somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শিশির খান ১৪
সময় পাইলে ব্লগ লেখাটা এখন নেশায় পরিণত হয়েছে। ব্যাস্ততার ফাকে যারা আমার ব্লগ দেখেন তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আপনাদের অনুপ্রেরণা থাকলে নিশ্চই সামনের দিন গুলোতে লেখা চালিয়ে যাবো।

এডভেঞ্চার @ সুন্দরবন মিশন : বাঘ মামাকে দেখা

২৯ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছুটি পেলেই এডভেঞ্চার এর উদ্দেশে বের হয়ে যেতাম এক বার শখ হলো সুন্দরবনে বাঘ দেখবো।রাতের বেলা ঢাকা থেকে রওনা হলাম মংলা বন্দর। সকাল বেলা পৌছালাম মংলা বন্দর সেখানে উঠে বসলাম গাংচিল নামের একটা টুরিস্ট বোটে দেখতে ছোট মনে হলেও উঠার পর বুঝলাম আসলে নৌকাটা ছোট না ১৫ জন লোক অনায়েসে থাকা খাওয়ার মতো জায়গা আছে এই নৌকায়।নৌকার সবচে আকর্ষনীয় দিক হচ্ছে ছাদে ছাউনি দিয়ে খুব সুন্দর বসার বেবস্তা করা হয়েছে যেখানে আরাম করে বসে কফির মগ হাতে নিয়ে আপনি গোটা সুন্দর বন উপভোগ করতে পারবেন। ভাগ্য ভালো ছিলো বলতেই হবে ঠিক সেই সময় চলছিলো রাস মেলা।প্রতি বছর সুন্দরবনের দুবলার চরে ভরা পূর্নিমার রাতে মাত্র এক রাতের জন্য এই রাসমেলা হয়। চার দিক থেকে নৌকায় করে হিন্দু ধর্মের অনুসারীরা এই মেলায় আসেন। হাজার হাজার দেশী বিদেশী পর্যটক আসে এই মেলায়। পূর্নিমার আলোতে সারা রাত জেগে মানুষ আনন্দ করে। বিক্রি হয় নানা রকম পণ্য খুলে বসেছে কয়েক শত হস্ত ও কারু শিল্পের দোকান। পুতুল নাচ ,যাত্রা ,ফানুস আর ঘুরি উরানো মেলার আনন্দ বাড়িয়ে দেয় বহু গুনে।রাতের বেলা মেলার উদ্বোধনের সময় ফুটানো হয় পটকা ও নানা রকম আতশবাজি। পরের দিন আবার খুব ভোরে সবাই মিলিতো হয় সাগর পারে। হিন্দু ধর্মালম্বীরা সেখানে পুণ্য স্নান করেন তাদের বিশ্বাস সাগর জলে পাপ ধুয়ে মুছে তারা পবিত্র হোন। ভোরের আলোতে সবাই লাইন ধরে স্নান করে পূজা করে আর সেই দৃশ্য কেমেরা বন্দি করতে আগমন ঘটে অনেক ফোটোগ্রাফারদের। সাগর পারে ভোরের মৃদু আলোতে সুন্দর মিষ্টি বাতাস এতটাই উপভোগ করেছিলাম যা আসলে বলে বুঝানো খুব কঠিন।গহীন অরন্যে যে এইরকম মেলা হতে পারে তা নিজের চোখে না দেখলে কখনোই বিশ্বাস হতো না। সুন্দরবনের এতো গভীরে এই দুবলার চর যে ঐখানে কোনো মোবাইল সিগনাল পাওয়া যায় না।সুন্দর বনের সর্ব দক্ষিনে বঙ্গোপো সাগরের কোল ঘেসা বালুর চর হচ্ছে এই দুবলার চর।১০ কিমি সাগর সৈকত সহ এর সর্বমোট আয়তন ৮১ বর্গ কিমি। মনে হচ্ছিলো কেউ যদি আমাকে ঐ খানে নামায় দেয় তে হলে আমি আর একলা ফেরত যেতে পারবো না। মজার বিষয় হচ্ছে সেখানে যে পরিমান বিদেশী পর্যটক ছিলো তা দেখে নিজেকে খুব বোকা মনে হচ্ছিলো এই ভেবে যে কেনো আমি এতো পরে এই মেলা দেখতে আসলাম। ফেরার সময় ঘটলো আতঙ্কের ঘটনা দেখলাম একটা বোট আমাদের দিকে তেড়ে আসছে দেখে ভয় পেয়ে গেলাম বোট মাস্টার আমাদের প্রস্তুত থাকতে বললেন। তিনি বললেন আমরা অনেক বছর ধরে এই লাইনে চলাচল করি যতটুকু জানি ডাকাতরা টুরিস্ট দের কিছু করে না তারা সাধারণত জেলেদের ধরে মুক্তিপণ নেয়। এই দিকে সাথে কোনো অস্ত্র নাই অন্য দিকে ভয়ের মাত্রা ক্রমেই বারছে। মাস্টার দ্রুতই টানছিলো কিন্তু কোনো কাজ হলো না ওরা ঠিকই আমাদের বোট বরাবর এসে লাগিয়ে দিলো ভাবলাম শেষ ধরা খায়া গেসি যতো দোয়া সুরা জানি সব মনে মনে পড়তে থাকলাম দেখলাম ডাকাতের মতো গোফওয়ালা একটা লোক এগিয়ে এসে বলল যে ওদের বোটের তেল শেষ হয়ে গেসে যদি কোনো উপায়ে তেল না পায় তে হইলে তাদের সমুদ্রে ভাষতে হবে কি আর করার অতিরিক্ত কিছু তেল ছিলো তা থেকে তাদের তেল দেয়া হলো। এরপর পরের তিন দিন আর কোনো সমস্যা হয় নি ঘুরে বেরিয়েছি আস্ত সুন্দরবন।অলস দুপুরে হালকা রোদে কুমিরের রোদ তাপানো, দুষ্ট বানোরের গাছে ঝুলে ঝুলে খেলা করা ,আবছা চাদের আলোয় হরিনের ছোটা ছুটি ,নৌকার সামনে ডলফিনের লাফা লাফি ,নাম না জানা অচেনা পাখির মধুর ডাক।সব কিছুই দেখেছি খালি বাঘ মামার দেখা পেলাম না তবে পানির ধারে এক জায়গায় নেমে দেখেছি বাঘের পায়ের ছাপ বোটের কর্মচারীরা জানালো ৪০ মিনিট আগের ছাপ কিন্তু আসে পাশে কোথাও মামার দেখা নেই।চার দিন মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় খুব শান্তিতে সুন্দরবনের সুন্দর্য উপভোগ করেছি।এক দম প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে গেছিলাম। এতো কথার মাঝে বোটের খাবার এর কথা বলতেই ভুলে গেলাম বোটের খাবার কিন্তু খুব মজাদার ছিলো এতো সুস্বাদু খাবার আমি ঢাকার কোনো রেস্টুরেন্ট এও খাইনি সুযোগ হলে আরো একবার যেতে চাই কারণ মিশন তো কমপ্লিট হয় নাই বাঘ মামার দেখা না পাওয়া পর্যন্ত মিশন ওভার হবে না।

বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী অঞ্চলের বন সংরক্ষক ‘‘ক্যামেরা ক্যাপচার পদ্ধতির জরিপে বাংলাদেশ এবং ভারতীয় সুন্দরবনে ৮৩ থেকে ১৩০টি বাঘের সন্ধান পাওয়া গেছে৷ এর গড় হিসেবে বাংলাদেশ অংশে প্রকৃত বাঘের সংখ্যা সর্বোচ্চ ১০৬টি হতে পারে৷'' বলে জানান অথচ এর আগে, ২০০৪ সালে, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ও ভারতের বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় পায়ের ছাপের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত জরিপে ৬,০০০ বর্গকিলোমিটারের সুন্দরবনে ৪৪০টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার গণনা করা হয়৷ এর মধ্যে ১২১টি পুরুষ, ২৯৮টি বাঘিনী এবং ২১টি শিশু বাঘ ছিল বলে জানা যায়৷ এরপর ২০০৬ সালে ক্যামেরা ট্র্যাপিং ও আপেক্ষিক সংখ্যা পদ্ধতি অনুসরণ করে সুন্দরবনের এক শুমারিতে ২০০টি বাঘের কথা বলা হয়েছিল৷ কিন্তু এবার ক্যামেরা ক্যাপচার পদ্ধতিতে এই গণনা করা হলে আগের করা পায়ের ছাপ পর্যবেক্ষণ বা ‘পাগ মার্ক' পদ্ধতির ফলাফলটি ভুল প্রমাণিত হলো ৷ হয়তো সামনের দিনগুলোতে সুন্দরবনে আর রয়েল বেঙ্গল টাইগার খুঁজে পাওয়া যাবে না।এভাবে আসতে আসতে এক সময় সুন্দর বন হয়তো হারাবে তার নিজস্ব স্বকীয়তা ও সুন্দর্য।সুন্দর বনের মতো প্রাকৃতিক সম্পদ যদি না থাকে তে হলে এর পরে যদি সিডরের মতো কোনো ঝর আসে তখন তা আর আমরা ঠেকাতে পারবো না।

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১:৫০
৫৬৫ বার পঠিত
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শু সাইন বয় ইন্ডিকেটর

লিখেছেন মুনতাসির, ০৭ ই মে, ২০২৫ সকাল ৮:১২

অর্থনীতি ও বিনিয়োগের জগতে একটি বিখ্যাত গল্প প্রচলিত আছে, যেটি "Shoeshine Boy Indicator" নামে পরিচিত। এটি একটি উপকথার মতো শোনালেও এর ভেতরে লুকিয়ে আছে এক গভীর সত্য—যখন সবাই বিনিয়োগে লাফিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুম্মাবার

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ০৭ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৪:৪০

জুম্মাবার
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

প্রতি শুক্রবার ইমাম এর নেতৃত্ব
মেনে নিয়ে আমরা মুসলিমরা
হই একত্রিত, হই সম্মিলিত
ভুলে যাই সবাই হৃদয় ক্ষত!
খুতবা শুনি আমরা একাগ্রচিত্তে
চলে আসি সকলে একই বৃত্তে।
কানায় কানায় পরিপূর্ণ প্রতিটি মসজিদ
ঐক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসলে "ওরফে গফুর" এর উদ্দেশ্য কি....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭

আসলে "ওরফে গফুর" এর উদ্দেশ্য কি....


'ওরফে গফুর' এর লেখা আমি বহুবছর থেকেই পড়ি। ওনার লেখা পড়ে ওনার মতবাদ, আদর্শে আমি বিভ্রান্ত হয়েছি বারবার। কারণ, কোন এক পত্রিকায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা শান্তিপ্রিয় মানুষেরা একজোট হতে চাই

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ০৭ ই মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৫১



ভারত - পাকিস্তান যুদ্ধ বন্ধে কি করতে পারি আমরা? একজন নীতিবান, যুদ্ধবিরোধী ও মানবতাবাদী মানুষ হিসেবে একক এবং সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে আমরা অনেক কিছু করতে পারি। চলুন নিচে দেখা যাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

অপারেশন সিদুঁর বনাম অপারেশন নারায়ে তাকবীরের নেপথ্যে !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৭ ই মে, ২০২৫ রাত ৯:২৮


বলতে না বলতেই যুদ্ধটা শুরু হয়ে গেল। না, যুদ্ধ না বলাই ভালো—রাষ্ট্রীয় অভিনয় বলা ভালো। ভারত ও পাকিস্তান আবার সীমান্তে একে অপরকে চেঁচিয়ে বলছে, "তুই গো-মূত্রখোর ", "তোর দেশ জঙ্গি"।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×