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, ভণ্ডপীর ও সহযোগীদের বিরম্নদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তবে ভণ্ডপীরের বরাত দিয়ে এসপি জানান, লাথি দিয়ে বা টাঙ্গিয়ে সে চিকিৎসা করত না, ফটোসাংবাদিকই তাকে বলেছে-উঁচু করে ধরতে, পা দিয়ে লাথি দিতে। এভাবে পত্রিকায় এটা প্রচার করলে তার ব্যবসা ভাল হবে_ এমনটাই তাকে বোঝানো হয়েছে। পুলিশ সুপার বলেন, ভ-পীর আমজাদ হোসেনের অক্ষরজ্ঞানও নেই। শুধু দু'টি সূরা (সূরা ফাতেহা ও সূরা এখলাস) জানেন, তাও ভুল।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বানগাঁও গ্রামের যমজ শিশু নিপা-দীপার মা পুষ্প রানী মণ্ডল ও সিরাজদিখানের নয়াগাঁও গ্রামের মানসিক রোগী জরিনা বেগম বাদী হয়ে পৃথক দু'টি মামলা করেছে বলে সিরাজদিখান থানা বিকেলে জানিয়েছে। এছাড়াও পুলিশ বাদী হয়ে আরেকটি মামলা দায়েরের প্রক্রিয়ার কথা জানিয়েছেন এসপি।
প্রতিবেশী জহুরা বেগম জানিয়েছেন, সাংবাদিকের অনুরোধেই ছবিগুলোতে আমজাদ হোসেন পোজ দিয়েছেন। প্রতিবেশী সাকিরা বেগম বলেছেন, জিনের ভর উঠিয়ে মারধরের ভয় দেখিয়ে চিকিৎসা করা হয়েছে। তবে শিশুদের লাথি দিতে বা মারধর করতে তিনি দেখেননি। লোকজনের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হতো বলেও এলাকার মোঃ হাসান জানান। তাঁর এই অপচিকিৎসার আসরের টাকা ভাগবাটোয়ার সঙ্গেও অনেকে জড়িত। ভণ্ডপীর আমজাদ হোসেন জানান, নুরু মেম্বার (৪৫), ইলিয়াস মাদবর, কালাম মাদবর ছাড়াও আসলাম মাদবর (৪৫), খালেক মাদবর (৬০), রেজা মাদবর (৭০), সাঈদ মাদবর (৫০), হোসেন মোল্লা (৪০), রুহুল মেম্বার ও আরব আলী জড়িত। এই কমিটির সভাপতি আরব আলী । তিনি এখন গা-ঢাকা দিয়েছেন। প্রথম ৩ জনকে গ্রেফতার করা হলেও বাকিরা পলাতক রয়েছে। এছাড়া ভণ্ডপীরের পক্ষে আসরে টাকা তুলত সুরত আলী (৬০), মঞ্জিল (৩৫), আমির (৪০)। তাদেরও ধরা যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ১১ বছর মধ্যপ্রাচ্যে ছিল ভণ্ডপীর আমজাদ হোসেন। কিন্তু এতে তাঁর অর্থনৈতিক অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়নি। ভাঙ্গা ঘরের দৃশ্য দেখলেই তা বোঝা যায়। ৪/৫ মাস আগে দেশে এসে রিক্সা বা ভ্যান চালিয়েছেন। তবে প্রথমে ভণ্ডামির এই ব্যবসা শুরুর আগে মিটিংও করা হয়েছে বলে পুলিশ ও ব্যারব নিশ্চিত হয়েছে। প্রথমেই নুরু মেম্বারের মায়ের চিকিৎসা করে ভাল হয়েছে, স্বপ্নে পাওয়া ওষুধে সব রোগ ভাল হয়ে যায় এমন খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
চারপাশে বাঁশের মুলি ও পাটখড়ির বেড়া। ওপরে টিনের চালা। এটাই পীরের বাসভবন। এর পাশে একটি ছোট ঘর সেটি নাকি দরবার শরীফ। সেখানে দুই ঝুড়ি ভরা আপেল। পাশে স্তূপাকারে বিস্কুটসহ নানা কিছু। এগুলো রোগীরা তার জন্য নিয়ে আসে। এর পাশে নতুন টিন ও কাঠের চালার হাসপাতাল, যা দেখে বলা চলে জিন, ভূত-পেত্নী তাড়ানোর অদ্ভুত চিকিৎসা কেন্দ্র। প্রতিবন্ধী চিকিৎসাও চলে এখানে। মাথায় মৌলভীদের ন্যায় কালো কাপড়ের পাগড়ি মোড়ানো, পরনে তাঁর সাদা পাঞ্জাবি ও পাজামা- ওই হাসপাতালটির একমাত্র ডাক্তার ভণ্ডপীর আমজাদের বেশভুষা। তাঁর কয়েকজন সহযোগীও আছেন।
সহযোগীদের নিয়ে ডাক্তার স্বপ্নে দেখা চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করতেন রোগীদের ওপর। ঢাকঢোল বাজিয়ে বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে চিকিৎসা করেন ডাক্তার সাহেব। সিরাজদিখান উপজেলার দুর্গম গ্রাম খাসনগরের কারও সামান্য জ্বর-সর্দি হলেও ওই পীরের (!) কাছে ছুটে যান। পরে আমজাদ রোগীদের ওপর চালান তাঁর স্বপ্নে পাওয়া চিকিৎসা পদ্ধতি।
খাসনগর গ্রামে হঠাৎ করেই আমজাদ পীরের আবির্ভাব হয়। মাস দুয়েক আগে তিনি নিজ বাড়িতে আসত্মানা খুলে বসেন। তারপর রোগীদের আগমন বাড়তে থাকলে তিনি সেখানে ২০ শয্যার হাসপাতাল গড়ে তোলেন। ওই হাসপাতালে কথিত পীর আমজাদ গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের লোকজনকে চিকিৎসা দেন। দারিদ্র্যের সুযোগে পীর আমজাদ হয়ে ওঠেন তাদের কাছে মস্ত ডাক্তার। ১০ টাকা থেকে ১০০ টাকা ফি তাঁর চিকিৎসার জন্য। কেউ কেউ ক্ষেতের লাউ-কুমড়া আর আলু দিয়েও ওই পীরের কাছ থেকে চিকিৎসা পেতেন। এ হচ্ছে মুন্সীগঞ্জের দুর্গম অঞ্চল সিরাজদিখান উপজেলার খাসনগর গ্রামের কথিত পীর আমজাদের চিকিৎসাশালার পটচিত্র।
এখনও রোগীর ভিড়:
খাসনগর গ্রামের একবারে প্রধান সড়ক ঘেঁষে এ ভণ্ডপীরের আসত্মানা। তেঘরিয়া-বেতকা সড়কের বালুর চরবাজারের কাছের এই বাড়িটিতে সোমবার গিয়েও রোগীর ভিড় দেখা গেছে। তাদের যিনি চিকিৎসা করবেন তিনি গ্রেফতার হয়েছেন, নেই সহযোগীরাও। ঘরে ভণ্ডপীরের বউ বাচ্চারাও গা-ঢাকা দিয়েছে। তার পরও রোগীরা যাচ্ছে না। সিভিল সার্জন এএসএম মোসলেম উদ্দিন তাঁর সহযোগীদের নিয়ে গেছেন রোগীদের উপজেলা হাসপাতালে আনতে। কিন্তু তাঁরা কেউ আসবেন না। ভণ্ডপীর আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে তাঁদের কোন অভিযোগ নেই, সবাই বলছেন তাঁর কাছে এসে সুস্থ হচ্ছেন তাঁরা। এমন অন্ধ বিশ্বাসে থাকা একই উপজেলার চাইনপাড়া গ্রামের মোঃ আবুল হোসেন (৩০) অবস্থান করছেন। তাঁর কোমরের হাড়ে সমস্যা। তাই ১৬ দিন ধরে এখানে। তাঁর ধারণা এখানে তিনি ভাল হবেন। আগের থেকে নাকি এখন তিনি অনেকটা ভাল। একই কথা গজারিয়ার তেতুইতলা গ্রামের রানা মিয়ার (৩২)। পঙ্গু এই রানা বলেছেন, হাসপাতালে থেকে অনেক ওষুধ খেয়ে ভাল হচ্ছি না, এখানে এসে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তিনি আছেন মায়ের সঙ্গে। তাঁর মা আবেলা বেগম (৭০) বলেন, সব মনের ব্যাপার, বিশ্বাসের ব্যাপার। বোবা রবিউল (৬০) এই ভণ্ডপীরের আসরে বসেই আছেন। তাঁর স্ত্রী লুৎফা বেগম জানান, স্ট্রোক করে বোবা হয়ে গেছেন তিনি, শরীরের একাংশ প্যারালাইজড। ৬ দিন ধরে এখানে। মানসিক রোগী জরিনা বেগম (৫০) কথা বলেন না। তাঁর সঙ্গে থাকা ভাগ্নে মাহবুব জানান, এখানেই আমরা চিকিৎসা নেব, কোথাও যাব না। মারধর বা নির্যাতনের কথা সবাই অস্বীকার করলেন একবাক্যে। এমন আরও রোগী দেখা গেল। আরেক মহিলা বিছানায় ঘুমাচ্ছেন। এত লোকের আনাগোনা তাঁর কোন খবর নেই। অন্যরা বললেন, পাগল। তাঁর সঙ্গেও কেউ নেই।
আমজাদের বিরুদ্ধে ৩ মামলা:
ভণ্ডপীর আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে সোমবার রাতে ৩টি মামলা হয়েছে। প্রতিটি মামলায়ই ভণ্ডপীরসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। প্রথম মামলাটির সিরাজদিখানের নয়াগাঁও গ্রামের মানসিক রোগী জরিনা বেগমের পুত্র এনামুল হকের, মামলা নং ১২। দ্বিতীয়টি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বানগাঁও গ্রামের যমজ শিশু নিপা-দীপার মা পুষ্প রানী মণ্ডলের। মামলা নং ১৩। সিরাজদিখান থানার ওসি মতিউর রহমান বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করেছেন। মামলা নং ১৪। প্রতারণা ও হত্যাচেষ্টাসহ নানা রকমের অভিযোগ রয়েছে মামলা ৩টিতে। রাত পৌনে ৯টায় পুলিশ সুপার মোঃ সফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, প্রতিটি মামলায়ই ভণ্ডপীর প্রধান আসামি। মঙ্গলবার তাদের কোর্টে হাজির করে রিমান্ড প্রার্থনা করা হবে। পত্রিকায় যে দুই শিশুর ছবি ছাপা হয়েছে সেই যমজ শিশু নিপা-দীপা এখন সুস্থ রয়েছে বলে তিনি জানান। মায়ের সঙ্গে তারাও থানায় এসেছিল। ছবি ছাপা হওয়া মানসিক রোগী জরিনা বেগমও থানায় এসেছিলেন। তাদের পুলিশ থানায় এনে মামলা গ্রহণ করে। প্রথমে তারা মামলা না করে ভণ্ডপীরের পক্ষে কথা বলে। পরে বোঝানোর পর চোখ খোলে এবং মামলা করতে রাজি হয়।
চার কন্যার জনক এই ভণ্ডপীর:
তার এক কন্যার বিয়ে হয়েছে। বাকি ৩ কন্যাই শিশু। স্ত্রী ও শিশু কন্যারা এখন বাড়িতে নেই। তারও এখন আতঙ্কে। তবে তারা কেউ আসামি নয় বলে থানা সূত্র জানায়।
তদন্ত কমিটি গঠন:
সিরাজদিখান উপজেলার খাসনগর গ্রামের ভণ্ডপীরের অপচিকিৎসার ঘটনায় মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসন সোমবার রাত সাড়ে ১১টায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ৩ সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ হাসিনুল ইসলাম। অপর ২ সদস্য হচ্ছেন সহকারী পুলিশ সুপার সাইদুজ্জামান ফারুকী ও মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. রুজদুল করিম। রাত সাড়ে ১১টায় জেলা প্রশাসক মোঃ মোশারফ হোসেন এ তথ্য জানান।
এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ফটোসাংবাদিক ও রিপোর্টারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ফটোসাংবাদিকের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায় এবং রিপোর্টার পনেরো মিনিট পরে ফোন করবেন বলে জানান। কিন্তু তিনি আর ফোন করেননি। এরপর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি বার বার ফোন কেটে দেন।
Click This Link