শেষ কবে কোন জায়গা দেখে অবাক হয়েছি মনে করতে পারছি না। আমার বাসা থেকে লালবাগ কেল্লা হেলে-দুলে চললে- তিন মিনিটের পথ। কি মনে করে আজ ভোরে ঐ পথ দিয়েই চলছিলাম। বিশাল-উঁচু দেয়ালের পাশ দিয়ে যাবার সময় ভেতরে ঢোকার ইচ্ছাটাকে সংযত করা গেলো না।
ভোরঃ ৫.৩০
ঢোকার মুখেই টিকেট ঘর; দুই টাকা।
এতো সুন্দর একটা স্থাপনায় প্রবেশ মূল্য মাত্র দুই টাকা!!!
(শুধু প্রাতঃ ভ্রমনের জন্য প্রযোজ্য)
ঢুকলাম আর বিস্ময়ের শুরু। অবাক হয়ে একজন সুবেদারের অসাধারণ রুচিবোধ, আভিজাত্য আর সৌন্দর্য প্রীতির গভীরতা মাপতে চেষ্টা করলাম।
আল্লাহ্! এতো অসাধারণ আজ কেন লাগলো লালবাগ কেল্লাকে। গিয়েছি তো এর আগেও- কই আজকের মতো এমন অনুভুতি তো কখনো হয় নি! কেল্লার দেয়ালে, স্থাপনায়, রাস্তায় আমার কেমন যেন মনে হোল আমি মোঘল আমলে চলে গেছি, আমি যেন দরবার হলে শায়েস্তা খানের সামনে বসে তার কথা শুনছি, তার হাম্মাম খানায় ঝরে পরা ঠাণ্ডা-গরম জলের কলকল শব্দ শুনছি, যেন দু চোখ ভরে দেখছি পরী বিবির জল কেলি। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পুরো কেল্লার আনাচে কানাচে ঘুরে যেন সেই যুগের কোন এক বাসিন্দা হয়ে গেছি আমি। তন্দ্রা-মোহাচ্ছন্নতা এখনও কাটছে না।
পরী বিবির কবরের সামনে গিয়ে বুকটা হুহু করে উঠলো; আপন হারানোর ব্যথার মতো কবরের অস্পষ্ট ছায়া বুকটাকে ভীষণ রকম ভার করে দিল। পুকুর পারে এসে এর গভীরতা আর বিশালতা পরোখ করলাম। দেখলাম কত নিখুঁত। এক’ই সমান্তরালে মসজিদ, পরী বিবির মাজার, মহল আর পুকুর। আলো-বাতাস আর বিশালতার মাঝে দাঁড়িয়ে, কাঠখোট্টা ঢাকার জীবন বড্ড নীরস ঠেকল। ঢাকার ধনীদের এমন রুচি-বোধ থাকলে কত ভালো হত!
হরেক বয়সি মানুষের পদচারনায় কেল্লার শান্তি ভঙ্গ। মানুষ ব্যরামে হাঁটে না হাঁটাই ব্যরাম বোঝা গেলো না। পাট কাঠির মতো সরু, বাঙ্গীর মতো বেঢপ নর-নারীর দৌড়-ঝাপ দিয়ে শরীর ঠিক করার প্রয়াসে আয়েস করে ঘোরায় কিছুটা মন্দা আসলো। জোর বাতাসে যার উড়ে যাবার বিশাল সম্ভাবনা, বুঝে পেলাম না সে কি কমাতে এমন ভাবে দৌড়াচ্ছে! দেয়ালের গায়ে কতশত নাম; প্রেমিক-প্রেমিকার নামে নামে ঢাকা শায়েস্তা খানের প্রাচীর। নিজের নামটাও দেখলাম। দুনিয়ায় আমার নামে কত লোক । রুমমেটটাও বাদ গেলো না!!!
অসাধারণ সুন্দর এই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের কাছাকাছি যাদের আবাস তাঁদের বিনয়ের সাথে বলছি- কাঠ-কয়লা-ফরমালিন আর সীসার এই শহরে “লালবাগ কেল্লা”র মতো সুন্দর একটা জায়গায় সকাল-সকাল ঘুরে বেড়ালে আপনার মন্দ লাগতো না।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৫