How Not to Love Nature শিরোনামে গত ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ তে একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করা হয়েছিল স্বনামধন্য সাপ্তাহিক টাইম ম্যাগাজিনে। সবার সুবিধার্থে আমি সেটা বাংলায় অনুবাদ করে এখানে প্রকাশ করলাম।
রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের সমর্থকরা বলতে পারে যে চিংকুরা টাকা খাইয়ে এটা প্রকাশ করেছে। যেমন একাধিক আন্তর্জাতিক মানের পত্রিকাতে যুদ্ধাপরাধী বিচারের নেতিবাচক খবর প্রকাশ করেছে জামাতীরা। সে ব্যাপারে আমার বক্তব্য হল চিংকুদের ট্যাকের জোর জামাতিদের এক নিযুতাংশও না। এই লং মার্চকে সফল করতে তাদের মানুষদের কাছ তেকে অর্থ সাহায্য নিতে হয়েছে।
কি করে প্রকৃতিকে ভাল না বাসতে হয়।
সুন্দরবনের কাছে, কালো ধোঁয়া উদগিরনকারি জলহস্তী, বনের বাঘ, নদীর শুশুক ও অন্যান্য প্রানী ও উদ্ভিদের বাসস্থল হুমকীতে ফেলবে।
সুন্দরবনের মানুষ খেকোই যুগ যুগ ধরে সুন্দরবনকে রক্ষা করে এসেছে মানুষের লোভ লালসা থেকে। সরকারীভাবে যদিও বলা হয়ে থাকে যে বছরে ২০ থেকে ৫০ জন মানুষ বাঘের পেটে যায়, বেসরকারী হিসেবে তার চেয়ে অনেক বেশী মানুষেরই অন্তিম গন্তব্য হয় বাঘের পেট। এই বাঘের ভয়েই ভবিষ্যত চোরা শিকারী আর শিকারী হয়ে উঠতে পারেনা। মানুষ আর বন কেটে এর আয়তন সংকুচিত করতে পারে না। কিন্তু অধুনা পরিবেশবিদরা এই বনের প্রতি আরো প্রতারনাপূর্ণ হুমকি দেখতে পাচ্ছেন এই বনের অস্তিত্বের জন্যেঃ একটি বিশাল ১,৩২০ মেগাওয়াট কয়লা চালিত বিদ্যুৎ প্রকল্প যা সুন্দরবনের মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে রামপালে স্থাপিত হচ্ছে।
সরকার বলছে যে এই প্রকল্পটি যা কিনা যুগ্ম ভাবে বাংলাদেশ সরকার ও ভারত সরকারের মালিকানাধীন ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশনকে দিয়ে পরিচালিত হবে তা স্বল্পমূল্যে বাংলাদেশের দারিদ্র পীড়িত স্থান সমুহে বিদ্যুৎ নিয়ে যাবে। কিন্তু এর বিরুদ্ধে যারা অবস্থান নিয়েছেন তাদের কথা হল যে সুন্দরবনের এত্ত কাছে কয়লা চালিত এই তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি এই এলাকার জলপথ ও অরন্যের ধ্বংস সাধন করবে যা এই এলাকার অসাধারন জীব বৈচিত্রকে পরিপোষন করে-গাঙ্গেয় শুশুক থেকে দেশের প্রতীক রয়াল বেংগল টাইগার পর্যন্ত। নিম্ন ভুমি সম্বলিত, বারে বারে বন্যা কবলিত এই বাংলাদেশে আর একটি ভয়ের বিষয় হল, এই প্রাকৃতিক রক্ষা কবজ না থাকলে যা কিনা ঘুর্নিঝড় ও জলোছ্বাসের সময় এগুলোর শক্তি বহুলাংশে কমিয়ে দেয়, বাংলাদেশের মানুষ আরো তীব্র প্রতিকূল আবহাওয়ার সম্মুখীন হবে।
প্রকৌশলী কল্লোল মোস্তফা, তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য বলেন যে কোনো সুস্থ্য মস্তিষ্ক সম্পন্ন মানুষ এই প্রকল্প বাস্তবায়নে এগিয়ে আসবে না।
এই প্রকল্পের সমালোচনাকারীরা তাদের শংকা সপ্রমান করার জন্য আমেরিকার টেক্সাস অংগ রাজ্যে একই আকারের একটি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদাহরন টেনে আনেন। ১৯৭৯ সালে Fayette এ স্থাপিত এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপনের সময় কর্তৃপক্ষ বলেছিল যে তা থেকে কৃষিতে যৎ সামান্য ক্ষতি হবে। কর্তৃপক্ষ ছিল ভুল। ২০১০ সালে বিজ্ঞানীরা জানায় যে ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বছরে ৩০,০০০ টন সালফার ডাই অক্সাইড বের হয়ে পুরো অংগ রাজ্যের গাছপালা ধ্বংস করে দিচ্ছে। জনগনের চাপে টেক্সাস পাওয়ার অথরিটি এখন ঐ স্থাপনা বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে। রামপালের ঐ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বছরে ৫২,০০০ টন সালফার ডাই অক্সাইড উদ্গিরন করবে।
সরকারের "প্রভাব মূল্যায়ন" যা গত জানুয়ারীতে প্রকাশ করা হয়েছে সেখানে এই সালফার ডাই অক্সাইড গ্যাসের ব্যাপারে উদবেগ জানান হয়েছে। কিন্তু সেখানে এই এলাক্কে আবাসিক ও গ্রাম এলাকা দেখানো হয়েছে বাস্তসংস্থানগত সংকটপূর্ণ এলাকা না দেখিয়ে। আর এতে করে এই বিষাক্ত গ্যাস উদ্গিরনের গ্রহন যোগ্য সীমা অনেক বেড়ে গেছে। তাছাড়াও শেষ পর্যন্ত কারা এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দ্বারা উপকৃত হবে এবং কি ভাবে বর্জ প্রক্রিয়াজাত করা হবে বা ব্যাবহারের পর পশুর নদীতে ফেরৎ যাওয়া পানি কিভাবে পরিশোধন করা হবে তা স্পষ্ট নয়।
আজিজুর রহমান, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম পরিচালক এবং বর্তমানে সরকারের কন্সাল্টেন্ট বলেন যে রাজনৈতিক কারনে কোনো জাতীয় আইন লংঘন করা হয় নি। তিনি বলেন যে তেল ও গ্যাস চালিত বিদ্যুৎ খুবই উচ্চ মূল্য হয়ে পড়ায় কয়লা ছাড়া আমাদের আর কোনো গত্যান্তর নেই। তিনি জোর দিয়ে বলেন এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্যে কোন চাপ (বাইরের) দেয়া হচ্ছে না তাদেরকে-ভারত তাদের নিজস্ব চালক নীতি অনুসরন করে আর আমরা করি আমাদেরটা। একটি বিশেষজ্ঞ দল অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর এই প্রকল্প অনুমোদন করেছে এবং তাদের নিরীক্ষা লব্ধ ফলাফল যে কেউ চাইলে পেতে পারে। তিনি আর বলেন “আমাদের অবশ্যই বাংলাদেশী মান অনুযায়ী সমস্ত দূষন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে ”।
দুষন নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের নিষ্প্রভ অতীতকে সামনে রেখে অনেকেই এ ব্যাপারে সন্দিহান। সংরক্ষিত জলাভূমিতে যথেচ্ছ জাহাজ চলাচল হচ্ছে। ঢাকার সয়েল রিসোর্স ডেভেলাপমেন্ট ইন্সটিটিউটের মতে গত দশ বছরে চিংড়ি চাষ, কাঠ সংগ্রহ ও অন্যান্য ধরনের অনধিকার লব্ধ ভুমি দখলের মাধ্যমে সুন্দর বনের আয়তন কমে গেছে প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর। এরই মধ্যে সরকার সুন্দর বনের পূর্ব সীমায় জাহাজ ভাংগা শিল্প গড়ে তোলার অনুমতি দিয়েছে। এর ফল কি হতে পারে তা চিটাগাং এর সমুদ্র উপকূলের দিকে চোখ ফেরালেই আমরা দেখতে পাই যেখানে বিশাল তেলবাহী জাহাজ নিঃসৃত বর্জ এলাকার মানুষকে বিষাক্ত পরিবেশে বসবাস করতে বাধ্য করছে।
এ সপ্তাহে প্রতিবাদকারীরা আরো বেশী মানুষ যাতে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে ক্ষতির ব্যাপারে সজাগ হয় সে জন্যে ৪০০ কিমি মার্চ করছে (করেছে)। আবদুল্লাহ আবু দিওয়ান, একজন পোড় খাওয়া গাইড ও পরিবেশ সংরক্ষণবাদী বলেন যে মানুষের মধ্যে এখনো ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবনের রক্ষাকারী ভুমিকা ও পরিবেশগত সম্পদ হিসেবে এর মুল্য সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো ধারনা নেই।
তিনি বলেন এই সুন্দরবন হচ্ছে বাংলাদেশের একমাত্র সত্যিকারের বন। এই বন যদি আর না থাকে তা হলে বাংলাদেশের প্রজন্মের পর প্রজন্ম চলে যাবে যারা পরিবেশের কোনো তোয়াক্কাই করবে না কারন যাক দেখা যায় না, ছোঁয়া যায়না এবং ভালোবাসা যায়না তাকে যত্ন করা যায় না।
মুল প্রবন্ধঃ
How Not to Love Nature
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০২