খুব বেশি এক্সাইটেড হওয়া উচিত আমার কিন্তু হতে পারছিনা। কারন আজ রুদ্র আমাকে সন্ধ্যায় ছাদে আসতে বলেছে। সে আমাকে খুব ভালবাসে। এসবে আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই। না আমি কাঠখোট্টা মেয়ে নই। তবে... যাক সেই কাহিনি পরে বলছি।
ছাদে ডেকেছে রুদ্র এটা মোটেও আমার ভাল লাগছে না। আমি ভাল চোখে দেখছি না। পুরুষ মানুষের চরিত্র আমি খুব ভাল করে জানি। ভয় আর ঘৃনা দুটিই আমি পুরুষ মানুষের জন্য রেখেছি। আর বিশ্বাস আমি করতে পারিনা। আমি জানি রুদ্র ভাল ছেলে কিন্তু আমি পুরুষ মানুষ বিশ্বাস করিনা। আমার বাবা, ভাই ছাড়া কাউকে বিশ্বাস করিনা। আমি করতে পারিনা। আমি সবসময় পুরুষ মানুষ এভয়েড করি। অনেকদিন ধরে রুদ্র আমাকে ভালবাসে। কিন্তু আমি রাজি হইনি কখনো। এত করে বলার পর আজ বলেছি আচ্ছা আসব ছাদে।
তখন ক্লাস সিক্সে পড়তাম। পাশের বাসার রিতু আপুদের সাথে আমাদের সম্পর্ক ছিল খুব ভাল। রিতু আপুর স্বামী আমাকে খুব আদর, স্নেহ করত। একদিন রিতু আপুদের বাসায় গেলাম রিতু আপুর স্বামী খুব দুষ্টামি করছিল আমাকে কাছে বসিয়ে । হঠাৎ সে আমার বুকে চাপ দিল। ছোট ছিলাম কিছু বুঝে উঠতে পারিনি কি করব। কিন্তু ব্যাপারটা আমি ভুলতে পারছিলাম না। খুব খারাপ লেগেছিল। তারপর আর কোনদিন যাইনি রিতু আপুদের বাসায়। ভয় কাজ করত সবসময়।
ক্লাস টেন এ পড়ি। একদিন বড় চাচার বাসায় গিয়েছিলাম। আমার চাচাত ভাই ভার্সিটি তে পড়ত। ওর সাথে গল্প করছিলাম। আমাকে অবাক করে সে আমার হাতে চাপ দিল আর কিস করতে চাইল । আমি নিজেকে বাঁচিয়ে রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিলাম। সারারাত কেঁদেছিলাম। সকালে উঠেই চলে এসেছি বাসায়। কিন্তু কাউকে কিছুই বলতে পারিনি।
এসব ঘটনার পর আমি আমার জীবনে পুরুষ মানুষ জড়াতে ভয় পাই। রুদ্র ভাল ছেলে তবে আমি ওকে বিলিভ করতে পারিনা। কারন পুরুষ মানেই আমার কাছে আতংক মনে হয়। আমার ছোট বয়সেই মনে যে দাগ পরেছে তা আমি মুছে দিতে পারিনি। কাউকে আমার এই ভয়ের কথা বলতেও পারিনা। নিরবে চোখের জল ফেলি। আমি খুব ঘরমুখো মেয়ে। কোথাও যেতে ইচ্ছে করেনা এসব কারনে। ভয় আমাকে কুড়ে কুড়ে খায়।
রুদ্র আমাদের বাসার পাশের ফ্ল্যাট এ থাকে। সে আমাকে ভালবাসে। খুব করে আমাকে ছাদে আসতে বলছে। ওকে আমারো ভাল লাগে। কিন্তু যখন ও আমাকে ছাদে আসতে বলল তখন আমার ছোট বেলার ঘটনাগুলো মনে পড়ল।
ম্যাসেজ দিলাম
"সরি রুদ্র, আসতে পারবনা ছাদে, ক্ষমা করো -সেতু"
মোবাইল অফ করে দিলাম ম্যাসেজ দেয়ার পরই। আমার ভয়ের কাছে আমার ভালোলাগা হারিয়ে যায় এভাবেই।
কিছু কথাঃ- আমাদের সমাজে মেয়েরা অনেকভাবে যৌন হয়রানির স্বীকার হয়ে থাকে। আমি আমার গল্পে কিছুটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আসলে ছোট বয়সেই মেয়েরা খুব কাছের বা পরিচিত মানুষদের কাছ থেকে যৌন হয়রানির স্বীকার হয়ে থাকে। এতে করে তাদের মনে বিরুপ প্রভাব পড়ে। আমাদের যাদের ছোট বোন, ভাগ্নি, ভাতিজি, অনেকের ছোট মেয়ে আছেন তাদের কে বলব কখনো এদের একা কোথাও ছাড়বেন না। খুব খেয়াল রাখুন এদের প্রতি। আসুন আমরা সচেতন হই নিজের পরিবার পরিজনদের জন্য।