দি রয়্যাল বিনতাং দি কার্ভ হোটেল [সংগৃহীত]
গতদিন লিখেছিলাম "যাত্রা হলো শুরু", লিংক যাত্রা হলো শুরু, আজ বাংলাদেশী ভাইদের নিয়ে কিছু লেখার ইচ্ছে আছে।
পরিচিত-অপরিচিত,স্বনাম ধন্য অনেক লেখকের লেখায় পড়েছি, বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশীরা কতটা বন্ধুবৎসল। পঠিত,অনুভূত সেই সব ঘটনার সাথে, সরাসরি সান্নিধ্যের রেশ অনেক, অনেক বেশী। প্রায় মাস খানেক হতে চললো, তার পরও চুয়াডাঙ্গার শাহীনের ম্লান,কাচু-মাচু মুখটা ভেসে উঠে। দি কার্ভ হোটেলের ৪১৫ নম্বর রুম থেকে বেরোলেই লম্বা সুপরিসর করিডোর,দু'পাশে রুম। রুম থেকে বেরিয়ে ডানে-বায়ে তাকাচ্ছি, নামাজের কেবলা কোন দিকে জানার জন্য।ডান দিকে একটা বড় সাদা ট্রলি চোখে পড়ল,তার মধ্যে কিছু সাদা বেড কভার,সিট-তার সামনের রুমের দরজাট ঈষৎ খোলা। রুম পরিষ্কারের কাজ চলছে, এগিয়ে গেলাম। ২০-২২ বছরের মাঝারি ঊচ্চতার হালকা গড়নের একটা ছেলে বেরিয়ে এলো, আমি ইংরেজীতে জিজ্ঞেস করলাম, পূর্ব-পশ্চিম কোন দিকে। বুঝতে পারছে না দেখে দু'হাত কানের লতি পর্যন্ত নিয়ে আবার ইংরেজীতেই বললাম। বুঝাতে পারছি না, আমার অজান্তেই মুখ দিয়ে বাংলা বেরিয়ে এলো, পূর্ব-পশ্চিম কোন দিকে। যুবক স্মিত হেসে আঙুল দিয়ে আমার পিছন দিকটা নির্দেশ করল। আমি ধন্যবাদ জানিয়ে ফিরে আসছি, যুবক পরিষ্কার বাংলায় জানতে চাইলে আমি বাঙালি কী না? আজ (২৬ শে, এপ্রিল) সকালেই মালয়েশিয়া এসেছি, এ হোটেলেই থাকব সপ্তাহ খানেক। শুনে খুশী হয়ে জানাল ওর নাম শাহীন, বাড়ী চুয়াডাঙ্গা। পড়তে এসে এখন হোটেলে কাজ করছে। কেউ অভিযোগ করলে তৎক্ষণাৎ চাকরী শেষ। মনটা খারাপ হয়ে গেল। দোয়া করতে বললো। রুমে ফিরে নামাজ শেষ করে জায়নামাজে বসে ভাবছি, আমার ছেলের চেয়ে বছর চার-পাঁচেকের বড় একটা ছেলে মায়ের স্নেহের আচল ছেড়ে রঙিন ভবিষ্যতের আশায় বিদেশ-বিভুঁইয়ে মানবেতর-অসম্মানজনক একটা জীবন-যাপন করছে। কোন এক পল্লীর অচেনা-অজানা এক মায়ের জন্য চোখ দু'টো ভিজে উঠল। টেলিফোনটা বেজে উঠল, অনিচ্ছা সত্বেও উঠলাম- রুমি ভাই ফোন করেছে, একটু বেরোতে হবে, কিছু জরুরী কাজ আছে।
রেডি হয়ে দক্ষিনে জানালার কাছে গেলাম- হোটেলের সামনে দিয়ে সুপ্রশস্থ রাস্তা পশ্চিম থেকে পুবে বিস্তৃত, রাস্তার ওপারে IPC শপিং মল, চারি দিকে সুউচ্চ অট্টলিকা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পেটালিং জায়া, নীচের দিকে তাকাতেই চোখ আটকে গেল-নীল জলের সুইমিং পুলটা কড়া রোদ বুকে নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আমার সবেধন নীলমণি মোবাইলটা (নোকিয়া লুমিয়া ৫২৫) দিয়ে কয়েকটা ছবি তুললাম - মনটা ভাল হয়ে গেল।
হোটেলের বিপরীত দিকে-IPC শপিং মল[সংগৃহীত]
সুইমিং পুল[সংগৃহীত]
তিন জন খোশ গল্প করতে করতে হেটে রাস্তার ওপারে IPC শপিং মলটা একটু ঘুরলাম, ৩ টা সীম কিনলাম, হোটেলে ফেরার পথে তারিক রেস্টুরেন্টে খেতে ঢুকলাম। এই শহরে রুমি ভাইয়ের ২য় সফর, আগের বারও এখানে প্রায়ই খেত এবং এক বাঙালি ওয়েটারের সাথে পরিচয় হয়েছিল। এ বেলায় তার ডিউটি নেই, আর এক বাঙালি আমাদের দুপুরের খাবার পরিবেশনা করল। খেতে খেতে দিনের বাকী সময়টার একটা প্লান করা হলো: শাওন (খালেকী ভাইয়ের মামাত ভাই) আসছে ওর গাড়ী নিয়ে, KLCC (Kuala Lumpur City Center) যাব, ওখানে কার্জন ও শামীম থাকবে, সবাই মিলে শপিং মল গুলো চষে বেড়ানো আর জম্পেশ আড্ডা। কার্জন লিডসে নেটওয়ার্কিংয়ে ছিল, সেখান থেকেই আমাদের সাথে পরিচয়। ও মালয়েশিয়ায় ভাল একটা চাকরী নিয়ে এসেছে বেশ কয়েক বছর হলো। অবিবাহিত কার্জনের সাথে ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া শামীমের সখ্যতা হয়ে যায়, ওরা একই ফ্লাটে থাকতে শুরু করে। এর মধ্যে কিশোরগঞ্জের হাওড়ের ছেলে কার্জনের জীবনে এসেছে বউ, আদরের ছোট কন্যা। তাই আলাদা বাসা কার্জনের। শামীমও লেখা-পড়ার পাঠ চুকিয়ে ব্যবসা করছে। শাওনও মালয়েশিয়ান ভাল এক ইউনিভার্সিটি থেকে পাশ করে এখন ভাল চাকরী করছে, গাড়ীও কিনে ফেলেছে।
গতবার মালয়েশিয়া ভ্রমণের সময় কার্জন ও শামীম রুমি ভাইকে অনেক সময় দিয়েছিল, এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলো শাওন।
অন-লাইনে হোটেল বুকিং, অগ্রিম কিছু পেমেন্ট এবং ২৬ থেকে ৩০, প্রায় প্রতিদিন অফিস শেষে ড্রাইভ করে কেএলসিসি থেকে পেটালিং জায়া আসা, তারপর শপিং করা, নিত্য নতুন রেস্টুরেন্টে নিত্য নতুন খাওয়া, তারপর আমাদের হোটেলে ড্রপ করে আবার কেএলসিসি ফিরে যাওয়া-মাত্র কয়েকটি লাইনে আমি শাওনের নিঃস্বার্থ কর্মকান্ড গুলোকে কি সুন্দর বেঁধে ফেলেছি!!! অথচ মনের মাঝে তার স্থান অসীম।
বুকিত বিনতাং--প্যাভিলিয়ন, লো ইয়াত প্লাজা,...স্বপ্নের সেই বিকেলটা শেষ হয়ে সন্ধ্যা নেমে রাতের কোলে ঢলে পড়েছে। মাঝ বয়েসী একটা লোকের মালয়েশিয়ার প্রথম দিনটা তরুণ কিছু ছেলের সাহচর্যে স্মৃতিতে জাগরূক রবে বহু কাল--- ব্লগের এই স্বপ্ল পরিসরে তাকে বাঁধতে চাওয়া বোকামি।তাই কিছু ছবি দিয়ে আজকের মত শেষ করছি।
বুকিত বিনতাং - উপর থেকে[সংগৃহীত]
বুকিত বিনতাং-প্যাভিলিয়ন শপিং মল[সংগৃহীত]
চলবে.......
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১৫ রাত ৮:০০