somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘জীবনেরে কে রাখিতে পারে, আকাশের প্রতি তারা ডাকিছে তাহারে।'

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১০:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(২০১৫ সালের ২৪ মে পটুয়াখালী থেকে লঞ্চে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছলাম। পদ্মা পাড়ি দিতেই বিপত্তি। ঝড় শুরু হয়েছিল। একপর্যায়ে তাৎক্ষণিকাভাবে ফেসবুকে একটা স্টাটাস দিয়েছিলাম। স্টাটাসটি পড়ে অনেকে সারা রাত ঘুমাননি। কান্নাকাটি করেছিলেন। এই স্টাটাসটি এখানে শেয়ার করলাম।)

এক.
দুর্যোগ নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের একটি ফোরামে পটুয়াখালী জেলার পক্ষে অংশ নেয়ার জন্য ঢাকা যাচ্ছি। বিকালে আবহাওয়া ভালোই ছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ আগে শুরু হয়েছে ঝড়। মুহূর্তেই নদীর চেহারা দেখার মতো। আমি এখন বড় নদীতে। চারদিকে অন্ধাকার। বিশাল ঢেউয়ের ওপর খেলনার মতো দুলতে দুলতে এই লঞ্চটি এগিয়ে চলছে। পুরো লঞ্চজুড়ে নিস্তব্ধতা। অনেকে উচ্চস্বরে আল্লাহ বিল্লাহ করছেন। কেউ কেউ বাচ্চাদের বুকে জড়িয়ে ধরে রাখছেন। আমি ৩০৩ নং কেবিনে রয়েছি। কিছুক্ষণ আগে সবার অবস্থা দেখার জন্য বাইরে বেরিয়ে ডেকগুলো ঘুরে দেখলাম। কেউ কারো দিকে তাকানোর ফুসরত নেই। মৃত্যু নিয়ে দেশি বিদেশী অনেক সাহিত্য পড়েছি। এ মুহূর্তে অত লেখার সময়ও নেই। ওদিকে কালকের ফোরামের জন্য প্রেজেন্টেশন পুরোটা তৈরী করা হয়নি। তারপরেও মানুষের মৃত্যুভয় দেখে মৃত্যু নিয়ে লিখতে ইচ্ছা করছে।

দুই.
মৃত্যু নিয়ে আমার মধ্যে কোন বিকার নেই। জীবনে বহু ঝড় ঝঞ্ঝার মধ্য দিয়ে বড় হয়েছি। আমি বিপদে পড়লে পেছনের বিপদের কথা মনে পড়ে। মৃত্যুভয় আমার কমই রয়েছে। যেটা অবশ্যম্ভাবী তা নিয়ে চিন্তা না করাই ভালো। ভাবি গত শতাব্দীতে যারা বেচেঁ ছিলেন তারা এখন কেউ নেই। ওই সময়ে যারা ২৫ বছর বেচেঁ ছিলেন তখনকার জীবীতরা হয়ত আফসুস করেছিল। অথচ এখন আমাদের কাছে সবাই সমান। জীবনের মজাটাই এখানে। মৃত্যু যার শেষ করে নাকি শুরু করে কারও জানা নেই। এই মৃত্যু এতটাই রহস্যময়, যাকে ঘিরেই কত বিশ্বাসের উদ্ভব। ভাবতে অবাক লাগে।

তিন.
রবীন্দ্রনাথ মৃত্যুশোক নামে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। কয়েকটি বাক্য মনে আছে- 'মৃত্যুর সঙ্গে যে পরিচয় হইল, তাহা স্থায়ী পরিচয়।' 'যাহা আছে এবং যাহা রহিল না, এই উভয়ের মধ্যে কোনোমতে মিল করিব কেমন করিয়া!' তিনি লিখলেন, 'শূন্যতাকে মানুষ কোনোমতেই অন্তরের সঙ্গে বিশ্বাস করতে পারে না। যাহা নাই, তাহাই মিথ্যা, যাহা মিথ্যা তাহা নাই’।” তবে কি মৃত্যু একটি মিথ্যা বিষয়? বিরাট শূন্যতা? তাহলে শূন্যতাকে ঘিরে মানুষের এত ভয় কেন? কবিতায় তিনি বলেছিলেন, "মরণরে তুহু মম শ্যাম সমান।" কিম্বা- ''মরণ যেদিন দিনের শেষে আসবে তোমার দুয়ারে, সেদিন তুমি কি ধন দেবে উহারে। ভরা তোমার পরাণখানি, সম্মুখে তার দিবে আনি, শূন্য বিদায় করবেনাতো উহারে।'' যেটা না লিখলেই নয়- তাহলো- ‘জীবনেরে কে রাখিতে পারে, আকাশের প্রতি তারা ডাকিছে তাহারে।' পাবলো নেরুদার কবিতায় মৃত্যু এসেছে অসাধারণরূপে। তার একটি কবিতার নাম নি:সংগ মৃত্যু। তাতে শেষ কয়েকটি লাইন এই রকম-
মৃত্যু আমাদের দোলনার আশেপাশে
সস্তা মাদুরে, কালো কম্বলে মৃত্যু মাথা গুঁজে থাকে,
তারপর সহসা উধাও-
বিষন্ন শব্দে চাদর দুলিয়ে সে চলেযায়
আর বিছানাগুলো পাল তুলে ভেসে যায় বন্দরের দিকে
যেখানে সম্রাটের মতো সুসজ্জিত পোশাকে অপেক্ষা করে থাকে মৃত্যু।

চার.
আমার দেখামতে সাহিত্যে মৃত্যু নিয়ে রোমন্টিসিজমের অভাব নেই। মৃত্যু যে কেমন শ্যাম তা হয়ত কবিরা জীবন থেকেই বুঝতে পেরেছেন।
কখনো-সখনো ছাদের কার্ণিশে দাঁড়িয়ে ,
মৃত্যুকে মনে হয় সমূদ্রের মতো, উদ্দাম হাওয়ায়
উড়তে থাকা তোমার চুল।
হতেও তো পারে, মৃত্যু
অবিরাম ঝরতে থাকা বৃষ্টির প্রহরে
চলে যাওয়া দিনের চেয়ে মহত্তর কোনো কাব্য ।
আমি ছাদের কার্ণিশে দাড়িযে নয়, বিশাল নদীর মাঝে ভেসে থাকা একটি লঞ্চের অগণিত মৃত্যুভয়ে প্রকম্পিত এক জটলা মানুষের মাঝখানে দাড়িয়ে এখন মৃত্যুকে দেখছি.....এটা ঠিক রেল লাইনের একপ্রান্তে দাড়িয়ে অন্যপ্রান্তকে দেখা। বড়ই সরু। বড়ই দুর্গম। অথচ সে পথে কত সহজেই না যাওয়া যায়!
(চলবে....

মৃত্যু যদি জীবনেরে রেখে যায়, তুমি তারে জ্বেলে রেখো চোখের তারায়

কাজী সায়েমুজ্জামান
রাত ১১.৫০
২৪/০৫/২০১৫
সুন্দরবন-১১ লঞ্চ
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১০:১৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাশ্চাত্যের তথাকথিত নারীবাদ বনাম ইসলাম: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৩ রা মে, ২০২৫ বিকাল ৪:২৪

পাশ্চাত্যের তথাকথিত নারীবাদ বনাম ইসলাম: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ

ছবি কৃতজ্ঞতা এআই।

ভূমিকা

নারীর অধিকার নিয়ে আলোচনা ইতিহাসের এক দীর্ঘ অধ্যায়। পাশ্চাত্যে নারী আন্দোলন শুরু হয় ১৮শ শতকের শেষভাগে, যার ফলশ্রুতিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি স্মার্ট জাতির অন্তঃসারশূন্য আত্মজৈবনিক !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩৪


একটা সময় ছিল, যখন জাতির ভবিষ্যৎ বলতে বোঝানো হতো এমন এক শ্রেণিকে, যারা বই পড়ে, প্রশ্ন তোলে, বিতর্কে অংশ নেয়, আর চিন্তা করে। এখন জাতির ভবিষ্যৎ মানে—ইনফ্লুয়েন্সার। তারা সকাল ১০টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতায় যাবার আগেই নারী বিদ্বেষ শুরু

লিখেছেন অপলক , ০৩ রা মে, ২০২৫ রাত ১০:১১

সংবাদ সম্মেলন থেকে বের করে দেওয়া হলো নারী সাংবাদিককে, যা বললেন মুফতি ফয়জুল করিম

বরিশালে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমের এক নারী সাংবাদিক মনিকা চৌধুরীকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামী দলগুলো নারী বিদ্বেষী - এটা একটি মিথ্যা প্রোপাগান্ডা

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ০৩ রা মে, ২০২৫ রাত ১১:২৯

আরবের দেশগুলোকে আমাদের দেশের নারী আন্দোলনের নেত্রীরা দেখতে পারেন না হিজাব ইস্যুর কারণে। অথচ, আরব দেশ কাতার বি,এন,পি'র চেয়ারপারসনকে চার্টারড প্ল্যানে করে দেশে পাঠাচ্ছে। আরো কিছু উদাহরণ দেই। আওয়ামী লীগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

নারী কমিশন বিতর্ক: সংস্কারের ভাষ্যে প্রান্তিকতার অনুপস্থিতি ও বিশ্বাসের সংঘাত

লিখেছেন মুনতাসির রাসেল, ০৪ ঠা মে, ২০২৫ ভোর ৪:০৬


বাংলাদেশে নারী-অধিকার প্রশ্নে বিতর্ক নতুন নয়, তবে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সাম্প্রতিক প্রস্তাবনা যেন একটি আগুনের স্ফুলিঙ্গ ছুড়ে দিয়েছে। বাল্যবিবাহ, পারিবারিক আইন, নারী-পুরুষের ভূমিকা ও ধর্মীয় বিধানের নতুন ব্যাখ্যা নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×