সেই যে তুমি,
আমি যখন শুনেছিলাম তুমি ঘাসফুল হয়ে শুয়ে রয়েছ
সে প্রায় লক্ষ বছর আগের কথা ।
যখন আকাশের রঙ দেখে কবিতা লিখতে শিখেনি মানুষ ।
যখন গারো বাদামি কোনও সমুদ্র পেরুবে বলে পাল তোলেনি নাবিক ।
আমি জেনেছিলাম তুমি ঘাসফুল , এক তেপান্তরের মাঠে ।
অতঃপর তোমাকে ছোঁব বলে একদিন আমি বৃষ্টির কণা হলাম ।
এক গোমড়া মুখো মেঘের ডানার নীচে খুব চাপাচাপিতে ।
আমি এগুতে থাকলাম তোমার পানে ।
পথে আমার কত সুখ দুঃখের সাথী ঝরে গেলো ।
কেউ পাহাড়ের চূড়ার একাকীত্ব বেয়ে নেমে গেলো ।
আর কেউ ঢেউ হতে নদীর আহবানে ।
আমি খুব গুটিসুটি মেরে নিজেকে ভাঁজ করে লুকিয়ে রইলাম ।
অনেক রাত আর আরও অনেক হিসেবহীন রাতের পর পৌছালাম তোমার উপর ।
কি যে আনন্দ হয়েছিলো তোমাকে অমন শুয়ে থাকতে দেখে, অনেক বছর পর ক্লিওপেট্রা ওই ভঙ্গিতেই শুয়ে রবে ।
একসময় আমার ঝরে পরবার পালা এলো ।
আমি প্রবল বেগে পূর্ণতার সুখে নামতে লাগলাম ।
কিন্তু তোমাকে ছোঁয়ার আগেই কেউ একজন তোমার উপরে এসে দাঁড়ালো ।
তার কালো কাপড়ে ধাক্কা খেয়ে ছিটকে চলে গেলাম কোনদিকে ।
উতপ্ত জমিনে নিঃশোষিত হলাম নিমিষে ।
তুমি জানলে না আমি এসেছিলাম।
আমি যখন শুনেছিলাম তুমি মৌমাছি হয়েছ
সে প্রায় হাজার বছর আগের কথা ।
তখন মানুষ পাতার শরীরে লিখতে শিখে গেছে বৃক্ষের ইতিহাস ।
একটি ক্ষুদ্র নক্ষত্রকে বিশ্বাস করে হেঁটে হেঁটে হারিয়ে গেছে বহুদুর ।
আমি শুনেছিলাম তুমি মৌমাছি হয়ে ভেসে বেরাও সৌরভের গায়ে ।
অতঃপর তোমাকে ছোঁব বলে আমি পাঁচটি পাপড়ির ফুল হয়েছিলাম।
পৃথিবীর সব সৌন্দর্য মেখে লজ্জায় নুইয়ে ছিলাম ।
আর আড়চোখে তাকিয়ে ছিলাম এক দিগন্ত থেকে আরেক দিগন্তে এক বিরহকাল ।
একদিন খুব বাতাসে ঝরে গেলো একটি পাপড়ি ।
আমার মন খারাপ আমার পূর্ণতাকে তুমি পেলে না তাই ।
আরেকদিন বৃষ্টিতে নিয়ে গেলো আরেকটি পাপড়ি, খুব অক্ষমতায় হারালাম তাকে ।
দুষ্টু ছেলের দল ছিঁড়ে নিলো আরেকটি পাপড়ি । খুব কেঁদেছিলাম কেউ দেখেনি ।
আরেক পাখি এসে অশুচি করে দিলো আমার চতুর্থ পাপড়ি ।
সে পাপড়ি আমি নিজেই ফেলে দিয়েছিলাম , আমার অপবিত্রতা তোমাকে দেখাবো না বলে ।
আমার পক্ষাঘাতগ্রস্ত সৌরভে তুমি আসবে না জেনেও দাঁড়িয়েছিলাম স্কাইলাইটের মতো একা ।
রোদে রোদে একদিন তাও ঝরে গেলো ।
তুমি জানলে না আমি তোমার জন্যই জন্মেছিলাম ।
আমি যখন শুনেছিলাম তুমি খুব ছোট্ট ঘুণপোকা হয়েছ
সে প্রায় একশ বছর আগের কথা ।
কেউ কেউ রক্তের গন্ধে পিছলে যাচ্ছে গভীরতর অভ্যাসে ।
কেউ কেউ ইকারুসের ডানার তলায় দাঁড়িয়ে আছে প্রশ্নবোধক হয়ে ।
আমি শুনেছিলাম তুমি ঘুণপোকা হয়ে কেটে যাও পাতার পর পাতা।
অতঃপর তোমাকে ছোঁব বলে আমি একটা কবিতা হয়েছিলাম ।
পৃথিবীর যাবতীয় উপমা গায়ে মেখেছিলাম আমি ।
প্রতিটা শব্দকে সাজিয়েছিলাম বিসন্নতম সুখী কলম দিয়ে ।
তারপর চুপচাপ ভাঁজ হয়েছিলাম বইয়ের শেষ পাতাটিতে ।
যেদিন তুমি বইটি কাটতে আসলে কি এক অপূর্ব আনন্দ, ঝাপসা হয়ে গিয়েছিলাম আমি ।
তাই বুঝি তোমার চোখে পড়লাম না ।
আমাকে রেখে চলে গেলে পাশের ঝাঁ তকতকে বইটির কাছে ।
আমার আর্তনাদ কোনোদিন আমার বই পেরিয়ে তোমার কাছে পৌঁছেনি ।
তবুও অপেক্ষায় ছিলাম ।
একদিন অন্য ঘুণপোকারা এসে আমাকে স্পর্শ করলো ।
আমার সবকিছু তাদের কাছে সমর্পণ করলাম এই ভেবে ভিড় দেখে যদি আসো ।
আমি আমার শেষ শব্দটি পর্যন্ত খুঁজেছিলাম তোমাকে ।
তুমি আসলে না । জানলে না আমি শুধু তোমার অপেক্ষাই করেছিলাম ।
আমি যখন শুনেছি তুমি রাজকন্যা হয়েছ
জানিনা কবেকার সে কথা ।
কারও কারও ঝরা নক্ষত্রের পরের প্রার্থনা এখন তুমি ।
কারও কারও ভাঙ্গা স্বপ্নের শেষ টুকরোটির মতো নিঃসঙ্গতার কারন তুমি ।
আমি শুনেছি তুমি রাজকন্যা, বন্দি আছো সোনার কাঠি রুপার কাঠি নিয়ে ।
অতঃপর তোমাকে ছোঁব বলে আমি মানুষ হয়েছি ।
শেষ রাতের চাঁদ যেখানে ডুবে যায় ততদুর যাবো বলে পায়ে বেঁধেছি পঙ্খিরাজ ।
বুক জমাট ব্যর্থতার কষ্টগুলোতে পাঁজর হয়েছে ধারালো তলোয়ার ।
তোমাকে শুনাবো বলে লক্ষ বছর ধরে জমিয়ে যাচ্ছি মধুরতম গল্পগুচ্ছ ।
আমার নির্ঘুম পলকতলে জ্বলজ্বল করে জ্বলছে রঙ্গিন পোস্টার ।
“তোমাকে ছুঁতে চাই” ।
আমি এসেছি । আমি জন্ম নিয়েছি । আমি অপেক্ষা করছি ।
এইবারও কি তুমি আমাকে ছোঁবে না ??
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ২:১৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





