ইট পাথরের চার দেয়ালের ভিতর বন্দি থাকতে থাকতে বারবার ফাঁক ফোকর খুঁজছিলাম কবে একটু সবুজের ভেলায় ভাসতে পারব, আকাশের দিকে নিরবে তাকিয়ে থাকতে পারব কেউ আমাকে বিরক্ত করবে না- ঢাকার রাস্তার ভ্যা ভ্যা প্যা প্যা আমার আর আকাশের সাথে সখ্যতাকে নষ্ট করতে পারবে না। অনেক কষ্ট করে সময় বের করে ফেললাম তিন দিন- বান্দরবানের যতটুকু ঘুরে দেখা যায় ঐ টুকুই যথেষ্ট- এই ভেবে বেড়িয়ে পরলাম। আমার অভিজ্ঞতার কিছু রস এখানে থাকল যেন অনন্যারাও সে রস এর কিছু আস্বাদন করতে পারে।
ঈদের দিন বিকাল বেলা। কথা ছিল স্কুলের মাঠে ফুটবল খেলা হবে- হয় খেলবো নয়ত দেখব। কিন্তু কোনটাই হল না, বেরিয়ে পরলাম বান্দরবানের উদ্দেশে, সাথে দুই বন্ধু। ঢাকা থেকে রাত ১২:১৫ মিনিটে রওনা দিলাম গ্রীনলাইন এ করে (যাওয়ার সময় রাতে রওনা দেয়াটা ভাল। তাতে বাস এ রাত কাটানো যায়, বাড়তি হোটেল ভাড়া লাগে না, বাড়তি সময় নষ্ট হয় না। তবে ভাল বাস অবশ্যই হতে হবে [গ্রীনলাইন-এসি-১০০০ থেকে ১২৫০], তা না হলে ক্লান্ত হয়ে গেলে পরদিন সকালে ঘোরাঘুরি করা যায় না।), ভোর ~৬:০০ টার দিকে চিটাগং পৌঁছলাম। বাস যেখানে নামিয়ে দেয় সেখান থেকে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া বাস টার্মিনাল এ সিএনজি করে যেতে লাগে ৩০ মিনিট এর মতো (ভাড়া- ১৫০ টাকা)। এই টার্মিনাল থেকে ৮:০০ টার আগে বাস ছাড়ে না, তাই ৮:০০ অবধি বসে বসে মাছি মারলাম। তবে বুদ্ধি মানের কাজ হল একটু ফ্রেশ হয়ে কিছু খাওয়া দাওয়া করে নেয়া। ৮:০০ টায় বাস ছেড়ে ~১০:০০ টায় বান্দরবান পৌঁছলাম। এই টার্মিনাল থেকে প্রথমে কোন জায়গার উদ্দেশে রওনা দিব এই নিয়ে আমাদের চিন্তা ভাবনা করতে হয়েছে, কারন আমাদের কাররই বিভিন্ন লোকেশান এর দূরত্ব এবং সময় সম্পর্কে ধারনা ছিলনা, তাই আমরা একজন অটো ড্রাইভের কাছে জিজ্ঞাস করে আইডিয়া নিলাম। তারপর প্রথমে অটোরিক্সা করে নীলগিরি এর বাস টার্মিনাল এর দিকে গেলাম (ভাড়া- ৫ টাকা মাত্র!) (এই ক্ষেত্রে বাস থেকে নামার সাথে সাথে অটোরিক্সাতে চরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নীলগিরির বাস টার্মিনাল এ যাওয়া উচিত, তা না হলে ভাল সিটগুলো পাওয়া যায় না। এই টার্মিনাল থেকে চান্দের গাড়িতে যেতে চাইলে ৮-১০ জন বন্ধু মিলে যাওয়া ভাল কিংবা চান্দের গাড়ির টার্মিনাল এ গিয়ে কোনও গ্রুপ এর সাথে একসাথে মিলে যাওয়া যায়। চান্দের গাড়ির টার্মিনাল বান্দরবান বাস টার্মিনাল এর কাছেই- হেঁটেই যাওয়া যায়)।
নীলগিরি বাস এ যেতে লাগে ~২:৩০ থেকে ৩:০০ ঘণ্টা, ভাড়া- ১১০ টাকা। (চান্দের গারি/জিপ ভাড়া- ২৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা; সময় ভেদে) পথটা পাহাড়ের উপর দিয়ে চলে গেছে দুই পাশে ঘন সবুজের মাঝখান দিয়ে; কোথাও শুধু একপাশে বন অন্য পাশে খাড়া নেমে গেছে পাহাড়ের ঢাল। কোলাহলবিহীন এই রাস্তায় যেতে কখনও মনেই হবে না বাস এ চরলে ক্লান্তি আসে, বরং বেশ উপভোগ করা যায়। বাস ড্রাইভারের অসামান্য দক্ষতায় আকা বাকা পাহাড়ি পথ ধরে কখনও পাশের গভীর খাদে না পরেই আমরা পৌঁছে গেলাম নীলগিরির চুড়ায়। এই পর্যটন কেন্রটি সেনাদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, তাই অনেক সাজানো গোছানো। এখানে যেতে যে রাস্তাটা পরবে এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু পাকা রাস্তা। নীলগিরির পর্যটন কেন্ত্রটি বাংলাদেশের সচেয়ে উঁচু পর্যটন কেন্র। এখান থেকে ফেরার বাস খুব রেগুলার না, তাই বাস এর জন্য আমাদের ওয়েট করতে হয়েছিল। সাধারনত ১২ টার দিকে এবং ২-৩ টার দিকে বাস পাওয়া যায়। (মুলত এই বাস গুলো বান্দরবান থেকে থানচি যায়। নীলগিরি হল বান্দরবান আর থানচি এর মাঝখানে।) বিকালে বান্দরবান এ ফিরে একটা হোটেল এ উঠলাম (ভাড়া-১২০০ টাকা থেকে ২০০০ এর ভিতর)। রাতে ভাল করে বিশ্রাম নিলাম যেন কালকে পুরো উদ্যমে নতুন করে যাত্রা শুরু করতে পারি।
পর দিন সকালে উঠেই আমরা রওনা হয়ে গেলাম বগালেকের উদ্দেশে। আমরা চাচ্ছিলাম যত কম সময়ে যত বেশি জায়গায় ঘোরা যায় সেই চেষ্টায়। তাই তাড়াতাড়ি রুমা বাজার এর বাস টার্মিনাল এ চলে গেলাম। (ভাড়া- ~১৬০ টাকা; সময় লাগে ~৩ ঘণ্টার মতো)। এই রাস্তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নীলগিরি রাস্তার মতই- একদিকে বন আর একদিকে খাড়া পাহাড় নেমে গেছে। আমাদের কপাল খারাপ, বাস রুমা বাজার পৌছার আগেই সাঙ্গু নদীর সেতুর উপর নষ্ট হয়ে গেল। এর পর আমরা কিছুদূর হেঁটে চান্দের গাড়িতে করে রুমা বাজার পৌঁছলাম। চান্দের গাড়ির ছাদের উপর বসে ভাঙ্গা মাটির রাস্তায় চলার মজাই আলাদা, না চরলে বোঝানো যাবে না! এর পর বগালেক, কেওকারাডং আর জাদিপাই ঝর্নার গল্প। (চলবে...)
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১:০৭