নতুন জামা পরে বাড়ীর সামনে রাস্তার ধারে বসে আছে ছয় বছর বয়সী রাহি।
আর শুধু একটু পর পর উঁকি দিয়ে দেখছে। তার আব্বু আসছে কিনা।
জেলা শহরের পাশেই তাদের বাড়ী। শহরে মেলা বসেছে। রাহীর আব্বু রাহীকে আজ মেলায় নিয়ে যাবে বলেছে।
আব্বু কথা দিলে তা কখনো এদিক ওদিক হয়না জানে রাহি। তাই আগে থেকেই জামা কাপড় পরে প্রস্তুত হয়ে আছে। তাছাড়া আব্বু আজ একটু তাড়াতাড়ী আসবে বলেছে। মনে মনে তাই খুব খুশি রাহি।
কারণ মেলায় গিয়ে যা চায় আব্বু তাই কিনে দেয়। তাছাড়া গতবার রেলগাড়ি, নাগরদোলা, ঘোড়ায় চড়েছিলো। খুব মজা হয়েছিলো।
কি ব্যাপার আব্বু আসেনা কেন? অপেক্ষা করতে করতে এবার একটু বিরক্তই হয়ে উঠলো রাহি।
একসময় আসরের আজান হয়ে যায় । এবার রাহি মনে মনে ঠিক করে নেয় রাগ করবে সে আব্বুর সাথে। আব্বু আসলে কোন কথা বলবেনা । অন্তত মেলায় প্রবেশের আগ পর্যন্ত না। একেবারে উচিত শিক্ষা হবে।
নাহ কিছুতেই হিসেব মিলছে না। আব্বুটা দেরী করার আর সময় পেলোনা। মাগরিবের আজান তো দিয়ে দিলো। আজ বোধহয় আর মেলায় যাওয়া হবেনা। বিষন্ন মনে রাহি বাড়ির দিকে হাটা ধরলো। এমন সময় পেছন থেকে ছোট মামা ডেকে উঠলো। রাহি কোথায় গিয়েছ? রাহির দু চোখ টলমল করে উঠলো । কিছুই বলতে পারলোনা। মামা রাহিকে কোলে করে বাড়ির দিকে নিয়ে হাটা দেয়। ঘরে প্রবেশ করতেই রাহির আম্মু রাহির মামা সবুরকে জিজ্ঞেস করে কিরে তোর দুলাভাই কোথায়? সবুর বললো আমি তো জানিনা। রাহির মা রাবেয়া বললো কেন আমাদের বাড়ী যায়নি? আজ বেতন পেলে বাবার সাথে দেখা করার কথা। তাছাড়া অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে রাহিকে নিয়ে মেলায় যাবে বলেছিলো। এখনো তো এলো না! আরে চলে আসবে চিন্তা করো না। রাবেয়ার উত্কন্ঠা যেন বেড়েই যায়। রাত আটটা। এবার সবাই চিন্তিত। এদিকে রাহি ঘুমিয়ে পড়েছে। অপেক্ষা আর উত্কন্ঠায় রাত কাটালো পরিবারের সবাই। উত্কন্ঠার কারন হলো রাহির আব্বুর মোবাইল ফোনও বন্ধ । অবশেষে সকাল দশটার দিকে রাহির আব্বুর এক কলিগ খবর দিলো যে রাহির আব্বুকে সাদা পোশাকধারী পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তবে তার হদিস এখনো পাওয়া যায়নি। এ কথা শুনেই রাবেয়া বেগম বেহুঁশ হয়ে পড়ে গেলেন। কলিগ জানালো তারা অফিস থেকে কাল রাত থেকে থানার সাথে যোগাযোগ করে চলেছে কিন্তু তার কোন সংবাদ পাওয়া যায়নি। অবশেষে পরদিন বিকেলের দিকে খবর আসলে রাহির আব্বুকে পাওয়া গেছে পাশ্ববর্তী শহরে । তবে জীবিত নয় মৃত। তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।এ খবর শুনে সকলেই স্তম্ভিত হয়ে গেলো। রাহি শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে সবার দিকে তাকায় কিন্তু কিছুই বুঝতে পারে না। .................
অতপর রাহিদের অঙ্কুরেই স্বপ্নভঙ্গ । আর তারা অপেক্ষায় থাকে আব্বুদের কখন এসে তাদের নিয়ে যাবে। কিন্তু রাহিরা জানেনা তাদের আব্বুরা কিছু হিংস্র পশুদের পশুত্বের বলি হয়ে যাচ্ছে। মানুষ নামের কিছু হায়েনাদের হিংস্রতার খোরাকে পরিণত হচ্ছে।
কিন্তু এভাবে আর কত?
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৯:৩৩