প্রথম পর্ব
গত পর্বে যা শেয়ার করনি তা হচ্ছে ট্রেভল চার্জ ৩০০ টাকা আর আমি যেহুতো জসিম এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে বর্ডার ক্রস করছি তাকে দিতে হয়েছে ২০০ টাকা এবং বনগাঁ থেকে ট্রেনে ভাড়া ২০ রুপি। যারা দালাল ছাড়া যেতে চান তারা নিচের পেপারটি ডাউনলোড করে নিন। ভারতে প্রবেশ এবং বের হওয়ার সময় যেকোন বর্ডারে এই রকম একটা পেপারই আপনাকে ফিলাপ করতে হবে।
ফর্ম
আমি একা একা আসায় নেপাল যাওয়ার প্লানটা বাদ দিলাম তবে নেপালের ভিসা নষ্ট করবো না। শিয়ালদহ থেকে আমাকে এখন যেতে হবে শিলিগুড়ি। যেহুতু আমি আগে নেপাল যাব। কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি কম সময় এবং অল্প ভাড়ায় শিলিগুড়ি যাওয়া ট্রেনের বিকল্প কিছু নেই বললেই চলে। বনগাঁ থেকে শিয়ালদহ স্টেশনে নেমে বাহিরে যাওয়ার আগে টিকেট কেটে নিবো বলে শিলিগুড়ি যাওয়ার ট্রেনের টিকেট কাউন্টার খোঁজতে লাগলাম। ১০-১৫ মিনিটেও যখন খোঁজ মিলেনি তাই একটা কাউন্টারে লাইনে দাড়ানো একজনকে জিজ্ঞাসা করলাম। মে বাংলা জানতা নেহি উত্তর দিল লোকটা। পরে এক কাউন্টারে জিজ্ঞেস করলাম। বাংলাদেশ থেকে আসেছেন প্রশ্নে আমর হ্যা উত্তরে উনি আমাকে একটা ব্যানার দেখিয়ে বলে আপনি ওই ঠিকানায় চলে যান। ওখান থেকেই আপনাকে টিকেট কাটতে হবে। ব্যাগ থকে কেমেরা বের করে ঠিকানাটা ছবি তুলে নিলাম।
যেতে হবে ফেয়ারলিপ্লেস টিকের জন্য। চিন্তা করলাম আজ রাতে থাকার জন্য হোটেল নিলে কম হলেও চারপাঁচশ টাকা লাগবে অন্য দিকে শিলিগুড়ি যেতে ট্রেন ভাড়া। যদি হোটেল ভাড়ার সাথে কিছু টাকা ভরি ভালো একটা বেডসিট নেয়া যাবে। শিয়ালদহ স্টেষন থেকে বেরিয়ে হাতের ডান দিকে দু মিনিট হেটে ফ্লিইওভারে পাশে দাড়ালাম। মিনিট কয়েকের মধ্যে হাওড়াগামী লোকাল বাসে উঠে হেলপারকে ফেয়ারলি নামিয়ে দিতে বলে ১০ রুপি নোট দিলাম। তার কাদে ঝুলানো ব্যাগ থেকে এক থাবায় অনেক গুলো পয়সা থেকে সোনালি রংয়ের পাঁচ রুপি ফেরৎ দিল। গাড়ি ফেয়ারলি না নমিয়ে আমাকে হাওড়া ব্রিজের পাশে নামায়। নামানোর সময় হেলপার সোজা রাস্তা হিসাবে ফেরীঘাট পার হয়ে দু মিনিট হাটতে বলল। ৫ রুপি নিল ঘাটে। যাক হাওড়া ব্রিজটা নদী থেকে দেখার সুযোগে পেলাম। ফেয়ারলিঘাটর সাথেই মিনি পার্ক আছে চাইলে আপনারাও ঘুরে দেখতে পারেন।
ফেয়ারলি হচ্ছে জায়গাটার নাম, আর ফেয়ারলিপ্লেস হচ্ছে ভবনের নাম। এখানে শুধু ফরেনারদের টিকেট দেয়া হয়। ফেয়ারলিপ্লেস প্রবেশের পর আমার কাছে মনে হলো এটা টিকেট কাউন্টার নয়, বিশাল পুরানো প্রাসাদ। দেশের বাহিরে আশা যাত্রীদের বসার জন্য সাজিয়ে রাখা হয়েছে বিরাট আকারের মুগল আমোলের সোফা। সামনে কম্পিউটার নিয়ে বসে আছে কয়েক জন অফিসার। পাশেই সিরিয়াল লিখে রাখা ফর্ম। একটি ফর্ম নিয়ে ফিলাপ করতে কলম নিলাম পাশের সিটে বসা ভদ্র লোকের কাছ থেকে। লোকটি তার ছেলে ও স্রীকে নিয়ে আসছে। ভবনে এতো গুলো লোকের মধ্যে আমি সহ চার জন ছিলাম বাংলাদেশি। ফর্ম ফিলাপ করতে কিছুটা ঝামেলা পোহাতে হল আমাকে। যেমনঃ- আমি কোন ষ্টেশন থেকে উঠবো তার কোড নাম্বার, যে ষ্টেশনের কোড নাম্বার, যে ট্রেনে যেতে চাই ঐ ট্রেনের কোড নাম্বার। ওদের দেশের এতো কিছু আমরা কিভাবে জানবো বলুন। ভাগ্য ভাল এক কর্মকর্তা আরাম করছিল যাত্রীদের সিটে বসে, সুযোগ বুঝে তার পাশের সিটে বসে জিজ্ঞাস করে করে ফিলাপ করি। তবে আপনাদের জিজ্ঞাসা করতে হবেনা। নিচের লিংক থেকে ঘুরে আসুন একবার!!!
ট্রেনের টিকেট কাটার ফর্ম
Railway Station Codes
indian train codes list
টিকেটের মূল্য দেখুন
ভারতে গিয়ে তোলা আমার ছবি
হঠাৎ ২৪ বলে ডাকতে লাগলো আর আমি গিয়ে অফিসারে সামনে বসি, আমার ফর্মের নাম্বার ২৪। ফর্ম আর পাসর্পোট নিয়ে ভিসা চেক করে ৩৫০ রুপি চাইলো। বেডসিটের টিকেট সহ সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে দিল কখন কোথায় থাকতে হবে। পাঁচ রুপি দিয়ে আবার চলে এলাম শিয়ালদহ। ট্রেন ছাড়বে রাত ৮টা ৩০সে, ততখনে খাওয়া দাওয়া করে স্টেশনে আশপাশের বাজার, রাস্তাঘাট ও বিগবাজার সহ বড় বড় মার্কেট গুলো ঘুরে নিলাম।
ট্রেন আসার সময় ছুই ছুই অবস্থা, রাস্তা থেকে সিগারেট টানতে টানতে গেটের দিকে আসছিলাম, গেটের বাহিরে কিছু পিলার ছিল, সিগারট টা শেষ বারের জন্য টান দিয়ে ফেলে দিলাম, আগুনটা পিলারের ভিতরে পড়লো। এই ছেলে বলে পিছন থেকে কে যেন ডাকল, পিছনে তাকিয়ে দেখি পুলিশ মামা। কোথ থেকে আসছি, কি করি, পাসর্পোট ভিসা দেখাও। সবশেষে বলে থানায় চলো, আমাকে নিয়ে হাটছে আর বলছে তোমার দু দিন জেলে থাকতে হবে আর ৭০০ রুপি জরিমানা দিতে হবে ওখানে,আমাকে ৭০০ রুপি দিলে আমি ছেড়ে দিব! কি দিবে? আমি ৫০০ রুপি বললাম কিন্তু সে নিবে না। মনে মনে ভাবছি ঠিক আছে চল ২ দিন ভারত সরকারের উপর থাকা যাবে। পাশেই থানা, পুলিশটা মিথ্যা বলতে চাইলেও আমি স্যারকে পুরো ঘটনা খুলে বলি। স্যার ৩৫০ রুপি জরিমানা করে আমাকে ছেড়ে দেয়। মোবাইলে তাকিয়ে দেখি ৮টা ১৫। তাড়াতাড়ি স্টেশনে এলাম, ট্রেন অলরেডি প্লাটফর্মে থামানো। আমি আমার সিটে বসলাম। ৮টা ৩০সে ট্রেন প্লাটফর্ম ছাড়ে শিলিগুড়ির উদ্দেশে। শিলিগুড়িতে এসে পৌছালাম সকাল ৯টায়। স্টেশনের ডান পাশেই শিলিগুড়ি বাসস্টান। বাসস্টান ওভার করে আরএকটু সামনে হাটলে মেইন রোড। বেশকয়েকটা খাওয়ার হোটেল আছে এখানে। এখানে খাওয়া দাওয়া সেরেছি। খাওয়া দাওয়া সেরে রাস্তার পাশে দাড়িয়ে থাকুন। একটু পর পর লোকাল গাড়ি আসে নেপালের। নেপাল নেপাল বলে ডাকবে কন্টেকটার। যারা ভূটান যেতে চান তারাও এখানেই গাড়ি পাবেন। নেপালের ভাড়া নিল ২০রুপি। গাড়ি ছাড়ার একটু পরই থেমে গেলো একটি ছোট ব্রিজের উপর। ব্রিজের নিচে বয়ে যাওয়া খালে একটা লাশ ভেসে আছে। দেখার জন্য এতো ভীড়। ৩০ মিনিটের মত সময় লাগলো কাকরভিটা আসতে। রিক্সা নিলাম যাওয়ার জন্য। রিক্সা চালক কে আমার পাসর্পোট আছে না বলায় উনি আমাকে নিয়ে নেপাল ঢুকে গেছে। বুঝতেই পারলাম না বর্ডার কোনটা। ভারতের সাথে আমাদের কতইনা করাকরি পাহাড়া আর নেপালের সাথে বর্ডার উনমুক্ত। পরে রিক্সা ঘুরিয়ে আবার ভারত ইমিগ্রেশনে সামনে আসলাম। রিক্সায় বসেই ভাড়া দিচ্ছি। ৩০ রুপি নিল আপডাউন বলে। ওমনেই একলোক বলে ইমিগ্রেশন করবেন। পাসর্পোট দিন। ৫০০ রুপি লাগবে। আমি জানতে চাইছি কেন লাগবে। আমিতো ঢাকা থেকে নেপালের ভিসা নিয়ে আসেছি। কোন বায়না খুজেঁ না পেয়ে বলে আপনার ভিসাতে হরিদাসপুর বর্ডার লিখা এখানে চেংড়াবান্দা হবে। হতে পারে ভেবে ৫০০ রুপি দিলাম। ইমিগ্রেশন শেষ হবার পরও আমার পিছু ছাড়ছেনা। তখন বুঝলাম আরে এটাতো আর কেউনা দালাল।ও যা বলছে সবটাই টাকর জন্য বলছে।
আপনাদের উদ্দেশে বলছি কাকরভিটা নেমে কোন রিক্সা নিবেন না। পাক্কা ২ মিনিট ডানে হেটে বাম পাশেই দেখবেন ভারত ইমিগ্রেশন আফিস। ইমিগ্রেশন শেষে আবার আবার হেটে ব্রিজ পার হবেন। ব্রিজের ডান পাশে নেপাল ইমিগ্রেশন অফিস। ইমিগ্রেশন পার হয়ে আর একটু সামনে এগোলে বেশ কয়েকটা হোটেল আছে। যারা বিশ্রাম নিতে চান এখানে হোটেল নিতে পারেন। আমি এখনেই হোটেল নিয়েছি ২৫০ রুপি দিয়ে।
ইচ্ছে করলে এলাকাটা ঘুরে দেখুন। এখান থেকে কাঠমন্ডুর গাড়ি ছাড়ে বিকাল চারটা থেকে আর ভাড়া নিবে ১১০০ রুপি। রুপি ভাংগাতে চাইলে দেখুন বাসস্টানের পাশে কয়েক জন মহিলা হাতে নেপালি টাকা নিয়ে ডাকছে।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:৪৮