somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খাম খোলা চিঠি (১) – জন্মান্তর ( অথবা প্রেমপত্র )

০৬ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেই যে তুমি,
আমি যখন শুনেছিলাম তুমি ঘাসফুল হয়ে শুয়ে রয়েছ
সে প্রায় লক্ষ বছর আগের কথা ।
যখন আকাশের রঙ দেখে কবিতা লিখতে শিখেনি মানুষ ।
যখন গারো বাদামি কোনও সমুদ্র পেরুবে বলে পাল তোলেনি নাবিক ।
আমি জেনেছিলাম তুমি ঘাসফুল , এক তেপান্তরের মাঠে ।
অতঃপর তোমাকে ছোঁব বলে একদিন আমি বৃষ্টির কণা হলাম ।
এক গোমড়া মুখো মেঘের ডানার নীচে খুব চাপাচাপিতে ।
আমি এগুতে থাকলাম তোমার পানে ।
পথে আমার কত সুখ দুঃখের সাথী ঝরে গেলো ।
কেউ পাহাড়ের চূড়ার একাকীত্ব বেয়ে নেমে গেলো ।
আর কেউ ঢেউ হতে নদীর আহবানে ।
আমি খুব গুটিসুটি মেরে নিজেকে ভাঁজ করে লুকিয়ে রইলাম ।
অনেক রাত আর আরও অনেক হিসেবহীন রাতের পর পৌছালাম তোমার উপর ।
কি যে আনন্দ হয়েছিলো তোমাকে অমন শুয়ে থাকতে দেখে, অনেক বছর পর ক্লিওপেট্রা ওই ভঙ্গিতেই শুয়ে রবে ।
একসময় আমার ঝরে পরবার পালা এলো ।
আমি প্রবল বেগে পূর্ণতার সুখে নামতে লাগলাম ।
কিন্তু তোমাকে ছোঁয়ার আগেই কেউ একজন তোমার উপরে এসে দাঁড়ালো ।
তার কালো কাপড়ে ধাক্কা খেয়ে ছিটকে চলে গেলাম কোনদিকে ।
উতপ্ত জমিনে নিঃশোষিত হলাম নিমিষে ।
তুমি জানলে না আমি এসেছিলাম।


আমি যখন শুনেছিলাম তুমি মৌমাছি হয়েছ
সে প্রায় হাজার বছর আগের কথা ।
তখন মানুষ পাতার শরীরে লিখতে শিখে গেছে বৃক্ষের ইতিহাস ।
একটি ক্ষুদ্র নক্ষত্রকে বিশ্বাস করে হেঁটে হেঁটে হারিয়ে গেছে বহুদুর ।
আমি শুনেছিলাম তুমি মৌমাছি হয়ে ভেসে বেরাও সৌরভের গায়ে ।
অতঃপর তোমাকে ছোঁব বলে আমি পাঁচটি পাপড়ির ফুল হয়েছিলাম।
পৃথিবীর সব সৌন্দর্য মেখে লজ্জায় নুইয়ে ছিলাম ।
আর আড়চোখে তাকিয়ে ছিলাম এক দিগন্ত থেকে আরেক দিগন্তে এক বিরহকাল ।
একদিন খুব বাতাসে ঝরে গেলো একটি পাপড়ি ।
আমার মন খারাপ আমার পূর্ণতাকে তুমি পেলে না তাই ।
আরেকদিন বৃষ্টিতে নিয়ে গেলো আরেকটি পাপড়ি, খুব অক্ষমতায় হারালাম তাকে ।
দুষ্টু ছেলের দল ছিঁড়ে নিলো আরেকটি পাপড়ি । খুব কেঁদেছিলাম কেউ দেখেনি ।
আরেক পাখি এসে অশুচি করে দিলো আমার চতুর্থ পাপড়ি ।
সে পাপড়ি আমি নিজেই ফেলে দিয়েছিলাম , আমার অপবিত্রতা তোমাকে দেখাবো না বলে ।
আমার পক্ষাঘাতগ্রস্ত সৌরভে তুমি আসবে না জেনেও দাঁড়িয়েছিলাম স্কাইলাইটের মতো একা ।
রোদে রোদে একদিন তাও ঝরে গেলো ।
তুমি জানলে না আমি তোমার জন্যই জন্মেছিলাম ।

আমি যখন শুনেছিলাম তুমি খুব ছোট্ট ঘুণপোকা হয়েছ
সে প্রায় একশ বছর আগের কথা ।
কেউ কেউ রক্তের গন্ধে পিছলে যাচ্ছে গভীরতর অভ্যাসে ।
কেউ কেউ ইকারুসের ডানার তলায় দাঁড়িয়ে আছে প্রশ্নবোধক হয়ে ।
আমি শুনেছিলাম তুমি ঘুণপোকা হয়ে কেটে যাও পাতার পর পাতা।
অতঃপর তোমাকে ছোঁব বলে আমি একটা কবিতা হয়েছিলাম ।
পৃথিবীর যাবতীয় উপমা গায়ে মেখেছিলাম আমি ।
প্রতিটা শব্দকে সাজিয়েছিলাম বিসন্নতম সুখী কলম দিয়ে ।
তারপর চুপচাপ ভাঁজ হয়েছিলাম বইয়ের শেষ পাতাটিতে ।
যেদিন তুমি বইটি কাটতে আসলে কি এক অপূর্ব আনন্দ, ঝাপসা হয়ে গিয়েছিলাম আমি ।
তাই বুঝি তোমার চোখে পড়লাম না ।
আমাকে রেখে চলে গেলে পাশের ঝাঁ তকতকে বইটির কাছে ।
আমার আর্তনাদ কোনোদিন আমার বই পেরিয়ে তোমার কাছে পৌঁছেনি ।
তবুও অপেক্ষায় ছিলাম ।
একদিন অন্য ঘুণপোকারা এসে আমাকে স্পর্শ করলো ।
আমার সবকিছু তাদের কাছে সমর্পণ করলাম এই ভেবে ভিড় দেখে যদি আসো ।
আমি আমার শেষ শব্দটি পর্যন্ত খুঁজেছিলাম তোমাকে ।
তুমি আসলে না । জানলে না আমি শুধু তোমার অপেক্ষাই করেছিলাম ।


আমি যখন শুনেছি তুমি রাজকন্যা হয়েছ
জানিনা কবেকার সে কথা ।
কারও কারও ঝরা নক্ষত্রের পরের প্রার্থনা এখন তুমি ।
কারও কারও ভাঙ্গা স্বপ্নের শেষ টুকরোটির মতো নিঃসঙ্গতার কারন তুমি ।
আমি শুনেছি তুমি রাজকন্যা, বন্দি আছো সোনার কাঠি রুপার কাঠি নিয়ে ।
অতঃপর তোমাকে ছোঁব বলে আমি মানুষ হয়েছি ।
শেষ রাতের চাঁদ যেখানে ডুবে যায় ততদুর যাবো বলে পায়ে বেঁধেছি পঙ্খিরাজ ।
বুক জমাট ব্যর্থতার কষ্টগুলোতে পাঁজর হয়েছে ধারালো তলোয়ার ।
তোমাকে শুনাবো বলে লক্ষ বছর ধরে জমিয়ে যাচ্ছি মধুরতম গল্পগুচ্ছ ।
আমার নির্ঘুম পলকতলে জ্বলজ্বল করে জ্বলছে রঙ্গিন পোস্টার ।
“তোমাকে ছুঁতে চাই” ।
আমি এসেছি । আমি জন্ম নিয়েছি । আমি অপেক্ষা করছি ।


এইবারও কি তুমি আমাকে ছোঁবে না ??
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ২:১৭
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×